INDIA LYNCHING

গোমাংস নয়, প্রসাদ খাওয়ায় পিটিয়ে খুন

জাতীয়

lynching muslim youth indian politics rss bjp delhi news bengali news

মহম্মদ আখলাখ থেকে নাসিম কুরেশি, একের পর এক মুসলিমকে গোমাংস খাওয়ার অপরাধে পিটিয়ে হত্যা করেছে হিন্দুত্ববাদীরা। এবার গণেশ পুজোর প্রসাদের মিষ্টি চুরির অভিযোগ তুলে মনাসিকভাবে অসুস্থ এক ২৬ বছরের মুসলিম যুবককে পিটিয়ে মারা হলো। এরকম অমানবিক ঘটনা ঘটলো এবার খোদ রাজধানী দিল্লিতে। অসুস্থ ওই যুবককে কিছু জিজ্ঞাসা করলেও সঠিকভাবে উত্তরও দিতে পারতো না। দিনমজুরের কাজও করত সে। এমনই মানসিক ভারসাম্যহীন নিরীহ যুবককে প্রকাশ্যে লাইট পোস্টের সঙ্গে বেঁধে পিটিয়ে হত্যা করা হলো সম্পূর্ণ মুসলিমদের প্রতি ঘৃণা থেকে। একদল উন্মত্ত লোক ওই যুবককে ঘিরে ধরে যখন এলোপাথড়ি মারছিল, তাঁর আর্তনাদ শুনেও উদ্ধার করতে কেউ এগিয়ে আসেননি। অথচ সেসময় বহু মানুষ পাশ কাটিয়ে চলেও গেছেন। বুধবার এমনটই জানিয়েছেন, নিহতের বাবা আব্দুল ওয়াজিদ। এই ঘটনাকে ঘিরে তীব্র প্রতিক্রিয়া দেখিয়ে সরব হয়েছে সমাজের বিভিন্ন মহল। গোটা দেশে বিজেপি-আরএসএস’র বিদ্বেষের রাজনীতির কারণে সমাজে মুসলিমদের প্রতি ঘৃণার আগুন কতটা তীব্র হলে একজন মানসিকভাবে অসুস্থ এক যুবককেও শুধু পুজোর প্রসাদ চুরি করার অভিযোগ তুলে এভাবে হত্যা করা যায়। এই ঘটনা তা চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিল। 


পলিশ সূত্রে জানা গেছে, সোমবার রাতে মানসিকভাবে অসুস্থ ২৬ বছরের ইসার মহম্মদ বাড়ি থেকে আচমকা বেরিয়ে চলে যান। বড়ির লোকজন ওই রাতে খোঁজাখুঁজি করলেও তাঁকে আর খুঁজে পাননি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় উত্তর পূর্ব দিল্লির সুন্দর নগরি অঞ্চলে ই-৫৭ নম্বর বাড়ির সামনেই ক্ষতবিক্ষত অবস্থায় ইসারকে পড়ে থাকতে দেখন তাঁর বাবা আব্দুল ওয়াজিদ। রাস্তার ধারের ফল বিক্রি করে সেদিন সন্ধ্যায়  বাড়ি ফিরছিলেন। ছেলেকে গুরুতর আহত অবস্থায় ফুটপাতে পড়ে থাকতে দেখে স্থানীয় লোকজনের সহয়াতায় ইসারকে ঘরে নিয়ে আসেন। তাঁরা সারা গায়ে আঘাতের চিহ্ন ছিল। এমনকি বেশ কিছু জায়গায় গভীর ক্ষতও ছিল। প্রায় অচৈতন্য অবস্থায় উদ্ধার হওয়া ইসার এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই বলতে পারেননি। রাতে অবস্থার অবনতি হলে ইসারকে দ্রুত স্থানীয় হাসপাতালে নিয়ে যাওয়াও হয়েছিল। কিন্তু আঘাত গুরুতর হওয়ায় চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। 
বুধবার ছেলের হত্যার কথা জানাতে গিয়ে আব্দুল ওয়াজিদ বলেন, দীর্ঘ সময় অভুক্ত থাকার কারণে ইসারের প্রচণ্ড খিদে পেয়েছিল। খাবারের খোঁজেই হয়ত গণেশ পূজোর প্যান্ডেলে ঢুকে পুজোর প্রসাদেও হাত দিয়েছিল। সেইসময় তাঁকে হাতেনাতে ধরে ফেলে পুজোর আয়োজকরা। এরপরই ইসারকে লাইট পোস্টের সঙ্গে বেঁধে অমানুষিকভাবে মারধর করে স্থানীয় কিছু বাসিন্দা। ওয়াজিদ আক্ষেপ করে বলেন,  তাঁর ছেলের আতর্নাদ শুনেও কেউই তাঁকে রক্ষা করতে এগিয়ে আসেননি। মার খেতে খেতে জ্ঞান হারিয়ে ফেললে ইসারকে একটি বাড়ির সামনে ফেলে রেখে যায়। ছেলে হারনোর শোকে ভেঙে পড়া ওয়াজিদের অভিযোগ, মুসলিম হওয়ার কারণেই তাঁকে এভাবে মেরে ফেলা হলো।      
দিল্লি পুলিশের ডেপুটি কমিশনার (উত্তর পূর্ব) জয় এন তিরকে জানিয়েছেন, মঙ্গলবার রাত ১০ টা ৪৫ মিনিট নাগাদ খবর পেয়ে সুন্দর নগরে ই-৫৭ নম্বরে নিহত ইাসারের বাড়িতে যায় পুলিশ। তাঁকে বাড়ির সামনেই মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। তাঁর মাথায় গভীর ক্ষতের চিহ্নও ছিল। ওই রাতেই তাঁর মৃতদেহ ময়নাতদন্ত করতে হাসপাতালে পাঠানো হয়। 

