Siliguri

গ্রামীণ ৫টি হাট বেহাল, শঙ্কায় ছোট ব্যবসায়ীরা

রাজ্য

অনিন্দিতা দত্ত: শিলিগুড়ি 
 

শিলিগুড়ি মহকুমার গ্রামীণ এলাকায় দার্জিলিঙ ডিস্ট্রিক্ট ইমপ্রুভমেন্ট ফান্ড (ডিআই ফান্ড) মার্কেট আছে ৫টি। শালবাড়ি হাট, মাটিগাড়া হাট, বাগডোগরা হাট, নকশালবাড়ি হাট ও খড়িবাড়ি হাটে এই বাজারগুলি আছে। বছর পাঁছেক আগেও গ্রামীণ এই হাটগুলি জমজমাট থাকত। মানুষের ভিড়ে গমগম করত। জামা, কাপড়, চাল, ডাল, ছাগল, মুরগি, হাঁস এমন অনেক কিছুই বিক্রি হতো এই হাটগুলিতে। এখনও হাটগুলি বসে। এখনও দার্জিলিঙ, কার্শিয়াঙ, কালিম্পঙ সহ পাহাড়ি এলাকা থেকে অসংখ্য মানুষ প্রতিদিন এই ডিআই ফান্ড মার্কেট হাটগুলোতে আসেন। কিন্তু অবহেলায় গুরুত্ব হারাতে বসেছে গ্রামীণ এই হাটগুলি। 
বর্তমানে ডিআই ফান্ড মার্কেটগুলির দেখাশোনার দায়িত্বে রয়েছেন জেলাশাসক। মহকুমার গ্রামীণ এলাকার এই পাঁচটি ডিআই ফান্ড মার্কেটে প্রায় পাঁচ হাজারের বেশি ব্যবসায়ী অনেকদিন ধরে ব্যবসা করছেন। এখন তাঁদের অভিযোগ, নানা সমস্যার মধ্যে দিয়ে ব্যবসা করতে হচ্ছে। হাট ব্যবসায়ীরা নিয়ম মেনে রাজস্ব দিয়ে থাকেন। কিন্তু তা সত্ত্বেও ব্যবসায়ীদের দুরবস্থার অন্ত নেই। রক্ষণাবেক্ষণ ও সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার অভাবে মার্কেটগুলির পরিবেশ বিনষ্ট হয়েছে। মার্কেটগুলির প্রতিটিতেই পয়ঃপ্রণালী ব্যবস্থা বলতে কিছুই নেই। শৌচাগার না থাকায় ব্যবসায়ীদের অসুবিধার মধ্যে পড়তে হয়। নোংরা আবর্জনা ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে মার্কেট চত্বরে। আবর্জনা পরিষ্কারের কোনও উদ্যোগ নেই। মার্কেটের জায়গা দখলদারদের পাল্লায় পড়ে বেহাত হয়ে যাচ্ছে। দিনের পর দিন অল্প অল্প করে জায়গা দখল হতে হতে মার্কেটের আকারেও ছোট হয়ে যাচ্ছে। তৃণমূলের সরকারের সময়ে ব্যবসার জায়গা দখল করে বসত বাড়ি, ঘরও গড়ে উঠেছে। দেখাশোনা করার কেউ নেই। এই অবস্থায় দীর্ঘদিন ব্যবসা করে আসা ছোট ব্যবসায়ীরা জমির মালিকানার দাবিতে সরব হয়েছেন। তাঁদের দাবি জমি লিজে দেওয়া হোক। সরকারের কাছে এই আবেদন জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। কিন্তু লিজের টাকার পরিমাণও এতটা বাড়িয়ে দেওয়া হয়েছে যে ছোট ওই ব্যবসায়ীরা ডিআই ফান্ড মার্কেটের জমি লিজেও নিতে পারছেন না। এই অবস্থায় ডিআই ফান্ড মার্কেটগুলির দেখাশোনার দায়িত্ব জেলাশাসকের পরিবর্তে শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের হাতে তুলে দেবার দাবিও জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। 
মাটিগাড়া ডিআই ফান্ড মার্কেট খাপরাইল মোড় থেকে মাটিগাড়া রেলগেট পর্যন্ত সওয়া কিমি আর অন্যদিকে ৩১নং জাতীয় সড়ক থেকে মাটিগাড়া থানা পর্যন্ত প্রায় পৌনে এক কিমি এলাকা জুড়ে বিস্তৃত। অনেক পুরানো হাট এলাকা। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে জলুসহীন হয়ে পড়ছে মাটিগাড়া ডিআই ফান্ড মার্কেট। মাটিগাড়া ডিআই ফান্ড মার্কেটে ব্যবসা করছেন আপ্পু আলম। তাঁর বাবাও এখানে ব্যবসা করেছেন। আপ্পু বলেন,‘‘হাটবাবুকে খাজনা দেই। কিন্তু সুযোগ সুবিধা ও কোনও পরিষেবা মিলছে না। যেখানে হাট লাগাই সেই জায়গা একেবারেই অপরিষ্কার। মার্কেটে আলোর ব্যবস্থা নেই। মার্কেট লাগোয়া আশপাশের বাড়ি বাড়ি থেকে হুকিং করে মার্কেটের প্রত্যেক ব্যবসায়ীরা দোকানের আলোর ব্যবস্থা করতে বাধ্য হন। সেজন্য প্রতিদিন বাড়ির মালিককে ২০টাকা করে দিতে হয়। পানীয় জলের সমস্যাও প্রকট। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দপ্তরের পক্ষ থেকে জল দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল। কিন্ত আজও আসেনি জল। এত বড় মার্কেটে কোনও বাথরুম নেই। বিগত বামফ্রন্ট পরিচালিত শিলিগুড়ি মহকুমা পরিষদের সভাধিপতি মণি থাপার সময়ে একটি শৌচাগার তৈরি হলেও এই সময়ে সেটি ব্যবহার অযোগ্য। 
এই পরিস্থিতিতে বাজারে ক্রেতার সংখ্যা কমছে। ব্যবসায়ীদের অভিযোগ, এই হাটগুলিকে তুলে দিতে চাইছে প্রশাসন। হাটের জমি কবজা করতে চাইছে যারা, সেই জমির কারবারিদের সুবিধা করে দিতে চাইছে প্রশাসন। এর পিছনে আছে তৃণমূলের মদত।

Comments :0

Login to leave a comment