Panchayat corruption

বোর্ড গঠনে নির্দেশিকা রাজ্যের হলেও দায় এড়ালেন মুখ্যমন্ত্রী!

রাজ্য

CPIM west bengal panchayat election TMC BJP bengali news

পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের নির্দেশিকা জারি করেও  নিজেকে তার থেকে দূরত্ব তৈরি করে রাখলেন মুখ্যমন্ত্রী। বোর্ড গঠন নিয়ে সরকারি বিজ্ঞপ্তির দায় নিতে চাইছেন না মমতা ব্যানার্জি।

পঞ্চায়েতের নয়া বোর্ড গঠনের জন্য নির্দেশিকা জারি করেছে রাজ্য সরকার। বিধানসভায় খোদ মুখ্যমন্ত্রী জানিয়ে দিয়েছেন আগামী ১৬ আগস্টের মধ্যে রাজ্যজুড়ে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে বোর্ড গঠন হবে। বৃহস্পতিবার বোর্ড গঠন নিয়ে এক প্রশ্নের উত্তরে নবান্নে মমতা ব্যানার্জি জানান, ‘‘এটা আমি করিনি। সরকার বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে। এটা নিয়ে আমাকে বললে হবে না।’’ 

পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠনের দিনক্ষণ নিয়ে গত ২৭ জুলাই রাজ্যের পঞ্চায়েত দপ্তরের পক্ষ থেকে জেলাশাসকদের কাছে নির্দেশিকা পাঠিয়ে দেওয়া হয়েছে। ওইদিনই বিধানসভাতে মুখ্যমন্ত্রী নিজে বোর্ড গঠনের দিনক্ষণ ঘোষণা করে দিয়েছিলেন। এমনকি ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে কারা জয়ী হলেন তার তালিকা প্রস্তুত করে সরকারি গেজেট নোটিফিকেশান পর্যন্ত করা হয়ে গিয়েছে। 

কিন্তু তারপরেও এদিন যেভাবে মুখ্যমন্ত্রী নবান্ন থেকে বোর্ড গঠন নিয়ে সরকারের গোটা প্রক্রিয়া থেকে নিজেকে সরিয়ে রাখার চেষ্টা করলেন তা তাৎপর্যপূর্ণ। 

মুখ্যমন্ত্রীর মন্তব্য প্রসঙ্গে এদিন নবান্নে মন্তব্য প্রসঙ্গে বিশিষ্ট আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে বিস্ময় প্রকাশ করে বলেন, ‘‘পঞ্চায়েত বোর্ড গঠনের মতো নীতিগত সিদ্ধান্ত মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া হয় নাকি! বোর্ড গঠন নিয়ে সরকার নির্দেশিকা জারি করেছে। সেই নির্দেশিকা কী করে মুখ্যমন্ত্রীর সম্মতি ছাড়া নেওয়া হবে? উনি নিজের দায়িত্ব এড়াবার চেষ্টা করছেন। মুখ্যমন্ত্রী এত ভয় পাচ্ছেন কেন?’’ 

ঘটনা হলো, ১৬ আগস্ট সময়সীমা বেঁধে রাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বোর্ড তৈরি করে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রাজ্য সরকার। ঠিক তার পরদিনই কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চে শুনানির দিন ধার্য আছে। এর আগে প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চ থেকে রাজ্য নির্বাচন কমিশনকে স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছিল, পঞ্চায়েত নির্বাচনে জয়ী হিসাবে ঘোষিত প্রার্থীদের জয় আদালতের রায়ের ওপর শেষ পর্যন্ত নির্ভর করবে। 

কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির এই রায়কে উদ্ধৃত করে গত ১২ জুলাই রাজ্য নির্বাচন কমিশন জেলাশাসকদের কাছে চিঠি পাঠিয়ে সমস্ত জয়ী প্রার্থীদের কাছে তাঁদের জয়ের অনিশ্চয়তার খবর পৌঁছে দিতে বলেছিল। 


