Supreme court

নির্বাচন কমিশন তৈরি করবে তিনজনের কমিটি

জাতীয়

এক সুদূরপ্রসারী রায়ে নির্বাচন কমিশন গঠন করার বিধি বদলে দিল সুপ্রিম কোর্ট। বৃহস্পতিবার শীর্ষ আদালত নির্দেশ দিয়েছে, মুখ্য নির্বাচন কমিশনার ও অন্যান্য নির্বাচন কমিশনারদের নাম স্থির করবে প্রধানমন্ত্রী, লোকসভার বিরোধী দলের নেতা (অথবা বৃহত্তম বিরোধী দলের নেতা) ও সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতিকে নিয়ে গঠিত এক কমিটি। তাদের সুপারিশের ভিত্তিতেই রাষ্ট্রপতি নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করবেন। এই নির্দেশ এখন থেকে কার্যকর থাকবে যতক্ষণ সংসদে এ নিয়ে আইন না প্রণয়ন হয়। ততক্ষণ এই নির্দেশই ‘আইন’ বলে জানিয়েছে শীর্ষ আদালতের সাংবিধানিক বেঞ্চ। 
এখন সংবিধানের ৩২৪ নম্বর ধারা অনুযায়ী কেন্দ্রের সুপারিশে নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগ করেন রাষ্ট্রপতি। সুপ্রিম কোর্ট ‘নির্বাচনী প্রক্রিয়ার বিশুদ্ধতা’ রক্ষা করতে এই পদক্ষেপ নিয়েছে বলে জানিয়েছে। 
বিচারপতি কে এম যোশেফ, অজয় রাস্তোগি, অনিরুদ্ধ বোস, হৃষিকেশ রায়, সি টি রবিকুমারের সাংবিধানিক বেঞ্চ নির্বাচন কমিশনের নিয়োগ ও কাজের উন্নতি সম্পর্কিত একগুচ্ছ আবেদনের বিচার করার সময়ে এই রায় দেন। বেঞ্চ বলে, কোনও রাজনৈতিক দলই ক্ষমতায় এসে নির্বাচন কমিশন গঠন সংক্রান্ত কোনও আইন বা বিধি প্রনয়ণ করেনি। এখানে ফাঁক থেকে গেছে। তাই সংবিধানের ৩২৪ নম্বর ধারার অধীনে এই আইন জরুরি হয়ে পড়েছে। 
বিচারপতিরা বলেন, গণতন্ত্র সফল হতে পারে যদি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে হয়। যদি সংশ্লিষ্ট অংশীদাররা তার বিশুদ্ধতা রক্ষায় তৎপর না হয় তাহলে তা অসম্ভব। এই অবস্থায় নির্বাচন কমিশনকে প্রশাসন থেকে ‘দূরত্বে’ থাকতে হবে। নির্বাচন প্রক্রিয়ায় ক্রমাগতই অপব্যবহারের ঘটনা ঘটে চলেছে। এইরকম চলতে থাকলে গণতন্ত্রের সমাধি ঘটবে। নির্বাচন কমিশন যদি কারোর কাছে অনুগত থাকে তাহলে সে স্বাধীন হতে পারে না। স্বাধীন ব্যক্তি ক্ষমতায় থাকা শক্তির কাছে অনুগত হবেন না। নির্বাচন কমিশন ও কমিশনারদেরই দায়িত্ব জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করার। সরকারের ওপরে আর্থিক ভাবে কমিশন নির্ভরশীল। কিন্তু শুধু এই নির্ভরশীলতাই নয়, অন্য বাধ্যবাধকতাও থেকে যাচ্ছে। 
শীর্ষ আদালত তাদের পর্যবেক্ষণে এদিন আরও বলেছে, রাজনীতির দুর্বৃত্তায়ন দুঃস্বপ্নের আকার নিয়েছে। যে প্রক্রিয়ার ওপরে গণতন্ত্রের জনগণের আস্থা দাঁড়িয়ে আছে, তা নড়ে যাচ্ছে। নির্বাচনে অর্থশক্তির প্রভাব বিরাট চেহারা নিচ্ছে। একাংশের মিডিয়া নিজেদের মূল্যবান ভূমিকার কথা বিস্মৃত হয়ে নির্লজ্জ দলীয় সঙ্কীর্ণতার শিকার হয়ে গেছে। এই প্রেক্ষিতে নাগরিকদের গণতান্ত্রিক অধিকার ও মৌলিক অধিকার রক্ষার অভিভাবক নির্বাচন কমিশনারদের নিয়োগের পদ্ধতি নিয়ে আর কালক্ষেপ করা চলে না। তীব্রভাবে স্বাধীন, সৎ, দক্ষ নির্বাচন কমিশন আইনের শাসনের আসল পরীক্ষা। 
