authoritarianism opposition space

বিরুদ্ধ কন্ঠস্বর সইতে পারে না কর্তৃত্ববাদ

উত্তর সম্পাদকীয়​

মণীন্দ্র চক্রবর্তী

বিরোধীদের দাবি ছিল একটাই। প্রধানমন্ত্রী এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে সংসদে বিবৃতি দিয়ে জানাতে হবে, এমন আঁটোসাঁটো নিরাপত্তা বলয় ভেদ করে, বিজেপি সাংসদের দেওয়া পাশ নিয়ে দু'জন যুবক ধোঁয়া বোমার ক্যানিস্টার সহ সংসদের মধ্যে প্রবেশ করলেন কিভাবে ! যেহেতু গোটা ঘটনার সাথে দেশের সম্মান এবং সাংসদদের নিরাপত্তার প্রশ্ন জড়িয়ে রয়েছে, সুতরাং এ দাবি মোটেই অসঙ্গত নয়। কারণ, রঙিন ধোঁয়ার ক্যানিস্টারের পরিবর্তে আগ্নেয়াস্ত্র কিংবা বিস্ফোরক নিয়েও তো তারা প্রবেশ করতে পারতেন। সেক্ষেত্রে আরও বড় কোনও ক্ষয়ক্ষতির ঘটনা ঘটতেই পারত। সংসদ চলাকালীন দেশের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সংবাদমাধ্যমে বিবৃতি দিলেও, সংসদের ভিতরে তিনি কিংবা প্রধানমন্ত্রী কেউই মুখ খোলেননি। উল্টে সংখ্যাধিক্যের জোরে ফ্যাসিবাদী কর্তৃত্ববাদ সংসদের স্বাধিকার রক্ষার নামে বিরোধীদের কন্ঠরোধ করতে লোকসভা এবং রাজ্যসভার মোট ১৪৩ জন বিরোধী সাংসদকে সাসপেন্ড করে দিয়ে, প্রায় বিরোধী শূন্য সংসদে বেশ কয়েকটি বিতর্কিত জনবিরোধী বিল ধ্বনি ভোটে পাশ করিয়ে নিয়েছে। গণতন্ত্রের পীঠস্থানে যেভাবে গণতন্ত্রের নিধনযজ্ঞ চালিয়েছে কর্পোরেট পুঁজি পরিচালিত কর্তৃত্ববাদ, তা নিয়ে সংসদের অভ্যন্তরে এবং বাইরে প্রতিবাদের ঝড় উঠলেও সরকার তাতে কর্ণপাত করেনি। কারণ এটাই কর্তৃত্ববাদের দস্তুর। কর্তৃত্ববাদ সমাজে যে রূপেই প্রকট হোক না কেন, অপ্রিয় প্রশ্ন কিংবা বিরুদ্ধতার কন্ঠস্বরকে কোনও দিনই সে সইতে পারে না। এমনকি চার-পাঁচ হাজার বছর আগে, উপমহাদেশীয় সভ্যতার ঊষালগ্নে ব্রাহ্মণ্যবাদ যখন এদেশে রাজতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণ করে, সেই বৈদিক যুগেও দেখা গিয়েছে ব্রাহ্মণ্য কর্তৃত্ববাদের দাপট।
         বিদেহীরাজ জনক যখন ঘোষণা করলেন, বহুদক্ষিণা যজ্ঞ শেষে ব্রাহ্মণদের তিনি দান করবেন, রাজার সেই দান গ্রহণ করতে, যেখানে যত বাহ্মণ ছিলেন সবাই এসে ভিড় করেছিলেন তাঁর রাজসভায়। যথাসময়ে জনক কৃপাপ্রার্থীদের দর্শন দিলেন। এবং তাঁদের প্রতি যথোপযুক্ত সম্মান জ্ঞাপন করে তিনি বললেন, এই রাজসভায় উপস্থিত ব্রাহ্মণদের মধ্যে যিনি শ্রেষ্ঠ ব্রহ্মজ্ঞানী, পুরস্কার স্বরূপ সেই ব্রাহ্মণকে তিনি এক হাজার গ্রাম এবং এক হাজার গাভী প্রদান করবেন, যেগুলোর শিং দুটি থাকবে সোনায় মোড়ানো। মেঘ না চাইতেই জল বোধহয় একেই বলে। ঘোষণা শেষ হওয়া মাত্র ব্রাহ্মণেরা মুখ চাওয়া চাওয়ি শুরু করলেন। সকলের চোখে মুখে তখন কৌতূহল। গুঞ্জন শুরু হয়ে গেল, 
