দেবাশিস আচার্য, কৃষ্ণনগর
মিছিল তখন কৃষ্ণনগর পার করে বাঁশকুল্লায়। একদল ছেলে কাঁধে পড়ার ব্যাগ। তাদের মধ্যে একজন নিজের এক বন্ধুর উদ্দেশ্যে প্রশ্ন করে, ‘এই এরা কারা আসছে?’
সঙ্গে সঙ্গে পিছনের ছেলেটি বলে, ‘আরে ইনসাফ যাত্রা। শুনিসনি ওরা আসবে?’’
৩ নভেম্বর কোচবিহার থেকে শুরু হওয়া ইনসাফ যাত্রা আজ নদীয়ায়। প্রানবন্ত এক মিছিল। সামনে আদিবাসী লোক শিল্পী সংঘের লোকেরা নাচ করছেন তালে তালে। ব্রিগেডের বিশেষ প্রচার তুলে ধরছেন পদযাত্রীরা। সব বয়সের মানুষ আছেন মিছিলে। মিছিলের মাঝে স্লোগান যেমন উঠছে, তেমন কোথাও গান, কোথাও নাচ, ব্যাঞ্জ বাজছে। প্রতিবন্ধী সম্মিলনীর কর্মীরাও আছেন মিছিলে।
এদিন কৃষ্ণনগরের সভা থেকে তৃণমূল এবং বিজেপিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। তিনি বলেন, ‘নদীয়া কি পেলো? এখানে স্বাধীনতা আন্দোলনের ঐতিহ্য আছে। খাদ্য আন্দোলন ঐতিহ্য, চাঁদ গাজি, চৈতন্যের ঐতিহ্য। একজন বিধায়ক চাকরি চুরির দায় গোটা পরিবার নিয়ে জেলে। আর এক বিধায়ক তিনি বিজেপিতে নাকি তৃণমূলে নিজেই জানেন না।’ মুকুল রায় এবং মানিক ভট্টাচার্যকে নাম না করে আক্রমণ করেন মীনাক্ষী। মুকুল ২০২১ এর বিধানসভায় বিজেপির টিকিটে কৃষ্ণনগর দক্ষিণ আসন থেকে জিতেই তৃণমূলে যোগদান করেন। কিন্তু খাতায় কলমে সে এখনও বিজেপি বিধায়ক এবং পিএসসি চেয়ারম্যান। এই প্রসঙ্গ টেনে মীনাক্ষী মুখার্জি বলেন, ‘কে অসুস্থ তা নিয়ে কিছু বলছি না, কে কোন দলে আছে সেই নিয়ে আমাদের মাথা ব্যাথা নেই। আমাদের প্রশ্ন পিএসসি চেয়ারম্যান হওয়া সত্ত্বেও মমতা ব্যানার্জির সরকারের চুরি কেন আটকালেন না?’
তৃণমূল শাসনে রাজ্যে ধুমকেতুর গতিতে বেড়ে আরএসএস-এর শাখা। নদীয়াতেও তা বেড়েছে। মীনাক্ষী বলেন, ‘২০১১ সালের আগে তৃণমূল আরএসএস বলতো নদীয়ায় গনতন্ত্র নেই দলতন্ত্র আছে। আর এখন তাই তৃণমূলের মদতে পাড়ায় পাড়ায় শাখা খুলেছে আরএসএস। সেখানে অস্ত্র শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে। সাম্প্রদায়িক বিষ ছড়ানো হচ্ছে। গোটা দেশ যখন সুকিয়ে যাচ্ছে আরএসএস এর নেতৃত্বে, তখন তার একটি কোলের দল তৃণমূল নদীয়ার সম্প্রীতিকে নষ্ট করছে।’
মহুয়া মৈত্রের বহিষ্কারের বিষয় নিয়ে বামপন্থীরা বিজেপির সমালোচনা করলেও সাংসদ হিসাবে তার ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন মীনাক্ষী। তিনি বলেন, ‘মহুয়া মৈত্র সাংসদ পদ হারিয়েছে ১০০ দিনের টাকা নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য? না। আদানিকে নিয়ে প্রশ্ন করার জন্য। কিন্তু নিজের দিকে তাকাতে দম লাগে। এই আদানি তৃণমুলকে নির্বাচনী বন্ডে টাকা দিয়েছে, চাল কল কিনছে বর্ধমানে, কয়লা খনি দেওয়া হচ্ছে আদানিকে।’
প্রাক্তন যুব নেতা তথা সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমন্ডলীর সদস্য পলাশ দাস বলেন, ‘কাজ নেই। যে কাজ রয়েছে তাতে অত্যন্ত কম মজুরী। জোমাটো, সুইগির কাজ করতে বাধ্য হচ্ছে ছেলে মেয়েরা। আর এক অংশ টোটো চালাচ্ছে অন্য কোথাও কাজ না পেয়ে। অন্যদিকে অবাধ দুর্নীতি এবং লুঠ। মোদীকে শক্তিশালী করে দিদির লুঠ কমাতে পারবেন এটা ভুল। দিদির লুঠ বন্ধ করতে মোদীকে শক্তিশালী করা দরকার এটা ভ্রান্ত দারনা। ২০১৪ সালে থেকে দিদির লুঠ বেড়েছে কি না সেটা নিজেরা বিচার করুন। দিদির লুঠ বন্ধ করতে হলে মোদীকে হঠাতে হবে।’
Comments :0