Gulbarg society remembering Gulbarg massacre

ভোট হলেই ভয় হয়, আবার গণহত্যা হবে না তো!

জাতীয়

নিসরিন হুসেন

(২০০২’র ২৮ ফেব্রুয়ারি আমেদাবাদের গুলবর্গা সোসাইটি আবাসনে ঘিরে চলেছিল উন্মত্ত তাণ্ডব। গণহত্যার অন্যতম কেন্দ্র এই আবাসন। পুড়িয়ে হত্যা করা হয়েছিল আবাসিকদের। ৬৯ জনের দেহ মিলেছিল। ৩১ জন নিখোঁজ ছিলেন। নিহতদের মধ্যে ছিলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন সাংসদ এহসান জাফরিও। নিসরিন হুসেন তাঁর কন্যা। দিল্লির কনস্টিটিউশন ক্লাবে একটি সভায় বিবৃত করেছিলেন সেদিনের অভিজ্ঞতা।)

আব্বা ওখানেই ঘর বেঁধেছিলেন, তিনি বিশ্বাস করতেন সময় বদলেছে, সবার সঙ্গেই থাকা যায়। সেই ঘর তিনদিন ধরে জ্বালানো হয়েছিল। এমন জ্বালানো হয়েছিল যে আমরা কেবল ছাই জড়ো করে কবর দিয়েছিলাম। 

ওখানে গেলে কোথাও ঢোকার আগে আমি চটি খুলে ঢুকি। যেখানে আমার পড়ার ঘর ছিল, বই ছিল, শিশুরা খেলত সেখানেই কোথাও বাবার মাথা, কোথাও হাতের টুকরো পড়ে ছিল। বত্রিশ বছর ধরে আমেরিকায় আছি কিন্তু একলা। আমি সুরক্ষিত, আমার চেনাজানা আশেপাশে শিক্ষিত লোকজন রয়েছেন। কিন্তু কেউ সেদিনের কথা সামনে আনতে চায় না। কোনও আলোচনা করতে চায় না। বলতে চায়, ভুলে যাও। যা হয়ে গেছে হয়ে গেছে। 

কিন্তু এক-দু’ঘর তো জ্বলেনি। হাজার হাজার ঘর জ্বালানো হয়েছে। কত ঘটনা বলব। আমাদের বাড়িতে যিনি রান্না করতেন, তাঁর ছেলে বাবাকে তিন বছর ধরে খুঁজেছে। কোনও হাসপাতালে, কোনও গলিতে কোথাও পাওয়া যায় কিনা। তিন বছরে লাশও পাওয়া যায়নি। 

আমেদাবাদ হয়েছে এ সব। শহর আমেদাবাদ, গান্ধীনগরের থেকে মাত্র দশ কিলোমিটার। পাঁচ কিলোমিটার গেলেই গান্ধী আশ্রম। আমরা সাইকেল নিয়ে খেলতে যেতাম। কিন্তু ২০০২’তে সব পরিকল্পনা করে হয়েছিল। আব্বা ফোনের পর পোন করছিলেন, কন্ট্রোল রুমে, পরিচিতদের। কেউ এগিয়ে আসেনি। ছোট ছোট শিশু, মহিলাদের যখন টেনে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। জ্বলন্ত গ্যাস সিলিন্ডার যখন ছুঁড়ে ফেলা হচ্ছে, আব্বা এক প্রভাবশালীকে ফোন করেছিলেন। জবাব মিলেছিল, নিজেই নিজের ব্যবস্থা কর জাফরি! 

মাত্র পনের বছর আগের কথা বলছি, ১৯৬৯’র কথা নয়। তখন ফোন রয়েছে, যোগাযোগ রয়েছে। শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত পরিকল্পনা না থাকলে সম্ভব হতো না। 

আমাদের চারপাশে সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের মানুষই ছিলেন চারপাশে। আমরা সকলের সঙ্গে খেলা করেছি ছোটবেলায়। আব্বা দূর দূর পর্যন্ত সকলকে চিনতেন। কিন্তু সেদিন কেউ এগিয়ে আসেনি। তিয়াত্তরের বছরের আব্বা একলা লড়াই লড়েছিলেন। 

যখনই কোনও ভোট আসে ভয় হয়। আবার কোনও পরিকল্পনা হচ্ছে না তো, আবার বহু মানুষের লাশ দেখতে হবে না তো। 

*(১৯৬৯ সালে গুজরাটে দাঙ্গা হয়েছিল। এখানে তার উল্লেখ রয়েছে।)

Comments :0

Login to leave a comment