Salim

আসলে জিতছে আরএসএস’র বিভাজনের রাজনীতি

রাজ্য

তৃণমূল জিতেছে বলে প্রচারে এলেও প্রকৃতপক্ষে আরএসএস’র বিভাজনের রাজনীতি জিতছে। নির্বাচনের মুখে ‘বিজেপি বাড়ছে’ বলে মুসলমানদেরকে তৃণমূলের ভয় পাওয়ানো, আর তৃণমূল ‘মুসলমানদের দালাল’ হয়ে গেছে বলে বিজেপি’র প্রচার হয়েছে। এই পরিস্থিতিতে দাঁড়িয়ে আমরা বামপন্থীরা প্রতিটি ইঞ্চিতে ধৈর্য ধরে লড়াই করে চলেছি। মানুষের ঐক্য বিস্তার করার চেষ্টা করছি। শুক্রবার ধূপগুড়ির ফলাফল প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম একথা বলেছেন। তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যা বলার বলবে। আমরা বিস্তারিত দেখব, জলপাইগুড়িতে এসে মিটিং করব। যারা নির্বাচনে কাজ করেছেন, ভোট দিয়েছেন, তাঁদের সাথে কথা বলব। 
এদিন মহম্মদ সেলিম বলেন, ভোটের আগে মাটিগাড়ায় একটি ঘটনা ঘটেছিল। সেই ঘটনাকে নিয়ে হিন্দু মুসলমান, নেপালি, বাঙালি করে উত্তরবঙ্গ বন্‌ধ হয়ে গেল। পঞ্চায়েত নির্বাচনের আগেও কালিয়াগঞ্জেও একই ঘটনা ঘটেছিল। প্রতিদিন রাজ্য ও দেশে খুন, ধর্ষণ, দলবদ্ধ ধর্ষণ হচ্ছে। কিন্তু আরএসএস এটাকে নিয়ে রাজনীতি করছে। 
তিনি বলেন, রাজ্য সরকারে থাকলে যে সুবিধা হয় ‘যুবরাজ’ এসে ঘোষণা করে দিলেন, মহকুমা করে দেব। এতদিন করেননি কেন? এগুলো হচ্ছে মানুষকে ধোঁকা দেওয়া। একবছর আগে মমতা ব্যানার্জি কয়েকটি জেলা ঘোষণা করেছিলেন। বিশবাঁও জলে গেছে। প্রধানমন্ত্রী লোকসভা নির্বাচনের আগে এসে নানা ঘোষণা করবেন। এগুলো যতদিন মানুষকে ধাপ্পা দেওয়া যায়। তিনি বলেন, আমরা দেখবো, আমাদের সাংগঠনিক দুর্বলতা কোথায়। আমাদের কথা কেন মানুষের কাছে পৌঁছাচ্ছে না। গ্রহণযোগ্য হচ্ছে না কেন? কেন মানুষকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে আমাদের পক্ষে ভোট দেওয়াতে পারছি না। ২০১৯-র লোকসভা নির্বাচন থেকে ২০২১-এ ভোট কিছুটা বেড়েছিল। আবার ২০২১ থেকে আমাদের পঞ্চায়েতে ভোট কিছুটা বেড়েছিল। আবার কিছুটা বেড়েছে। আমরা এগোচ্ছি। 
‘বাংলা দিবস’ নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি দেখাতে চাইছেন তিনি বাংলা তৈরি করেছেন। বিজেপি বলছে, ওরা তৈরি করেছে। বিজেপি-তৃণমূলের জন্মের অনেক আগে থেকেই আমাদের সংষ্কৃতি, শিল্প, ভাষা, সভ্যতা গড়ে উঠেছে। ধাপে ধাপে গড়ে উঠেছে। মোঘল আমলে, আকবরের জমানা থেকে ‘পহেলা বৈশাখ’ চলে আসছে। হালখাতা কেন বলি। এটা মিশ্র সংস্কৃতির প্রতীক। আরএসএস’র রাজনীতির মানে মিশ্র সংষ্কৃতিকে শেষ করতে হবে। আরএসএসের প্রেসক্রিপশন অনুযায়ী মমতা ব্যানার্জিও তাই করছেন। বাংলাদেশে নববর্ষের উৎসব আজও বড় করে পালিত হয়। আমাদের এখানে নববর্ষের উৎসব, পহেলা বৈশাখ পালিত