তপন সেন
রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা শিল্পকে বেসরকারিকরণের যাবতীয় প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে কয়লা শিল্প শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ লড়াই আন্দোলনের মুখে বারে বারে পিছু হটতে বাধ্য হয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। কিন্তু নয়া উদারবাদী শাসন ব্যবস্থায় উদারীকরণ, বেসরকারিকরণ ও বিশ্বায়নের জমানায় দেশের শাসক গোষ্ঠীর তো একমাত্র অ্যা জেন্ডা রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেচে দিতে হবে যে কোনও প্রকারে। আর তাই দ্বিতীয়বারের জন্য কেন্দ্রে আরএসএস নিয়ন্ত্রণাধীন নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বে ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার আসীন হওয়ার সাথে সাথে নিয়ে এসেছে ন্যাশনাল মনিটাইজেশন পাইপলাইন– সুনির্দ্দিষ্টভাবে কোনও কোনও রাষ্ট্রায়ত্ত সম্পদ বেচা হবে তার তালিকা নিয়ে। এল পরিকাঠামো ক্ষেত্রে দেশের সম্পদ বেসরকারি হাতে তুলে দেবার রাষ্ট্রবিরোধী পরিকল্পনা। এতদসত্ত্বেও যখন দমানো যাচ্ছে না শ্রমিকদের তখন নতূন ফন্দি ফিকির খুঁজে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা ক্ষেত্র, যা বহু লড়াই আন্দোলনের মাধ্যমে বেসরকারি মালিকদের হাত থেকে অধিগৃহীত হয়েছিল সেই শিল্পকেই আবার বেসরকারি কর্পোরেটদের হাতে তুলে দেবার মাধ্যমে সম্পূর্ণ কয়লা ক্ষেত্রের উপর কর্পোরেটদের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করার ঘৃণ্য চক্রান্ত করছে নরেন্দ্র মোদীর সরকার।
দেশের বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রগুলিতে দেশীয় কয়লার কৃত্তিম সঙ্কট সৃষ্টি করে প্রথমে কেন্দ্রীয় বিদ্যুৎ মন্ত্রক থেকে আদেশ দেওয়া হলো বিদেশ থেকে কয়লা আমদানি করতে। অন্যদিকে এই সরকারেরই কয়লা মন্ত্রক নিয়মিতভাবে বিবৃতি দিয়ে কয়লা উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার জন্য শ্রমিক–কর্মচারীদের অভিনন্দন জানিয়ে আসছে। কয়লা মন্ত্রকের তথ্যই বলছে ২০২২-২৩ অর্থ বছরে কয়লা উৎপাদন ও ডেসপাচ আগের বছরের তুলনায় যথাক্রমে ১৪.৭% ও ৭.১% বৃদ্ধি পেয়েছে। পিটহেড কোল স্টকের পরিমাণে ব্যাপক ৪৫.৬৬% বৃদ্ধি হয়েছে, পাশাপাশি বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষেত্রগুলিতে কয়লা সরবরাহের বৃদ্ধির পরিমাণ ৫.৮%।
কোল ইন্ডিয়া ও কয়লা শ্রমিকদের এই অসাধারণ পারফরম্যান্স সত্ত্বেও মঞ্চস্ত করা হলো সঙ্কটের নাটক। কয়লার উৎপাদন পরিকল্পনা এবং প্রয়োজনীয়তার বাস্তব পূর্বাভাস ঠিক করার ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে হেরফের করা হয়েছে দুই মন্ত্রকের যোগসাজশে। এ ছাড়াও রয়েছে কয়লা সরবরাহের জন্য পর্যাপ্ত রেলওয়ে রেক সরবরাহের কাজে সরকারি নির্দেশে ইচ্ছাকৃত ব্যর্থতা।
