MAMATA BANERJEE DHARNA

লক্ষ্য পঞ্চায়েত, কেন্দ্রের বিরুদ্ধে ধরণায় বসছেন মুখ্যমন্ত্রী
রেগার কাজের শ্বেতপত্র দাবি সেলিমের

জাতীয় রাজ্য জেলা

mamata banerjee mgnrega corruption bengali news

পঞ্চায়েত ভোটকে মাথায় রেখে ধরনার সিদ্ধান্ত নিলেন মমতা ব্যানার্জি।

মঙ্গলবার ওডিশা যাওয়ার পথে কলকাতা বিমানবন্দরে মমতা ব্যানার্জি তাঁর ধরনা কর্মসূচি ঘোষণা করেন। আগামী ২৯ মার্চ বিকাল ৪টা থেকে পরদিন ৩০ মার্চ সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত কলকাতার রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির সামনে ধরনায় বসতে চলেছেন মমতা ব্যানার্জি। তৃণমূল নেত্রী হিসাবে নয়, কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে বঞ্চনার অভিযোগ তুলে রাজ্য প্রশাসনের প্রধান, মুখ্যমন্ত্রী পদকেই তিনি ধরনার জন্য পছন্দ করছেন বলে জানিয়েও দিয়েছেন।


মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির ধরনা সিরিজে এটি হবে তৃতীয় অধ্যায়। এর আগে কলকাতার পুলিশ কমিশনার রাজীব কুমারকে সিবিআই-এর হাত থেকে বাঁচাতে ধর্মতলায় ধরনায় বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। এরপর নারদ ঘুষ কেলেঙ্কারিতে ফিরহাদ হাকিমদের যখন গ্রেপ্তার করে নিয়ে যায় সিবিআই তখন তাঁদের ছেড়ে দেওয়ার দাবি নিয়ে দু’ঘন্টা নিজাম প্যালেসে ধরনায় বসে ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। অতীতের দুই ধরনার ফল শেষ পর্যন্ত কী হয়েছিল তা সবারই জানা। 

তবে এবার ধরনায় লক্ষ্য গ্রামের ভোট জোগাড়। প্রায় ১৫ মাস পরে এরাজ্যের প্রতি ‘কেন্দ্রের বঞ্চনার’ কথা মনে পড়েছে মুখ্যমন্ত্রীর। 


এদিন মমতা ব্যানার্জির ধরনা কর্মসূচি প্রসঙ্গে বগটুইয়ে সভা শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে মহম্মদ সেলিম বলেন,‘‘একশো দিনের কাজের টাকা কেন্দ্র দিচ্ছে না বলে ধরনায় বসবেন মমতা ব্যানার্জি। আমরা দাবি করছি একশো দিনের কত টাকার কাজ হয়েছে, কত টাকা বকেয়া আছে তা নিয়ে শ্বেতপত্র প্রকাশ করুন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী। পাশাপাশি কেন্দ্র বলছে প্রকল্পের টাকা চুরি হয়েছে। তাহলে কত টাকা দেওয়া হয়েছে, কত টাকা চুরি হয়েছে তা নিয়েও শ্বেতপত্র প্রকাশ করুক কেন্দ্র। তাহলে সব নাটকের অবসান হবে। না হলে ফের প্রমাণ হবে, দিদি- মোদীর মধ্যে সাঁটগাঁট কতটা পোক্ত।’’

 
গ্রামের মানুষের ক্ষোভ তৃণমূল টের পেয়েছে দিদির দূত থেকে দিদির সুরক্ষা কবচ কর্মসূচি থেকে। গত এক বছর ধরে এরাজ্যের গ্রামে অন্যতম জ্বলন্ত সমস্যা হয়ে আছে ১০০দিনের কাজ। আবাস যোজনায় চূড়ান্ত তালিকায় নাম থাকার পরও ঘর তৈরি করতে না পারায় ফুঁসছেন গ্রামের মানুষ। গ্রামের মানুষের ক্ষোভকে বাগে আনতে তৃণমূল দিদির দূত, সুরক্ষা কবচের মতো বেশ কিছু কর্মসূচি নিয়েছিল। 

তাতে যে কাজের কাজ কিছু হয়নি তা জানাতে গিয়ে পশ্চিম মেদিনীপুরের এক তৃণমূল বিধায়ক বলেছেন, ‘‘ ১০০দিনের কাজ, আবাস নিয়ে মানুষ জানতে চাইছে। আমরা কেন্দ্র টাকা দিচ্ছে না বলাতে মানুষ এইসব মানতে চাইছে না। তারা কেন্দ্র- রাজ্য বোঝে না। কাজ হচ্ছে না, তা নিয়েই ক্ষোভ জানাচ্ছে।’’ 


কিন্তু এতদিন ধরনার কথা মমতা ব্যানার্জির মাথায় আসেনি। গত ২১ জুলাই কলকাতার দলের সভা থেকে মুখ্যমন্ত্রী ১০০দিনের কাজের টাকার জন্য দিল্লিতে গিয়ে ধরনা দেওয়ার কথা জানিয়েছিলেন। তাঁর এই ইচ্ছার কথা জানিয়ে সমাবেশে তাঁর দাবি ছিল, ‘‘১০০দিনের টাকা বাংলায় বন্ধ করে দিয়েছে। গরিব মানুষ ৭মাস ধরে টাকা পাচ্ছে না। গরিব মানুষ টাকা না পেলে ট্রেনে করে, লরিতে করে দিল্লি যাবো। দিল্লির রাস্তা ঘেরাও করবো।’’ 

