ইতালির ফুটবল লিগ সিরিয়ে-এর ম্যাচে মুখোমুখি এএস রোমা এবং ফিওরেন্তিনা। সোমবারের ম্যাচের বয়স তখন ৮৯ মিনিট। খেলার ফলাফল ১-১। কিন্তু ফিয়োরেন্তিনার ১১ জনের বদলে রোমার হয়ে মাঠে রয়েছে ৯জন। কারণ লাল-কার্ড দেখে ম্যাচের বাইরে চলে গিয়েছেন রোমেলু লুকাকু এবং নিকোলা জেলেউস্কি।
হঠাৎ ক্যামেরায় ধরা পড়ল এক দৃশ্য। রোমা’র ডাগআউট থেকে দ্রুত বেগে রোমার গোলপোস্টের পিছনে দৌঁড়ে যাচ্ছেন এক কিশোর। ম্যাচের একজন বলবয় তিনি। সেই কিশোর দৌড়ে গিয়ে রোমার গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিও’র কানে কানে কিছু বললেন। একইসঙ্গে তাঁর হাতে তুলে দিলেন একটি চিরকুট। এক ঝলক চিরকূটে চোখ বুলিয়ে সেই কাগজ বল বয়টির হাতে ফিরিয়ে দেন প্যাট্রিসিও।
গোটা ঘটনা ঘটেছে বড়জোর ৩০ সেকেন্ড সময় ধরে। সেই অংশের ভিডিও ভাইরাল। আর এই সময়টুকুর মধ্যে রোমা’র কোচ হোসে মোরিনহো প্রমাণ করে দিয়েছেন, কেন তাঁর ফুটবল মস্তিষ্ককে বিশ্বের অন্যতম সেরা বলা হয়। গোলপোস্টের পিছনে দুই দলের টিম ম্যানেজমেন্টের কোনও সদস্য যেতে পারেন না। তাই গোলরক্ষককে ম্যাচ চলাকালীন কোনও নির্দেশ পাঠানো কঠিন। কিন্তু বলবয়দের গোলপোস্টের পিছনে যাওয়ার ক্ষেত্রে কোনও বাধা নেই। সেই সুযোগ কাজে লাগিয়েই দলের গোলরক্ষককে বার্তা পাঠান মোরিনহো।
আর মোরিনহো’র ফুটবল বোধের ধার বোঝার জন্য ম্যাচের পরিস্থিতি কিছুটা বুঝে নেওয়া প্রয়োজন। রোমার হয়ে লাল-কার্ড দেখা দুই ফুটবলারই দীর্ঘদেহী। দীর্ঘদেহী লুকাকু স্ট্রাইকার হলেও কর্ণারের সময় এরিয়াল বল ক্লিয়ার করতে খুবই স্বাচ্ছন্দ। আর জেলেউস্কি রাউট ব্যাক পজিশনে খেলেন। তিনিও স্বাভাবিক ভাবেই কর্নার বাঁচাতে দক্ষ। এই অবস্থায় ৮৯ মিনিট নাগাদ কর্নার পায় ফিওরেন্তিনা। লিগ তালিকায় চতুর্থ স্থান ধরে রাখতে গেলে রোমাকে এই ম্যাচ জিততে কিংবা ড্র করতেই হত।
কর্নারের সময় কোনওভাবেই যাতে দল গোল না খায় তা নিশ্চিত করতেই গোলরক্ষককে চিরকুট পাঠান মোরিনহো। চিরকুটের জুম করা ছবি ইতিমধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়ায় ভাইরাল। ইতালির ক্রীড়া সংবাদ সংস্থা এবং ব্রডকাস্টার ডিএজেডএন ইতালিয়া জানাচ্ছে, চিরকূটে মোরিনহো প্যাট্রিসিও’কে নির্দেশ দেন নিয়ারপোস্টে দুই দীর্ঘদেহী স্টিফেন এল শরাউয়ি এবং এডোয়ার্ডো বোভ’কে দাঁড় করানোর। ফিওরেন্তিনা কর্নার নেওয়ার পরে দেখা যায়, মোরিনহোর এই চালেই সেই কর্নারকে নির্বিষ করেছেন রোমার ফুটবলাররা। শেষ পর্যন্ত ম্যাচ শেষ হয় ১-১ ব্যবধানে।
ম্যাচ শেষে ওই বল বয় জানিয়েছেন মোরিনহোর দেওয়া চিরকুট তিনি সযত্নে রেখে দেবেন। একইসঙ্গে রেখে দেবেন মোরিনহো’র টিমে কাজ করার ৩০ সেকেন্ডের স্মৃতিও।
মোরিনহো যদিও বলবয়ের সাহায্য এই প্রথম নিলেন না। রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসির প্রাক্তন কোচ ইংল্যান্ডে টোটেনহ্যামের কোচও ছিলেন। ২০১৯ সালের নভেম্বরে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে টোটেনহ্যাম মুখোমুখি হয় অলিম্পিয়াকোসের। প্রথমার্ধের ১৯ মিনিটের মধ্যে ২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ে মোরিনহোর টিম। প্রথমার্ধ শেষ হওয়ার আগে ১ গোল শোধ করে টোটেনহ্যাম।
দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই ম্যাচে সমতা ফেরায় টোটেনহ্যাম। গোল করেন হ্যারি কেন। কিন্তু এই গোলের পিছনেও ছিল এক বলবয়ের ভূমিকা। থ্রো-ইন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে বিদ্যুতের গতিতে টোটেনহ্যাম খেলোয়াড়ের হাতে বল তুলে দেন তিনি। অলিম্পিয়াকোসের খেলোয়াড়রা কিছু বুঝে ওঠার আগেই শুরু হয়ে যায় প্রতি আক্রমণ। সেই মুভমেন্ট থেকেই গোল করেন হ্যারি কেন।
৯০ মিনিট শেষে এই ম্যাচ টোটেনহ্যাম জিতেছিল ৪-২ ব্যবধানে। গোলের পরে মোরিনহো নিজে গিয়ে করমর্দন করেছিলেন বলবয়টির সঙ্গে। দলের সঙ্গে নৈশভোজেও আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন তাকে।
Comments :0