Brigade 2025

চাটাই পেতে শুনেছেন কথা, এবার আসুন ব্রিগেডে, আপনার প্রতিবাদের সুর মিলে যাক আমাদের সঙ্গে

বিশেষ বিভাগ ফিচার পাতা

বন্যা টু্ডু

একদিন পরে ব্রিগেডে সমাবেশ। গত কয়েক মাস গ্রামে শহরে শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে প্রচার করেছি আমরা ব্রিগেড সমাবেশের ইস্যুগুলি নিয়ে। আমার অভিজ্ঞতা হলো, মানুষ এসে শুনতে চাইছেন আমাদের কথা। গ্রামে গ্রামে প্রভাব অনেক ভালো। আগের থেকে পরিস্থিতি অনেক বদলেছে। খেটে খাওয়া মানুষ এবার বুঝতে শিখে গেছেন। মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে এতদিন ভুল বোঝানো হয়েছে। আমাদের শ্রমজীবী মানুষের সভা যেগুলো হচ্ছে গ্রামে গ্রামে, চাটাই পেতে সেখানে বসতে শুরু করেছে। এটা আমার কথা না। গ্রামীণ শ্রমজীবী মানুষ পুরুষ মহিলার নির্বিশেষে বলছে আমরা ব্রিগেড যাবো।
লক্ষীর ভাণ্ডার দিয়ে কিছুটা সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করেছে রাজ্যের সরকার। এখন ওরা বলছেন আমাদের লাল ঝান্ডার সরকারটাই ভালো ছিল। আমাদের বলার স্বাধীনতা তৃণমূলের জমানায় হারিয়ে গেছে। খেটে খাওয়া মানুষের বড় অংশই গ্রামে আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন কারণ ১০০ দিনের কাজের মধ্য দিয়ে যে গ্রামীণ স্বনির্ভরতা নিশ্চিত হয়েছিল সেটা আর নেই। গ্রামীণ রোজ মজুরি অনেক কম তাই আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়েছেন। এখন গতর খাটা মানুষকে রোজ দেওয়া হচ্ছে ১৫০ টাকা, দু’কেজি চাল। এটা বর্তমান বাজার মূল্য ও অবস্থায় কোনোভাবে চলছে না। স্মার্ট মিটার যা দেওয়া হয়েছে খেটে খাওয়া মানুষ কারেন্টের বিল কোথা থেকে দেবে? বিল দিতে না পারলে তো মেশিন এনে ধান কেটে নিয়ে চলে যাবে। যত পাড়া বৈঠক পথসভা মিছিল করেছি মানুষ ভিড় করেছে। তাঁদের কষ্টের কথা দুঃখের কথা যুবদের চাকরির কথা, মহিলাদের নিরাপত্তার কথা তুলে ধরেছি তারা বুঝতে পেরেছে। 
যখন লাল পার্টির সরকার মানে বামফ্রন্ট সরকার ছিল তখন বর্গা জমি সরকার খেটে খাওয়া মানুষকে দিয়েছে। ২০১১ সালের পর সেই পাট্টা প্রাপ্ত জমি ছিনিয়ে নিয়েছে তৃণমূল সরকার। এক সরকার জমি দিচ্ছে আরেক সরকার জমি কেড়ে নিচ্ছে দুটো সরকারের পার্থক্য মানুষ বুঝতে পারছে। মানুষ এবার বলছে আমাদের লাল পার্টি দরকার লাল ঝান্ডাকে দরকার, লাল ঝান্ডার মানুষকে দরকার। দাদপুরে আদিবাসী পাট্টাদারদের জমি কেড়ে নিচ্ছে তৃণমূল সরকার। তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ হয়েছে। আন্দোলনে সামনে সারিতে আমরা, বামপন্থীরা। 
২০১১ সালে যখন তৃণমূল সরকার জমি কাড়তে আসে তখন প্রচন্ড সন্ত্রাস কায়েম করেছিল তারা গ্রামে। তৃণমূলের সরকার গ্রামীণ আদিবাসী মানুষের ওপর মারধর করছে। মারধর ও কেস আইনি জটিলতায় জেরবার হয়েছেন গ্রামীণ মানুষ। এই ধরনের খেটে খাওয়া মানুষ তো এমনিতেই ভয় পাচ্ছে। যখন জেলা শুধু নয় গোটা রাজ্যজুড়ে এই ঘটনা চলছে, তখন কাউকে তো পাশে আসতে হবে। আমরা প্রতিবাদ শুরু করলাম। আমরা ভাবলাম একটা সরকার জমি দেবে আরেকটা সরকার কেড়ে নেবে এটা হতে পারে না। তাই কোমর বেঁধে আমরা নেমেছি। ধনিয়াখালী থেকেই আমরা সেই লড়াই শুরু করেছি। প্রথম আমরা ধনিয়াখালীর মান্দারা গ্রাম, তারপর দশঘড়া তারপর দাদপুর থানার মূল গ্রামে আন্দোলন ছড়িয়ে দিয়েছি। আমরা গরিব খেটে খাওয়া মানুষরা মার খাবো, কারো হাত পা ভাঙবে কার ঠ্যাং ভাঙবে এটা তো মেনে নেওয়া যায় না। পালটা জবাব দেবার জমি আমরা প্রস্তুত করছি। লাল সরকার আসুক আমরা চাই মানুষ বলছেন। তাই আমরা পশ্চিমবঙ্গের গ্রামীণ খেটে খাওয়া মানুষকে বার্তা দিতে চাইছি আপনারা লাল ঝান্ডাটা শক্ত করে ধরুন, নিজের অধিকারের দাবিতে পথে নামুন, তাহলে আমরা পারবো। আমরা প্রতিরোধ করেছি। বলেছি 'প্রাণ দেবো কিন্তু জমি কাড়তে দেবো না।' মূল গ্রাম থেকে আন্দোলন আমরা শুরু করেছি গোটা রাজ্য জুড়েই খেটে খাওয়া মানুষের জমির অধিকারের লড়াই আমরা ছড়িয়ে দেবো। আমরা পারবো বদল আনতে। 
সিঙ্গুরে আমরা যখন বলেছিলাম শিল্প কারখানা হোক। তখন সেই জমির অনেকটাই চাষ যোগ্য ছিল না। সেই জায়গায় শিল্প তাড়িয়ে দিদিমণি সর্ষে ছড়ালেন। অথচ দেউচা পাচামীতে আদিবাসীদের তাড়িয়ে সেখানে শিল্প করতে চাইছে। শিল্প টালির চালেও হয় না, রেল লাইনের উপরেও হয় না। শিল্প হয় শিল্পের জায়গায়। সেটা না করে গরিব মানুষকে উচ্ছেদ করে কখনো শিল্প হয় না। এসব তৃণমূলের চক্রান্ত আর তাকে অক্সিজেন জোগাচ্ছে বিজেপি। আমাদের কি বড় বড় রাস্তার ধারে শিল্প হয়নি? কত পুরানো কারখানার একরের পর একর জমি পড়ে আছে জবর দখল হয়ে যাচ্ছে সেই জমিতে শিল্প হোক না? মানুষকে তার থাকার যায়গা থেকে উচ্ছেদ করে শিল্প করতে হবে? দেউচা পচামীতেও মাটি খুঁড়তে দেওয়া যাবে না। আমরা রুখবো। শিল্পর জমিতে শিল্প হোক। যতই দিদিমণি মাথা নাড়ুক ওভাবে উচ্ছেদ করতে পারবে না আদিবাসীদের। 
২০১১ সালে যখন তৃণমূলের সরকার আসে তখন থেকেই মহিলাদের নিরাপত্তা নেই। আর জি কর হাসপাতালে কত বড় ঘটনা ঘটলো, শহরে গ্রামে ব্লকে ব্লকে মহিলাদের ওপর ধর্ষণ চলছে। আর উনি একজন মহিলার হয়ে টাকার রেট বেঁধে দিচ্ছেন? একটা মহিলার হয়ে সেটা কিভাবে করতে পারে। আমরা মেয়েরা আমাদের নিরাপত্তা লড়ে নেবো। পুলিশের দরকার হবে না। আমাদের খেটে খাওয়া মেয়েদের নিরাপত্তা আমরা নিজেরাই করে নেবো। 
কেন্দ্রে বিজেপি’র সরকার। সেই সরকার শ্রম কোড লাগু করেছে। রাজ্য সরকারের তা নিয়ে কোনও বক্তব্য কেউ শুনেছেন? শ্রম কোড লাগু হলে তো শ্রমজীবী মানুষের অধিকারটাই কার্যত থাকবে না। শুধু কি তাই ১০০ দিনের কাজে বরাদ্দ কমেছে, আদিবাসীদের চাকরির ক্ষেত্রে কোনও কোটাই নেই। প্রায় ২৬০০০-র চাকরি বাতিল হলো। অন্যদিকে কেন্দ্রীয় সরকারি ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ কমছে বেকার যুবক যুবতীরা যাবেন কোথায়? সবাইকার অধিকারের মিলনমঞ্চ হতে চলেছে এবারের ব্রিগেড। আমি বলবো যদি মনে হয় তৃণমূল ও বিজেপি’র সরকারের আমলে প্রতারিত হয়েছেন অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে তাহলে আমাদের ব্রিগেডে আসুন। আপনার প্রতিবাদের সুর মিলে যাক আমাদের সঙ্গে।

সাক্ষাৎকারের ভিত্তিতে অনুলিখন: শুভ্রজ্যোতি মজুমদার

 

Comments :0

Login to leave a comment