Kerala

গরিবি ঘোচাতে কোমর বাঁধছে পড়ুয়ারাও আজই শুরু ‘আলেপ্পির শিশুরা’ কর্মসূচি

জাতীয়

ছোট ছোট প্রয়াসে বড় কিছু করার উদ্যোগ। কেরালার আলাপুজায় এমনই প্রচেষ্টায় শামিল হতে চলেছে স্কুল পড়ুয়ারা। রাজ্যের উপকূলবর্তী এই জেলা থেকে সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র দূর করতে বদ্ধপরিকর তারা। ‘আলেপ্পির শিশুরা’ নামক এই উদ্যোগে ১০০ জন পড়ুয়াকে নিয়ে এক একটি দল তৈরি করা হয়েছে। এইরকম বহু দল তৈরি করা হয়েছে জেলায়। একটি দল জেলার চরম দারিদ্রে থাকা একটি পরিবারকে দত্তক নেবে। প্রতি মাসে ওই পরিবারকে খাবারদাবার দেওয়ার পাশাপাশি নানাভাবে সাহায্য করবে ওই পড়ুয়ারা। এভাবে ধীরে ধীরে দরিদ্র পরিবারগুলি দুর্দশা লাঘবের প্রয়াস নেওয়া হয়েছে। সোমবার থেকেই আলাপুজায় শুরু হচ্ছে এই অভিনব উদ্যোগ। 
প্রাথমিকভাবে দারিদ্র পরিবারগুলিকে চিহ্নিত করেছে জেলা প্রশাসন। জেলার ৩ হাজার ৬১৩ এমন পরিবারের সঙ্গে যুক্ত করে দেওয়া হয়েছে সরকারি এবং বেসরকারি স্কুলগুলিকে। তবে জেলার কোন কোন পরিবার দারিদ্রসীমার নিচে রয়েছে তা চিহ্নিত করা হলেও প্রকাশ্যে জানানো হচ্ছে না। জেলাশাসক ভি আর কৃষ্ণা তেজা একথা জানিয়ে বলেছেন, ‘‘মূল লক্ষ্যই হলো স্কুল পড়ুয়াদের মধ্যে সামাজিক পরিষেবা এবং অন্যের কষ্টের সঙ্গে নিজেকে আপন করে নেওয়ার শিক্ষা দেওয়া। এই কর্মসূচির মাধ্যমে দেশের মধ্যে আলাপুজাই হবে প্রথম জেলা যেখানে চরম দারিদ্রে থাকা পরিবারগুলিকে আর কষ্ট করতে হবে না, তাদের উন্নতি ঘটবে। উলটোদিক থেকে বললে, ৬ তারিখ থেকে আলাপুজায় আর দারিদ্রই থাকবে না।’’
এই কর্মসূচি রূপায়ণে সহায়তা করবে জেলার পঞ্চায়েত, বিধায়ক এবং মন্ত্রীরা। প্রতি সোমবার জেলার স্কুলগুলিতে এখন থেকে পালিত হবে ‘সামাজিক পরিষেবা দিবস’ হিসাবে। জেলা শাসক জানালেন, ‘‘প্রথম সোমবার আমরা পড়ুয়াদের খাবার অথবা ব্যবহারযোগ্য অন্য কোনও পণ্য দিতে উৎসাহিত করেছি। এই পণ্যগুলি সংগ্রহ করা হবে বাক্সে। পড়ুয়ারা নগদ এবং চালা ছাড়াও ডাল, সাবান কিংবা দাঁত মাজার মাজন, আটা অথবা যেকোনও ব্যবহারের পণ্য আনতে পারে। যদি ৩০০ পড়ুয়ার স্কুল তিনটি দরিদ্র পরিবারকে দত্তক নেয় তাহলে সংগৃহীত পণ্য আলাদা আলাদা করে বিতরণ করা হবে।’’ 


এমনিতে চাল দেওয়া হবে না। কারণ কেরালার এলডিএফ সরকারের উদ্যোগে গণবণ্টন ব্যবস্থায় চাল সরবরাহ করা হয়।
জানা গিয়েছে, এই অভিনব কর্মসূচিতে ব্যাপক সাড়া মিলেছে জেলার স্কুলগুলিতে। কোনও কোনও স্কুল নাকি ১০০ নয়, ৫০ জনের দল গড়ে একটি দরিদ্র পরিবারকে দত্তক নেওয়ার আরজি জানিয়েছে। কৃষ্ণা তেজা মনে করেন, ‘‘ছোট হলেও পড়ুয়ারা যাতে আনন্দ ভাগ করে নিতে পারে সেটাই বড় কথা। বার বার বলা হয়েছে ছোট হলেও দিতে। কিন্তু নগদ অর্থ নয়। প্রতিটি স্কুলে একজন শিক্ষককে মনোনীত করা হয়েছে ‘সামাজিক পরিষেবা আহ্বায়ক’ হিসাবে। আবার এই গোটা কর্মসূচি পরিচালনায় নজর রাখবে ‘সামাজিক পরিষেবা ক্লাব’।’’ তিনি মনে করেন, এই কর্মসূচি রূপায়ণে প্রকৃত ‘বীর’র মর্যাদা পাওয়া উচিত পড়ুয়া এবং তাদের অভিভাবকদের। কারণ এটা একটা সম্মিলিত প্রয়াস। প্রয়োজন সবার সহযোগিতা। তিনি মনে করেন, ‘‘এই ধরনের প্রয়াস হতে পারে একমাত্র কেরালাতেই। কারণ কেরালার সমাজ ব্যবস্থাই অত্যন্ত প্রগতিশীল ভাবনায় পরিচালিত হয়। একটি স্কুল তো জানিয়ে দিয়েছে যে তারা দত্তক পরিবারগুলিকে সারা বছর ওষুধ সরবরাহ করবে।’’
বস্তুত, এই দারিদ্র দূরীকরণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে রাজ্যের এলডিএফ সরকারের কর্মসূচি মেনেই। রাজ্যে দ্বিতীয়বার এলডিএফ সরকার ক্ষমতায় আসার পরেই দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় মন্ত্রীসভার প্রথম বৈঠকেই। এরই সঙ্গে পঞ্চায়েতগুলিও ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র স্তরে দারিদ্র দূরীকরণ কর্মসূচি নিচ্ছে। এমনকি সম্প্রতি ২০২৩-২৪ সালে বাজেট প্রস্তাব পেশকালে অর্থমন্ত্রী কে এন বালাগোপাল জানিয়েছেন, রাজ্য সরকার পাঁচ বছরের মধ্য সম্পূর্ণভাবে দারিদ্র দূর করতে উদ্যোগী হয়েছে। খাদ্য, স্বাস্থ্য, আয় এবং বাসস্থানের নিরিখে রাজ্যে ৬৪ হাজার ৬টি চরম দরিদ্র পরিবার ইতিমধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে। সরকার স্থানীয় স্বশাসিত সংস্থার তত্ত্বাবধানে কুদুম্বশ্রী মিশনের সহায়তায় দারিদ্র দূরীকরণের প্রকল্প রূপায়ণের পরিকল্পনা নিতে চলেছে রাজ্য সরকার।—পিটিআই

 

 

Comments :0

Login to leave a comment