কেন্দ্রীয় সরকার আরও বলছে যে উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য চাই পরিকাঠামোর ব্যাপক উন্নয়ন, আর তার জন্য কোল ইন্ডিয়ার হাতে পর্যাপ্ত তহবিল নেই। তাই বেসরকারি পুঁজিপতিদের কয়লা উৎপাদন ও সরবরাহে ক্রমবর্ধমান দায়িত্ব নেওয়া উচিত।
আবার একটা মিথ্যাচার। ধারাবাহিকভাবে মুনাফা অর্জন করে আসছে কোল ইন্ডিয়া। কয়লা মন্ত্রকের রিপোর্টেই উল্লেখ আছে ২০১৬ সালে কোল ইন্ডিয়ার ৩০ হাজার কোটি টাকারও বেশি নগদ মজুদ ছিল। বিগত ৬-৭ বছরেও লাগাতার মুনাফা করেছে কোল ইন্ডিয়া। তবুও কেন এই অর্থ তার নিজস্ব উৎপাদন ক্ষমতা বাড়ানো এবং প্রযুক্তি আপগ্রেডেশনের জন্য ব্যবহারের অনুমতি পাচ্ছে না কোল ইন্ডিয়া? আসলে বেসরকারিকরণের পরিকল্পনা তো অনেক আগের। ইতিমধ্যেই কোল ইন্ডিয়ার ঐ বিনিয়োগযোগ্য উদ্বৃত্ত সরকার বিশেষ লভ্যাংশ হিসাবে কেড়ে নিয়ে কোল ইন্ডিয়াকে নিঃস্ব করে দিয়েছে। আর অন্যদিকে যাদের হাতে কর্পোরেটপ্রেমী সরকার কয়লা শিল্পকে তুলে দিতে চাইছে সেই পুঁজিপতিদের গত ৯ বছরে ১৪.৫৬ লক্ষ কোটি টাকার ঋণ মকুব করে দেওয়া হয়েছে।
সুতরাং এটা স্পষ্ট যে রাষ্ট্রায়ত্ত কয়লা ক্ষেত্রকে ব্যর্থ প্রতিপন্ন করতে সরকারের সব দপ্তরগুলিকেই পরিকল্পিতভাবে কাজে লাগানো হয়েছে।
২
কয়লা খনিতে ঠিকাদার নিয়োগের ব্যবস্থা তৈরি হয় সেই ১৯৯২ সালেই উদারীকরণের নীতি গ্রহণের পর থেকেই। তখন সাধারণভাবে খনির ঠিকাদাররা কয়লা উত্তোলন ও পরিবহণ এবং ‘টিপারস’ দ্বারা কয়লার ‘ওভারবার্ডেনের’ পরিবহনের জন্য ম্যানপাওয়ার ও বেলচা/ডাম্পার/টিপার/ড্রিলস/ডোজার ইত্যাদি হেভি আর্থ মুভিং মেশিনারি ভাড়াতে সরবরাহের জন্য নিয়োজিত হতো। কিন্তু গত দশ বারো বছরে এই চুক্তির সংখ্যা বেড়েছে বহুগুণ, এক একটা চুক্তির আর্থিক মূল্য ১৫০০ কোটি টাকারও বেশি হয়ে গেছে এবং ক্রমশই সারা দেশে ৫/৬টি বড় প্লেয়ার সব কন্ট্রাক্টই দখল করে নিয়েছে। কালক্রমে চুক্তিভিত্তিক ও আউটসোর্সড কর্মীদের মূল উৎপাদনের কাজেও নিয়োগ করা হয়েছে। কোল ইন্ডিয়ার স্থায়ী শ্রমিকের সংখ্যা বছরের পর বছর হ্রাস পেয়েছে, নতুন নিয়োগ কার্যত বন্ধই করে দেওয়া হয়েছে।
বেসরকারিকরণের পথে প্রথম পদক্ষেপ হিসাবে শেয়ার বেচার কাজ তো চলছে অনেকদিন ধরেই। মার্চ ২০২৩-এর হিসাব বলছে ইতিমধ্যেই কোল ইন্ডিয়ার ৩৩.