TMC DELHI REGA

রেগায় দুর্নীতি হয়েছে মেনেই তৃণমূলের দিল্লি অভিযান

জাতীয়

 রেগায় এরাজ্যে দুর্নীতিকে স্বীকৃতি দিয়ে দিল্লিতে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলনে যাচ্ছে তৃণমূল! 
রাজধানীতে ১০০ দিনের টাকা আদায় নিয়ে ধরনায় বসার আগে দুর্নীতি কবুল করার চাঞ্চল্যকর অভিযোগ শোনা গেছে খোদ তৃণমূল সাংসদ অভিষেক ব্যানার্জির কাছ থেকেই। শনিবার ভার্চুয়াল মাধ্যমে অভিষেক ব্যানার্জি বলেন,‘‘ আজকে কেন্দ্র বলছে, ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি হয়েছে। ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি হলে কে বারণ করেছে ব্যবস্থা নিতে?’’ তারপরই সাংসদের মুখে শোনা গেছে, ‘‘ ২০০০ লোক যদি দুর্নীতি করে, ২০০ লোক যদি দুর্নীতি করে, ২০টা লোক যদি দুর্নীতি করে, তারজন্য আড়াই কোটি লোকের টাকা আটকে রাখবেন? দুর্নীতি হলে ব্যবস্থা নিন।’’ 
১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির অভিযোগ আগেই মেনে নিয়েছে রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তর। ফের যাতে রাজ্যে ১০০ দিনের কাজ চালু হয়, তার জন্য রাজ্যের পঞ্চায়েত ও গ্রামোন্নয়ন দপ্তর থেকে বেশ কিছু ব্যবস্থাও নেওয়া হয়েছে। কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের পাঠানো টিমের শর্ত মেনে এই ব্যবস্থা নেওয়ার কথা জানিয়েছে রাজ্য সরকারই। কিন্তু তারপরেও এরাজ্যে ১০০ দিনের কাজ চালু হয়নি। এমনকি কাজ করেও বকেয়া টাকা আসেনি। প্রশাসনিক পদক্ষেপ নেওয়া আর দলের রাজনৈতিক কর্মসূচিতে দিল্লিতে ধরনায় বসার আগে অভিষেক ব্যানার্জি এদিন যেভাবে দুর্নীতিকে মান্যতা দিয়ে মোদী সরকারের কাছে ‘দুর্নীতি হলে ব্যবস্থা নিন’ বলেছেন তা যথেষ্টই তাৎপর্যপূর্ণ। 
দুর্নীতিকে মান্যতা দিয়ে দলের দিল্লি যাত্রা প্রসঙ্গে সিপিআই(এম) রাজ্য কমিটির সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘‘কেন্দ্রীয় সরকার টাকা আটকাচ্ছে, কিন্তু একটা দুর্নীতিগ্রস্তের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। যেমন ইডি, সিবিআই কিছুতেই তদন্ত করে দুর্নীতির টাকা কোথায় গেল তার খোঁজ দিচ্ছে না, ঠিক তেমনই কেন্দ্রের গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক কোনও ব্যবস্থা নিচ্ছে না। দিল্লি থেকে কলকাতা বোঝাপড়া করেই সব হচ্ছে।’’ 
‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন’ দাবি করে দিল্লি যাবে তৃণমূলের মন্ত্রী, সাংসদরা। ২ অক্টোবর রাজঘাটে গান্ধী মূর্তিতে মাল্যদান করে ধরনায় বসবেন মন্ত্রীরা। পরদিন অর্থাৎ ৩ অক্টোবর যন্তর মন্তরে দলের তরফে ধরনা কর্মসূচিতে আগামী দিনে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই কী হবে তা ঠিক করে জানাবেন অভিষেক ব্যানার্জি। দিল্লির সভায় যাওয়ার জন্য বাস নিয়ে এদিনই রওনা দিয়েছেন দলের কর্মীরা। বিমানে চড়ে রওনা হচ্ছেন ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের জেলা পরিষদের সভাধিপতি থেকে পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতিরা। দলের দিল্লি যাত্রা নিয়ে মহম্মদ সেলিম বলেছেন,‘‘ ১০০ দিনের কাজ, বকেয়া টাকা চাইতে গ্রামের মানুষ এসেছিল কলকাতায় খেতমজুরদের সমাবেশে। দিল্লিতে যারা যাচ্ছে, সেলফি তুলে তাদের পোশাক-আশাক, জামাকাপড়ের যা ছবি দেখছি, তারা কি জবকার্ড হোল্ডার? প্রথমে তো এদের সব কার্ড বাতিল করা উচিত। এরাই তো দুর্নীতির কারিগর।’’ 
