Exit poll

ত্রিপুরায় পরিবর্তন নিশ্চিত, বলছে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস

জাতীয়

মেঘালয় ও নাগাল্যান্ডের ভোট মিটতেই সামনে এল বুথ ফেরত সমীক্ষা। এদিন রাত পর্যন্ত চারটি সংস্থার করা সমীক্ষা সামনে এসেছে। নাগাল্যান্ড এবং মেঘালয়ের ক্ষেত্রে চারটি সংস্থাই একইরকম প্রবণতা দেখালেও ত্রিপুরার ক্ষেত্রে তা বিভাজিত হয়ে গেছে। একটি সংস্থার সমীক্ষায় ত্রিপুরায় বিজেপি’র নিশ্চিত গরিষ্ঠতা দেখানো হলেও বাকি তিনটির ক্ষেত্রে বিজেপি, বামফ্রন্ট-কংগ্রেস এবং তিপ্রা মথার মধ্যে ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতার ইঙ্গিত রয়েছে। ওই সমীক্ষাগুলি মানলে ত্রিপুরায় ত্রিশঙ্কু বিধানসভার সম্ভাবনা রয়েছে। ত্রিপুরার স্থানীয় কেবল চ্যানেল নিউজ ২৪ এর সমীক্ষায় বামফ্রন্ট-কংগ্রেস-কেই এগিয়ে রাখা হয়েছে। 
ইন্ডিয়া টুডে- অ্যাক্সিস মাই ইন্ডিয়া’র করা সমীক্ষায় বিজেপি’কে ৩৬ থেকে ৪৫টি আসন দেওয়া হয়েছে। বামফ্রন্ট-কংগ্রেসকে ৬ থেকে ১১ এবং তিপ্রা মথাকে ৯ থেকে ১৬টি আসন দিয়েছে। এরমধ্যে বিজেপি ৪৪টি এবং জোটসঙ্গী আইপিএফটি-কে একটি আসন দেওয়া হয়েছে। বামফ্রন্ট-কংগ্রেসের আসনের মধ্যে কংগ্রেসকে ১-২টি আসন দেওয়া হয়েছে। ভোট শতাংশের হিসাবে বিজেপি জোটকে ৪৫শতাংশ, বামফ্রন্ট-কংগ্রেসকে ৩০ শতাংশ এবং তিপ্রা মথাকে ২০ শতাংশ ভোট দেখানো হয়েছে। সমীক্ষা অনুযায়ী ত্রিপুরার উপজাতি ভোট একতরফাভাবে পাবে এবং তার জেরেই বিধানসভায় বামফ্রন্ট-কংগ্রেসকে পিছনে ফেলে দ্বিতীয় স্থানে উঠে আসবে। 
জন কি বাতের সমীক্ষায় বলা হয়েছে বিজেপি জোট পাবে ২৯ থেকে ৪০টি আসন, বামফ্রন্ট-কংগ্রেসকে দেওয়া হয়েছে ৯-১৬টি আসন এবং তিপ্রা মথাকে দিয়েছে ১০-১৪টি আসন। টাইমস নাও- ইটিজি রিসার্চের সমীক্ষায় পরিষ্কার ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। বিজেপিকে ২১ থেকে ২৭টি আসন দেওয়া হয়েছে। বামফ্রন্ট-কংগ্রেসকে ১৮ থেকে ২৪টি আসন দেওয়া হয়েছে। তিপ্রা মথাকে ১২ থেকে ১৭টি আসন দেওয়া হয়েছে। জি নিউজ মার্টিনেজের সমীক্ষাতেও ত্রিশঙ্কুর ইঙ্গিত আছে। বিজেপিকে সর্বনিম্ন ২৯টি আসন দেওয়া হয়েছে, সর্বাধিক ৩৬। বামফ্রন্ট-কংগ্রেসকে ১৩ থেকে ২১টি আসন এবং তিপ্রা মথাকে ১১ থেকে ১৬টি আসন দেওয়া হয়েছে। চারটির মধ্যে তিনটি সমীক্ষায় বিজেপি’কে সর্বনিম্ন যে আসন দেওয়া হয়েছে, তাতে গরিষ্ঠতা থেকে দূরেই থাকছে গেরুয়া পার্টি। সেটা হলে তিনটি সমীক্ষাই ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দিয়েছে। 
ত্রিপুরার স্থানীয় কেবল চ্যানেল নিউজ ২৪ এর সমীক্ষায় বামফ্রন্ট-কংগ্রেসকেই এগিয়ে রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে বামফ্রন্ট-কংগ্রেস মিলিতভাবে ৩০টি আসন পাবে। ১২টি করে আসন দেওয়া হয়েছে বিজেপি এবং তিপ্রা মথা’কে। ৬টি আসন তারা অনিশ্চিত বলে জানিয়েছে। 
এদিকে বুথ ফেরত সমীক্ষা সামনে আসতেই ভোটের পর থেকে ঝিমিয়ে থাকা বিজেপি কর্মীদের চাঙ্গা করতে নেতৃত্ব তৎপর হয়ে ওঠেন। ত্রিপুরার নানা জায়গায় এদিন রাত পর্যন্ত আতসবাজি ফাটিয়ে উৎসব করেন বিজেপি’র নেতা-কর্মীরা। বিভিন্ন জায়গায় নতুন উদ্যমে সিপিআই (এম) সহ বিরোধী দলের কর্মীদের উপরে আক্রমণ করা হয়েছে। ইন্ডিয়া টুডের সমীক্ষাকে খুবই গুরুত্ব দিয়ে তুলে ধরে রাজ্য বিজেপি’র সোশাল মিডিয়ার অফিসিয়াল পেজগুলিতে একের পর এক পোস্ট করা হয়েছে। একটি পোস্টের শিরোনাম এইরকম- ‘একদা