17th Conference of CITU

সংগঠনকে আরও শক্তিশালী করার ডাক সিআইটিইউ সম্মেলনে

জাতীয়

17th Conference of CITU

সত্যব্রত ভট্টাচার্য


ব্যাঙ্গালোরে আয়োজিত পাঁচ দিনের সিআইটিইউ ১৭ তম সর্বভারতীয় সম্মেলনের তৃতীয় দিন ছিল শুক্রবার। বৃহস্পতিবার সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক তপন সেন সাংগঠনিক প্রতিবেদন পেশ করেন। শুক্রবার সেই প্রতিবেদনের ওপর আলোচনা করেন পশ্চিমবঙ্গ, কেরালা, ত্রিপুরা সহ বিভিন্ন রাজ্যের প্রতিনিধিরা। বিভিন্ন ক্ষেত্রে  অস্থায়ী চুক্তিভুক্ত কর্মীদের দুর্দশা তুলে ধরেন।  আগামী ৫-এপ্রিল সংসদে কিষান মজদুর মিলিত বৃহৎ পদযাত্রাকে সফল করে তোলার আহ্বান জানান তাঁরা। গার্গী চ্যাটার্জি বলেন, ওই পদযাত্রাকে  সফল করে তুলতে পশ্চিমবঙ্গের প্রতিটি বুথে সিআইটিইউ প্রচার সমাবেশ করবে। 


এদিন বীমা ক্ষেত্রের সংকটময় পরিস্থিতি এবং সেই সঙ্গে বীমা কর্মী ও এজেন্টদের ভয়ংকর সমস্যার ওপর আলোকপাত করেন পশ্চিমবঙ্গ থেকে বিবেকাশিষ মিশ্র। তৃণমূল সরকারের প্রবল আক্রমণের মুখে দাঁড়িয়েও সিআইটিইউ শ্রমিক কর্মীদের মধ্যে কিভাবে লড়াইকে আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে পেরেছে তা ব্যক্ত করেন সুমহান চক্রবর্তী। সিমেন্ট শিল্পে হাজার হাজার অস্থায়ী শ্রমিকদের অবস্থা তুলে ধরেন নিশীথ চৌধুরী। ওষুধ শিল্পে শিল্পে সংকটময় পরিস্থিতি ব্যাখ্যা করেন শান্তনু চ্যাটার্জি। অন্যদিকে জ্যোতিরূপ ভট্টাচার্য বিড়ি, ইটভাটা সহ অসংগঠিত ক্ষেত্রের গরিব শ্রমজীবী মানুষের প্রতি বঞ্চনা ও তৃণমূলের  চুড়ান্ত অসহযোগিতার কথা তুলে ধরেন। 


দেশের বিভিন্ন রাজ্য থেকে আগত প্রতিনিধিরা বিজেপি এবং রাজ্যে রাজ্যে বিজেপি সহযোগী সরকারের অনৈতিকতার আরও বহু বিষয়ের প্রসঙ্গ তুলে ধরেন তাঁদের বক্তব্যে। বন্দর শিল্পের রুগ্নতা, ওষুধ শিল্পে জিএসটির ফাঁস, গিগ ওয়ার্কার্সদের বিপদ, ইস্পাত ও কয়লা ক্ষেত্রের বেসরকারিকরণ, সংকট সৃষ্টি, সরকারের শ্রমিক বিরোধী নীতির ফলে শ্রমিক অসন্তোষ, বিদ্যুৎ- রেল, সড়ক পরিবহন কর্মী থেকে ডোমেস্টিক ওয়ার্কারদের সমস্যার কথা উঠে এসেছে এদিনও। এসেছে অঙ্গনওয়ারী ও আশা মিড ডে মিল কর্মীদের বঞ্চনার কথা। এর সঙ্গে এই সমস্যাগুলোর মোকাবিলার সিআইটিইউ কিভাবে এগিয়ে এসে কর্মী শ্রমিকদের পাশে দাঁড়িয়েছে তাও শোনা গিয়েছে প্রতিনিধিদের মুখে। পরিসংখ্যান বলছে শুধুমাত্র অসংগঠিত ক্ষেত্রের শ্রমিক এবং প্রকল্প কর্মীদের মধ্যে থেকেই সিআইটিইউ-র ৭০ শতাংশ সদস্য হয়েছে। মানুষের সারা আছে, সুতরাং সদস্য সংখ্যা আরও বাড়ানোর উদ্যোগ নিতে হবে সংগঠনকে। 


