Surya Mishra in Digha meeting

বিজেপি, তৃণমূলের বিরুদ্ধে সব বুথে মানুষকে নিয়ে জোট বাঁধুন : মিশ্র

জেলা

বিজেপি এবং তৃণমূল এই দুই দলকেই মদত দিচ্ছে কর্পোরেট পুঁজি, তাদের সরকার টিকিয়ে রাখতে কোটি কোটি টাকা ঢালছে। রবিবার দীঘায় সিপিআই(এম)’র ডাকা জনসভায় এই মন্তব্য করেছেন পার্টির পলিট ব্যুরো সদস্য সূর্য মিশ্র। তিনি বলেছেন, কেন্দ্র এবং রাজ্যের দু’টি সরকারই গণতন্ত্র ধংস করছে এবং দেশের সম্পদ আদানি-আম্বানিদের মতো মুষ্টিমেয় কর্পোরেটের হাতে তুলে দিচ্ছে। সেই জন্য কর্পোরেট পুঁজি চায় এই দুই সরকার টিকে থাকুক এবং তার জন্য নিয়মিত কোটি কোটি টাকা দিয়ে এই দুই দলকে কার্যত তারাই চালাচ্ছে। 
অর্থনৈতিক মন্দা, বেকারি, মূল্যবৃদ্ধির পরিস্থিতিতে দেশ ও দেশের মানুষকে রক্ষা করতে, ধর্মীয় বিভাজনকারীদের বিরুদ্ধে এবং দুর্নীতিগ্রস্ত লুটেরাদের হটিয়ে জনগণের হাতে পঞ্চায়েত ফেরানোর লক্ষ্যে সিপিআই(এম)’র ডাকে এদিন ওল্ড দীঘায় বিরাট জনসমাবেশ হয়। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন অমিয় পাত্র, নিরঞ্জন সিহি, ইব্রাহিম আলি সহ নেতৃবৃন্দ। সভাপতিত্ব করেন হিমাংশু দাস। সমাবেশে তৃণমূল ও বিজেপি’র গোপন বোঝাপড়া প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র বলেন, যারা মনে করে বিজেপি’কে সঙ্গে নিয়ে তৃণমূলকে সরানো যাবে বা তৃণমূলকে সঙ্গে নিয়ে বিজেপি’কে রোখা যাবে তারা ভুল করছে। এটি লাল ঝান্ডার পথ নয়। লাল ঝান্ডার পার্টি গরিব মেহনতি সাধারণ মানুষের, যারা লড়াইয়ের ময়দানে থেকে নিজেদের অধিকার বুঝে নেওয়ার লক্ষ্য নিয়ে চলে। গান্ধীজীর হত্যাকারীদের দল বিজেপি, আরএসএস তাদের চালায়। তাদের সঙ্গে লাল ঝান্ডার কোনও আপস নেই। 
অন্যদিকে তৃণমূলের ভূমিকা নিয়ে তিনি বলেন, মমতা ব্যানার্জি আগে বলেছিলেন বিজেপি তৃণমূলের স্বাভাবিক মিত্র। এখন বলছেন, তিনি সরাসরি বিজেপি করেননি, অর্থাৎ গোপনে করেছেন। আরএসএস প্রধান মোহন ভাগবত এরাজ্যে এলে তাঁর খাতির-যত্নের ব্যবস্থা করেন মুখ্যমন্ত্রী। এই আরএসএস’ই নির্বাচন কমিশনে গিয়ে কংগ্রেস ভেঙে তৃণমূল দল তৈরি করতে সাহায্য করেছিল। সে কথা ভোলেননি মমতা ব্যানার্জি। তাই কখনো আরএসএস’র অনুষ্ঠানে গিয়ে তাদের ‘প্রকৃত দেশভক্ত’ বলেন, আরএসএস তাঁকে ‘দুর্গা’ বলে ডাকে। মমতা ব্যানার্জি একবার বলেন, ‘আরএসএস ভালো, মোদী খারাপ’। তারপরে বলেন ‘মোদী ভালো, অমিত শাহ খারাপ’। তারপরে সেই অমিত শাহকে নিয়েই নবান্নে চায়ের আড্ডায় বসেন। আসলে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে বিজেপি বা আরএসএস’র কেউই খারাপ নয়, ওদের বিরোধিতা শুধুমাত্র লোক দেখানো। ওদের আসল লক্ষ্য বামপন্থীদের আটকানো। তাই গ্রামের প্রতিটি বুথে এই দুই শক্তির বিরুদ্ধে জোট বাঁধতে হবে সাধারণ মানুষকে সঙ্গে নিয়ে। 
তৃণমূলী শাসনে দীঘা পর্যটন কেন্দ্রে বছরের শুরু থেকেই হতদরিদ্র হকার পরিবারগুলি আক্রান্ত হচ্ছে। পুলিশ লাগিয়ে দীঘায় হকার ও ছোট ছোট ব্যবসায়ীদের রোজগার বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। এই প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র বলেন, মানুষকে বোঝাতে হবে, কাজ নেই, অর্থনৈতিক সঙ্কট, মূল্যবৃদ্ধি, বেকারি থেকে নজর ঘোরাতে দুই দল মিলে মন্দির-মসজিদ নিয়ে খেলা করছে। 
