Tiljola chaos

শিশুর খুনে ক্রোধ, তিলজলায় অবরোধ, আগুন পুলিশ জিপেও

রাজ্য

বন্ডেল গেটের ফ্লাইওভারের উপর তখন জ্বলছিল পুলিশ ভ্যান। পুড়ছে দমকলের ইঞ্জিনও। একটি বেসরকারি বাসের মাথায় উঠে দাঁড়ানো যুবকদের গলায় ঝোলানো প্লাকার্ড। 
এক শিশুর খুনের ঘটনায় এমন উত্তাপ ততক্ষণে ছড়িয়ে পড়েছে তিলজলা থানার অনেকটা এলাকায়। 
কেন এত উত্তেজনা? পুলিশ তো গ্রেপ্তার করেছে একজনকে? প্রশ্নটি যতদূর সম্ভব কোমল ভাবে করার পরও ধেয়ে এলো জ্বলন্ত চাউনি। পুলিশের দিকে ইট ছোঁড়ায় ক্ষান্ত দেওয়া ‘মব’ তখন কিছুটা ছড়ানো ছেটানো। তেমনই একটি অংশ থেকে জবাব এলো তেড়ে — ‘‘নাস্তা ছেড়ে আসতে চায়নি পুলিশ। আমরা তো গিয়েছিলাম তিলজলা থানায়। তখনই যদি পুলিশ আসত, হয়তো মেয়েটিকে (নাম বলেছিল শিশুটির) বাঁচানো যেত। তা তো পুলিশ করেনি। নাস্তা ছেড়ে আসতে চায়নি। এরা পুলিশ? এদের উপর আমাদের সিকিউরিটি? এর জবাব চাই।’’
তৃণমূলের কোনও কাউন্সিলারকে আশেপাশে দেখা যায়নি। তাঁদের কেউ নিহত শিশুটির বাড়িতেও যাননি। কেন? এলাকাটি কলকাতা কর্পোরেশনের ৬৬ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্যে পড়ে। তৃণমূল বুথ দখল করে, বিরাট ব্যবধানে জেতে এখানে। নানা দুর্নীতিতে যুক্ত তৃণমূলের নেতাদের বড় অংশ। কাউন্সিলার ফৈয়াজ খান রাজ্যের মন্ত্রী জাভেদ খানের ছেলে। স্থানীয়রা জানাচ্ছেন, রবিবার পুলিশ থানায় তৃণমূলের স্থানীয় নেতা, কর্মীদের ডেকে এনেছিল। মূলত শিশুটিকে খুঁজে বের করার আবেদন নিয়ে যাওয়া গরিব নাগরিকদের ঠেকাতে। পুলিশ তখন খাবারে ব্যস্ত ছিল বলে যেতেও চায়নি। তৃণমূলের মহিলা এবং যুব কর্মীরা থানায় ঢুকে বাইরে দাঁড়ানো স্থানীয়দের হুমকি দিতে থাকে। সোমবার দুপুরে ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে দু’জনের বক্তব্য,‘‘কেন তৃণমূলকে পুলিশ ডেকে পাঠিয়েছিল আমরা বুঝতে পারিনি। তৃণমূলই বা কেন বাধা দিতে চাইছিল আমাদের, তাও বুঝতে পারছি না। কিছু যোগাযোগ আছে এসবের।’’ 
মানুষের ক্ষোভ টের পেয়ে ঘটনাস্থলে এদিন তৃণমূলের কোনও নেতাকে দেখা যায়নি। দেখা যায়নি কাউন্সিলরকে। তাঁকে ফোন করা হলেও ধরেননি। এদিন এই ঘটনা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি কোনও মন্তব্য করেননি। তবে তৃণমূলের এক নেতা, রাজ্যের মন্ত্রী জানিয়েছেন, জাভেদ খান এবং মুখ্যমন্ত্রীর কথা হয়েছিল। এদিন রাতে জাভেদ খান দাবি করেন,‘‘এলাকার মানুষ মিডল ইস্টের মতো এখনই বিচার চাইছে। তা তো হয় না। পুলিশ তদন্ত করবে। শাস্তি হবে।’’ তাঁর আরও বক্তব্য,‘‘তৃণমূল যদি চাইতো আজকের প্রতিক্রিয়া আটকাতে তাহলে এত কিছু হত না। আমাদের কোনও কর্মী রবিবার থানায় যায়নি, স্থানীয়দের আটকায়নি।’’
