Mamata Banerjee

বিজেপি বিরোধী জোটে থাকবেন না, জানিয়ে দিলেন মমতা

জাতীয় রাজ্য

লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোটে তৃণমূল কংগ্রেস থাকবে না, জানিয়ে দিলেন মমতা ব্যানার্জি। 
সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বামফ্রন্ট সমর্থিত কংগ্রেস প্রার্থীর কাছে পর্যুদস্ত হওয়ার পরে বৃহস্পতিবার নবান্নে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়েছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। সেখানেই সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দেন,‘‘আমরা কারোর সাথে থাকব না। আমরা একাই লড়ব।’’ 
চলতি বছর শেষ হলেই দেশে লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনকে ঘিরে ইতিমধ্যে বিজেপি বিরোধী সমস্ত রাজনৈতিক দলগুলি একত্রিত হওয়ার চেষ্টা চালাচ্ছে। সিপিআই(এম)-ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে সমস্ত গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ দল ও শক্তিগুলিকে ঐক্যবদ্ধ করার প্রয়াসে যুক্ত হয়েছে। সম্প্রতি কংগ্রেসের রায়পুর অধিবেশন থেকে প্রস্তাব নেওয়া হয়েছে, আগামী লোকসভার ভোটে বিজেপি’র বিরুদ্ধে সমমনোভাবাপন্ন রাজনৈতিক দলগুলির সাথে একযোগে কাজ করার। ঠিক যে সময় গোটা দেশে লোকসভা নির্বাচনের প্রস্তুতিতে বিজেপি’র বিরুদ্ধে জোটের আবহ তৈরি হচ্ছে, ঠিক তখনই জোট থেকে নিজেকে সুকৌশলে সরিয়ে রাখার বার্তা দিয়ে রাখলেন মমতা ব্যানার্জি। আগামী ২০২৪ সালে লোকসভা নির্বাচনে বিজেপি বিরোধী জোটটা তাহলে কী হবে? জবাবে মমতা ব্যানার্জির তাৎপর্যপূর্ণ মন্তব্য,‘‘আমরা একা লড়ব। আমরা কারোর সাথে যাবো না। যারা বিজেপিকে হারাতে চায়, বিশ্বাস করি তারা আমাদের ভোট দেবে। আর যারা কংগ্রেস, সিপিএম’কে ভোট দেবে, তারা আসলে বিজেপিকেই ভোট দেবে। সাগরদিঘির ভোটে সেই সত্যতা উদ্ঘাটিত হয়ে গেছে।’’
  মুখ্যমন্ত্রীর বিজেপি বিরোধী জোটে শামিল না হওয়ার বার্তা সম্পর্কে সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমকে এদিন প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন,‘‘মোদী লুট আর দিদি লুটের বিরুদ্ধে যত বেশি বাংলার মানুষ ঐক্যবদ্ধ হবে, তত বেশি বিজেপি ও তৃণমূল কাছাকাছি আসবে। উনি (মমতা) আগেই বলেছেন, প্রত্যক্ষভাবে বিজেপি করেননি। এখনও তিনি আরএসএস’র প্রতি তাঁর দায়বদ্ধতা প্রমাণ করতে প্রত্যক্ষভাবে করলেও বিজেপি’র এই ক্ষয়িষ্ণু সমর্থনকে ফিরিয়ে আনতে প্রয়াস চালিয়ে যাবেন।’’ 