৮৭ শতাংশ শেয়ার বেচে দিয়েছে কেন্দ্রীয় সরকার। এ ছাড়াও ঠিকাদারিকরণ, আউটসোর্সিং, বাণিজ্যিক খনন,কয়লা ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষ বৈদেশিক বিনিয়োগের পরিমাণ ১০০% বৃদ্ধি করা ইত্যাদি বিভিন্ন পথে কয়লা অর্থনীতির ব্যবস্থাপনাকে বেসরকারি ক্ষেত্রের একচেটিয়া নিয়ন্ত্রণের হাতে তুলে দেবার নানা পরিকল্পনা হয়েছে। কিন্তু সব কিছুতেই বাদ সাধছে সংগঠিত ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন। এ কথা অনস্বীকার্য যে কয়লা শ্রমিকদের ঐক্যবদ্ধ সংগ্রামই আজ পর্যন্ত দেশের কয়লা উৎপাদনে সরকারি ক্ষেত্রের আধিপত্য বজায় রাখতে পেরেছে। সংগঠিত শ্রমিক আন্দোলনের সম্ভাব্য সমস্ত প্রতিরোধকে এড়াতে নতুন ফন্দি ফিকির খোঁজার জন্য গবেষণার কাজ চলছিল। আর তাই এবার নিয়ে আসা হলো নতুন পদ্ধতি ‘মাইন ডেভেলপমেন্ট অপারেশন’ এবং রেভেনিউ শেয়ারিং মডেল। এই দুই মডেল এমনভাবে পরিকল্পনা করা হয়েছে যাতে কয়লার উৎপাদন বা বণ্টনের যাবতীয় ব্যবস্থায় স্থায়ী শ্রমিকদের প্রত্যক্ষ আর কোনও অংশগ্রহণই না থাকে এবং বেসরকারিকরণের এই প্রচেষ্টার বিরুদ্ধে না গড়ে ওঠে সংগঠিত কোনও প্রতিরোধ ।
৩
কয়লা শিল্পে জ্বলন্ত সমস্যা ছিল কয়লা খনির অনিয়মিত নিলাম এবং উপর্যুপরি সব সরকারের আমলেই এই ভাবে কয়লা ব্লক বণ্টনের প্রক্রিয়া চলে আসছিল। অস্বচ্ছ পদ্ধতিতে কিছু শিল্পকে সামান্য কিছু রয়্যালটির বিনিময়ে কয়লা খনি বণ্টনের বিষয়টি সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত গড়ায় এবং ২০১৪ সালে ২৫ আগস্ট ২০৪টি কয়লা ব্লকের বরাত বাতিল করে দেয় সুপ্রিম কোর্ট। কিন্তু ইতিমধ্যে ২৬ মে ২০১৪ তারিখে নির্বাচিত হয়ে শাসন ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে গেছে দেশের ইতিহাসে সবচেয়ে কর্পোরেটপ্রেমী নরেন্দ্র মোদীর সরকার। সুপ্রিম কোর্টের আদেশের সাথে সাথেই তারা নিয়ে এল কয়লা ব্লক বণ্টনের অবৈধ কাজকর্মকে বৈধতা দেবার জন্য কয়লা খনি বিশেষ বিধান আইন ২০১৫ (CMSP 2015)। কয়লা খনি (জাতীয়করণ) আইন ১৯৭৩-এর শর্তগুলি বেসরকারি কর্পোরেটদের জন্য কয়লা খনির বাজার উন্মুক্ত করে দেওয়ার ক্ষেত্রে অনেক বাধার সৃষ্টি করছিল। আগে সরকার শুধুমাত্র লৌহ-ইস্পাত, বিদ্যুৎ বা কোল ওয়াশিং ক্ষেত্রে নিয়োজিত কোম্পানিরগুলোর জন্য কয়লা ও লিগনাইট খনির লাইসেন্স নিলাম করলেও তা ব্যক্তিগত ব্যবহার, বিক্রি বা অন্য যে কোনও কাজে ব্যবহারের অধিকার ছিল না। এখন আর সে সমস্ত প্রতিবন্ধকতা রইল না, কোল ইন্ডিয়ার যে আধিপত্য ছিল তাকে খর্ব করে দেওয়া হলো।
MDO মডেলে মাইন অপারেটর তাকে বণ্টন করা কয়লা খনিতে কয়লা উত্তোলন ও সরবরাহের জন্য কোল ইন্ডিয়ার কাছ থেকে মাইনিং চার্জ পাবে নির্দ্দিষ্ট হারে। ম্যান পাওয়ার থেকে মাইনিং যন্ত্রপাতি সব তারাই সরবরাহ করবে। কার্যত তারাই হয়ে উঠবে সব কিছুর মালিক। চুক্তি তো এক-দু’বছরের জন্য নয়, চুক্তি হবে কয়লা খনির সব কয়লা যতদিন না উত্তোলিত হচ্ছে তত দিনের জন্য। আর জমি অধিগ্রহণ, প্রকল্পে ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের পুনর্বাসন তথা প্রজেক্ট এফেক্টেড পার্সনদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা, পরিবেশগত