EDITORIAL

মোদীর চোখে ঠুলি

সম্পাদকীয় বিভাগ

ক‍‌য়েকদিন আগে মধ্যপ্রদেশে গিয়ে এক দলীয় সভায় ভাষণ দেবার সময় সমস্ত বিরোধী দলের নেতাদের দুর্নীতিগ্রস্ত বলে সরাসরি আক্রমণ করেছিলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী। কি কেন্দ্রে, কি রাজ্যে বিজেপি শাসনে ‍ কোথাও কোনও দুর্নীতি তিনি দেখতে পাননি। যদিও বিজে‍‌পি শাসিত প্রতিটি রাজ্যে এবং স্বয়ং মোদী শাসিত কেন্দ্রে ভূরি ভূরি দুর্নীতির অভিযোগ জমা হয়ে আছে। যে রাজ্যকে প্রধানমন্ত্রী বেছে নিয়েছেন দুর্নীতির প্রশ্নে বিরোধীদের আক্রমণের জন্য সেই মধ্য প্রদেশেই ফাঁস হয়েছে বিশালাকারের নিয়োগ দুর্নীতি। রেভিনিউ আধিকারিক পদে নিয়োগের জন্য প্রায় দশ লক্ষ আবেদনকারীর (পরীক্ষার্থী) মধ্যে আরএসএস ঘনিষ্ট সাত জনকে বিশেষ উদ্ভাবনী কায়দায় বেছে নিয়েছে  মধ্য প্রদেশ এমপ্লয়িজ সিলেকশন বোর্ড যা ইএসবি নামে পরিচিত। মাত্র দু‌’মাস আগে এই মধ্য প্রদেশ সরকারই অনেকটা একই কায়দায় প্রকৃত উত্তীর্ণ ও ও যোগ্যদের  বঞ্চিত করে জেলা ও ব্লক কো-অর্ডিনেটর পদে ৮৮ জন আরএসএস কর্মীকে নিয়োগ করেছিল। প্রধানমন্ত্রী মধ্য প্রদেশে গিয়ে দূরবিনে বিরোধীদের দুর্নীতি দেখতে পেয়েছেন কিন্তু  তাঁর দল পরিচালিত মধ্য প্রদেশ সরকারের গুচ্ছ দুর্নীতি অনুবীক্ষণেও দেখতে পাননি। আমেরিকা সফর সেরে দেশে ফিরেই তিনি মধ্য প্রদেশে গিয়ে বিরোধীদের দুর্নীতির ফিরিস্তি দিয়েছেন। এবার ফ্রান্স সফর সেরে দেশে ফিরে কি ফের মধ্য প্রদেশে যাবেন শিবরাজ সিং চৌহানের  দুর্নীতির ফর্দ তৈরি করতে?


শুধু মধ্য প্রদেশ নয় বিজেপি শাসিত প্রতিটি রাজ্যে রন্ধ্রে রন্ধ্রে দুনীর্তির বাসা। দুর্নীতি আর অনিয়মের হাজারো ফন্দি  ফিকির বার করে সরকারি- আধা  সরকারি ক্ষেত্রে নিয়োগে আরএসএস কর্মীদেরই  বেছে নেওয়া হয়। নিয়োগ দুর্নীতির  প্রশ্নে পশ্চিমবঙ্গে তৃণমূল সরকারের থেকে কোনও অংশেই কম নয় বিজেপি শাসিত সরকারগুলি। দুই দলেরই লক্ষ্য যেনতেন প্রকারে দলীয় কর্মীদের সরকারের সর্বত্র নিয়োগ করে প্রশাসনকে সার্বিকভাবে গ্রাস করা। গণতন্ত্র, নিরপেক্ষতা, আইন, সংবিধান ইত্যাদি সবকিছুকে উপেক্ষা করে গোটা সরকারটাকে দলীয় শাখায় পরিণত করা। কোথাও কোনও স্তরে সততার তিলমাত্র থাকবে না। কোনও বিরুদ্ধ কণ্ঠ থাকবে না।


দুর্নীতির প্রশ্নে অতীতেও মধ্য প্রদেশের বিজেপি সরকার দেশজুড়ে সাড়া ‍‌ জাগিয়ে ছিল। তখনও মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন এই শিবরাজ। বস্তুত বিশেষ কৌশল অবলম্বনে নিখুঁত দুর্নীতি করায় শিবরাজের জুড়ি নেই। বস্তুত এই বিশেষ কারণেই তিনি মোদী-শাহদের কাছে অপরহার্য। যেমন অপরিহার্য উত্তর প্রদেশে যোগী। গুজরাটে যেহেতু আড়াল থেকে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করেন মোদী এবং শাহ তাই সেখানে বারে বারে নেতা বদলায়। শিবরাজের নাম  সারা দেশে ছ‍‌ড়িয়ে পড়েছিল যে দুর্নীতিকে কেন্দ্র করে ২০১৩ সালে সেই দুর্নীতি ব্যাপম কেলেঙ্কারি নামে পরিচিত। পরীক্ষা, ভর্তি ও নিয়োগ এই তিন স্তরেই অবৈধ বাছাইয়ের এক সুশৃঙ্খল নেট ওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছিল নেতা, আমলা, ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি  চাকরি প্রার্থী, দালাল-প্রতারকদের সমন্বয়ের মাধ্যমে। অন্তত পাঁচ বছর ধরে এই চক্র সবটা নিয়ন্ত্রণ করেছিল। ফাঁস  হবার পর বিস্ময়করভাবে লক্ষ্য করা যায় এই সঙ্গে  কোনও না কোনওভাবে যুক্ত ৪৫ জন ব্যক্তি মারা যায় বা খুন হয়ে যায়। সেই রহস্য আজও উদ্‌ঘাটন হয়নি। সেদিনের সেই অভিযুক্ত ও কলঙ্কিত ব্যাপম আজ নাম বদল করে ইএসবি হয়েছে।  এখন দেখা যাচ্ছে নাম বদলালেও চরিত্র বদলায় না। দুর্নীতিই তার আসল চরিত্র। ব্যাপম কেলেঙ্কারির পর থেকে এরাজ্যের তৃণমূল উজ্জীবিত হয়ে নিয়োগের ক্ষেত্রে দুর্নীতির আগল খুলে দিয়ে‍‌ছে।
 

Comments :0

Login to leave a comment