BJP

কয়েক যুগের জন্য বিজেপি এবার ভোট চাইছে  জবাব দেবার জন্য প্রস্তুত হচ্ছে জনগণ 

জাতীয় উত্তর সম্পাদকীয়​

গৌতম দেব


শ্রী নরেন্দ্র মোদী বর্তমানে ভারতের প্রধানমন্ত্রী, এই বাক্যচয়নে দ্বিমত আছে এদেশের বহু নেতা, রাজনীতিবিদ এবং দেশ, বিদেশ ও সমাজের কিছু দিকপাল বোদ্ধাদের। তাঁদের এই বাক্যের যে অংশের উপর না পসন্দ আছে তা হচ্ছে ‘বর্তমান’। প্রধানমন্ত্রী তথা কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা নতুন করে তৈরি হবার চার পাঁচ মাস আগে ‘বর্তমান প্রধানমন্ত্রী’ শব্দবন্ধের উপর জোর দিয়ে কিছু বলার অর্থ মোদী সাহেবের স্থায়িত্ব নিয়ে সংশয় প্রকাশ করা। এই দেশের অগ্রগণ্য প্রবীণ সাংবাদিক এবং ভারতের নামকরা প্রায় ইংরেজি, হিন্দি ভাষায় প্রকাশিত নামী দামি দৈনিকের সম্পাদক অথবা কার্যকরী কর্মকর্তাদের অনেকেই বিজেপি এবং জনসঙ্ঘের সর্বোচ্চ নেতাদের অনেক কালের ঘনিষ্ঠ। বর্তমান মহামহিম রাষ্ট্রপতির প্রেস সচিব শ্রীঅজয় সিং সম্প্রতি একটি বই লেখেন, The Architect of New India’ । বইটিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর উপরে আলোকপাত করা হয়েছে অনেক বেশি। বইটির গুরুত্ব বোঝাতে আমেরিকার জন হপকিন্স বিশ্ববিদ্যালয়ের আন্তর্জাতিক সম্পর্কের  বিভাগীয় প্রধানকে দিয়ে মুখবন্ধ লেখানো হয়েছে, এবং অঢেল প্রশংসা লিপিবদ্ধ করা হয়েছে মোদী এবং বিজেপি সম্পর্কে।
বইটিতে প্রধানমন্ত্রী মোদীর জন্মের আগে থেকে ভারতে বৃটিশ আমল থেকে যে হিন্দু-মুসলমানের সাম্প্রদায়িক শক্তির উত্থান এবং এই সময়কালে বড় বড় হিন্দুবাদী নেতাদের আবির্ভাব এবং সবাইকে সচকিত করে সেই সব নেতাদের কংগ্রেস দলের সাথে যে মল্লযুদ্ধ হচ্ছে তার রূপরেখা পাওয়া যায়। লেখক বইয়ের বিভিন্ন অংশে উল্লেখ করেন যে মোদী সাহেব বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণের ব্যাপারে— দলে এবং সরকারে, বিশেষ ভাবে প্রভাবিত হন তার পরিবার এবং তার মায়ের দ্বারা। লেখকের মূল্যায়নে মোদী তার রাজনৈতিক জীবনে ঘনিষ্ঠতম এবং রাজনৈতিক পরামর্শদাতা অমিত শাহর সাথে একান্তে বোঝাপড়ায় উপনীত হন। দলের ভিতরে যারা মোদীর বিরুদ্ধে তাদের শনাক্তকরণ এবং দল থেকে বিচ্ছিন্ন করার কাজে বিশেষ সাহায্য করেন অমিত শাহ।
বাজপেয়ী বিজেপি’র বড় মাপের নেতা ছিলেন। অনেকগুলি দল নিয়ে কোয়ালিশন চালিয়েছেন। এত বিপুল বৈচিত্র্যে ভরা আমাদের দেশ— রাজনীতিতেও তার লক্ষ্মণ আছে। আদবানী ছিলেন বিজেপি’র স্বীকৃত দুই নম্বর নেতা। তত্ত্ব সামলাতেন অধ্যাপক মুরলী মনোহর জোশী, খুবই সিনিয়র নেতা ছিলেন তিনি। অরুণ জেটলি, সুষমা স্বরাজ অকালে মারা গেছেন। ভেঙ্কাইয়া নাইডু শুধু লোকসভার