কে হবেন এই বিপুল সম্পত্তির মালিক ! এমন সময় যাজ্ঞবল্ক্য উঠে দাঁড়িয়ে তাঁর শিষ্যদের আদেশ দিলেন, গোরুগুলো তাঁর আশ্রমে নিয়ে যেতে। এতে অন্যান্য ব্রাহ্মণেরা প্রচণ্ড ক্ষুব্ধ হয়ে উঠলেন। ক্ষিপ্ত কন্ঠে কে একজন বলে উঠলেন, এর মানে কি! আপনি কি নিজেকে শ্রেষ্ঠ পণ্ডিত মনে করছেন? যাজ্ঞবল্ক্য বিনয়ের সাথে বললেন, তা নয়, আসলে গাভীগুলি আমার ভীষণ প্রয়োজন। শুনে অন্যান্য ব্রাহ্মণেরা বললেন, গাভীগুলোর প্রয়োজন রয়েছে তাদেরও। শুরু হলো বাকবিতণ্ডা। এ বাকবিতণ্ডা সহজে থামার নয় বুঝতে পেরে রাজা নিজেই আটজন পণ্ডিতকে বেছে নিলেন, যাঁরা যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করবেন। এবং তাঁরাই নির্ধারণ করবেন যাজ্ঞবল্ক্য শ্রেষ্ঠ কি না।
        শুরু হল তর্ক যুদ্ধ। তবে তাকে যুদ্ধ না বলে একপেশে যুদ্ধ বলাই ভালো। কারণ, অতি অল্প সময়ের মধ্যে জনক মনোনীত অশ্বল, আর্থভাগ (মতান্তরে, আর্তভাগ), ভূজ্য, উদ্দালক, উষস্ত, কাহোল সহ সাতজন পণ্ডিতকে যাজ্ঞবল্ক্য অনায়াসেই তর্কযুদ্ধে পরাস্ত করলেন। অবশেষে পালা এল অষ্টম জনের, তিনি একজন মহিলা। ভরা রাজসভায় সেই মহিলা, বচক্নু ঋষি কন্যা গার্গী যাজ্ঞবল্ক্যকে প্রশ্ন করলেন- "হে যাজ্ঞবল্ক্য, সৃষ্টি তত্ত্ব ব্যাখ্যাকালে আপনি বলেছেন, সবকিছুই জলে ওতপ্রোতভাবে অধিষ্ঠিত। যদি তাই হয়, তবে জল কার উপর অধিষ্ঠিত?"  যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন- "বায়ুতে"। গার্গী তখন প্রশ্ন করলেন- " বায়ু তাহলে কার উপর অধিষ্ঠিত?"  যাজ্ঞবল্ক্য বললেন- "অন্তরীক্ষলোকে"। তাহলে অন্তরীক্ষলোক কার উপর অধিষ্ঠিত? যাজ্ঞবল্ক্য উত্তর দিলেন, গন্ধর্বলোকে। এভাবেই এগিয়ে চলল প্রশ্নোত্তর পর্ব। কারণ যাজ্ঞবল্ক্যের দেওয়া প্রতিটি উত্তরকে পাল্টা প্রশ্নবাণে বিদ্ধ করতে থাকলেন গার্গী। এতে যাজ্ঞবল্ক্য ক্রমশ ক্ষিপ্ত হতে শুরু করলেও এইভাবে বিভিন্ন স্তর অর্থাৎ গন্ধর্বলোক, আদিত্যলোক, চন্দ্রলোক, দেবলোক পেরিয়ে তর্ক এসে পৌঁছাল ব্রহ্মলোকে। গার্গী আবার প্রশ্ন