  আসলে গোটা দেশে বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কাছে মমতা ব্যানার্জির বিশ্বাসযোগ্যতা এখন কার্যত তলানিতে। রাষ্ট্রপতি নির্বাচনের সময় তৃণমূল কংগ্রেসের রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী যশবন্ত সিনহাকে সমর্থন জানিয়েছিল বিজেপি বিরোধী দলগুলি। কিন্তু আকস্মিকভাবেই নির্বাচনের কয়েকদিন আগে মমতা ব্যানার্জি বিজেপির রাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী দ্রৌপদী মুর্মুর সমর্থনে মন্তব্য করে বসেন। পরবর্তীকালে উপরাষ্ট্রপতি নির্বাচনে বিরোধী জোটের প্রার্থী হয়েছিলেন কংগ্রেসের বর্ষীয়ান নেত্রী মার্গারেট আলভা। কিন্তু সমস্ত বিজেপি বিরোধী দলকে অবাক করে দিয়ে মমতা ব্যানার্জি বিজেপির উপরাষ্ট্রপতি পদপ্রার্থী জগদীপ ধনখড়ের সমর্থনে ভোটদানে বিরত থাকার সিদ্ধান্ত নেয়। রাজ্যপাল থাকার সময় জগদীপ ধনখড়কে সরানোর দাবিতে সরব মুখ্যমন্ত্রীর এহেন ভূমিকা দেখার পর কার্যত বিজেপি বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলির কার্যত তৃণমূল কংগ্রেসের প্রতি অবিশ্বাসের বাতাবরণ তৈরি হয়েছে।
  অথচ এদিন সাগরদিঘির উপনির্বাচনে বিপুল ভোটে পরাস্ত হওয়ার পর মমতা ব্যানার্জির মুখে এসেছে অনৈতিক জোটের তত্ত্ব। সাগরদিঘিতে দলের পরাজয় নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন,‘‘সাগরদিঘির ভোটে আমরা পরাস্ত হয়েছি। ওখানে একটা অনৈতিক জোট কাজ করেছে। এরআগে বিজেপি’র ওখানে ২২শতাংশ ভোট ছিল। এবার তারা ভোটটা কংগ্রেসকে ট্রান্সফার করেছে। এবার ১৩ শতাংশ ভোট পেয়েছে। সিপিএম, কংগ্রেস ওখানে জোট করেছিল। বিজেপি’র ভোটটা ওখানে গেছে।’’ 
 তৃণমূল কংগ্রেস ও বিজেপি’র বিরুদ্ধে মানুষের ক্ষোভের প্রতিফলনে যে কেন্দ্র ও রাজ্যের দুই শাসক দল পর্যুদস্ত হয়েছে তা মানতে চাননি মুখ্যমন্ত্রী। বরং তিনি এদিন রাগত স্বরে প্রশ্ন তোলেন, সাগরদিঘির ভোটে বগটুই কেন আসবে? মমতা ব্যানার্জি বলেছেন,‘‘বগটুই তৃণমূল করেনি। বরং বগটুইয়ের ঘটনার পর আমি গিয়েছিলাম। পরিবারগুলিকে চাকরি দিয়েছি। অর্থ সাহায্য করেছি।’’ যদিও বগটুইয়ের ঘটনা যে তৃণমূলের অন্তর্দ্বন্দ্বের ফলেই ঘটেছে, তা পরবর্তী ঘটনাক্রমে দিনের আলোর মতো স্পষ্ট। 
  ৩৪ বছরে বামফ্রন্ট রাজত্বের প্রসঙ্গ তুললেও এদিন ফের ‘ফাইল না থাকার’ আক্ষেপ ছিল মমতা ব্যানার্জি গলায়। সাগরদিঘির ভোটে কংগ্রেস-সিপিআই(এম)-বিজেপি জোট বোঝাতে গিয়ে মমতা ব্যানার্জি উল্লেখ করেছেন, ‘‘কংগ্রেস তো আজকে বিজেপি’র কাছে গ্রেটফুল। বাংলায় আমাদের সব ছেলেদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে। কটা কংগ্রেস, সিপিএম’র বাড়িতে তল্লাশি হয়েছে? ৩৪ বছর ধরে সরকার চালিয়েছে। একটাও ফাইল নেই। যত দোষ নন্দ ঘোষ তৃণমূল কংগ্রেস।’’
 সাগরদিঘিতে পরাস্ত হয়ে ক্ষুব্ধ মুখ্যমন্ত্রী এদিন সিপিআই(এম) ও কংগ্রেসের বিরুদ্ধে সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলার অভিযোগ পর্যন্ত করতে ছাড়েননি। এমনকি কংগ্রেস সাংসদ অধীর চৌধুরিকে ব্যক্তিগত পর্যায়ে আক্রমণ করে মমতা ব্যানার্জি সাগরদিঘির ভোটে বিজেপি’র থেকেও বেশি সাম্প্রদায়িক কার্ড খেলার অভিযোগ করেন কংগ্রেস ও সিপিআই(এম)’র বিরুদ্ধে। তাই সবদিক বিবেচনা করে আগামী লোকসভা ভোটে তিনি বিজেপি বিরোধী জোটে শামিল না হওয়ার সিদ্ধান্ত আগাম জানিয়ে রাখলেন।

Comments :0

Login to leave a comment