দেশজুড়ে প্রতিটি সংগঠিত ও অসংগঠিত ক্ষেত্রে সিআইটিইউ-কে আরও বেশি মজবুত ও শক্তিশালী করে তোলার ডাক দিলেন সম্মেলনে আগত প্রতিনিধিরা। শুক্রবার তাঁরা বলেন,  সংগঠিত ক্ষেত্র হোক বা অসংগঠিত,  শ্রমিকরা আন্দোলনের হাতিয়ার হিসেবে লাল ঝান্ডাকেই ভরসা করেন। সিআইটিইউ-কে সেই প্রতিটি শ্রমিকের কাছে পৌঁছাতে হবে। 
প্রতিনিধিরা বলেন, কোথায় আমরা সঠিকভাবে এগোতে পারছি না, সেই কারণগুলি চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় কাজ করতে হবে, দূর করতে হবে ঘাটতিগুলি। এই ক্ষেত্রে এক রাজ্যের সাফল্যের উদাহরণ গ্রহণ করে তা প্রয়োগ করতে হবে অন্য রাজ্যে। তবেই আরও সুসংহতভাবে এগোবে সিআইটিইউ। আর এখানেই এই সর্বভারতীয় সম্মেলনের গুরুত্ব রয়েছে। কেন্দ্রের নতুন শ্রম আইন বাতিলের দাবিতে এদিন সোচ্চার হন প্রতিনিধিরা। জোরালো দাবি তোলেন স্থায়ী নিয়োগের। 


বক্তব্য রাখতে গিয়ে সারা ভারত কৃষক সভার সাধারণ সম্পাদক বিজু কৃষ্ণান এদিন বলেন, কৃষক হোক বা শ্রমিক, মোদী সরকার সবার ওপরেই কালা কানুন নামিয়ে এনেছে। একযোগে আরও বড় আকারে আন্দোলন গড়তে পারলে আমরা জিতব। সেই সময় কিন্তু আসন্ন। গত কয়েক বছরে বেশ  কয়েক লক্ষ কৃষক শ্রমিক আত্মহত্যা করেছেন। চারদিকে কাজের হাহাকার চলছে। ৫ এপ্রিল পদযাত্রা ঘোষিত হয়েছে। তা অবশ্যই ভাবিয়ে তুলবে শাসককে। আমাদের অনেক বেশি ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে, শক্তি আরও বাড়াতে হবে। তিনি সাম্প্রতিক কৃষক আন্দোলন এবং মহারাষ্ট্রে বিদ্যুৎ কর্মীদের আন্দোলনের জয়ের সাফল্যের কথাও তুলে ধরেন। 


ডিওয়াইএফআই সভাপতি এ রহিম বলেছেন, ভারতের সবচেয়ে বড় সমস্যা বেকারত্ব এবং কর্মচ্যুতি। এই পরিস্থিতি পাল্টাতে হবে। লাল ঝান্ডাকে সামনে রেখে আরও ব্যাপক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। এসএফআই সভাপতি ভি পি শানু বলেন, শিক্ষাকে সহজপ্রাপ্ত করে সবার জন্য ছড়িয়ে দিতে না পারলে দুর্দশা কাটবে না। শিক্ষা এবং জ্ঞান শ্রমিক এবং কৃষকের মধ্যে দৃঢ় সংযোগ স্থাপনে সহায়ক হবে। 


এদিন কেরালার বাম সরকারের ওপর মোদীর ক্রমাগত বিবিধ আক্রমণ ও বঞ্চনার প্রতিবাদে একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। সারা বিশ্বের  শ্রমিকদের লড়াই সংগ্রামকে সংহতি জানিয়েও অপর একটি প্রস্তাব পাশ হয়েছে। এছাড়া সর্বনাশা ৪টি শ্রমকোড বাতিলের দাবিতেও একটি প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে সম্মেলন কক্ষে। নেতৃবৃন্দ বলেন, একদিকে মজুরি কমছে, সুযোগ সুবিধা কমছে, অন্যদিকে কাজের সময়সীমা বাড়ছে। ৮ ঘন্টার জায়গায় ১২ ঘন্টা কাজ করানো হচ্ছে বহু ক্ষেত্রে। শোষণ ও বঞ্চনার শিকার হচ্ছেন শ্রমিকরা। এ যেন সেই দাসত্ব প্রথা ফিরে আসছে।  এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ আরও তীব্র হবে। সম্মেলনের তৃতীয় দিনে মোট ৫৮ জন প্রতিনিধি আলোচনায় অংশ নেন। সিআইটিইউ সাধারণ সম্পাদক আগামী দিনের করণীয় কাজ সম্পর্কিত প্রস্তাব পেশ করেন সম্মেলন মঞ্চ থেকে।  


ছবি: রবীন গোলদার

 

 

Comments :0

Login to leave a comment