ও অরন্য সংক্রান্ত ছাড়পত্র, খনি পরিকল্পনার যাবতীয় অনুমোদন সব কিছুই করে দিতে হবে কর্তৃপক্ষ হিসাবে কোল ইন্ডিয়াকে। রেল নেট ওয়ার্ক, সড়ক নেটওয়ার্ক এবং বিদ্যুৎ গ্রিডে সংযোগের দায়িত্বও কোল ইন্ডিয়ার। অর্থাৎ কোল ইন্ডিয়াকে খনিটিকে সম্পুর্ণ রুপে প্রস্তুত করে দীর্ঘ প্রায় তিন দশকের জন্য বেসরকারি কর্পোরেটের হাতে তুলে দিতে হবে এবং বেসরকারি মালিকরা কোনও উল্লেখযোগ্য বিনিয়োগ না করেই জাতীয় কয়লা সম্পদ থেকে লাগামহীন মুনাফা সংগ্রহ করে তাদের সম্পদ গড়ে তুলবে। কয়লা শ্রমিকদের জাতীয় বেতন চুক্তি মানার কোনও দায় দায়িত্ব থাকছে না এই সমস্ত মাইন অপারেটরদের। নিশ্চিতভাবেই মাইন অপারেটর দ্বারা নিযুক্ত কন্ট্রাকটর ও সাব-কন্ট্রাকটরদের অধীনে কাজ করা বিপুল সংখ্যক ঠিকা শ্রমিকদের কয়লা ক্ষেত্রে হাই পাওয়ার কমিটির সুপারিশ মতো মজুরি দেবার কোনও বাধ্য বাধকতাও থাকছে না। এ ছাড়াও মাইন অপারেটরদের বাণিজ্যিক ও আবাসিক পরিকাঠামোর সমন্বয়ে একটি টাউনশিপ নির্মাণের জন্য অর্থ দেবে কোল ইন্ডিয়া এবং মাইন অপারেটর বাণিজ্যিক উদ্দেশ্যে টাউনশিপটি ব্যবহার করতে পারবে। অর্থাৎ তারা পেয়ে যাচ্ছে বিশাল রিয়েল এস্টেট ব্যবসার সুবর্ণ সুযোগ। বোঝাই যাচ্ছে যে এই মডেলেটি কর্পোরেটদের জন্য সম্পূর্ণ ঝুঁকিমুক্ত একটি পরিকল্পনা এবং রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুটের একটা স্থায়ী বন্দোবস্ত।
এর ওপর বর্তমানে বন্ধ হয়ে থাকা খনি, যেগুলিতে এখনও বিশাল পরিমাণে কয়লা মজুত রয়েছে, সেই খনিগুলি বেসরকারি মালিকদের হাতে তুলে দেওয়ার জন্য নিয়ে আসা হয়েছে রেভেনিউ শেয়ারিং মডেল। অর্থাৎ খনিটি তুলে দেওয়া হবে বিনামূল্যে বেসরকারি মালিকের হাতে, আর রাজস্ব ভাগের ন্যূনতম অংশ স্থির করা হয়েছে মাত্র ৪ শতাংশ। ইতিমধ্যেই কোল ইন্ডিয়ার বন্ধ পড়ে থাকা ২০টি ভূগর্ভস্থ কয়লা খনি এই পদ্ধতিতে চালু করার জন্য চিহ্নিত করা হয়ে গেছে এবং সেগুলি প্রাইভেট মালিকদের হাতে তুলে দেওয়াটা কিছু সময়ের অপেক্ষা মাত্র। শুধুমাত্র ইস্টার্ন কোলফিল্ডস এর কথাই যদি ধরা যায়, ২০১১ সাল থেকে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৮টা কোলিয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে এবং যখন তখন কয়লার প্রচুর ভাণ্ডার মজুত থাকা সত্ত্বেও কোলিয়ারি বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে। অর্থাৎ পূর্ব পরিকল্পিত এই রেভেনিউ শেয়ারিং প্রক্রিয়ায় কালক্রমে খনিগুলি তুলে দেওয়া হবে বেসরকারি কর্পোরেটদের হাতে। এর জন্য সর্বশেষ MDO মডেল সংক্রান্ত নথিটি ২৯ আগস্ট ২০২৩ তারিখে প্রকাশ করেছে কয়লা মন্ত্রক। এতে মাইনিং অপারেটরদের খনির মালিক হিসাবে ঘোষণা করার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে। এই সমস্ত খনি থেকে উত্তোলিত কয়লা বাজার মূল্যে নিলাম প্রক্রিয়ার মাধ্যমে বিক্রি করার অধিকারও পেয়ে যাচ্ছে মাইনিং অপারেটররা যে অধিকার আজ পর্যন্ত কয়লা খনির মালিক কোল ইন্ডিয়া লিমিটেডেরও নেই।
