‘‘ঢেকি যেখানেই যাক, সে ধান ভাঙবেই। তৃণমূলের নেতারা চুরি ছাড়া থাকতে পারে? গঙ্গা-পদ্মা ভাঙন ঠেকাতে বালির বস্তা ফেলার কথা। তার বদলে কিসের বস্তা ফেলা হয়েছে ধেয়ে আসা নদীর জলস্রোত আটকাতে?’’
কাটা কাটা শব্দে এই প্রশ্ন উপস্থিত জনতার উদ্দেশ্যে সোমবার ছুঁড়ে দিলেন ডিওয়াইএফআই রাজ্য সম্পাদক মীনাক্ষী মুখার্জি। সামশেরগঞ্জের গঙ্গা ভাঙন বিধস্ত জনপদে দাঁড়িয়ে। নেত্রীর প্রশ্ন শুনে নিয়ে উপস্থিত জনতা সঙ্গে সঙ্গে উত্তর দিয়েছে সমস্বরে, ‘‘মাটির বস্তা ফেলেছে। মাটির বস্তা ফেলেছে।’’
সোমবার ইনসাফ যাত্রার ১১তম দিন। সেই যাত্রার অঙ্গ হিসেবে ডিওয়াইএফআই ধুলিয়ান লোকাল কমিটির উদ্যোগে এদিন মুর্শিদাবাদের ভাঙন বিধস্ত অঞ্চলে, নদীর পাশে জনসভার আয়োজন করা হয়। সভায় মীনাক্ষি মুখার্জি ছাড়াও ডিওয়াইএফআই’র রাজ্য সভাপতি ধ্রুবজ্যোতি সাহা, সংগঠনের প্রাক্তন রাজ্য সম্পাদক তথা সিপিআই(এম)’র মুর্শিদাবাদ জেলা কমিটির সম্পাদক জামির মোল্লা, ডিওয়াইএফআই মুর্শিদাবাদ জেলা সম্পাদক সন্দীপন দাস সহ নেতৃবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন। বক্তব্য রাখেন স্থায়ী পদযাত্রীদের তরফে তাপস রুইদাস। উপস্থিত ছিলেন কয়েক হাজার স্থানীয় মানুষ, নদী ভাঙনে যাঁদের সমস্ত কিছু খোয়া গিয়েছে।
এদিন মীনাক্ষী মুখার্জি প্রশ্ন তোলেন, ‘‘বালির বদলে যেই মাটির বস্তাগুলো এখানে এল, সেই বস্তায় মাটি কারা ভরল? কাদের গাড়ি করে বস্তাগুলো নদীর পাড় অবধি এল?’’
সঙ্গে সঙ্গে উপস্থিত জনতার উত্তর, ‘‘তৃণমূল, তৃণমূল। সব তৃণমূলের লোক।’’
মীনাক্ষি মুখার্জি ফের বলতে শুরু করেন, ‘‘যখন এই দুর্নীতি চলছে, তখন বিডিও কি করছিলেন? তাঁর চোখে ছানি পড়েছিল? মানুষের ঘরে গঙ্গা ঢুকে পড়ছে, আর তৃণমূলের প্রধান, উপ-প্রধান থুতু দিয়ে টাকা গুনছিল? কয়েক পয়সার কাট মানি খাওয়ার জন্য?’’
মীনাক্ষী মুখার্জি এদিন স্থানীয় তৃণমূল বিধায়ক সাবিনা ইয়াসমিনের ভূমিকার কড়া সমালোচনা করে বলেন, ‘‘মানুষ যখন বিধায়কের কাছে অভিযোগ জানাচ্ছে, যে গঙ্গা-পদ্মার ভাঙনে আমাদের ঘর বাড়ি ভেসে যাচ্ছে, তখন তিনি বলছেন, সে বাড়ি ভেঙে যাক, মাসে মাসে লক্ষীর ভাণ্ডারের পাঁচশো টাকা পাচ্ছ তো? যেন তিনি নিজের ব্যাগ থেকে টাকা বের করে দিচ্ছেন। কী হবে? পুনর্বাসন? আপনারা অভিজ্ঞতা থেকে জানেন, এই সরকারের আমলে সেটা হওয়ার নয়।’’
মীনাক্ষি মুখার্জি বলেছেন, ‘‘মহেশতলা, প্রতাপগঞ্জ, ঘনশ্যামপুর, দিঘড়ি, কামারপুরের মানুষ নদী ভাঙনে ভিটে মাটি হারিয়েছেন। এই গ্রামগুলির কটা মানুষকে বাড়ি বানানোর জন্য জমি দিয়েছে রাজ্য সরকার? মাত্র ৮৫জনকে পুনর্বাসন দেওয়া হয়েছে। এতগুলো গ্রামের মাত্র ৮৫জনের বাড়ি নদী গিলে খেয়েছে? কিন্তু তাঁদেরও যেখানে জমি দিয়েছিল, সেখান থেকে পিঠে লাঠির ঘা নিয়ে ফিরে এসেছেন তাঁরা।’’
মীনাক্ষি বলেন, ‘‘আর কয়েকমাস পরেই ফের বর্ষা আসবে। নদী আবার জমি গিলবে। আমরা যেখানে দাঁড়িয়ে সভা করছি, সেই জমিও জলের তলায় চলে যাবে। এই দুর্দশার কথা আমাদের বানানো কাহিনী নয়। এটা মানুষের অভিজ্ঞতা। তাঁরা বলছেন। তাঁরা চোখে আঙুল দিয়ে দেখাচ্ছেন, তাঁদের জন্য ঠিক কী কী করেছে তৃণমূল।’’
২ নভেম্বর কোচবিহার থেকে শুরু হয়েছে যুবদের ডাকে ইনসাফ যাত্রা। ৭ জানুয়ারি ব্রিগেডে সমাবেশের মধ্য দিয়ে শেষ হবে ইনসাফ যাত্রার পথচলা। এদিন ফারাক্কা থেকে শুরু হয় পদযাত্রা। ফারাক্কার জামতলায় জনসভা হয়। এখানে বক্তব্য রাখেন নাট্যকার সৌরভ পালোধী। তারপর পদযাত্রা পৌঁছয় সামশেরগঞ্জে। সোমবার বিকেলে সাজুর মোড়ে’র জনসভার মধ্য দিয়ে এদিনের কর্মসূচি শেষ হয়।
Comments :0