DIDIR DYUT AGITATION ACROSS BENGAL

বিধায়ক আসার আগেই গাছ ফেলে পথরোধ

রাজ্য জেলা

‘দিদির দূত’ পৌঁছনোর আগেই বাঁশ, গাছ ফেলে পথ আটকে দিলেন গ্রামবাসীরা। খোদ বীরভূমের জেলা পরিষদের সভাধিপতিকেই গ্রামে ঢুকতে দিলেন না ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীরা। সভাধিপতি গ্রামে আসার আগে গাছ, বাঁশ ফেলে রাস্তা অবরোধে শামিল হলেন তাঁরা।


গোরু পাচারকাণ্ডে আপাতত জেলবন্দি এই বীরভূমেরই বাহুবলী তৃণমূলী নেতা অনুব্রত মণ্ডল গত পঞ্চায়েত ভোটের সময় বলেছিলেন, ‘উন্নয়ন’ রাস্তার মোড়ে মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে।’ সেই বীরভূমেই একের পর এক এলাকা এখন উন্নয়নের দাবিতে, তৃণমূলের দুর্নীতির প্রতিবাদে সোচ্চার হচ্ছে। চোখ রাঙানি তো দূরের কথা, ক্ষুব্ধ গ্রামবাসীদের তাড়া খেতে হচ্ছে তৃণমূলকেই। পরিস্থিতি এমনই যে জেলা তৃণমূল নেতারাই ঘনিষ্ঠ মহলে জানাচ্ছেন, পঞ্চায়েত ভোটের আগে ড্যামেজ কন্ট্রোল করতে গিয়ে উলটে গ্রামে অশান্তির পরিবেশ তৈরি হয়ে যাচ্ছে এই ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচিতে।  


গত আগস্ট মাসে গোরু পাচারকাণ্ডে গ্রেপ্তার হয় অনুব্রত মণ্ডল, তারপর থেকে জেলেই রয়েছেন। অনুব্রতর অনুপস্থিতিতে এবার খোদ মুখ্যমন্ত্রী জেলায় আসছেন ৩১জানুয়ারি। তার আগেই জেলায় জেলায় দিদির দূতরা যেভাবে ঘাড়ধাক্কা খাচ্ছেন তাতে কপালে ভাঁজ পড়েছে শাসক দলের নেতাদের। 


রবিবার গ্রামবাসীদের কাছে কার্যত যেন ধাক্কা খেলেন সিউড়ির বিধায়ক তথা বীরভূম জেলা পরিষদের সভাধিপতি বিকাশ রায়চৌধুরি। ঘটনা বীরভূমের চিনপাই পঞ্চায়েতের এলেমা গ্রামের। গ্রামে ঢোকার মুখে বাঁশ, গাছ ফেলে রাস্তা আটকে দেন গ্রামবাসীরা। তাঁদের অভিযোগ, বিধায়ক তাঁদের প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন গ্রামে পানীয় জলের ব্যবস্থা করে দেবেন। তার জন্য মাপজোকও হয়েছিল। কিন্তু আজও তা বাস্তবায়িত হয়নি। তাই বাঁশ দিয়ে রাস্তা আটকে রেখেছি। বিধায়ক এলেই আমাদের অভিযোগ জানাবো। ওই গ্রামে যান বিধায়ক। তাঁকে সামনে পেয়ে দাবি জানাতে থাকেন গ্রামবাসীরা। বিধায়ক আশ্বাস দিয়ে পরিস্থিতি কোনোমতে নিয়ন্ত্রণ করার চেষ্টা করেন। 


আবার মুরারইতে এদিনই অভাব অভিযোগ জানাতে দাঁড়িয়ে থাকা গ্রামবাসীরা শুধু গাড়ির ধুলো গায়ে মেখেই ফিরলেন বাড়ি। কারণ গাড়ি থেকে নামা তো দূর বরং কাচই নামালেন না বীরভূমের মুরারই বিধানসভার বিধায়ক মোশারফ হোসেন। বরং এলাকার হাসপাতাল নিয়ে ওঠা বিস্তর অভিযোগের ভিত্তিতে হালহকিকত যাচাই করতে গেলে বিধায়ককে হাসপাতালের সমস্যা দেখাতে গিয়ে তৃণমূলের মিছিলেই হাঁটতে দেখা গেল ব্লক স্বাস্থ্য আধিকারিককে!