ছুড়লেন, "ঋষিবর! আপনার সেই ব্রহ্মলোক কিসের উপর পরিব্যাপ্ত?" আচমকা এমন প্রশ্নে যাজ্ঞবল্ক্য থতমত খেয়ে গেলেন। ধূর্ত যাজ্ঞবল্ক্যের বুঝতে অসুবিধা হলো না, গার্গীর বিছানো জালে ক্রমশ তিনি জড়িয়ে পড়ছেন। পরাজয়ের সম্ভাবনা এবং মর্যাদা হারানোর ভয় তাকে অস্থির করে তুলল। স্তম্ভিত হয়ে গেলেন একজন মহিলার এমন সীমাহীন স্পর্ধা দেখে। অন্তর থেকে কিছুতেই যেন তিনি মেনে নিতে পারছেন না এহেন ঔদ্ধত্যকে। অথচ ব্রহ্মলোক কিসে অধিষ্ঠিত, এ প্রশ্নের উত্তর নেই তার কাছে। কিন্তু তাই বলে তো হেরে যাওয়া চলে না। অথচ গার্গীকে না থামাতে পারলে মান থাকে না। মরিয়া যাজ্ঞবল্ক্য গর্জন করে উঠলেন- " স্তব্ধ হও ! সীমা অতিক্রম কোরো না। এরপর আর একটা প্রশ্ন করলে, তোমার মাথা খসে পড়বে। তোমার জানা উচিত, দেবতার বিষয়ে অতিরিক্ত প্রশ্ন করা উচিত নয়, অথচ তুমি তার বিষয়েই অতিরিক্ত প্রশ্ন করে চলেছ।"  
      গৌরী লঙ্কেশ, কালবুর্গিদের মতো দৃষ্টান্ত স্থাপন তো আর সকলে করতে পারেন না ! তাই, হুমকির মুখে গার্গী বাধ্য হলেন নিজেকে সংবরণ করতে। যদিও দুটি প্রশ্ন এরপরেও তিনি করেছিলেন, তবে তা যাজ্ঞবল্ক্যকে পরাভূত করার জন্য নয়, বরং তাকে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনের সুযোগ করে দিতে। 
        কর্তৃত্ববাদ কিভাবে বিরুদ্ধ স্বরের টুঁটি চেপে ধরে, গার্গী- যাজ্ঞবল্ক্য কাহিনি হল তার আদর্শ উদাহরণ। ব্রহ্মবাদীদের চিরায়ত দাবি অনুযায়ী সব প্রশ্নের উত্তর যদি বেদেই পাওয়া যায়, তাহলে গার্গীর প্রশ্নের সীমা নির্ধারণের প্রয়োজন পড়ল কেন ! আসলে, সে যুগের জ্ঞানচর্চার পরিধি ও বিকাশ ছিল একেবারে প্রাথমিক স্তরের। ফলে সৃষ্টিতত্ত্বের মতো জটিল বিষয়ের মীমাংসা কিংবা ওই বিষয় নিয়ে বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা কিংবা অভিমত প্রকাশের ক্ষেত্রে সে যুগের পণ্ডিতরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে অনুমান এবং বিশ্বাসের উপর নির্ভর করতেন। কিন্তু অনুমান কিংবা বিশ্বাসকে তো আর প্রমাণ বলা চলে না। গার্গীর ছুঁড়ে দেওয়া প্রতিটি প্রশ্ন, আসলে যাজ্ঞবল্ক্যের জ্ঞানের পরিধিকে অতিক্রম করার স্পর্ধা দেখাচ্ছিল। যা যাজ্ঞবল্ক্যের পৌরুষত্ব এবং ব্রাহ্মণত্ব, এই দ্বৈত সত্তাকে আহত করছিল প্রতি মুহূর্তে। উপরন্তু, গার্গীর প্রশ্নমালা যেহেতু সম্পদ লাভের