স্পিকার ছিলেন না, তিনি দলে সর্বজনগ্রাহ্য নেতৃত্বের দিকে এগচ্ছিলেন। মহারাজা যশোবন্ত সিংহ আর বিহারের যশোবন্ত সিংহ, গোয়ালিয়রের মহারানী আর রাজস্থানের শেখাওয়াত প্রভৃতি নেতারা বেঁচে আছেন কি নেই তা বোঝার উপায় নেই— এমন ভাবে মোদী,শাহ, রাজনাথ তাঁদের বয়সের দোহাই দিয়ে ‘মার্গদর্শনে’র সদস্য করেছেন যে পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মুখদর্শন ছাড়া তাদের আর কিছুই করার নেই। অজয় সিং তাঁর বইতে এসব কথা বিস্তারিত আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া আর এস এস-তো আছেই। যে আর এস এস-কে না বুঝলে বিজেপিকে বোঝা কারো পক্ষে সম্ভব নয়। তাই সরকারি প্লেনে দিল্লি থেকে কলকাতা নামলেন স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী অমিত শাহ সঙ্গে বিজেপি’র সর্বভারতীয় সভাপতি শ্রী নাড্ডা। তাদের কর্মসূচি কোথায় কি হচ্ছে বা হবে তা আমরা অনেকে জানি— কাগজপত্রে প্রকাশিত হয়। ঐ দিনই আর একটা প্লেনে সাধারণ যাত্রীদের সঙ্গে নামলেন বিজেপির অভিভাবক আর এস এস-এর সর্বাধিনায়ক মোহন ভাগবত। যার বুকপকেটে লেখা আছে বিজেপি জিতলে কে প্রধানমন্ত্রী হবেন। সেই মোহন ভাগবতের কর্মসূচি আমরা জানলাম না যদিও তিনি গেরিলা নেতা নন এবং আসামের পরেশ বড়ুয়ার মতো ভারতের সৈন্যবাহিনীর উপরে গুলিচালনার মতো বিদ্রোহী নেতাও নন। নতুন বইতে লেখক লিখেছেন : In less than forty years of its existence, the BJP has become the world’s largest political party………Although its historic rise may seem organic to some, much internal deliberation and planning have aided the growth of the organization, which has 180 million members.
বিশ্ব হিন্দু মহাসভা, ভারতীয় জনসঙ্ঘ, ভারতীয় জনতা দল হয়ে নতুন নামকরণ হয়েছে “New BJP” । নতুন বিজেপি’র স্থপতিরা পুরাতন থেকে নতুন বিজেপি’র এই পরিবর্তন যা হতে কয়েক দশক সময় লাগলো এ সম্পর্কে নানান রিসার্চ এবং অধ্যয়ন করলেন এবং নরেন্দ্র মোদীর এই যাত্রায় বেশ বড় ভূমিকার কথা উল্লেখ করলেন। পার্টি বিষয়ে নানা খুঁটিনাটি-বিষয়ে মোদী এবং তাঁর নতুন নতুন ব্যবস্থাপনা বিজেপি’র শক্তি বাড়াতে বিশেষ সাহায্য করে। ক্রমান্বয়ে বিজেপি অন্য বুর্জোয়া দলের মতো নির্বাচনে জয়ের লক্ষ্যে গঠিত একটি সংগঠনে পরিণত হয়।
মোদী পুরোপুরি সেই সংগঠনের লোক। বইটি যে আকারে বিরাট বড় তা না। কিন্তু লেখক বড় মাপের। তার মতো অভিজ্ঞ লেখকের চার বছর লাগল বইটা শেষ করতে। মোদী নিজে খুবই অহংকারী ব্যক্তি সেটা তার ব্যবহার, বডি ল্যাংগুয়েজ, হাঁটাচলা প্রভৃতিতে বোঝা যায়।
