পঞ্চায়েত নির্বাচনের স্মৃতি ফেরার আশঙ্কা রয়েছে লোকসভা নির্বাচনেও। তার বিরুদ্ধে সরব হলেন নিউটাউনের বাসিন্দাদের একাংশ। রবিবার বিশ্ববাংলা গেটের সামনে নাগরিক মঞ্চ ‘সেভ ডেমোক্রেসি ইন নিউটাউন’-এর সভা থেকে দাবি উঠল, নিজের ভোট নিজে দিন, লুটেরাদের রুখে দিন।
তৃণমূল সরকারের অপদার্থতায় রাজ্যের অন্যতম পরিকল্পিত শহর নিউটাউন এখনও পঞ্চায়েত এলাকার অধীনে। উত্তর ২৪ পরগণার রাজারহাট ব্লকের জ্যাংড়া হাতিয়ারা-২ এবং পাথরঘাটা পঞ্চয়েতের মধ্যে পড়ে নিউটাউন। ২০২৩ সালের পঞ্চায়েত নির্বাচনে এই অঞ্চলের মানুষ ভোট দিতে পারেন নি। ‘ভোট বয়কটের’ ডাককে সামনে রেখে অবাধে ভোট লুট করে তৃণমূল। তার প্রতিবাদে গড়ে ওঠে সেভ ডেমোক্রেসি ইন নিউটাউন নামের মঞ্চ। রবিবার সেই মঞ্চের ডাকে বিশ্ববাংলা গেটের সামনে জনসভা হয়। জনসভায় নিউটাউনের কয়েক শো বাসিন্দা অংশ নেন।
বিশিষ্ট আইনজীবী শামীম আহেমদ সভায় পরিসংখ্যান দিয়ে বলেন, আদালেত ঠিক কত সংখ্যক মামলা চলেছ গত পঞ্চায়েত ভোটে প্রশাসনেক ব্যবহার করে ভোটলুটের ঘটনা নিয়ে। এই অবস্থা সারা রাজ্যেই। তাঁর আবেদন, বেআইিন পার্টি অফিস সহ যে কোনো অবৈধ নির্মাণের ক্ষেত্রে স্থানীয়দের এগিয়ে আসতে হবে।
অধ্যাপক অম্বিকেশ মহাপাত্র কার্টুনকান্ডে তাঁর নিজের পুলিশি হয়রানির অভিজ্ঞতাকে মিলিয়ে দেখেন নিউটাউন বাসীদের অভিজ্ঞতার সঙ্গে। ইতিহাসের অধ্যাপক আশিস কুমার দাস বলেন, ইতিহাস কোনও দিন অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থাকে ক্ষমা করেনি। সমাজকর্মী ও রাজনৈতিক কর্মী সন্দীপা চক্রবর্তী এবং সপ্তর্ষি দেব গত পঞ্চায়েত নির্বাচনে নিজেদের ভোট দিতে না পারার অভিজ্ঞতা তুলে ধরেন। নিত্য হুমকি, নিরাপত্তাহীনতার প্রসঙ্গ উঠে আসে তাঁদের কথায়। নিউটাউন পরিচালনার দায়িত্বে থাকা এনকেডিএ এবং হিডকো’র মত সংস্থা কীভাবে শাসকদলের পুতুলে পরিণত হয়েছে, তাও তুলে ধরেন তাঁরা।
অধ্যাপক বিমান সমাদ্দার বলেন, এদিনের সভার আয়োজেনও অসহযোগিতা করে স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন।
উদ্যোক্তারা বলেছেন, পঞ্চায়েত নির্বাচনের ভোট লুটের পরের দিনে নাগরিক ক্ষোভের সাক্ষী ছিল নিউটাউন। দলমত নির্বিশেষে মানুষ পথে নেমে ভোট লুটেরাদের বার্তা দিয়েছিলেন। সেই গতিপথ ধরেই ‘সেভ ডেমোক্রেসি ইন নিউটাউন’ গঠিত হয়। রবিবারের সভা থেকেও স্পষ্ট, নিউটাউনের মানুষের মনে সেই ক্ষোভের আগুন এখনও নেভেনি।
নিউটাউনের বাসিন্দাদের বক্তব্য, ভোট লুটের পাশাপাশি আরও বেশ কয়েকটি ইস্যুতে তাঁরা সরব। নিউটাউনের মূল নগর নক্সায় বিপুল পরিমাণ সবুজায়নের ব্যবস্থা ছিল। কিন্তু সেই অংশগুলিকে ব্যবসায়ীদের কাছে বিক্রি করা হচ্ছে। গত কয়েক মাসে কয়েক হাজার গাছকে নিউটাউনের বুক থেকে নিশ্চিহ্ন করা হয়েছে। রাজ্যের পরিকল্পিত এই শহরের পরিকাঠামো ভেঙে পড়েছে। পথসুরক্ষার বালাই নেই। পার্ক, ক্লাব, রেস্তোরা, পানশালা এবং শপিংমলের সংখ্যা বেড়ে চললেও, শহরের নাগরিকদের জন্য কমিউনিটি হল নেই। শাসকদলের মদতে বেআইনি নির্মাণ বাড়ছে। যদিও সম্প্রতি সিপিআই(এম)’র করা মামলার প্রেক্ষিতে হাইকোর্ট তৃণমূলের ৩টি বেআইনি পার্টি অফিস ভেঙে ফেলার নির্দেশ দিয়েছে।
এর পাশাপাশি অপর্যাপ্ত সরকারী স্কুল, কলেজ এবং হাসপাতাল এবং উচ্চহারে পার্কিং মূল্য নিয়েও সরব হয়েছে সেভ ডেমোক্রেসি ইন নিউটাউন।
Comments :0