ফলে এখনও এরাজ্যের ত্রিস্তর পঞ্চায়েতে জয়ী হওয়া প্রার্থীদের ভবিষ্যত চূড়ান্ত হয়নি। সেটা নির্ধারণ হবে আদালতের রায়ের ওপরই। রাজ্য প্রশাসনের একটি সূত্রে জানা গিয়েছে, আদালত যেহেতু কোনো স্থগিতাদেশ দেয়নি, তাই সরকার বোর্ড গঠনের নির্দেশিকা জারি করেছে। কিন্তু সেই নির্দেশিকার ভবিষ্যৎ নির্ধারিত হবে কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চেই। 

আদালতের এই নির্দেশ মমতা ব্যানার্জির অজানা থাকার কথা নয়। তাই বোর্ড গঠনের জন্য পঞ্চায়েত দপ্তরকে দিয়ে নির্দেশিকা জারি করেও তার দায় থেকে এদিন দূরত্ব তৈরি করে রাখলেন। 

রাজ্যের পঞ্চায়েত ভোটের দিন লুট থেকে এখন গণনায় রাজ্য প্রশাসন বিশেষত বিডিও’দের ভূমিকা প্রতিদিন বেআব্রু হচ্ছে কলকাতা হাইকোর্ট। ভোট গণনায় কারচুপির অভিযোগে ফি দিন আদালতে রাজ্যের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে হাজিরা দিতে হচ্ছে বিডিও’দের। ভোট গণনায় কারচুপির একের পর এক ঘটনা যেমন প্রকাশ্যে আসছে, তেমনই মনোনয়ন পর্বেও বিরোধী প্রার্থীদের মনোনোয়নপত্র বিকৃতি মতো ঘটনাতেও অভিযুক্ত হচ্ছেন পঞ্চায়েত ভোটের রিটার্নিং অফিসাররা। 

কলকাতা হাইকোর্টে সিঙ্গল বেঞ্চের এই শুনানির মধ্যেই আগামী ১৭ আগস্ট প্রধান বিচারপতির ডিভিসন বেঞ্চে শুনানি আছে। 


রাজ্য সরকার ও শাসক দল এখন বুঝে গেছে পঞ্চায়েত নিয়ে কী হবে তারজন্য শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করতেই হবে আদালত কী রায় দিচ্ছে। কিন্তু পঞ্চায়েত দপ্তরে জারি করা নির্দেশিকা নিয়ে গুরুতর প্রশ্ন তুলেছেন এরাজ্যের আধিকারিকদের একাংশ। রাজ্য সরকার ঠিক করেছে ১৬ আগস্টের মধ্যে শেষ করতে হবে ত্রিস্তর অর্থাৎ গ্রাম পঞ্চায়েত, পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদের বোর্ড গঠন। 

কিন্তু ঘটনা হলো, গত ২০১৮ সালে এরাজ্যে পঞ্চায়েত সমিতি ও জেলা পরিষদগুলি গঠন হয়েছিল সেপ্টেম্বর মাসে। বেশ কয়েকটি জেলা পরিষদের গঠন অক্টোবর মাসেও গড়িয়ে যায়। আধিকারিকদের প্রশ্ন, সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনীর অনুচ্ছেদ ২৪৩-ই’তে পরিষ্কারভাবে জানিয়ে দেওয়া হয়েছে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বোর্ডের কার্যকাল পাঁচ বছর। ফলে কীভাবে তার আগে নতুন বোর্ড তৈরি করার নির্দেশিকাকে কার্যত সংবিধান বিরোধী। 

রাজ্য সরকার যুক্তি হিসাবে খাড়া করছে, এরাজ্যে ওয়েস্ট বেঙ্গল পঞ্চায়েত কনস্টিটিউশন রুলস, ১৯৭৫ অনুসারে ত্রিস্তর পঞ্চায়েতের বোর্ড গঠন করা হবে। এখানেও আধিকারিকরা জানিয়ে দিচ্ছেন, ১৯৯২ সালে সংবিধানের ৭৩তম সংশোধনীর পর ১৯৭৫ সালে পঞ্চায়েত রুলস গুরুত্বহীন। ফলে সরকারের জারি করা নির্দেশিকা শেষ পর্যন্ত আদালতে কঠিন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে পারে বুঝে দূরত্ব তৈরি করে রাখলেন মমতা ব্যানার্জি। 

Comments :0

Login to leave a comment