তা না হলে ভারতের মতো দেশে প্রধানমন্ত্রী হবার পর তিনি প্রধানমন্ত্রী হিসাবে একটাও সাংবাদিক সম্মেলন করলেন না। এর কি ব্যাখ্যা দেওয়া সম্ভব। ভারতের মতো গণতান্ত্রিক দেশে এ কাজ কি গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে? না। নেহাতই অবজ্ঞা জনমতের প্রতি? লেখকের মা, স্ত্রী এবং দুই কন্যা কিভাবে মোদীর উপরে এই গুরুত্বপূর্ণ প্রোজেক্ট শেষ করার জন্য উৎসাহ দিয়েছিলেন লেখক সেটাও নথিভুক্ত করেছেন। লেখকের মা মোদীকে স্নেহ করতেন। আর এস এস’র লম্বা ছায়া সমগ্র সঙ্ঘ পরিবারের উপর দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হয়ে পড়েছিল। সেক্ষেত্রে শ্যামাপ্রসাদ মূখার্জীর ভূমিকাও বিশেষ ভাবে উল্লিখিত হয়েছে। মতাদর্শগত ভাবে আর এস এস সমগ্র বিষয়টি নিয়ন্ত্রণ করত। ১৯৭৪ সালে জয়প্রকাশের আন্দোলনের সাথে নিজেদের যুক্ত রাখার প্রশ্নে বিজেপিতে বিস্তর জলঘোলা হয়। এই আন্দোলন সম্পর্কে মানুষের মনোভাব কি তা বোঝার জন্য আর এস এস’র নেতৃত্বে বিজেপি জনমতের পালস বোঝার চেষ্টা করে। সঙ্ঘ পরিবারে ‘অখণ্ড ভারত’ অথবা অবিভক্ত ভারত তত্ত্বের সাথে দীনদয়াল উপাধ্যায়, রামমনোহর যোশী প্রমুখ নেতৃবৃন্দের বিরোধ হয়।
এখন পর্যন্ত বিজেপি সাফল্যের সাথে জাতীয় দল হিসাবে কংগ্রেসের পরিবর্ত হিসাবে সফল ভাবে এগিয়ে রাখার চেষ্টা করছে। এটা অবশ্যই হিন্দু সাম্প্রদায়িকতার খোলা তরোয়াল নিয়ে। লেখকের সাথে আলাপ আলোচনার জন্য যে সময় বরাদ্দের প্রয়োজন ছিল কার্যত সেই সময় মোদীর কাছ থেকে লেখক দরাজ হাতে পেয়েছেন।
নরেন্দ্র মোদী তার রাজনৈতিক অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখার জন্য যে সব ব্যবস্থা নিয়েছেন তাতে ধূর্তামি এবং চালাকি দেশের মানুষের কাছে ধরা পড়ে। ভারতের মতো দেশে প্রধানমন্ত্রী বোকা লোক হবেন এ ভাবা যায় না। আদবানী অন্যতম সিনিয়র নেতা– দলের এবং মোর্চার। আদবানীর উপর লেখা বই কম বেরিয়েছে। অজয় সিং তার চেনাজানা হওয়ার সুযোগে এবং হিন্দুত্ববাদী দর্শনের উপর তার খানিকটা মোহ থাকায় The New BJP  তে অনেক নতুন দৃষ্টিকোণ এবং সংবাদ পাওয়া যায় । অনেকগুলিই দরকারি।
The Architect of the New BJP এই পুস্তক কয়েকটা মৌলিক প্রশ্ন তুলে ধরেছে। গতিময়তা এবং বহুমুখী কার্যক্রমে অভ্যস্ত রাজনৈতিক দলগুলি নতুন ব্যস্ততার মধ্যে দিয়ে বিশেষ করে নরেন্র্প মোদীকে একজন শ্রেষ্ঠ সংগঠক হিসাবে তুলে ধরার চেষ্টা করছে। মোদীর এই বুদ্ধি বেশি কার্যকর হয় নির্বাচনের সময়।