হোক। বাংলা দিবস বলে কী আছে। অন্তর্বঙ্গে, বহির্বঙ্গে, গোটা বিশ্বে যতো বাঙালি ছড়িয়ে আছে পহেলা বৈশাখা সবার উৎসব। এটা আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের দিবস নয়। আলাদা করে পশ্চিমবঙ্গের দিবস চাই কেন? মোদী ও মমতা বলতে চাইছেন, আমি-আমরা ইতিহাস তৈরি করছি। আমরা মনে করি, দেশভাগের ফল হিসাবে আমরা পশ্চিমবঙ্গ। কেউ কখনও বিচ্ছেদকে সেলিব্রেট করে না। 
তিনি আরেকটি প্রশ্নের উত্তরে বলেন, রাজ্যের পুলিশ ও সাধারণ প্রশাসন, সিআইডি অপদার্থ। আমাদের রাজ্যে ১২বছরে কী হলো? আমাদের শিক্ষা, চাকরি সব অন্য জায়গায় হবে। আমাদের এখানে তদন্ত হবে বাইরে থেকে এসে? ব্যবসা বাণিজ্য হবে বাইরে থেকে এসে? এটা হচ্ছে তৃণমূল এমন দলবাজি করছে, দলদাস তৈরি করেছে, সাধারণ প্রশাসন-পুলিশ নিয়ম মেনে সংবিধান, আইন মেনে কাজ না করে তৃণমূলের হয়ে কাজ করছে। আসলে বিজেপি’কে ‘গেম চেঞ্জার’ হিসাবে দেখানো হয়েছিল। কিন্তু তারা কিছু করতে পারে না, শুধু নাম পালটায়। যারা নতুন সৃষ্টি করে, তারাই নতুন নাম দেয়। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করে একটা নতুন দেশ গড়ে উঠলো, তার নাম হলো ইন্ডিয়া বা ভারত। এইবার এরা ‘ইন্ডিয়া’র সাথে ‘ভারত’কে লড়াচ্ছে। যেহেতু বিরোধীরা এককাট্টা হয়েছেন, তাই ওরা ভয় পেয়েছে। এই ভয়ের জন্য দেশের নাম বদল করার কোনও প্রয়োজন নেই। 
সেলিম এদিন বলেন, যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় নিয়ে কী হবে সেটা রাজভবন ও নবান্ন ঠিক করতে পারে না। কারণ অধ্যাপক, শিক্ষক, অভিভাবক সকলের একটা ভূমিকা আছে। তৃণমূল সরকার ক্ষমতায় আসার পর থেকে মমতা ব্যানার্জি চাইছেন নিজের দলের পছন্দমতো লোককে বসাতে, আর রাজ্যপাল বসাবেন আরএসএস মার্কা লোককে। শিক্ষার কি বেহাল অবস্থা! সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় শিক্ষাব্যবস্থাকে নয়া শিক্ষানীতির নাম করে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে। 
লোডশেডিং প্রসঙ্গে তিনি বলেন, গোটা রাজ্যে বিদ্যুৎ সঙ্কটের সৃষ্টি হয়েছে। ১২বছর ধরে তৃণমূল সরকার এক ইউনিট বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য নতুন কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। অসহ্য গরমে মানুষের হাঁসফাঁস অবস্থা। ঘণ্টার পর ঘণ্টা চলছে লোডশেডিং। বিদ্যুতের দাম বেড়েছে। সাথে মানুষের ক্ষোভও বাড়ছে। দু’দিন পরে এমন দাম বাড়বে, সমস্ত ইলেকট্রিক গ্যাজেট থাকবে, কিন্তু তা চালাবার মতো বিদ্যুৎ বিল দেবার ক্ষমতা সাধারণ মানুষের থাকবে না। দেশকে আজ সেই জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে।

Comments :0

Login to leave a comment