জয়ন্ত সাহা- শিলিগুড়ি
আগেই বর্ষা ঢুকে পড়েছে উত্তরবঙ্গে। ভারী বৃষ্টি চলছে সিকিমে। টানা বৃষ্টিতে ধস নেমে একাধিক রাস্তায় যান চলাচাল ব্যাহত হয়েছে। এক বছরের স্মৃতি উসকে দিয়ে ফের পাহাড়ে ঘনিয়ে এলো বিপর্যয়, বহু রাস্তা জলের তলায়, বিপদসংকুল পথ সিকিমে, তিস্তার ভয়ংকর রূপ!
ধস সরিয়ে যান চলাচল স্বাভাবিক করা সম্ভব হয়নি। ভারী বৃষ্টিপাত, ভুমিধসে সিকিমে মৃত ৬, নিখোঁজ বহু, যুদ্ধকালীন তৎপরতায় শুরু উদ্ধার অভিযান। ভারী বৃষ্টিপাতে ঘরবাড়িও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
বৃহস্পতিবার সিকিমে ধসে চাপা পড়ে মোট ৬ জনের মৃত্যুর খবর মিলেছে। সিকিমের মঙ্গন জেলায় একটি বাড়ি ধসে ভেঙে পড়লে ৩ জন মারা যায় এদিন। অন্যদিকে সিকিমের পাকশেপে ধসে চাপা পড়ে মারা যাবার খবর মিলেছে সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে।
গত বছরের তিস্তার বিপর্যয় আজও ভোলেনি তিস্তা পাড়ের মানুষজনসহ গোটা সিকিম ও উত্তরবঙ্গবাসী। সেই স্মৃতি আজও তাড়া করে বেড়াচ্ছে সকলকে। তারই মাঝে ফের সেই স্মৃতিকে উসকে দিয়ে আবারও বিপর্যয় নেমে এলো পাহাড়সহ তিস্তা পারে। গত বছরের ৪ অক্টোবরের সেই দুঃস্বপ্নের স্মৃতি আবারও তাড়া করছে তিস্তা এলাকার বাসিন্দাদের।
গত কয়েকদিন ধরে উত্তর সিকিমে একটানা প্রবল বৃষ্টিপাত চলছে। সে কারণে ভয়ংকর রূপ ধারণ করেছে তিস্তা নদী। সকাল থেকেই ফুল ক্ষেপে উঠছে তিস্তা। আর এতেই ক্রমশ আতঙ্ক গ্রাস করেছে তিস্তা পাড়ের এলাকার বাসিন্দাদের। অন্যদিকে তিস্তা নদীর জল স্তর বেড়ে যাওয়ায় প্লাবিত হয়েছে তিস্তা বাজার, মল্লি, রম্বি , গেইলখোলা, ২৯ মাইল সহ বিভিন্ন এলাকা। স্থানীয়রা বাড়িঘর ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিতে শুরু করেছে।
প্রসঙ্গত গত বছরই সম্পূর্ণভাবে তিস্তা কেড়ে নিয়েছিল ওই এলাকার বাসিন্দাদের বাড়ি ঘর। এরপর রাজ্য সরকারের তরফে সামান্য আর্থিক ক্ষতিপূরণ মিলেছিল।তাতে কিছুই হয় নি।
এবছর আবারও তিস্তা নদীর জলস্তর বেড়ে যাওয়ায় এলাকাবাসীরা আতঙ্কিত হয়ে পড়েছেন। অন্যদিকে তিস্তা নদীর জলস্থল বেড়ে যাওয়ায় ওই এলাকা প্লাবিত হওয়ার কারণে বন্ধ রয়েছে কালিম্পং এবং দার্জিলিংগামী ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এছাড়াও শিলিগুড়ি থেকে সিকিম যাওয়ার পথ বহু জায়গাতে বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাই এইসব পথ দিয়ে বড় গাড়ি চলাচল আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে পুলিশ প্রশাসন।
বৃষ্টির জেরে ব্যাপক হারে জল বেড়েছে তিস্তা নদীতে। তিস্তার জল পাহাড়ের বহু জায়গাতে রাস্তার উপর দিয়ে বয়ে চলছে। বিশেষ করে কালিম্পং থেকে দার্জিলিং যাওয়ার রাস্তা এখন পুরোপুরি বন্ধ। রাস্তা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বৃষ্টির কারণে। ডুবে রয়েছে সেখানকার বহু জায়গার রাস্তা। রবিঝোড়া এলাকায় তিস্তা নদীর উপর সেতু ডুবে গিয়েছে।
তিস্তা বাজার হয়ে যে রাস্তাটি কালিম্পং থেকে দার্জিলিং গিয়েছে সেখানেও একই পরিস্থিতি। ফলে কালিম্পং দার্জিলিং যোগাযোগ একেবারে বন্ধ হয়ে গিয়েছে। কদিন থেকেই টানা বৃষ্টিতে জায়গায় জায়গায় ধসও নেমেছে। গতবছর হড়পা বানে সিকিমের যে পথ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল কিছু পথ এখনো স্বাভাবিক হয়নি। তার মধ্যে আবার মঙ্গলবার বৃষ্টিতে ব্যাপক জল বাড়ে তিস্তায়। সে কারণেই বহু পাহাড়ি রাস্তা এখনও তিস্তা নদীর তলাতে। বিপদসংকুল পথ হয়ে উঠেছে ওই এলাকায়। পুলিশ প্রশাসন থেকে চলছে রাস্তাতে নজরদারি।
এদিকে, উত্তর সিকিমে ধসে যাচ্ছে বিভিন্ন রাস্তা!
কার্যত টানা প্রবল বৃষ্টিতে বিপর্যস্ত সিকিম।
এদিকে পাহাড়ের লাগাতার বৃষ্টির ফলে ফুলে ফেঁপে উঠেছে গজলডোবার তিস্তার জল। খুলে দেওয়া হয়েছে বেশ কয়েকটি লক গেট।
গত কয়েকদিন ধরেই সিকিমে প্রবল বৃষ্টি শুরু হয়েছে। সিকিমের একাধিক জায়গায় ধস পড়েছে। এরইমধ্যে বুধবার রাত থেকে তিস্তার জল বাড়তে শুরু করেছে।
গজলডোবার বাসিন্দারা জানান , গতকাল এই তিস্তা ব্যারেজে এতো জল ছিলো না। আজ সকাল থেকে জল বাড়তে শুরু করেছে। পাহাড়ে বৃষ্টির ফলেই এই জল বাড়তে শুরু করেছে। গতবছর পাহাড় মেঘভাঙ্গা বৃষ্টিতে তিস্তায় ভয়ংকর বিপর্যয় এসেছিলো। এবারে এভাবে জল বাড়ায় আতঙ্কে রয়েছেন তিস্তা পারের এলাকার বাসিন্দারা। এখনও ভারী বৃষ্টিপাতের সতর্কতা জারি রয়েছে দক্ষিণ সিকিমের বিস্তীর্ণ এলাকায়।
Comments :0