ট্রেন বাতিল, তড়িঘড়ি বাসের ব্যবস্থা করে দিল্লি যাওয়া নিয়ে এরাজ্যে মিডিয়া থেকে শাসক দলের মধ্যে সাজো সাজো রবের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা দিল্লিতে গিয়ে মোদী সরকারের বিরুদ্ধে চরম আন্দোলনে নামার মুহূর্তে রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী তথা দলের সর্বময় নেত্রী মমতা ব্যানার্জির নিস্তব্ধ অবস্থান। দলের পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচিতে দিল্লির ধরনায় মুখ্যমন্ত্রীর উপস্থিত থাকার কথা ছিল। কিন্তু স্পেন থেকে ফেরার পর পায়ের সমস্যায় ১০ দিন বাড়ি থেকে বের হবেন না বলে জানা গেছে। চিকিৎসকদের পরামর্শে বিশ্রাম নিলেও এদিন নবান্নে মুখ্যসচিবের সঙ্গে জেলাশাসকদের ভার্চুয়াল বৈঠকে বাড়ি থেকে যোগ দিয়ে নিম্নচাপের দুর্যোগে প্রশাসনকে কীভাবে কাজ করতে হবে তার পরামর্শ দিয়েছেন মমতা ব্যানার্জি। অথচ ৬১ লক্ষ টাকা জমা দেওয়ার পর দিল্লির স্পেশাল ট্রেন বাতিল করে দেওয়া নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী কোনও মন্তব্য সামনে আসেনি। এমনকি এদিন ৫০টি বাসে করে দলের নেতাকর্মীদের দিল্লি যাত্রার আগেও নীরব ছিল মমতা ব্যানার্জির এক্স হ্যান্ডেলের বার্তা। গত ক’দিন ধরে এশিয়ান গেমসে সেনাজয়ী ভারতীয়দের অভিনন্দন জানাতেই দেখা যাচ্ছে। সরকার ও দলের তরফে দাবি করা রাজ্যের প্রতি কেন্দ্রের ১লক্ষ ১৫ হাজার কোটি টাকার বঞ্চনার বিরুদ্ধে আন্দোলনে মমতা ব্যানার্জি রহস্যজনক নিজেকে গুটিয়ে রেখেছেন।  
ঘটনা হলো, ৩ অক্টোবর অভিষেক ব্যানার্জির ইডি’র কাছে হাজিরা দেওয়ার দিন। তিনি যে ওইদিন ইডি দপ্তরে আসছেন না, এদিন ফের একবার তা স্পষ্ট করে দিয়েছেন। রাজনৈতিক মহলের মতে, নিজেকে গুটিয়ে রেখে মমতা ব্যানার্জি রাজনৈতিকভাবে দিল্লির যাত্রার কর্মসূচি সচেতনভাবেই ভাইপোর ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। এমনিতেই দুর্নীতির তদন্তে কেন্দ্রীয় সংস্থা ইডি’র সীমাহীন গাফিলতিতে কলকাতা হাইকোর্টে বিচাপতির চরম সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তদন্তকারী সংস্থাকে। এমনকি তদন্তের আইও (ইনভেস্টিগেটিং অফিসার)-কে পর্যন্ত বদলে দিয়েছে আদালত। বিচার বিভাগ থেকে ধাক্কা খেয়ে শেষ পর্যন্ত যদি তদন্তকারী সংস্থা নড়েচড়ে বসে কোনও কড়া ব্যবস্থার দিকে যায় তাহলে বিপদ বাড়বে সাংসদের। দিল্লির আন্দোলনে অভিষেক ব্যানার্জির ভূমিকার জন্যই তখন রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তুলে প্রচারে নামার রাস্তা তৈরি করা যাবে বলে রাজনৈতিক মহল মনে করছে। 
ফলে গরিব মানুষের জন্য কেঁদেকেটে দিল্লি গিয়ে কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের ডাক দেওয়া আসলে স্রেফ লোক দেখানো। এরাজ্যে ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতি যে হয়েছে তা মেনে চলতি বছরের শুরুতেই রাজ্য সরকার জেলাশাসকদের সতর্ক করেছিল। রেগার জন্য কীভাবে ‘অ্যানুয়াল অ্যাকশান প্ল্যান’ তৈরি করতে হবে তার নির্দেশিকা জারি করে বলা হয়েছিল, এমন কাজ করতে হবে তা যাতে দৃশ্যমান থাকে। ‘‘নো অ্যসেট, নো ওয়ার্ক’’-এর মাপকাঠিতেই রেগার কাজ করতে হবে। আসলে অতীতে রেগার কাজে ভুরি ভুরি দুর্নীতির জন্য টাকা খরচ হওয়ার পরও তদন্তে নেমে কোনও কাজের অস্তিত্ব টের পাওয়া যায়নি। দিল্লি যাওয়ার আগে খোদ দলের নেতার কাছ থেকেই এল ১০০ দিনের কাজে দুর্নীতির স্বীকৃতি। কিন্তু তারপরেও কেন্দ্র কোনও ব্যবস্থা নেয়নি। কেন্দ্র ও রাজ্যের টানাপড়েনে শেষ পর্যন্ত কাজ না মেলায় বিপন্ন গ্রামের গরিব মানুষ।

 

Comments :0

Login to leave a comment