EDITORIAL

খনিজ সম্পদে রাজ্যের অধিকারের স্বীকৃতি

সম্পাদকীয় বিভাগ

মাটির নিচে সঞ্চিত খনিজ সম্পদের মালিক কে—  কেন্দ্র না রাজ্য, এই নিয়ে বিতর্ক বহুকালের। রাজ্যগুলির দাবি যেহেতু খনিজ সম্পদ তাদের রাজ্যের মাটির নিচে অবস্থিত তাই সেগুলির মালিকানা রাজ্যেরই। কিন্তু কেন্দ্র মনে করে খনিজ প্রকৃতি প্রদত্ত জাতীয় সম্পদ। তাই তার মালিক কেন্দ্রই। এই বিতর্ককে ঘিরে জল বহুদূর গড়িয়েছে। দেশের সর্বোচ্চ আদালতে বিস্তর লড়াই হয়েছে। কিন্তু বিতর্কে অবসান হয়নি। ১৯৮৯ সালে সুপ্রিম কোর্টের সাংবিধানিক বেঞ্চ এক ঐতিহাসিক রায়ের মাধ্যমে ঘোষণা করে মাটির নিচের খনিজ সম্পদের উপর উত্তোলকদের কাছ থেকে রয়্যালটি আদায় করতে পারবে একমাত্র কেন্দ্রীয় সরকার। সেই রয়্যালটির নির্দিষ্ট ভাগ পাবে রাজ্যগুলি। রাজ্যগুলি আলাদা করে রয়্যালটি বা কর আদায় করতে পারবে না।
এই রায়ের সঙ্গে সহমত হয়নি বে‍‌শিরভাগ রাজ্য, বিশেষ করে খনিজ সম্পদে সমৃদ্ধ রাজ্যগুলি। চোখের সামনে তারা দেখছে তাদের রাজ্য থে‍‌কে লক্ষ লক্ষ কোটি টাকার খনিজ সম্পদ তুলে নিয়ে গেলেও রাজ্যের মানুষ তার কোনও সুফল পায় না। বে‍‌শিরভাগ ক্ষেত্রেই দেখা যায় যে সব রাজ্যে খনিজ সম্পদ বিপুল সেসব রাজ্য অপেক্ষাকৃত অনুন্নত, আর্থ-সামাজিকভাবে পিছিয়ে পড়া। অর্থাৎ সম্পদ থাকলেও সেটা ভোগ করার অধিকার তাদের নেই। তাই বিষয়টি ফের শীর্ষ আদালতের দরজায় ধাক্কা দিতে শুরু করে। নতুন করে বিষয়টি বিবেচনার জন্য গ্রহণ করে সুপ্রিম কোর্ট। কয়েকদিন আগে সেই মামলায় ৯ সদস্যের সাংবিধানিক বেঞ্চ ১৯৮৯ সালের রায়কে বাতিল করে নতুন রায় ঘোষণা করে। নতুন রায়ে রাজ্য সরকারগুলিও তাদের খনিজ পদার্থের উপর অধিকারের স্বীকৃতি পায়। সর্বোচ্চ আদালত স্পষ্ট করে দেয় রয়্যালটি কোনও কর নয়, চুক্তিকৃত দেয় মাত্র। তাই রাজ্যগুলিও তাদের রাজ্য থেকে উত্তোলিত খনিজের উপর রয়্যালটি আদায় করতে পারবে এবং খনিজ উত্তোলনের কাজে ব্যবহৃত জমির ওপর কর আদায় করতে পারবে।
এই রায় নিঃসন্দেহে তাৎপর্যপূর্ণ। কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে উভয় ক্ষেত্রেই রাজ্যের রয়্যালটি-কর আদায়ের অধিকারের তীব্র বিরোধিতা করা হয়েছিল। কিন্তু সাংবিধানিক বেঞ্চের কাছে ধোপে টেকেনি। এই রায়ের ফলে ঝাড়খণ্ড, মধ্য প্রদেশ, ছত্তিশগড়, অন্ধ্র প্রদেশ, কর্নাটক, মহারাষ্ট্র, গোয়া, ওডিশা সহ বেশ কিছু রাজ্য দারুণভাবে উপকৃত হবে। তাদের আর্থিক সংস্থান অনেকটাই বেড়ে যাবে। অবশ্য অন্য সব খনিজ এই আওতায় থাকলেও খনিজ তেল পেট্রোলিয়াম এর বাইরে থাকবে। কেন্দ্র-রাজ্য সম্পর্কের পুনর্বিন্যাসের প্রশ্নে, কেন্দ্র ও রাজ্যের মধ্যে অর্থ ও সম্পদের সুষম বণ্টনের প্রশ্নে এই রায়ের গুরুত্ব অপরিসীম। এমনিতেই রাজ্যগুলির ক্ষমতা, সামর্থ্য, প্রক্রিয়ার ক্রমাগত ছাঁটাই করে অতিকেন্দ্রীভবনের প্রক্রিয়া চলছিল। রাজ্যগুলি নিজস্ব রাজস্ব সংগ্রহের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়ে কেন্দ্রীয় সাহায্য ও মরজির উপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছিল। এই রায়ে অনেকগুলো রাজ্যের রাজস্ব সংগ্রহের নতুন ক্ষেত্র পাবে। সেটা রাজ্যের উন্নয়নের কাজে লাগাতে পারবে।
রায় ঘোষণার পর জোরালো প্রশ্ন উঠেছে তা কবে থেকে কার্যকর হবে? এখন থেকে না সেই ১৯৮৯ সাল থেকে। রাজ্যগুলি পুরানো রয়্যালটি ফিরে পাবার দাবি জানিয়েছে। অর্থাৎ ১৯৮৯ সাল থেকে গত ৩৫ বছরের বকেয়া তাদের দিতে হবে। এই প্রশ্নে আদালত এখনো সিদ্ধান্ত জানায়নি। তবে এটাও ঠিক পুরানো বকেয়া আদায় হলে রাজ্যগুলি প্রায় ৭০ হাজার কোটি টাকা পাবে। এর সঙ্গে নতুন করে কর চালু হলে খনিজের দাম এবং অন্যান্য অনেক জিনিসের দাম বাড়তে পারে। সেক্ষেত্রে কেন্দ্রীয় করের বোঝা কমিয়ে ভার লাঘব করতে হবে। আর বকেয়ার দায় যথাসম্ভব বহন করতে হবে কেন্দ্রকেই।

Comments :0

Login to leave a comment