Tripura election violence

ভোট ঘোষণা হতেই ত্রিপুরায় মন্ত্রীর নেতৃত্বে হামলা

রাজ্য

শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচন দাবি করে বুধবার দিল্লিতে যখন নির্বাচন কমিশন ভোটের সূচি ঘোষণা করছিল ঠিক তখনই আগরতলায় কংগ্রেসের বাইক মিছিলে রাজ্যের মন্ত্রীর নেতৃত্বে ব্যাপক হামলা চালালো বিজেপি দুর্বৃত্ত বাহিনী। দফায় দফায় হামলায় আহত হয়েছেন কংগ্রেসের সর্বভারতীয় সম্পাদক ড. অজয় কুমার সহ ৩২ জনের বেশি নেতা-কর্মী। মারাত্মক আঘাতের জন্য ১৫ জনকে আগরতলার জি বি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদিন গোটা জিরানিয়াতেই বেপরোয়া সন্ত্রাস চালিয়েছে বিজেপি’র দুষ্কৃতীরা। সন্ত্রাসের শিকার হয়েছেন রানিরগাঁও দ্বাদশ শ্রেণি বিদ্যালয়ের শিক্ষক সুদীপ আচার্যও। স্কুল শেষে বাড়ি ফেরার পথে বিজেপি’র দুর্বৃত্ত বাহিনী তাকে ভয়ঙ্কর মারধর করে। গুরুতর আহত অবস্থায় তিনি আগরতলার একটি বেসরকারি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
এদিন রাতে জি বি হাসপাতালে যান সিপিআই (এম) রাজ্য সম্পাদক জীতেন্দ্র চৌধুরি। অজয় কুমারের সঙ্গে তিনি কথা বলেন, আহত কর্মীদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন। তিনি এই হামলার তীব্র নিন্দা করেছেন। শিক্ষক সুদীপ আচার্যকে হাসপাতালে দেখতে যান পার্টিনেতা মানিক দে। 
কংগ্রেসের তরফে এদিনের হামলার জন্য রাজ্যের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরি সহ বিজেপি দুষ্কৃতীদের বিরুদ্ধেই সরাসরি অভিযোগ করা হয়েছে। মজলিসপুর এলাকার বিধায়ক বিজেপি জোট সরকারের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরিই হামলার নেতৃত্ব দিয়েছেন। লুট করে নেওয়া হয়েছে বাইক। অসংখ্য বাইক ভাঙচুর করা হয়েছে। কেন্দ্রীয় বাহিনী সহ পুলিশের ডিএসপি স্তরের অফিসার থাকলেও ইতিবাচক ভূমিকা গ্রহণ করেনি বলে কংগ্রেস নেতৃত্ব জানিয়েছেন। মজলিশপুরে এদিন সিপিআই (এম)’র এক সভাও বানচালের চেষ্টা চালিয়েছিল বিজেপি দুষ্কৃতীরা। তবে সফল হয়নি। 
এদিকে বুধবার নির্বাচন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গেই রাজ্যজুড়ে বিজেপি’র সন্ত্রাস মাড়িয়ে পথে নেমেছেন সিপিআই (এম) কর্মীরা। যে সব এলাকায় গত পাঁচ বছরে পার্টিকে কোনও কাজ করতে দেওয়া হয়নি, সেখানেও লাল ঝান্ডা কাঁধে শত শত মানুষ নেমেছেন পথে। উত্তরের কৈলাশহর থেকে দক্ষিণের রাজনগর, সোনামুড়া, কুমারঘাট, খোয়াই, বিশালগড় সর্বত্র মানুষের ভিড় দেখে হামলা করার সাহস পায়নি বিজেপি দুষ্কৃতি বাহিনী। 
বুধবার ছিল রাজ্যজুড়ে কংগ্রেসের সংকল্প দিবস। সাংগঠনিক জেলা ধরে এই কর্মসূচি পালন করেছে কংগ্রেস। সংবিধান অচল করার প্রয়াস রুখে দেওয়ার বার্তা দিয়ে ফ্যাসিবাদী সরকারের বিরুদ্ধে মানুষকে জাগ্রত করার বার্তা দিয়ে হয় এই কর্মসূচি। সদর জেলার বাইক মিছিলটি শুরু হয়েছে আগরতলার বিবেকানন্দ ময়দান থেকে। নেতৃত্বে ছিলেন ত্রিপুরার দায়িত্বপ্রাপ্ত সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা অজয় কুমার। ছিলেন কংগ্রেস নেতা প্রাক্তন দুই প্রদেশ সভাপতি গোপাল চন্দ্র রায় এবং আশিস কুমার সাহা। শহর ঘুরে জিরানিয়া ব্লক চৌমুহনী ছুয়ে শচীন্দ্র নগর স্কুলের সামনে কংগ্রেসের মিছিলটি এলেই প্রথম আক্রমণ হয়। মিছিল লক্ষ্য করে ইট পাটকেল ছোঁড়া হয়। 