সাম্প্রদায়িক শক্তি বিজেপি ভারতে যে গণতন্ত্রের কথা বলে সে ব্যাপারে বিশ্বের তাবড় তাবড় বুদ্ধিজীবী এবং অধ্যাপকগণ সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। দেশে সংসদ যদি থাকে তাহলেই সেই দেশকে গণতান্ত্রিক দেশ বলা সমীচীন না। আমাদের দেশের গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার কয়েকটি দিক সম্পর্কে আলোচনা করা যাক। ১)  ভারতে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীসভা ৭৯ জনকে নিয়ে তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে একজনও মুসলিম সম্প্রদায়ের নেই। খৃষ্টান, শিখ আছে একজন করে। যদিও দুই সভা মিলে ৩৯৫ জন সাংসদ আছে বিজেপি দলের।
২) বিজেপি ৬ জন মুসলিমকে গত লোকসভায় প্রার্থী করেছিল। সবাই পরাজিত হয়েছিল।
৩) যদিও দেশে জনসংখ্যার ১৪.২ শতাংশ মুসলিম সম্প্রদায়ের। লোকসভার ৪.৪ শতাংশ সদস্য মুসলিম। এদের মধ্যে একজনও বিজেপি দলের নয়।
৪) উত্তর প্রদেশ (৪০৩), গুজরাট (১৮২), কর্ণাটক (২২৪) বিধানসভায় একজনও মুসলিম প্রার্থীকে মনোনয়ন দেয়নি বিজেপি পার্টি। সুপ্রিম কোর্টের ৩৪ জন বিচারক আছেন— তার মধ্যে একজন আছেন মুসলিম, একজন পার্শি। একজনও খৃষ্টান বা শিখ নেই।
২০১৯ সালে ভারতের একমাত্র সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান অধ্যুষিত (৫০ শতাংশের বেশি) রাজ্য জম্মু ও কাশ্মীর-এর ‘রাজ্য তকমা’ তুলে নেওয়া হলো। এবং তাদের ইউনিয়ন টেরিটরি করা হলো— তিন টুকরো করে। কর্নাটকে নির্বাচনের আগে মুসলমানদের প্রতি বঞ্চনামূলক নাগরিক আইন (সংশোধিত) পাশ করানো হয়। এই আইনে বৌদ্ধ এবং খৃষ্টান যারা নেপাল, শ্রীলঙ্কা, মায়ানমার থেকে আগত তাদেরও একই ভাবে নাগরিক অধিকার থেকে বঞ্চিত করা হয়। আমেরিকায় কেন্দ্রীয় ভাবে অবস্থিত Freedom House ভারতে মায়ানমার, শ্রীলঙ্কা, নেপাল থেকে আগত মানুষদের জন্য এই পার্থক্যকীকরণ আইন সম্পর্কে বিশেষ ভাবে উল্লেখ করেছে। গোরক্ষা এবং লাভ জেহাদ-এর ইস্যু সামনে রেখে মুসলিম যুবকদের উপর নানাবিধ অত্যাচার চলছে। অভিযোগ করছে বিরোধী দলগুলি। দ্বিতীয়ত গোবলয়ের বাইরে বিজেপি’র প্রসার করতে অসুবিধা হচ্ছে। তৃতীয়ত যেসব রাজ্যে আঞ্চলিক দল শক্তিশালী সেখানেও তাদের অগ্রগমন অত সহজ হচ্ছে না। ক’দিন আগে অনুষ্ঠিত বিধানসভা নির্বাচনে মধ্য প্রদেশ, ছত্তিসগড়, রাজস্থান, মিজোরাম, তেলেঙ্গানা প্রভৃতি রাজ্যে যদিও বিজেপির ফল ভালো হয়েছে। সরকারও হয়েছে তিনটি রাজ্যে। কিন্তু ভোটের শতাংশে বিজেপির ফল ভালো হয়নি। অন্যদিকে রাজস্থান, মধ্য প্রদেশ সহ অনেকগুলি রাজ্যে উপনির্বাচন হলো। সেখানে বিজেপি’র ফল ভালো হয়নি। আর এবছর শুরুতেই তো ভোট। রাজস্থানে ক’দিন আগে একটা গুরুত্বপূর্ণ উপনির্বাচন হলো। বিধানসভার শূন্য আসনে। মন্ত্রীকে রক্ষা করতে সবাই ঝাঁপিয়ে পড়লেন। কিন্তু কংগ্রেস জিতল, হারল বিজেপি।