বুধবার একথা জানিয়ে ডিসিপি তিরকে বলেন, প্রাথমিক তদন্তে জানা গেছে, সুন্দর নগরির জি-৪ ব্লকে গণেশ পুজোর আয়োজন করেছিল স্থানীয় বাসিন্দারা। পুজোর প্যান্ডেলের কাছেই সোমবার ভোর ৫টা নাগাদ ইসারকে চোর সন্দেহে ধরে আটকে রাখে স্থানীয় কয়েকজন যুবক। ডিসিপি জয় তিরকিও বলেছেন, মৃত যুবক মানসিক প্রতিবন্ধী ছিলেন। ওই দিন সকালে স্থানীয় যুবকরা ইসারকে আটক করে জিজ্ঞাসাবাদ করলেও সে তাদের কোনও জবাবই দিতে পারেনি। এরপরই তাঁকে লাইট পোস্টের সঙ্গে বেঁধে মারধর করতে থাকা। পুলিশের এই কর্তা জানিয়েছেন ইতিমধ্যে তারা তদন্ত শুরু করে দিয়েছে। সেদিন যারা ইসারের ওপর অত্যাচার চালিয়েছিল তাদের মধ্যে এখনও পর্যন্ত কাউকেই পুলিশ ধরতে পারেনি। তবে, ডিসিপি তিরকে এদিন বলেন, মারা যাওয়ার আগে ইসার তাঁর বাবাকে জানিয়েছিল, সেদিন তাঁকে চোর মনে করে একদল লোক আটকে রেখেছিল। লাঠি, রড দিয়ে বেধড়ক মারতে থাকে। 
মোদী ক্ষমতায় আসার পর থেকেই গোটা দেশে যে ঘৃণার রাজনীতি ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে তার শিকার হতে হয়েছে বিশেষত মুসলিম নাগরিকদের। কখনও গোরু পাচার, আবার কখনও গোমাংস খাওয়ার অভিযোগ তুলে নিরীহ সাধরাণ মুসলিম নাগরিকদের হত্যা করা হচ্ছে। এই হিংসায় ছাড় পাচ্ছেন না কেউই। এবার খোদ দিল্লিতে পুজোর প্রসাদ চুরির অভিযোগ তুলে এমনকি মানসিকভাবে অসুস্থ যুবককেও  হত্যা করা হলো।

Comments :0

Login to leave a comment