পথে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছিল, তাই যাজ্ঞবল্ক্য ভীষণ ক্রুদ্ধ হয়ে উঠলেন। তবে যাজ্ঞবল্ক্য ছিলেন অতীব ধূর্ত, তাই নিজের অজ্ঞতাকে আড়াল করার জন্য তিনি তথাকথিত সেই 'অসীম' বেদের সীমা টেনে, নিজের সীমাবদ্ধ জ্ঞানের প্রতি প্রশ্ন তোলার অধিকারকে তিনি সীমায়িত করে দিলেন। প্রত্যক্ষবাদী গার্গীর প্রশ্নবাণ থেকে রক্ষা পেতে ঢাল করলেন বেদ ও ভগবানকে। 
       যেহেতু সেই যুগে যাবতীয় কর্তৃত্ব ছিল ব্রাহ্মণদের হাতে, তাই ব্রাহ্মণ্যবাদের বিরুদ্ধে প্রশ্ন তোলার অপরাধে গার্গীর পরিণতি কি হয়েছিল, সেটা বেদ-উপনিষদ লেখেনি। যেমন জানা যায় না ক্ষাত্র কর্তৃত্ববাদী রামায়ণের যুগে জাবালির পরিণতির কথা। তবে ক্ষাত্র কর্তৃত্ববাদী রাজতন্ত্র এবং ব্রাহ্মণ্যবাদের মিশেল হত্যা করেছিল মহাভারতের চার্বাককে। 
        মহাভারতের যুদ্ধ শেষে জয়ী পাণ্ডবরা যখন নগরে প্রবেশ করছেন। পথের দুপাশে সমবেত পৌরবাসী এবং বাহ্মণেরা তাদের নামে জয়ধ্বনি দিচ্ছেন, আশির্বাদ করছেন। সেই কোলাহল কিছুটা স্থিমিত হতে চার্বাক চিৎকার করে বলে উঠলেন- পাণ্ডুনন্দন ! এই বাহ্মণেরা সকলে আমার মুখ দিয়ে বলাতে চাইছেন- আপনি জ্ঞাতি হত্যাকারী ঘৃণিত রাজা ; সুতরাং আপনাকে ধিক। (১২/৩৮/২৬) 
        কুন্তীনন্দন ! এমন জ্ঞাতিক্ষয় করে, গুরুজনদের বধ করিয়ে যে রাজ্যলাভ আপনি করলেন, এতে কি লাভ হবে আপনার ! কাজেই বেঁচে থেকে এ জীবন নিয়ে আপনি কি করবেন, তারচেয়ে আপনার মরে যাওয়াই ভাল। (১২/৩৮/২৭) 
        এটা শুনে ব্রাহ্মণেরা তো বটেই, স্বয়ং যুধিষ্ঠির বেশ কিছুক্ষণ লজ্জায় মাথা নিচু করে রইলেন। কারণ কৌরবদের বিধবা পত্নীরা তো এই প্রশ্নই ছুঁড়ে দিয়েছিলেন তার দিকে। বুকফাটা হাহাকার নিয়ে তারা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, "ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরের ধর্মজ্ঞতা কোথায়? তাঁর সত্যপরায়ণতা ও অনৃশংতাই বা কোথায়? কারণ পিতা, সন্তান, ভাই, গুরু, বন্ধুদের হত্যা করিয়েছেন আপনি।
       মহাবাহু ধর্মরাজ ! গুরু তথা ব্রাহ্মণ দ্রোণাচার্যকে, পিতামহ ভীষ্মকে হত্যা করিয়ে, বিশেষত ভগ্নীপতি জয়দ্রথকে বধ করিয়ে আপনার মনের অবস্থা কেমন হয়েছিল, সেটা বলুন একবার! অভিমন্যু ও দ্রৌপদীর সন্তানদের সারা জীবনেও আর দেখতে পারবেন না আপনি; এমতাবস্থায় রাজ্য নিয়ে আপনি কি করবেন ভরতনন্দন !" 