সেখান থেকে কংগ্রেসের মিছিলটি মোহনপুর এলে খোদ এলাকার বিধায়ক জোট সরকারের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরি পথ আটকে দাঁড়ান। রাস্তায় দাঁড়িয়ে সর্বভারতীয় কংগ্রেস নেতা সহ প্রদেশ কংগ্রেস নেতাদের সঙ্গে জোট সরকারের মন্ত্রী সুশান্ত চৌধুরিকে বাক্‌ বিতণ্ডা করতে দেখা গেছে ভিডিওতে। সেই ছবি সংবাদ মাধ্যম সহ সামাজিক মাধ্যমে ভাইরালও হয়েছে। বাক্‌ বিতণ্ডা চলাকালেই আবারও আক্রমণের ঘটনা ঘটে। সেখান থেকে পুলিশের মধ্যস্থতায় মিছিলটি আগরতলার দিকে আসার সময় রানিরবাজার টাউন হলের সামনে দুই ধার থেকে ঘিরে ধরে আক্রমণ করা হয়েছে বলে কংগ্রেসের অভিযোগ। 
কংগ্রেস নেতা সুদীপ রায় বর্মণের বক্তব্য, পাথর, রড,লাঠি,দা সহ অস্ত্র নিয়ে কংগ্রেসের শান্তিপূর্ণ আন্দোলের ওপর প্রাণঘাতী আক্রমণ করা হয়েছে। এখানে আহত হয়েছেন অজয় কুমার, গোপাল চন্দ্র রায়, বাপ্টু চক্রবর্তী, সুশান্ত চক্রবর্তী সহ প্রদেশ কংগ্রেসের শীর্ষ নেতারা। কম করে ৩০ থেকে ৩২ জন কংগ্রেস কর্মী জখম হয়েছেন। অনেকেরই মাথা ফেটে গেছে। কংগ্রেসের বক্তব্য, আহতদের পর্যন্ত ২ ঘণ্টার বেশি সময় রানির বাজার থানায় বসিয়ে রাখা হয়েছে। তাদের হাসপাতালে পাঠানোর সাহস পর্যন্ত করতে পারেনি পুলিশ। এরপর কংগ্রেসের তরফে বিধায়ক সুদীপ রায় বর্মণ  রাজ্য পুলিশের ডিজিপি এবং পশ্চিম জেলার পুলিশ সুপারকে জানানোর পর আহত কংগ্রেসের কর্মীদের জি বি হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে। এরপরেও ঘর ফেরতা কংগ্রেস কর্মীদের উপর আক্রমণ করেছে বিজেপি দুষ্কৃতীরা। 
গোটা বিষয়টি নির্বাচন কমিশনকে জানিয়েছে কংগ্রেস। মন্ত্রীর উপস্থিতি ও উসকানিমূলক বক্তব্যে কংগ্রেস নেতাদের প্রাণে মারার চেষ্টা করা হয়েছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে। সুদীপ রায় বর্মণ বলেন, তিন দিন আগে নির্বাচন কমিশন দাবি করে গেছেন কোন ধরনের ঘটনাবিহীন শান্তিপূর্ণ অবাধ নির্বাচনের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু নির্বাচন ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে নির্বাচন কমিশনের সেই দাবিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিয়ে খোদ সরকারের মন্ত্রীর নেতৃত্বে কেন্দ্রীয় বাহিনীর উপস্থিতিতে দুষ্কৃতীকারীরা হামলা সংঘটিত করেছে। এখন নির্বাচন কমিশন কি ব্যবস্থা গ্রহণ করে আমরা অপেক্ষা করবো। কংগ্রেস, সিপিআই (এম) সহ সব গণতান্ত্রিক শক্তিকে এক হয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলার আহবান জানিয়েছে কংগ্রেস।
 

Comments :0

Login to leave a comment