বিজেপি আসন্ন ভোটে জয়ী হবার জন্য কোমর বেঁধে লেগেছে। আর বিশেষ করে পশ্চিমবাংলায় বিধানসভার ভোট আর দু’তিন বছরের মধ্যে থাকায় গোটা নির্বাচনের বিষয়টা এরাজ্যে অন্য মাত্রা পেয়েছে। আর যেহেতু শেষ কিস্তিতে কয়েকটা রাজ্যের ভোট বিজেপিকে জয়ের স্বাদ দিয়েছে, তাই মোদী এখন মন্ত্রী, সান্ত্রী, সাংসদ, বিধায়ক এবং শিল্পপতি, ব্যাপারী প্রভৃতি এবং দলের মাতব্বরদের নিয়ে রুদ্ধদ্বার বৈঠক করছেন। সেই মিটিংগুলিতে উনি, চাড্ডা, অমিত শাহ থেকে শুরু করে প্রায় সব নেতাই অংশ নিচ্ছেন। কেন্দ্রীয় সরকার কোটি কোটি টাকার চালু ব্যবস্থায় সরকারি বিজ্ঞাপন কাগজে, টিভিতে, বেতারে, সোশাল মিডিয়ায় দিচ্ছে। সব জায়গায় টাকা যাচ্ছে কিন্তু সেই অনুপাতে ভোট আসছে বলে নিশ্চিন্ত হতে পারছে না বিজেপি।
প্রধানমন্ত্রী এবং দেশের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী পশ্চিমবাংলায় আসা যাওয়া শুরু করেছেন এবং মূল সুরটা হচ্ছে বাংলা থেকে ৩০/৩৫টা এম পি দিন, আমরা দেব সরকার। যদিও নতুন প্রধানমন্ত্রীর ব্যাপারটা আগেই উল্লেখ করা হয়েছে। একটানা তিনবার প্রধানমন্ত্রী – আর এস এস-কে ভাবতে হচ্ছে। আর ৩০/৩৫ সংখ্যাটা বার বার বলার মধ্য দিয়ে মমতার দল এবং বাংলার উপরে তাদের নির্ভরশীলতা পরিষ্কার ভাবে বোঝাচ্ছে। 
I.N.D.I.A. জোট, বিরোধী দলগুলিকে নিয়ে হয়ে যাবার পর বিজেপি সরকারের অস্বস্তি দৃশ্যত সামনে এসে পড়েছে। গত লোকসভা ভোটে দেশের কোনও আসনে বিজেপি কোনও সংখ্যালঘু মুসলমানকে প্রার্থী করেনি। ফলে কেন্দ্রে কোনও মুসলমান মন্ত্রী নেই। লোকসভায় প্রার্থী না করে রাজ্যসভায় প্রার্থী করাটা আহাম্মকরা ভাববে।
গণতন্ত্রে ভোট একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু ভোটই সব নয়। সময়ের অগ্রগমনের সাথে সাথে দেখা যাচ্ছে বাক-স্বাধীনতা, পত্রিকা এবং মিডিয়ার স্বাধীনতা। ফেডারেলিজম, ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণ, রাজনৈতিক দল গড়ার স্বাধীনতা, বিরোধীদলের মান মর্যাদা, জম্মু কাশ্মীরের হৃত অধিকার (৩৭০) ফিরিয়ে আনা, নারীদের সম্মান, SC, STদের বিশেষ অধিকার, পাশ্চাত্য দেশগুলির সঙ্গে ভালো সম্পর্ক ইত্যাদিও গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

কালো টাকার আলো করে বিচ্ছুরণ ঘটানো হচ্ছে।
রিজার্ভ ব্যাঙ্ক ঠিক করেছে যে ব্যাঙ্ক থেকে ধার নেওয়া সব টাকা অন্তত ১২ মাস cooling period রাখতে হবে নতুন ঋণ পাবার দরখাস্ত করার আগে। ‘ Banks can undertake compromise settlements or technical write offs regarding accounts categorized as willful defaulters or fraud without prejudice to the criminal proceedings against such debtors, the RBI said.’

