Kuntal arrest

চাকরি দুর্নীতিতে অবশেষে গ্রেপ্তার যুব তৃণমূল নেতা

রাজ্য

 অবশেষে নিয়োগ দুর্নীতিতে গ্রেপ্তার হলো যুব তৃণমূলের অন্যতম রাজ্য সম্পাদক কুন্তল ঘোষ। 
২০১৬ থেকে ২০২১ পর্যন্ত প্রাথমিক ও উচ্চ প্রাথমিকে চাকরি দেওয়ার নাম করে বিপুল পরিমাণ টাকা তুলেছে এই যুব তৃণমূল নেতা। বলাগড়ের এই যুব নেতা দশটির বেশি বিএড, ডিএলএড, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কর্ণধারও। দলের শীর্ষ মহলের ঘনিষ্ঠ এক নেত্রী তাঁর কাছ থেকে গাড়িও ‘উপহার’ পেয়েছিলেন। এহেন কীর্তিমান যুব তৃণমূল নেতাকেই অভিষেক ব্যানার্জির পরামর্শে নতুন করে যুব তৃণমূলের রাজ্য সম্পাদক পদে বসানো হয়। বিপুল টাকার জোগান কলকাতায় পাঠানোর ফলস্বরূপই এমন পদ বলে মনে করছে রাজনৈতিক মহলও। এদিনই আদালতে কুন্তল ঘোষকে তোলা হয়, বিচারক ১৪ দিনের ইডি হেপাজতের নির্দেশ দেন। 
এর আগে নিজাম প্যালেসে দু’দফায় সিবিআই জেরার মুখে পড়েছিলেন বলাগড়ের বাসিন্দা এই যুব তৃণমূল নেতা। যদিও জেরার পরে গত ১৮ জানুয়ারি সিবিআই অফিসের বাইরে দাঁড়িয়ে সাংবাদিকদের কাছে এই প্রতারক যুব তৃণমূল নেতা বলেন, ‘‘আমি যদি দোষী হতাম, যদি টাকা নিতাম তবে কী সিবিআই জেরার পরে আমাকে ছেড়ে দিত?’’
যদিও তার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যেই আরেক কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা ইডি নিউটাউনে চিনার পার্কে কুন্তল ঘোষের দুটি বিলাসবহুল ফ্ল্যাটে হানা দেয়। শুক্রবার সকাল সাতটা থেকে নিউটাউনে তার বাড়িতে চলে তল্লাশি অভিযান। মধ্যরাত পর্যন্ত চলে জেরা। উদ্ধার হয় একাধিক নথি, কাগজপত্র। মেলে নির্দিষ্ট একটি ডায়েরি। তাতে প্রাথমিক নিয়োগপ্রার্থীদের তালিকা, মেধা তালিকা, টাকার হিসাব পাওয়া যায়। এরপরেই মধ্যরাতে প্রথম তাঁকে আটক দেখানো হয়। পরে শনিবার সকালে ইডি’র তরফে জানানো হয় বিপুল টাকার বিনিময়ে চাকরি পাইয়ে দেওয়ার ঘটনায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে এই প্রতারক যুব তৃণমূল নেতাকে।
হুগলীর বলাগড়ের শ্রীপুর গ্রাম পঞ্চায়েত এলাকার বাসিন্দা। অভিষেক ব্যানার্জি থেকে তৃণমূলের যুব সভানেত্রী সায়নী ঘোষের সঙ্গে তাঁর একাধিক ছবিও দেখা গিয়েছে সোশাল মিডিয়ায়। হুগলী জেলা তৃণমূলের সাংগঠনিক সভাপতি রুনা খাতুনেরও ঘনিষ্ঠ এই যুব নেতা। গত ৩০ নভেম্বর তৃণমূল যুব কংগ্রেসের নতুন কমিটি ঘোষণা হয়। সেই নতুন কমিটিতেই রাজ্য যুব তৃণমূল কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক হিসাবে কুন্তল ঘোষের নাম ঘোষণা করা হয়। শিক্ষা ব্যবসায় সাম্রাজ্য গড়ে তুলেছিল এই যুব তৃণমূল নেতা।
অভিযোগ চাকরি দেওয়ার নাম করে রীতিমতো টাকা তুলে তার ভাগ এবং চাকরিপ্রার্থীদের তালিকা সরাসরি মানিক ভট্টাচার্যের কাছে পাঠানো হতো। মানিক ভট্টাচার্য ও পার্থ চ্যাটার্জিরও ঘনিষ্ঠ ছিল এই ব্যক্তি। প্রাইমারির তালিকা হুগলী জেলা থেকে তার মাধ্যমেই যেত। টাকার একটা অংশ মানিক ভট্টাচার্য ও পার্থ চ্যটার্জির কাছেও যেত। এছাড়াও শাসক তৃণমূলের আরো শীর্ষ নেতৃত্বের কাছে পৌঁছাতো টাকার ভাগ যেত।
খোদ সিবিআই দপ্তরে হাজিরা দিতে এসে কিছুদিন আগেই তৃণমূল ঘনিষ্ঠ আরেক শিক্ষা ব্যবসায়ী তাপস মণ্ডল সাংবাদিকদের সামনে বলেছিলেন, ‘আমার কিছু পরিচিত ছাত্র-ছাত্রী একজনকে টাকা দেয় চাকরির জন্য। সেই নামটি আমি ইডি-কেও বলেছিলাম। তার নাম কুন্তল ঘোষ। আমার হিসাব অনুযায়ী ১৯ কোটি ৪৪ লক্ষ ৫০ হাজারের মতো টাকা তুলেছিল। তবে যারা আমায় বলেছিল তাদের ধরে আমার হিসাব এটা। আমার জানার বাইরেও প্রচুর টাকা তুলেছিল চাকরিপ্রার্থীদের কাছ থেকে। আমি মাত্র  ১৯ কোটির তথ্য পেয়েছি। আরও টাকার খেলা আছে। প্রাথমিক, উচ্চপ্রাথমিক মিলিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকার মতো।’
এদিন আবার গ্রেপ্তারির পরেই সেই তাপস মণ্ডলের বিরুদ্ধে পালটা ষড়যন্ত্রের অভিযোগ তোলেন কুন্তল ঘোষ। ৫০ লক্ষ টাকা নাকি চেয়েছিলেন তাপস মণ্ডল, না পাওয়ায় তার বিরুদ্ধে নাকি এমন অভিযোগ তুলেছেন ওই শিক্ষা ব্যবসায়ী। যদিও তাপস মণ্ডলের পালটা দাবি, সব নথি আছে। চাকরিপ্রার্থীদের টাকা ফেরতের কথা বলেছিলাম কেবল। ও টাকা ফেরত দেয়নি। 
ইডির একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, কুন্তলের বাড়ি থেকে প্রচুর নথি, বিশেষত ব্যাঙ্কের নথি উদ্ধার করা হয়েছে। কুন্তল ঘোষের একাধিক বিএড কলেজের নথিও যাচাই করে দেখা হচ্ছে। কুন্তল ঘোষের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। যদিও ইডি’র তরফে আদালতে বলা হয় এই নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় আগেও উঠে এসেছে কুন্তল ঘোষের নাম। ইডি’র দাবি এই কুন্তল ঘোষ কাণ্ডে প্রায় ৩০ কোটি টাকার লেনদেনের হিসাব এখনও মিলেছে।

Comments :0

Login to leave a comment