মানিক সরকারকে ‘সৎ’ মুখ্যমন্ত্রীর উপাধি দেওয়া সেই ‘সৎ’ চ্যানেল ইন্ডিয়া টুডে গ্রুপের সমীক্ষায় বলছে ২০২৩ আবার বিজেপি’র জয় নিশ্চিত’! রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের অভিমত, সমীক্ষাকে বিশ্বাসযোগ্য করাতেই কি বিজেপি-কে এমন প্রচার করতে হচ্ছে? জয়ের ইঙ্গিত মিলতে ত্রিপুরার বিজেপির ফেসবুক পেজেই এক নেতার গানের ভিডিও আপলোড করা হয়েছে, যাতে বলা হচ্ছে সিপিএম হেলে দুলে যাবে শ্মশানঘাটে। বিরোধীদের অভিযোগ, এটা আসলে সরাসরি হিংসায় মদত দেওয়ার জন্য করা হয়েছে। মানুষ প্রতিরোধ করে ভোট দেওয়ার পরে বিজেপি ফলাফল নিয়ে খুবই সংশয়ে আছে। এদিন বুথ ফেরত সমীক্ষাকে ব্যবহার করে কর্মীদের মনোবল বাড়ানোর আপ্রাণ চেষ্টা শুরু হয়েছে। 
অন্যদিকে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেসের পক্ষ থেকে বুথ ফেরত সমীক্ষা সামনে আসার আগে থেকেই বলা হয়েছে এগুলি বিজেপি’র জয় দেখাবে। জনগণ যাতে বিভ্রান্ত না হন। সরকার তাদেরই হবে বলে দুই দলের নেতারা বলেছেন। রবিবারের মতো সোমবারও সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি সাব্রুম এবং বিলোনিয়া কেন্দ্রের একাধিক জায়গায় সভা করেন। সেখানে তিনি বলেন, বিগত ৫বছর রাজ্যের মানুষ জঙ্গলের রাজত্ব দেখেছে। এর থেকে মুক্তি পেতে মানুষ স্বতঃস্ফূর্ত ভাবে ভোট দিয়েছেন। কোথাও কোথাও ভোটদানে বাধা পেলেও মানুষ সংগঠিত হয়ে ভোট দিয়েছেন। সরকার পরিবর্তন হবে ১০০ শতাংশ নিশ্চিত। রাজ্যের মানুষ শান্তির পক্ষে ভোট দিয়েছেন। শান্তি রক্ষা করা আমাদের কর্তব্য। ২মার্চ ভোট গননা পর্যন্ত ঐক্যবদ্ধ থেকে জয় নিশ্চিত করেই ঘরে ফিরবেন। সমীক্ষা প্রকাশের পরে একটি ফেসবুক পোস্টে তিনি বলেছেন, যারা পাঁচ বছরে জনগণের সুখ দুঃখ জানলেন না, তারা এক্সসিট পোল করছেন, বাস্তবের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।   
বুথ ফেরত সমীক্ষা প্রকাশের আগেই এদিন কংগ্রেসের পক্ষ থেকে সাংবাদিক সম্মেলন করা হয়। সেখানে কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায়বর্মণ বলেন, মিডিয়াগুলো টাকার বিনিময়ে বিজেপি-কে উজ্জীবিত করতে বুথফেরত সমীক্ষা করেছে। এই বানানো সমীক্ষায় বিশ্বাস না করতে রাজ্যের জনগণকে অনুরোধ করেছেন তিনি। প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি বীরজিৎ সিনহা, আশিস কুমার সাহা সহ প্রদেশ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। তখনও বুথ ফেরত সমীক্ষা সামনে আসেনি, কিন্তু সেই প্রসঙ্গ টেনে সুদীপ রায়বর্মণ বলেন, কিছু পরে জাতীয় কিছু মিডিয়া এবং রাজ্যের মিডিয়া বুথ ফেরতের কথা বলে বিজেপি’র জয় দেখাবে। স্লট কিনে এসব প্রচার করাবে বিজেপি। ২মার্চ বিজেপি’র পরাজয় নিশ্চিত। কোনও সংশয় নেই। বর্বর যুগের অবসান হচ্ছেই। বিজেপি দুই অঙ্কে পৌঁছাতে পারবে না।
চারটি সংস্থার সমীক্ষাতেই নাগাল্যান্ডে শাসক এনডিপিপি-বিজেপি জোটকে একতরফা সংখ্যাগরিষ্ঠতা দিয়েছে। মেঘালয়ের ক্ষেত্রেও চারটি সংস্থাই ত্রিশঙ্কু বিধানসভার ইঙ্গিত দিয়েছে। এনপিএফ-কে সর্বাধিক আসন দিয়েছে সকলেই। কংগ্রেস, বিজেপি-কেও চারটি সংস্থা যা আসন দিয়েছে তারমধ্যেও মিল আছে। ভোটের আগের বিজেপি বিরোধী অবস্থান বজায় রাখলে সেক্ষেত্রে এনপিএফ কংগ্রেসকে সঙ্গে নিয়ে সরকার গঠন করতে পারে। মেঘালয়ে তৃণমূলকে সর্বাধিক ১১টি আসন দেওয়া হয়েছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment