চোপড়াকাণ্ডে নির্যাতিতা, তৃণমূলী দুষ্কৃতী জেসিবি’র হাতে প্রকাশ্যে অত্যাচারিত হওয়া মহিলাকে কার্যত বাধ্য করেই মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে ভুয়ো এফআইআর করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেছেন অঞ্চলের বাসিন্দারাই।
অবশ্য প্রকাশ্যে নাম বলতে বা সংবাদমাধ্যমের সামনে মুখ দেখাতে ‘ভয়’ পাচ্ছেন তাঁরা। জেসিবি জেলে থাকলেও পুলিশ প্রশাসন ও শাসক দলের দাপটের চেহারা কী হতে পারে, তা চোপড়ার দীগলগাঁওয়ের থমথমে পরিবেশই সাক্ষী। গোপনে একাধিক গ্রামবাসী জানালেন ওই মহিলার বাড়ি, আত্মীয়স্বজনদের সঙ্গেও কথা বলা যাবে না প্রকাশ্যে। তৃণমূলী ফতোয়ায় অবরুদ্ধ এলাকা। জেসিবি জেল থেকে ছাড়া পেলে কী হাল হবে তাই ভেবে আতঙ্কিত গ্রামবাসীরা। পুলিশ প্রশাসনে তাঁদের কার্যত ভরসা নেই বলেই জানাচ্ছেন। বস্তুত ওই এলাকা এখনও তৃণমূলী দুষ্কৃতীদের মুক্তাঞ্চল। ওখানে বিরোধী কোনও রাজনৈতিক দলের প্রবেশাধিকার পর্যন্ত নেই।
এই ঘটনায় সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম সোমবার বলেন, ‘শাক দিয়ে তো মাছ ঢাকা যাবে না। প্রকাশ্যে রাস্তায় তৃণমূলী দুষ্কৃতী ওই যুবক-যুবতীকে নৃশংসভাবে মারধর করেছে। ঘটনার পর পুলিশ তিনদিন চুপ করেছিল। এমনকি যে ব্যক্তি ওই ঘটনার ভিডিও করেছিলেন তিনিও বাড়িছাড়া হয়েছিলেন। আমি সেই ভিডিও সোসাল মিডিয়ায় দেওয়ার পরে পুলিশ ওই তৃণমূল দুষ্কৃতী জেসিবি-কে গ্রেপ্তার করতে বাধ্য হয়েছে। ওই ব্যক্তি গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে আমাদের কর্মীকে খুন করে, মনোনয়নে বাধা দিতে গুলি চালিয়েছিল। দেখবেন গুজরাটে বেস্ট বেকারি মামলায় প্রত্যক্ষদর্শী মহিলাকে বাধ্য করা হয়েছিল তিস্তা শীতলাবাদের বিরুদ্ধে মামলা করতে। এসব মামলা করে, ভয় দেখিয়ে আমাকে আটকানো যাবে না। অপছন্দের সংবাদ হলেই মমতা ব্যানার্জি ফিল্টার করেন, অপছন্দের কার্টুন শেয়ার করার জন্য অম্বিকেশ মহাপাত্রকে জেলে পোরা হয়। এসবই আরএসএস’র পুরানো কৌশল যা উনি রপ্ত করেছেন। গোটা দেশের মানুষ পশ্চিমবঙ্গের এই পরিস্থিতি দেখুক। কোন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে নির্যাতিতাকে দিয়ে এরকম এফআইআর করানো হচ্ছে। দুষ্কৃতীদের আশ্রয়দাতা হয়ে উঠেছে সরকার।’
মহম্মদ সেলিমের নামে অভিযোগ দায়ের কাণ্ডে তৃণমূল কংগ্রেসকেই কাঠগড়ায় দাঁড় করিয়েছেন এলাকার বাসিন্দাদের একাংশ। তাঁদের দাবি, অভিযোগকারী মহিলাকে জোর করে ওই অভিযোগ দায়ের করানো হয়েছে। ওইদিনের বিচার সভায় সিপিআই(এম)-র কর্মী, সমর্থক কেউই ছিলেন না। বিচার সভায় চোপড়ার বিধায়ক হামিদুল রহমানের ঘনিষ্ঠ জেসিবি’র কঞ্চি দিয়ে মহিলা ও পুরুষকে নির্মমভাবে পেটানোর ভিডিও করেছিলেন ওই এলাকারই কেউ। সেই ভিডিও ভাইরাল হতে সময় নেয়নি। ঘটনার মোড় ঘোরাতে ওই মহিলা এবং তার পরিবারের উপর চাপ সৃষ্টি করে হামিদুল ঘনিষ্ঠরা। আসলে সবটাই হয়েছে পরিকল্পিতভাবে। হামিদুল রহমানের প্রচ্ছন্ন মদতে চোপড়া বিধানসভার দুই একটি গ্রাম পঞ্চায়েত বাদ দিলে সর্বত্রই জেসিবি, বুলডোজার, ট্রাক্টর বাহিনী কাজ করছে।
গত রবিবার ওই পেটানোর দৃশ্য সোসাল মিডিয়াতে ভাইরাল হওয়ার পরেই তজিমুল ওরফে জেসিবি’র বাহিনী গ্রামে ত্রাস সৃষ্টি করে যাতে কেউ মুখ না খোলে। গত ১ জুলাই সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে থানায় নির্যাতিতা মহিলাকে দিয়ে লিখিত অভিযোগ করানো হয়। পুলিশ সেই রাতেই সেই এফআইআর হিসাবে গ্রহণ করে। ওই নির্যাতিতা মহিলাকে দিয়ে পুলিশ ও তৃণমূলী বাহিনী লেখায় যে, ‘আমার অজান্তে সোসাল মিডিয়ায় একটি ভিডিও ভাইরাল হয়েছে...যার দরুণ আমার সম্মানহানি হয়েছে...।’ তৃণমূল নেতা জেসিবি যে তাঁকে রাস্তায় ফেলে সকলের সামনে নৃশংসভাবে মারধর করেছে তার উল্লেখই নেই এফআইআরে। সেই মারধরের ঘটনায় নয়, তাঁর হয়ে প্রতিবাদ করাতেই নাকি সম্মানহানি হয়েছে!
চোপড়াকাণ্ডে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমের বিরুদ্ধে থানায় মিথ্যে অভিযোগ দায়ের করার তীব্র নিন্দা করল সিপিআই(এম) দার্জিলিঙ জেলা কমিটিও। সোমবার সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য জীবেশ সরকার বলেন, ‘আক্রান্ত নির্যাতিতাকে দিয়ে পুলিশের কাছে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অভিযোগ জানানো হয়েছে যে এই ভিডিওটি ভাইরাল করার জন্য সম্মান নষ্ট হয়েছে। আসলে তৃণমূল কংগ্রেসের মাফিয়া ও পুলিশ প্রশাসনের চাপে এই ধরনের মিথ্যা অভিযোগ দায়ের করানো হয়েছে। প্রথম দিন থেকেই তৃণমূল ও প্রশাসন চোপড়ার নৃশংস ঘটনাকে আড়াল করার জন্য উঠেপড়ে লেগে রয়েছে। তৃণমূল ও পুলিশের যোগসাজশে এখনও চোপড়ায় আতঙ্কের পরিবেশ রয়েছে।
CRIME AGAINST WOMEN
চাপ দিয়েই সেলিমের বিরুদ্ধে এফআইআর নির্যাতিতাকে দিয়ে
×
Comments :0