রবিবার মুরারই গ্রাম পঞ্চায়েতের গোপালপুর গ্রামে যান তৃণমূল বিধায়ক মোশারফ হোসেন। কালো গাড়িতে চড়ে গ্রামের রাস্তায় ধুলো উড়িয়ে চলে যান বিধায়ক। মনে জমে থাকা ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশের জন্য দাঁড়িয়েছিলেন গ্রামের মানুষ। প্রস্তুত ছিলেন গাঁয়ের যন্ত্রণার কথা উগড়ে দিতে। পরিস্থিতি বিলক্ষণ আঁচ করে দাঁড়ানোর নামগন্ধই করেনি বিধায়কের গাড়ি। গোপালপুর গ্রামের বাসিন্দা মুর্শেদা বেগম বলেন, “বিধায়ক আসছে শুনে গ্রামের রাস্তার সমস্যার কথা জানাবো বলে রাস্তায় দাঁড়িয়ে ছিলাম কিন্তু বিধায়কের গাড়ি দাঁড়ালো না।’’ গ্রামবাসী আনারুল শেখ বলেন, “গ্রামের রাস্তা বেহাল। ভোটের আগে রাস্তা সংস্কারের প্রতিশ্রুতি দিয়ে গিয়েছিলেন বিধায়ক। এখন রাস্তায় এক হাঁটু জল দাঁড়িয়ে যায়। ঠিক করেছিলাম দেখাবো কিন্তু বিধায়কের গাড়িই তো থামল না”।


মুরারই গ্রামীণ হাসপাতাল পরিদর্শনে গিয়ে বেশ কিছু অভিযোগ শুনতে হয়েছে বিধায়ক মোশারফ হোসেনকে। পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলেন হাসপাতালের চিকিৎসকরা। স্বাস্থ্য আধিকারিক আসিফ আহমেদ বলেন, “আমি পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলতে ওনার সঙ্গে ছিলাম। হাসপাতাল চত্বর ঘুরিয়ে দেখিয়েছি। কোনও রাজনৈতিক দলের মিছিলে হাঁটিনি।’’ 

বিধায়ক মোশারফ হোসেন বলেন, “বিডিও এলাকায় আরও শৌচাগার নির্মাণের অনুরোধ করেছেন। হাসপাতালে তিনজন গাইনোকোলজিস্ট থাকলেও পরিকাঠামোগত কারণে সিজার করা চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিষয়টি যথাস্থানে জানাবো। তবে বিএমওএইচ আমাদের মিছিলে হাঁটেননি। উনি আমাদের পরিকাঠামো ঘুরিয়ে দেখান।'' গ্রামবাসীদের অভিযোগ অস্বীকার করেছেন বিধায়ক। তিনি বলেন, “আমি গ্রামে গিয়েছিলাম। মানুষের সঙ্গে কথা বলেছি। কেউ কোনও অভিযোগ করেনি।''


অপরদিকে ময়ূরেশ্বরের ডাবুক পঞ্চায়েতের নন্দীগ্রামে গিয়েও এলাকার বিধায়ক মহিলাদের ক্ষোভের মুখে পড়েন। এলাকার সমস্যা নিয়ে গত দু-দিনের মতো এদিনও জেলায় একইরকম অসন্তোষের আঁচে ঢেকেছে ‘দিদির সুরক্ষা কবচ’ কর্মসূচি।


 

Comments :0

Login to leave a comment