৪
সব দিক থেকেই এই MDO ও রেভেনিউ শেয়ারিং মডেল কোল ইন্ডিয়া এবং তার কর্মীদের জন্য নিয়ে এসেছে বিপর্যয়কর এক অবস্থা। ইউনিয়নের ক্ষমতা ও শক্তি এবং যৌথ দরকষাকষির অধিকার চলে যাবার মুখে। কয়েক দশকের জন্য তো বটেই কার্যত চিরস্থায়ী ভাবেই কয়লা খনি চলে যেতে বসেছে বেসরকারি পুঁজিপতিদের হাতে। দেশের জ্বালানি সুরক্ষার আধিপত্য রাষ্ট্রায়ত্ত হাত থেকে স্থানান্তরিত হতে চলেছে এই প্রক্রিয়ায়। সঙ্কটাকীর্ণ এই পরিস্থিতিতে ট্রেড ইউনিয়ন আন্দোলন তো চুপ থাকতে পারে না। দেশের জ্বালানি সুরক্ষার দায়িত্ব এখন তাদেরই হাতে।
সদ্য সমাপ্ত ২০২৩ সালের ২৬–২৮ নভেম্বর দেশের সম্পদ উৎপাদনকারী শ্রমজীবী জনগণের প্রতিনিধিত্বকারী শ্রমিক কৃষকের দুটি বৃহত্তম মঞ্চের উদ্যোগে দেশের প্রতিটি রাজধানী শহরে তিন দিনের বিশাল “মহাপড়াও” কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ করেছেন লক্ষ লক্ষ শ্রমিক, কৃষক, কৃষি শ্রমিক। দলিত, আদিবাসী, ছাত্র, যুব, মহিলা, বুদ্ধিজীবী এবং সমাজের বিভিন্ন প্রগতিশীল অংশের আরও অনেক সংগঠন সমর্থন করেছিল এই “মহাপড়াও”-কে। এই বিশাল কর্মসূচিতে উত্থাপিত ২১ দফা দাবি সনদকে আরও অনেক বেশি করে প্রচারের আলোকে নিয়ে আসার মাধ্যমে ২০২৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে নরেন্দ্র মোদীর নেতৃত্বাধীন শ্রমিক বিরোধী, কৃষক বিরোধী এবং জাতীয় স্বার্থের পরিপন্থী কর্পোরেট– সাম্প্রাদায়িক যোগসূত্রের এই সরকারকে ক্ষমতাচ্যুত করার জন্য সারা দেশকে উত্তাল আন্দোলনে উথাল পাতাল করে তোলার আহ্বান জানানো হয়। এরই সুত্র ধরে দেশব্যাপী যৌথ শ্রমিক-কৃষকদের সংগ্রামকে আরও জোরদার করার জন্য দেশের ট্রেড ইউনিয়ন জয়েন্ট প্লাটফর্ম ও সংযুক্ত কিষান মোর্চা দফায় দফায় আলোচনা করে আগামী ১৬ ফেব্রুয়ারি ২০২৪ শিল্প ও ক্ষেত্র ভিত্তিক ধর্মঘটের সাথে সারা দেশজুড়ে গ্রামীণ বন্ধ ও বিশাল সমাবেশের আহ্বান জানিয়েছে। কয়লা শিল্পের বিএমএস ব্যতীত সব কটি কেন্দ্রীয় ট্রেড ইউনিয়ন ইতিমধ্যেই এই ২১ দফা কেন্দ্রীয় দাবির সাথে কয়লা শিল্পের নির্দ্দিষ্ট ১৩ দফা দাবি সংবলিত ধর্মঘটের নোটিস কর্তৃপক্ষের হাতে বিশাল শ্রমিক সমাবেশের মাধ্যমে কোল ইন্ডিয়ার সব কটি দপ্তরে তুলে দিয়েছে। প্রচার আন্দোলন এখন তুঙ্গে। কয়লা শিল্পকে আবার সেই অন্ধকারময় জগতে ফিরিয়ে নিয়ে যাবার সমস্ত দুরভিসন্ধিকে ঐক্যবদ্ধ লড়াই আন্দোলনের পথ বেয়েই চুর্ণ বিচুর্ণ করার দায়িত্ব নিতে হবে শ্রমিকশ্রেণিকেই। এ লড়াই বাঁচার লড়াই। এ লড়াই জিততে হবে।
Comments :0