         অপরাধ জড়ানো কন্ঠে যুধিষ্ঠির বললেন, " ব্রাহ্মণগণ ! আমি মাথা নত করে আপনাদের অনুগ্রহ কামনা করছি। আপনারা আমার উপর প্রসন্ন হোন। আমি বেশি দিন বাঁচব না, দয়া করে আমাকে আর ধিক্কার দেবেন না। এতক্ষণ ব্রাহ্মণেরা চুপ করে ছিলেন। কিন্তু যুধিষ্ঠিরকে ভেঙে পড়তে দেখে তারা প্রমাদ গুণলেন। কারণ, সদ্য সদ্য চাতুর্বর্ণ ব্যবস্থা ধ্বংসকারী দুর্যোধনকে পরাস্ত করে যিনি ব্রাহ্মণ্যবাদী ধর্মের জয়ধ্বজ উড়িয়ে এসেছেন কুরুক্ষেত্রের রণাঙ্গনে। সেই যুধিষ্ঠিরকে কিনা আত্মসমর্পণ করতে হবে একজন চার্বাক পণ্ডিতের কাছে ! যথারীতি ব্রাহ্মণেরা  'পরিত্রাণায় সাধুনাং ... ' হয়ে এগিয়ে এলেন এবং আজকের দিনে বিরোধী কন্ঠস্বরকে যেভাবে দেশদ্রোহী এবং পাকিস্তানের দালাল বলে দাগিয়ে দেওয়া হয়, সেইভাবেই তারা বললেন, " মহারাজ আপনি বিচলিত হবেন না। এই চার্বাক আসলে একজন রাক্ষস, দুষ্ট দুর্যোধনের বন্ধু। আপনাকে অপমান করার জন্য সে ব্রাহ্মণের বেশে এখানে হাজির হয়েছে।"  এরপর চার্বাকের কি পরিণতি হয়েছিল, সেটা নিশ্চয়ই বলার অপেক্ষা রাখে না। মহাভারতে লেখা হয়েছে, অতঃপর ব্রাহ্মণদের সমবেত অভিসম্পাতে সে নাকি পুড়ে ছাই গেল !  
        প্রশ্ন হল, কর্তৃত্ববাদ প্রত্যক্ষবাদীদের এত ভয় পায় কেন? ষোড়শ শতাব্দীতে জৈন দার্শনিক মণিভদ্র সূরি লোকায়তবাদের তাত্ত্বিক ও সমাজ দর্শনের তাৎপর্য ব্যাখ্যা করে বলেছিলেন, "যা বাস্তব আর যা অবাস্তব, তা প্রমাণের জন্য যদি একমাত্র প্রত্যক্ষকেই গ্রহণ করা হয়, তবে জগৎ ব্যবস্থার বাস্তবতাকে আর অস্বীকার করা সম্ভব হবে না। তখন 'এই স্বর্ণরাশি আমার প্রাপ্য', এই ধারণা করে দরিদ্র মানুষেরা নিজেদের দুঃস্থ অবস্থাকে হেলায় দলন করবে। দাসও নব চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে প্রভুত্বের ভাব অবলম্বন করবে, আর নিজ দাসত্বের শৃঙ্খল চূর্ণ করে ফেলবে। কোনও মানুষই আর নিজের অনভিপ্রেত জীবন জীবিকা মেনে নেবে না। এভাবে সবরকম সেব্য- সেবক এবং ধনী- দরিদ্রের সম্পর্ক উঠে যাবে। আর প্রচলিত জগৎ ব্যবস্থা বিলোপের দাবি উঠবে। এহেন সার্বিক সমাজ বিপ্লবের আশঙ্কা থেকেই অনুমানের দ্বারা প্রমাণের পক্ষপাতী ধর্মের ছদ্মবেশধারী পরবঞ্চনাপ্রবণ ধূর্তেরা মানুষকে স্বর্গাদি প্রাপ্তি থেকে পরজন্মে ভোগাভোগের লোভ দেখিয়ে তাদের মধ্যে মুগ্ধ ধর্মান্ধতা উৎপাদন করে।"
        বলাবাহুল্য, সেই সমাজ বিপ্লবের আশঙ্কা থেকেই কর্পোরেট কর্তৃত্ববাদের প্রতিনিধি বিজেপি চাইছে গোটা দেশজুড়ে আজ ধর্মীয় উন্মাদনা তৈরি করতে। রাম মন্দির নির্মাণ, দেশব্যাপী রামায়ণ পাঠের আয়োজন, গীতা পাঠ,.... এগুলো হলো তারই অনুষঙ্গ।

 

Comments :0

Login to leave a comment