রাজ্যের পঞ্চায়েতে শাসকদলের দুর্নীতি প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র বলেন, বামপন্থীরা ৩৪ বছর এরাজ্যে সরকার পরিচালনা করেছে। সেই সময়ে  যোগ্যরাই কেন্দ্রীয় প্রকল্পের সুবিধা পেতেন। অথচ তৃণমূলের সরকারের সময়ে পঞ্চায়েত স্তরে আবাস যোজনা সহ সমস্ত সরকারি প্রকল্পে সীমাহীন দুর্নীতি ও স্বজনপোষণের সুযোগ নিয়ে কেন্দ্র টাকা বন্ধ করেছে। কেন্দ্রের এই পদক্ষেপে সাধারণ গরিব খেটে খাওয়া মানুষরাই বিপদে পড়ছেন। সেকথা কেন্দ্রীয় সরকার ভাবছে না। আমরা দাবি করছি, যারা দুর্নীতি করেছে তাদের চিহ্নিত করে উপযুক্ত শাস্তির ব্যবস্থা করা হোক। গরিব সাধারণ মানুষদের সরকারি প্রকল্পের সুযোগ দেওয়া হোক।
নন্দকুমারের ঘটনা প্রসঙ্গে সূর্য মিশ্র বলেন, আবাস যোজনা সহ সরকারি প্রকল্পের দুর্নীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার একমাত্র বামপন্থীরাই। নন্দকুমারে সেই আন্দোলনের ওপরেই পুলিশ অত্যাচার চালিয়েছে। নিজেদের চুরি ও দুর্নীতি আড়াল করতে পুলিশকে দিয়ে এই ঘটনা ঘটিয়েছে তৃণমূল। এ বিষয়ে সূর্য মিশ্র আরও বলেন, নিজের ঘর চাইতে গিয়েছিলেন আরজুনা বিবি। তার জন্য একজন মহিলাকে রাস্তায় বিবস্ত্র করে অত্যাচার করেছে পুলিশ। পার্টি অফিসের মধ্যে ঢুকে বর্বর হামলা চালানো হয়েছে। এই সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে আদালতে লড়াই হবে। শেষ দেখে ছাড়বো আমরা।
সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে সূর্য মিশ্র বলেন, পায়ের তলা থেকে মাটি সরে যাচ্ছে আর লাল ঝান্ডার শক্তি বাড়ছে দেখে আতঙ্কিত হয়ে শুভেন্দু অধিকারী এখন নন্দীগ্রামে ‘‘হিন্দু বামপন্থীরা’’ তাকে ভোট দিয়েছে বলে দাবি করছেন। এটা হাস্যকর। তিনি কি মানুষের ভোটদান দেখেছেন? 
সভায় সিপিআই(এম)’র কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য অমিয় পাত্র বলেন, কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই সরকারই গরিব-বিরোধী, শ্রমিক-কৃষকের বিরোধী। এদের শোষণের জন্যই কৃষি উপকরণের দাম আকাশছোঁয়া। দাম বাড়াচ্ছে সরকার, লাভ নিচ্ছে কর্পোরেট পুঁজিপতিরা। আর অসহায় অবস্থা কৃষক-খেতমজুরদের। বামপন্থীদের লড়াইয়ের ফলে ১০০ দিনের কাজের প্রকল্প চালু হয়েছিল। এরাজ্যে কি অবস্থা এই প্রকল্পের? গরিব মানুষ কাজ পাচ্ছেন না কেন? কেন তৃণমূলের স্বজনপোষণ চলছে? 
সভায় সিপিআই(এম)’র পূর্ব মেদিনীপুর জেলা সম্পাদক নিরঞ্জন সিহি বলেন, বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে প্রতি ছ’মাসে গ্রামসভা হতো। বর্তমান সরকার গ্রামসভা করে না। বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাতায় সই করে গ্রামসভার নামে চালিয়ে দেয়, প্রকল্পের টাকা নয়ছয় করে। পূর্ব মেদিনীপুর জেলা পরিষদের দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, শৌচালয়ের জন্য জেলা পরিষদের বরাদ্দ ২৫ লক্ষ টাকায় শৌচালয় আর তার ওপরে তৃণমূলের পার্টি অফিস তৈরি হয়েছে চণ্ডীপুর বাজারে! সরকারি টাকায় নিজেদের মতো করে ভোগবিলাস করছে তৃণমূল।
এদিকে রবিবারই দীঘায় সারা ভারত খেতমজুর ইউনিয়নের পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য কমিটির দু’দিনের সভা শুরু হয়েছে।

 

Comments :0

Login to leave a comment