অর্থনৈতিক দুর্বৃত্তায়নকে অপ্রতিরোধ্য করতে সরকার কৃষি পণ্যের দাম, পেট্রল, ডিজেল, গ্যাসের বারংবার মূল্যবৃদ্ধি আর ম্যানুফ্যাকচারিং-এর সাজানো রিপোর্টের সূত্র ধরে বিপুল পরিমাণ ভরতুকি দেওয়ার মধ্য দিয়ে শিল্পপতিদের বিরাট অঙ্কের টাকা পাইয়ে দেবার ব্যবস্থা করে চলেছে। আর এর বিরুদ্ধে কিছু বলতে গেলেই আমাদের শিল্পবিরোধী, আধুনিকতাবিরোধী তকমায় ভূষিত করা হচ্ছে। তাছাড়া আদানী আম্বানী মার্কা আঙুল ফুলে কলাগাছ হয়ে যাওয়া শিল্পপতিরা সরকারি তহবিল লুট করার ব্যাপারে নিরন্তর প্রয়াসী হয়ে ওঠায় SEBI, RBI, অর্থদপ্তর, সর্বোপরি প্রধানমন্ত্রীর সুস্নেহ এবং পিঠচাপড়ানিতে বাজারে কৃত্রিমভাবে শেয়ারে ভ্যালু বাড়ছে অবিশ্বাস্যভাবে। কিছুদিন আগে সারা বিশ্বে শেয়ার মার্কেটে ভারতের চোরমার্কা শিল্পপতিদের কয়েকজনের চাপে অর্থাৎ তাদের শিল্পে যা টাকা খাটছে তার শেয়ার ভ্যালু কৃত্রিমভাবে নির্ণয় করা হয় এবং সেই দরে দেশ বিদেশে বিক্রি করা হয়। কিন্তু কয়েকদিনের মধ্যে সত্য প্রকাশিত হয় এবং বাজারে ধস নামে। এবং এটাই আদানীদের শেয়ার নিয়ে হয়েছে।
ভারত জুড়ে ভোটের প্রস্তুতি চলছে। দেশের খোদ প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে ভাঙড়ের আরাবুল, সন্দেশখালির শাহজাহান, ভাটপাড়ার অর্জুন সিং সহ কয়েক হাজার প্রথম শ্রেণির পাকাপোক্ত নাগরিকের নাম করা যায় যারা এখন খুব ব্যস্ত। বৃটিশ আমলে ভারত ছিল শৃঙ্খলিত। তাই পরাধীন ভারতে গণতন্ত্র বিকাশের পথ ছিল কষ্টকর এবং বার বার বাধাপ্রাপ্ত হয়েই তাকে এগতে হয়েছে।
ভারতীয় সমাজের জটিলতার তুলনা সারা বিশ্বে পাওয়া মুশকিল। গণতন্ত্রের কিছু পূর্ব শর্ত আছে। তাই লাতিন আমেরিকার ব্যানানা রিপাবলিকগুলির বেশির ভাগ যখন গণতন্ত্রের পতাকা নিয়ে এগিয়ে আসে, তখন বিশ্ব চমকিত হয়। 
আমরা কংগ্রেসের যুগ বা রাজ্যস্তরে বামফ্রন্টের যুগ এই শব্দবন্ধ ব্যবহার করে রাজনৈতিক অবস্থা ব্যাখ্যা করে থাকি তেমনি বিজেপি প্রায় দশ বছর হলো দিল্লির ক্ষমতায় আছে। এই টার্মে জিতলে সেটা দাঁড়াবে পনেরো বছর। আরও নির্দিষ্ট করে বিজেপি নেতা কর্মীদের আশ্বস্ত করলেন একথা বলে (১৫ আগস্ট স্বাধীনতাদিবসের পতাকা উত্তোলন করে ভাষণ দেওয়ার সময়)— যে মোদী সাহেবই এই লাল কেল্লার পতাকা সামনের বছরও তুলবেন। অর্থাৎ ভোটে তাদের জয় সুনিশ্চিত এবং প্রধানমন্ত্রী হওয়াও সুনিশ্চিত। আগামী বছর ১৫ আগস্ট লাল কেল্লার পতাকা তোলার দায়িত্ব তারই থাকবে। তার দোসর অমিত শাহও মিটিং—এ ঘোষণা করছেন যে বিজেপির যুগ শুরু হলো এবং চলবে অনেক কাল ধরে।
বিরোধীদের ঐক্যবদ্ধ হতে হবে অবিলম্বে। ঐক্যের ক্ষেত্রে সমস্যা অনেক আছে। আজ দরকার ধৈর্যশীল, আন্তরিক প্রচেষ্টা। পশ্চিমবাংলায় যদি বামপন্থীরা ভালো ফল না করে সে শুধু বামপন্থীদের পরাজয় হবে না, ভারতের ঐক্য, ভারতের গণতন্ত্র বিনষ্টকারী শক্তির উত্থান অনেকটা পাকাপোক্ত হতে পারে। জনগণকে কোনও কোনও ক্ষেত্রে টার্নিং পয়েন্ট সৃষ্টি করার ক্ষেত্রে সদর্থক, শক্তিশালী এবং নেতৃত্বদানকারী ভূমিকা পালন করতে হয়। ভারতের জনগণ সবটাই বোঝেন। আশা করি, বাম, গণতান্ত্রিক এবং ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির সেই প্রচেষ্টার সাথে সচেতন এবং স্বৈরাচার সাম্প্রদায়িকতা বিরোধী জনগণ আসন্ন নির্বাচনের সময় সেই ভূমিকা পালন করবেন।

 

Comments :0

Login to leave a comment