Salim TMC MP

আদানিকে প্রশ্ন, মহুয়ার পাশে নেই মমতা: সেলিম

জাতীয় রাজ্য

কৃষ্ণনগরের তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগের তদন্তে যে তৎপরতা দেখানো হচ্ছে তার বিন্দুমাত্রও কেন দেখানো হয়নি নারদ স্টিং অপারেশনে হাতে হাতে টাকা নেওয়া তৃণমূল সাংসদদের বিরুদ্ধে? মহুয়া মৈত্রকে রক্ষার বদলে তাঁর পাশ থেকে সরে যাচ্ছেন কেন তৃণমূলের নেতানেত্রীরা? শুক্রবার প্রশ্ন তুলেছেন সিপিআই(এম)’র রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম। নিজেই জবাব দিয়েছেন একটি মাত্র শব্দে। ‘আদানি’। সেলিমের মতে, আদানিকে ঢিল ছুঁড়েছেন মহুয়া মৈত্র, তাই মমতা ব্যানার্জিকেও আর পাশে পাচ্ছেন না তিনি। 

মাত্র কয়েকদিন আগেই তৃণমূল সাংসদ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে ‘টাকা ও উপহার’ নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ তোলেন তাঁর প্রাক্তন বন্ধু জয় অনন্ত দেহদ্রাই। প্রায় সঙ্গে সঙ্গে লোকসভার অধ্যক্ষ ওম বিড়লাকে লিখিত অভিযোগ দেন বিজেপি সাংসদ নিশিকান্ত দুবে। তাঁর অভিযোগ, দুবাইয়ের ব্যবসায়ী দর্শন হীরানন্দানির কাছ থেকে টাকা ও উপহার নিয়ে সংসদে মোদীর বিরুদ্ধে প্রশ্ন উত্থাপন করেছেন মহুয়া মৈত্র। অধ্যক্ষও গোটা বিষয়টি অতি দ্রুততার সঙ্গে লোকসভার এথিক্স কমিটির কাছে পাঠিয়েছেন। আর শুক্রবার এথিক্স কমিটির প্রধান তথা বিজেপি সাংসদ বিনোদ সোনকর নিজেই সংবাদমাধ্যমকে জানিয়ে দিয়েছেন, ‘অভিযোগ গুরুতর’। আরও বিস্ময়করভাবে এথিক্স কমিটিকে পাঠানো দর্শন হীরানন্দানির হলফনামাও ফাঁস করে দেওয়া হয়েছে সংবাদমাধ্যমে। ঘটনার দ্রুতগতিতে স্পষ্ট যে বিজেপি মহুয়া মৈত্রের সাংসদ পদ কেড়ে নিতে উঠে পড়ে লেগেছে। 

মহুয়া মৈত্র নিজে এই ঘটনাবলীতে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন এক্স হ্যান্ডেলে। এদিন তিনি লিখেছেন, ‘আদানির বিরুদ্ধে আমার মুখ বন্ধ করতে বিজেপি আমাকে সংসদ থেকে তাড়াতে চাইছে।’

কিন্তু মহুয়া মৈত্রকে নিয়ে এখনো পর্যন্ত মুখ খোলেননি তৃণমূলের কোনও নেতানেত্রী। দলের লোকসভার দলনেতা সুদীপ বন্দ্যোপাধ্যায় থেকে সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বা খোদ মমতা ব্যানার্জি, কেউই কোনও কথা বলেননি তাঁকে নিয়ে। বরং শুক্রবার কলকাতায় তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘মহুয়ার বিষয়ে তৃণমূলের কোনও বক্তব্য নেই। দল এ নিয়ে কোনও প্রতিক্রিয়া জানাবে না।’

কেন? এই নিয়েই এদিন প্রশ্ন তুলেছেন মহম্মদ সেলিম। তাঁর বক্তব্য, আদানিকে বিব্রত করার মতো প্রশ্ন সংসদে তোলার জন্যই নিজের দলের সাংসদের পাশ থেকে সরে যাচ্ছে তৃণমূল? মুখ্যমন্ত্রী এরাজ্যে তাজপুরে আদানিদের ডেকে আনছেন বলে? কর্পোরেট পুঁজির একই সুতোয় তৃণমূল এবং বিজেপি নাচছে। 

মহুয়া মৈত্রের ব্যক্তিগত জীবনধারার প্রসঙ্গে একেবারেই ঢুকতে চান না বলে জানিয়ে দিয়েছেন সেলিম। কিন্তু তাঁর বিরুদ্ধে টাকা নিয়ে সংসদে প্রশ্ন তোলার যে অভিযোগ উঠেছে সেই সম্পর্কে সেলিমের বক্তব্য, তদন্ত হোক। কিন্তু এখন তড়িঘড়ি এথিক্স কমিটি বসে গেল, আর নারদ কেলেঙ্কারির বেলায়? তখন তো মানুষ নিজের চোখে দেখেছেন কারা হাত পেতে টাকা নিয়েছে। নারদের এথিক্স কমিটি কোথায়? নারদ কেলেঙ্কারিতে অভিযুক্ত সাংসদদের মধ্যে তৃণমূলের সৌগত রায় এবং কাকলি ঘোষদস্তিদার যেমন আছেন, তেমনই এখন বিজেপি’তে যোগ দেওয়া শুভেন্দু অধিকারীও আছেন। তিনি তখন তৃণমূলেরই সাংসদ ছিলেন। টাকা নেওয়া সত্ত্বেও তাঁদের বিরুদ্ধে গত ৬ বছরেও কোনো শাস্তি হলো না কেন? 

এদিকে, যে ব্যবসায়ীর কাছ থেকে টাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলার অভিযোগ মহুয়া মৈত্রের বিরুদ্ধে জমা পড়েছে এথিক্স কমিটির কাছে সেই ব্যবসায়ী নিজেই হলফনামা জমা দিয়েছেন। বিস্ময়করভাবে সেই হলফনামাও বাজারে প্রকাশ্যে এসে গেছে। ব্যবসায়ী হীরানন্দানির বয়ান সত্য-অসত্য যাই হোক না কেন সেটা মহুয়া মৈত্রের পক্ষে যাচ্ছে না বলেই মনে করা হচ্ছে। এই সম্পর্কেও পদ্ধতিগত প্রশ্ন তুলেছেন সেলিম। তিনি বলেছেন, সংসদের সব কার্যসূচি প্রকাশ্য। কিন্তু সংসদের গঠন করা কমিটিগুলির কার্যসূচি গোপন, কমিটি রিপোর্ট সংসদে জমা দেওয়ার পরে তা প্রকাশ্যে আনা হয়। তাহলে এথিক্স কমিটিতে কে কী বয়ান দিলেন, সেটা প্রকাশ্যে এল কী করে? বোঝাই যাচ্ছে, এর পিছনে কর্পোরেট এবং রাজনৈতিক খেলা চলছে।

Comments :0

Login to leave a comment