কেন্দ্রীয় সরকারের তরফে অ্যাটর্নি জেনারেল আর ভেঙ্কটরামানি সওয়ালে বলেন, সংসদ কী আইন করবে তা আদালত বলে দিতে পারে না। ক্ষমতার বিভাজন ভারতীয় সংবিধানের অঙ্গ। একই যুক্তি দেখিয়ে সলিসিটর জেনারেল তুষার মেহতা বলেন, নিয়োগের অধিকার সরকারকে দেওয়া রয়েছে। সেই প্রক্রিয়ায় প্রধান বিচারপতিকে যুক্ত করতে হলে সংবিধান সংশোধন করতে হবে। কিন্তু শীর্ষ আদালত নিজেদের অবস্থান থেকে সরেনি। 
এই মামলার সময়েই শীর্ষ আদালত অরুণ গোয়েলকে কমিশনার নিযুক্ত করার প্রক্রিয়া নিয়ে প্রশ্নও তুলেছে। জানতে চেয়েছে, এই মামলা চলাকালীন বিদ্যুৎ গতিতে গোয়েলকে নিযুক্ত করা হলো কেন। সওয়ালের সময়ে আবেদনকারীদের আইনজীবী প্রশান্ত ভূষণ জানান, বর্তমান নির্বাচন কমিশনার সরকারের কর্মরত সচিব ছিলেন। তাঁকে স্বেচ্ছা অবসর দিয়ে দু’দিনের মধ্যে নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ করা হয়। দুটি ঘটনারই যাবতীয় নথি চেয়ে পাঠিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। 
বিরোধী দলগুলি সুপ্রিম কোর্টের এদিনের রায়কে স্বাগত জানিয়েছে। সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো বলেছে, এই রায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। নির্বাচন কমিশন সংবিধানের ৩২৪ নম্বর ধারায় অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন করার দায়িত্বপ্রাপ্ত। কমিশনের স্বাধীন কর্তৃত্ব ও কর্মধারাকে শক্তিশালী করার পক্ষে এই রায় এক অগ্রগতির পদক্ষেপ। সিপিআই(এম) সব সময়েই বলে এসেছে, সিবিআই অধিকর্তা, লোকপাল নিয়োগে সংসদ যে আইন প্রণয়ন করেছে সেই ধারাতেই নির্বাচন কমিশন নিয়োগ হওয়া উচিত। স্বচ্ছ ও গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে এই নিয়োগ হওয়া উচিত। কংগ্রেসের মুখপাত্র আনন্দ শর্মা এই রায়কে ঐতিহাসিক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, প্রকৃত স্বাধীন নির্বাচন কমিশনই পারে নির্বাচনী প্রক্রিয়ার শুদ্ধতা রক্ষা করতে। শিব সেনার তরফেও এই রায়কে মাইলফলক বলে চিহ্নিত করা হয়েছে। 
প্রাক্তন মুখ্য নির্বাচন কমিশনার এস ওয়াই কুরেশি এই রায়কে ‘দারুণ রায়’ বলে চিহ্নিত করে বলেছেন, অন্তত ২০ বছর ধরে কমিশন এই দাবি জানিয়েছে। পদে থাকার সময়ে আমি এই দাবিতে চিঠি লিখেছি। কে মুখ্য নির্বাচন কমিশনার হবেন তা-ও স্বয়ংক্রিয় পদ্ধতিতেই হওয়া উচিত। বরিষ্ঠতমকেই সেই দায়িত্ব দিতে হবে। তাঁকে যেমন অপসারণ করা যায় না, তেমনই অন্য কমিরশনারদেরও অপসারণ করা যাবে না— এই বিধি কার্যকর করা উচিত।  
 

Comments :0

Login to leave a comment