আট মাস পরে দিল্লি ছেড়ে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতাতে ধরনার সিদ্ধান্ত নিতে হচ্ছে। ধারণা করা হচ্ছে, পঞ্চায়েত ভোট আসতেই গ্রামে ক্ষতে প্রলেপ দিতে মুখ্যমন্ত্রীর এই ধরনা কর্মসূচি। এপ্রিল মাসের গোড়াতেই মুখ্যমন্ত্রীর দিল্লি যাওয়ার কর্মসূচি আগাম ঘোষণা করেছিল দল। এদিন কলকাতা বিমানবন্দরে তাঁর দিল্লি সফর নিয়ে সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে মুখ্যমন্ত্রী এড়িয়ে যান প্রসঙ্গ।

এর আগে নূপুর শর্মার সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বিরুদ্ধে বিরূপ মন্তব্যের প্রতিবাদে ক্ষুব্ধ মানুষকে আক্রমণ করে মমতা ব্যানার্জি কলকাতায় বিক্ষোভ না দেখিয়ে দিল্লি গিয়ে ক্ষোভ জানানোর পরামর্শ দিয়েছিলেন। এখন মুখ্যমন্ত্রী কেন্দ্রের বিরুদ্ধে রাজ্যের বঞ্চনার অভিযোগ তুলে কলকাতার রেড রোডে আম্বেদকর মূর্তির পাদদেশে ধরনার কর্মসূচি নিচ্ছেন। প্রশাসনের একটি সূত্র জানাচ্ছে, নিয়োগ দুর্নীতির ফাঁসে গলা পর্যন্ত আটকে পড়ে একটা পথ বের করা দরকার শাসকদলের। তাই গ্রামের মানুষের বঞ্চনার অভিযোগ নিয়ে মমতা ব্যানার্জি ২৪ ঘন্টা ধরনায় বসছেন। 


রাজ্যে গত এক বছর ধরে বন্ধ হয়ে আছে ১০০দিনের কাজ। আগামী ২০২৩-২৪ আর্থিক বছরেও এরাজ্যে অনিশ্চিত রেগার কাজ। রাজ্যের সঙ্গে গত ১৩ মার্চ গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের আধিকারিকদের সঙ্গে বৈঠকের পর সরকার নিশ্চিত যে আগামী আর্থিক বছরেও রাজ্যে আসছে না ১০০দিনের টাকা। 

রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের এক আধিকারিক জানিয়েছেন, ‘‘২০২৩-২৪ অর্থবর্ষের জন্য দেশের সব রাজ্য সরকারকে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রক থেকে রেগার অ্যাকশান প্ল্যান চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়েছে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের কাছে কোনো চিঠি আসেনি। বিষয়টি জানার পর রাজ্যের তরফে কেন্দ্রীয় গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রককে চিঠি দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু সেই চিঠিরও কোনো উত্তর আসেনি।

’’ সব দিক বিবেচনা করে পঞ্চায়েত দপ্তরও বুঝতে পারছে, রেগার এবারও রাজ্যে এখন অনিশ্চিত। প্রায় ১৬ লক্ষ নাম আবাস যোজনার তালিকা থেকে বাদ দিয়ে ১১লক্ষ ৩৬হাজার নাম চূড়ান্ত করেছিল রাজ্য সরকার। কিন্তু তার পরেও আবাস যোজনায় কেন্দ্রীয় বরাদ্দের টাকা আসেনি রাজ্যে। বেহাল গ্রামীণ সড়কের হাল ফেরাতে প্রধানমন্ত্রী গ্রাম সড়ক যোজনার টাকা বরাদ্দ করেও রাজ্যে আসেনি। কেন্দ্রীয় বরাদ্দের টাকা বন্ধ নিয়ে গ্রামোন্নয়ন মন্ত্রকের বক্তব্য, রেগা আইনের ২৭নং ধারা প্রয়োগ করেই এরাজ্যে বন্ধ আছে ১০০দিনের কাজ। গ্রামোন্নয়নে আর্থিক নয়ছয়ের অভিযোগে জন্য ২৭ নং ধারা রাজ্য থেকে প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সরকার টাকা পাঠাবে না।

 
এক দশক ধরে এরাজ্যে ১০০দিনের কাজের টাকায় কার্যত লুট হয়েছে। তৃণমূল কংগ্রেসের দখলে থাকা পঞ্চায়েতকে ব্যবহার করে এই লুট ধরা পড়ার পর থেকে এরাজ্যে দফায় দফায় কেন্দ্রীয় প্রতিনিধি দল এসেছে। তাদের শর্ত মেনে লুটের টাকা পর্যন্ত অংশত উদ্ধার করেছে রাজ্য সরকার। ১০০দিনের কাজে দুর্নীতি মেনে নিয়েছে রাজ্য সরকার। এখন এই দুর্নীতিকে কেন্দ্রীয় সরকার রাজ্যের বিরুদ্ধে পালটা অস্ত্র হিসাবে ব্যবহার করছে। দুর্নীতির অভিযোগ থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকার টাকা বন্ধ করা ছাড়া আর কোনো কার্যকরী পদক্ষেপ নেয়নি। ফলে নরেন্দ্র মোদী ও মমতা ব্যানার্জির টানাপোড়েনে সঙ্কটে কাজ হারাচ্ছেন গ্রামের মানুষ।
 

Comments :0

Login to leave a comment