বামফ্রন্ট সরকারের সময় পাওয়া জমি থেকে আদিবাসী পাট্টাদারদের উচ্ছেদ করতে আসা পুলিশ ও তৃণমূল বাহিনীকে রুখে দিলেন দাদপুরের মূলগ্রামের কৃষক-খেতমজুরেরা। মূল গ্রামে জমি হাঙ্গর বিরুদ্ধে এদিনও লড়াই ছিল অব্যাহত। নেতৃত্বে বন্যা টুডু। শনিবার সকাল সাতটায় বিডিও, ভূমি রাজস্ব আধিকারিকের সঙ্গে বিশাল পুলিশ বাহিনী গেলো মূল গ্রামে। বিক্ষোভকারীরা স্লোগাান তোলেন ‘বুকের রক্ত নাও জমি দেবোনা’।
মূল গ্রামের ১৭৭ জন বর্গাদার রোখ নিয়ে এদিন অবরোধ করেন মূল গ্রামের মূল রাস্তা। দীর্ঘক্ষন ডি এস পি র নেতৃত্বে বিশাল বাহিনীর চোখে চোখ রেখে রুখে দেওয়ার বার্তা চলতে থাকে। পেছনে জমি হাঙ্গরদের সঙ্গে করে তৃণমূলের আস্ফালন চলতে থাকে। কিন্তু একরোখা গরিব মানুষের কাছে মাথা নোয়াতে বাধ্য হয় প্রশাসন। ব্রিগেডের প্লাবনের বার্তা যেন এসে পড়ে ছিলো মূল গ্রামে। মূল গ্রামের লড়াই ব্রিগেডের ময়দানে অগণিত খেটে খাওয়া মানুষের কাছে সারা রাজ্যের খেটে খাওয়া মেহনতি মানুষকে আশা জুগিয়েছিলো। জমি আন্দোলনে উত্থান যে তৃণমূল সেই দল যে কত বড় জমি হাঙ্গর তার মুখোশ স্পষ্ট করে দিয়েছিলো ২০ এপ্রিলের ব্রিগেড। এই নিয়ে তিনবার ফিরতে হল প্রশাসনকে। বিক্ষোভকারীদের দাবি, জমি তাদের। সেই জমি থেকে জোর করে উচ্ছেদ করা যাবে না। বিক্ষোভকারীরা জানান, কোনো মতে জমি তারা ছাড়বেন না। গত ত্রিশ বছর ধরে তারা চাষ করছেন ওই জমিতে। বামফ্রন্ট সরকার তাদের পাট্টা দিয়েছিল। এই জমি তাদের। বর্তমান সরকার সেই জমি কেরে নিতে চাইছে।
হুগলি জেলার পোলবা-দাদপুর ব্লকের বিস্তীর্ণ কৃষিপ্রধান এলাকা মূলগ্রামের বেশিরভাগ জমিই তিন ফসলি। ধান, আলু এবং তিল, এই তিন শস্য চাষ হয় জমিতে। ১৯৯৪সালের ১৩ এপ্রিল মূলগ্রামের ১৭৭টি আদিবাসী পরিবার এই এলাকার সরকারি খাসজমি পাট্টা পায়। বামফ্রন্ট সরকারের সময়েই অনেকেরই এই পাট্টাপ্রাপ্ত জমি রেকর্ডভুক্ত হয়েছে। তৃণমূল আসার পর গ্রামের কায়েমী স্বার্থের প্রতিভূ জমির মালিক ওই জমি পাট্টা খারিজ করার জন্য মামলা করে। এই মামলায় সরকারি প্রশাসনের আধিকারিকরা হাইকোর্টের কাছে সঠিক তথ্য পরিবেশন না করে একাধিকবার শুনানিতে গরহাজির থেকে আদালতকে বিভ্রান্ত করে। সে কারণেই এই জমিকে আদালত খাস থেকে মুক্ত করে (ডাইভেস্ট)। এই মামলার বিষয়ে পাট্টাপ্রাপকদের কাছে কোন নোটিসই আসেনি। যারফলে পাট্টাপ্রাপকরা হাইকোর্টে নিজেদের কথা তুলে না ধরতে পারায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে কোর্ট। সেই মত শনিবার পুলিশ নিয়ে প্রশাসনের লোকজন জমি দখল নিতে গিয়ে বাধার মুখে পরে। এদিন পুলিশ ও তৃণমূলী বাহিনীর বিরুদ্ধে পাট্টাপ্রাপক মহিলা-পুরুষ সহ বিপুল সংখ্যায় মানুষ এই বিক্ষোভে অংশগ্রহণ করেন। তাদের লাগাতার আন্দোলনে পিছু হটতে বাধ্য হন প্রশাসন। গ্রামবাসীদের নিয়ে স্থানীয় সিপিআই(এম)’র কৃষক সভার নেতৃত্ব বিক্ষোভ শুরু করে। নেতৃত্ব দেন ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সংগ্রামী নেত্রী বন্যা টুডু। ছিলেন পান্ডুয়ার প্রাক্তন সিপিআই(এম) বিধায়ক আমজাদ হোসেন।
এদিন বক্তব্য রাখেন সারা ভারত ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের জেলা সম্পাদক রামকৃষ্ণ রায়চৌধুরী, কৃষক সভার হুগলী জেলা সম্পাদক স্নেহাশীষ রায়, ক্ষেতমজুর ইউনিয়নের সংগ্রামী নেত্রী বন্যা টুডু, প্রাক্তন বিধায়ক ও ক্ষেতমজুর নেতৃত্ব আমজাদ হোসেন, মিন্টু বেরা, সৌমেন্দ্র নাথ ঘোষ, মহম্মদ মাহফুজ রা।
নেতৃবৃন্দ বলেন, যদি একটা ইট বাড়ির খুলতে পারে তাহলে গোটা বাড়িটা ভেঙে ফেলবে। তাই একজায়গায় যদি গরিব মানুষ উচ্ছেদ হয় তাহলে কাল গোটা রাজ্য গোটা দেশে উচ্ছেদ হবে। তাই আজকে যদি আমরা এই গরীবের জমি দখলের কারবার রুখে দিতে পারি সারা রাজ্যে এই দখলের কারবার রুখে দিতে পারবো। একটা জিনিস প্রমান হয়েছে গরিব মানুষের পাশে এই সরকার টা নেই। এই লড়াইটা শুধু কয়েকজন জমি হাঙ্গরদের বিরুদ্ধে লড়ছি এটা ভাববেন না। আমরা লড়ছি একটা সর্বগ্রাসী রাষ্ট্রশক্তির বিরুদ্ধে। কাল ওরা আপনাদের মাংস খাইয়ে ভুলিয়েছিল আজ দেখছেন আপনাদের জমি দখল করে নিতে চাইছে। দশের লাঠি একের বোঝা এক হয়ে এর প্রতিরোধ করতে হবে।
Comments :0