মানুষ কোনও প্রতিশ্রুতির জন্য অপেক্ষা করেননি। সোমবার সকাল-দুপুরের তিলজলা, বন্ডেল গেট বুঝিয়ে দিয়েছে — আর সহ্য করা যাচ্ছে না পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা।
রবিবার থেকেই উত্তপ্ত ছিল তিলজলা এলাকা। সোমবার সেই ক্ষোভ ফেটে পড়তে থাকে। তিলজলা, বন্ডেলগেট, তপসিয়ায়। রেললাইন অবরোধ করেছেন নাগরিকরা। বন্ডেল গেটে লাগাতার বিক্ষোভের জেরে এদিন শিয়ালদহ দক্ষিণ শাখায় দফায় দফায় চলে ট্রেন অবরোধ।
এদিন সকালে বন্ডেল গেট এলাকায় রাস্তা এবং রেললাইন অবরোধ করেন স্থানীয়রা। পুলিশ যায় সেই অবরোধ তুলতে। শুরু হয় সংঘর্ষ। বিক্ষোভকারীদের শায়েস্তা করতে এদিন পুলিশ লাঠিচার্জ করে। পরিস্থিতি আরও খারাপ হয়ে ওঠে। স্থানীয় মানুষ পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট ছোঁড়ে। একসময় পুলিশের জিপে আগুন লাগানো হয়। আসে দমকলের একটি ইঞ্জিন। ক্ষিপ্ত মানুষ তাতেও আগুন দেন। পুলিশ এরপর অবরোধকারীদের সরাতে কাঁদানে গ্যাস ছোঁড়ে। চলে আসে র্যাএপিড অ্যাকশন ফোর্সও। 
বিক্ষোভ ছড়ানোর ঘটনায় তিনজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সেই সহ নাগরিকদের মুক্তির দাবিও উঠেছে এদিন বিক্ষোভকারীদের গলায়।
রবিবার সকাল সাতটা নাগাদ বাড়ির ময়লা ফেলার জন্য বেরিয়ে আর ঘরে ফেরেনি ওই সাত বছরের শিশু কন্যা। মেয়েকে পাওয়া যাচ্ছে না দেখে রবিবার সকালেই পরিবারের সদস্যরা ছোটেন তিলজলা থানায়। অভিযোগ করেন হয়ত ওই এলাকায় কোন ফ্ল্যাটে ওই মেয়েকে আটকে রাখা হয়েছে। কিন্তু তিলজলা থানার পুলিশ কিছুতেই সকালে খাবার (নাস্তা) ছেড়ে ঘটনাস্থলে যেতে চায়নি। স্থানীয়দের অভিযোগ, বারবার অনুরোধ করায় প্রায় তিনঘন্টা পর তিলজলা থানার পুলিশ ঘটনাস্থলে আসে। এলাকার বাসিন্দারা পুলিশকে জানায় সিসিটিভির ফুটেজে ওই শিশু কন্যাকে বাড়ির পাশে, পিকনিক গার্ডেন রোড সংলগ্ন  একটি আবাসনে ঢুকতে দেখা গেছে। কিন্তু সেখান থেকে বেরোনোর কোন ফুটেজ পাওয়া যায়নি। এলাকার বাসিন্দারা বারংবার ওই বিল্ডিংটি তল্লাশি করতে অনুরোধ জানান। পুলিশ ওই আবাসনে একটু ঢুকে নামকাওয়াস্তে তল্লাশি করে চলে যায়। এমনকি পরে যে ঘর থেকে ওই কন্যাশিশুর দেহ মিলেছে সেই তালাবন্ধ ঘরেও তল্লাশির অনুরোধ জানান ওই শিশুর মা।
কিন্তু পুলিশ বিশেষ তল্লাশি না করে চলে যায়। আর পরে সেই বন্ধ ঘর থেকেই মেলে সাত বছরের শিশুকন্যার ক্ষতবিক্ষত দেহ। আর সেই দেহ উদ্ধারের পরেই তিলজলা পুলিশের ওপর ক্ষোভ উগড়ে দেন বাসিন্দারা। রবিবার বিকাল থেকেই তিলজলা থানার সামনে চলতে থাকে দফায় দফায় বিক্ষোভ। রাতেও দু’দফায় বিক্ষোভকারীদের ওপর লাঠিচার্জ করে পুলিশ। কিন্তু রাতের ওই অত্যাচারের খবর চারিদিকে ছড়িয়ে পড়তে সোমবার চারপাশ মানুষ আসতে থাকেন ওই এলাকায়।

Comments :0

Login to leave a comment