বুধবারের ঘটনার পর সংসদের দুই কক্ষে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বিবৃতির দাবিতে বিক্ষোভ দেখাতে থাকেন বিরোধী সাংসদরা। যার জন্য তিনজন বামপন্থী সাংসদ সহ দুই কক্ষ মিলিয়ে ১৫ জন সাংসদকে সাসপেন্ড করা হয়।
বুধবার সংসদের ভিতর স্মোক অ্যাটাক যারা করেন তারা প্রত্যেকেই যুব বয়সী। কর্মসংস্থানের দাবিতে তারা স্লোগান তোলে। এর পরিপ্রেক্ষিতে কংগ্রেস সাংসদ রাহুল গান্ধী বলেন, ‘‘মোদী সরকারের নীতির জন্য আজ দেশের বেকারত্বের হার বেশি। যারা সংসদের ভিতরে এবং বাইরে এই স্লোগান তুলেছেন তারাও আজ বেকার কেন্দ্রীয় সরকারের নীতির কারণে।’’
যদিও এই ঘটনায় ছয় জন গ্রেপ্তার হয়েছেন। তাদের বিরুদ্ধে ইউএপিএ ধারায় মামলা দায়ের করেছে দিল্লি পুলিশ।
বুধবার সংসদের শীতকালীন অধিবেশন চলাকালীন ২ ব্যক্তি দর্শক গ্যালারি থেকে নীচে লাফ দিয়ে নামেন। তারপর হলুদ রঙের একটি স্প্রে ছড়িয়ে দিতে শুরু করেন তাঁরা। হলুদ রঙের ঝাঁঝালো ধোঁয়ায় ভরে যায় গোট সদন। এই ঘটনার জেরে আতঙ্কে হুড়োহুড়ি শুরু করে দেন উপস্থিত ২০০’র কাছে সাংসদ।
লোকসভা টিভির ভিডিও’তে দেখা গিয়েছে, পশ্চিমবঙ্গের উত্তর মালদা লোকসভা কেন্দ্রের সাংসদ খগেন মুর্মু’র বক্তব্য রাখার সময় এই ঘটনা ঘটে। দর্শক গ্যালারি থেকে নীচে লাফ দেন এক যুবক। তিনি সাংসদদের বসার বেঞ্চের এক সারি থেকে অন্য সারিতে লাফ দিয়ে স্পিকারের আসনের দিকে এগোতে থাকেন। তাঁর হাতে ছিল একটি স্প্রে’র ক্যানিস্টার। সেখান থেকে এক নাগাড়ে হলুদ স্প্রে বেরোতে থাকে।
এর কিছু পরে ২ যুবককে আটক করেন লোকসভার মার্শালরা। তাঁদের সংসদের বাইরে বের করে দিল্লি পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। আটক করার সময়ও ওই দুই ব্যক্তি হলুদ স্প্রে ব্যবহার করে চলেছিলেন।
সংসদের বাইরে ১ মহিলা সহ আরও ২জন হলুদ স্প্রে ছড়ান। স্মোক স্প্রে করার সময় তাঁদের বলতে শোনা যায়, ‘‘মণিপুরের মহিলাদের ন্যায়বিচার দিতে হবে। তানাশাহি চলবে না।’’ পুলিশ জানিয়েছে মোট ৪জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। একজনের নাম সাগর বলে জানা গিয়েছে।
এই ঘটনার জেরে আলোড়ন পড়ে গিয়েছে দিল্লির রাজনৈতিক মহলে। চলতি বছরে নতুন সংসদ ভবনের উদ্বোধন করে নরেন্দ্র মোদী সরকার। বিজেপির দাবি ছিল, নতুন সংসদ ভবনের নিরাপত্তা ঢেলে সাজানো হয়েছে। নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেদ করে মাঝি গলারও উপায় নেই। তারমধ্যে এই ঘটনাকে ঘিরে স্বাভাবিক ভাবেই প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
ওয়াকিবহাল মহলের বক্তব্য, সংসদে প্রবেশ করতে গেলে কোনও না কোনও সাংসদের সুপারিশ লাগে। সুপারিশ পত্রে নিজের রেজিস্ট্রেশন নম্বর লিখতে হয় সংশ্লিষ্ট সাংসদকে। কর্মসূত্রে নিয়মিত সংসদে যাওয়া সাংবাদিকরা জানাচ্ছেন, ৫-৬ দফায় তাঁদের তল্লাশি করা হয়। পকেটের পেন, মানি ব্যাগের খুচরো পয়সা, মোবাইল ফোন নিয়ে ঢোকা যায়না সংসদে। তারপরেও কীভাবে দুই ব্যক্তি স্মোক স্প্রে নিয়ে সংসদে ঢুকে পড়লেন, তা ভেবে স্তম্ভিত সাংসদরা।
২০০১ সালে ১৩ ডিসেম্বর সংসদে হামলা চালায় সশস্ত্র উগ্রপন্থীরা। ঘটনায় সংসদের এক কর্মচারী সহ ৯ নিরাপত্তাকর্মী আহত হন। আহত হন ১৮ জন। নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সংঘর্ষে মারা যায় ৫ উগ্রপন্থী।
Comments :0