বৃহস্পতিবার রাতে কাতারের মাটিতে লেখা হল মহাকাব্য। আফ্রিকার এক প্রাক্তন উপনিবেশ নিজেদের যোগ্যতার জোরে জায়গা করে নেয় শেষ চারে। মরক্কো। একটা গোটা মহাদেশ এবং লাগোয়া আরব বিশ্বের প্রতিনিধিত্ব করা মেরুণ জার্সি ফ্রান্সের কাছে পরাজিত হয় ২-০ গোলে। যোগ্য দল হিসেবেই ম্যাচ জেতে ফ্রান্স। গোল না পেলেও গ্রীজম্যান এবং এমবাপ্পের ছন্দ এবং লয়ের মূর্ছনা মাত করে গোটা দুনিয়াকে। ম্যাচ হারলেও পিছিয়ে ছিল না মরক্কোও। ৯০ মিনিট ধরে সমানতালে লড়াই চালান হাকিমিরা। এবং সেই লড়াই সম্ভ্রম আদায় করে মাঠে উপস্থিত দর্শকদের।
কিন্তু কেবলমাত্র মরক্কো সমর্থক কিংবা ফুটবল বোদ্ধারাই নন, বুধবার মরক্কোকে এবং সেই দলের হৃদপিন্ড আচরফ হাকিমিকে প্রশংসায় ভরিয়ে দিলেন স্বয়ং এমবাপ্পেও।
খেলা শেষে নিজের ক্লাব পিএসজি’র সতীর্থ হাকিমিকে জড়িয়ে ধরেন এমবাপ্পে। দুজনে জার্সি বদলও করেন। ম্যাচ শেষে হাকিমির জার্সি পরেই দর্শকদের অভিবাদন গ্রহণ করতে দেখা যায় এমবাপ্পেকে।
কিন্তু এখানেই শেষ নয়। নিজের প্রিয় বন্ধু এবং প্রিয় সতীর্থ হাকিমিকে টুইটারেও প্রশংসায় ভরিয়ে দেন এই মুহূর্তে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম সেরা তারকা এমবাপ্পে। খোলামেলা ভাবেই বন্ধুর উদ্দেশ্যে লেখেন, ‘‘ মন খারাপ করিস না ভাই। তোর জন্য সবাই গর্বিত। তুই ইতিহাস তৈরি করেছিস’’। সেই অভিবাদন গ্রহণ করে হাকিমিও ধন্যবাদ জানিয়েছেন বন্ধুকে। বিশ্বকাপের ময়দান জন্ম দিল নতুন মুগ্ধতার।
ফুটবলকে বিশ্বকাপকে বলা হয়ে থাকে ‘দ্যা গ্রেটেস্ট শো অন আর্থ’। বাংলায় তর্জমা করলে দাঁড়ায় বিশ্বের সর্বশ্রেষ্ঠ মঞ্চ। যেখানে নিজেদের সর্বোচ্চ মুন্সিয়ানা তুলে ধরেন বিশ্বের নানান প্রান্ত থেকে উঠে আসা খেলোয়াড়রা। সেই মঞ্চে জীবনের স্বাভাবিক নিয়মেই উত্থান রয়েছে, পতনও রয়েছে। আবার নতুনের উঠে আসাকেও স্বাগত জানায় সেই মঞ্চ। ৯০ মিনিটের উত্তেজনার পরে নত মস্তকে একে অন্যকে অভিবাদনও জানায় সেই মঞ্চ। শ্রেষ্ঠরা নিজেদের মধ্যে থেকে বেছে নেন সর্বশ্রেষ্ঠকে। সর্বশ্রেষ্ঠদের। তাঁদের মাথায় ওঠে ‘ওলিভের মুকুট’।
এই মঞ্চ জন্ম দেয় এমন কিছু মুহূর্তের কোলাজ, যা হারা-জেতার সুনির্দিষ্ট বাইনারির বাইরে বেরোনোর সাহস যোগায়। নতুন করে ভাবতে শেখায় জীবনকে।
Comments :0