Government Hospital Refer

সেই ‘রেফার’, অসুস্থ কিশোরকে নিয়ে নাকাল পরিবার

রাজ্য জেলা

Government Hospital Refer ছোট্ট রুদ্র। ছবি- অভীক ঘোষ।


গত কয়েক বছর ধরেই মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি প্রকাশ্যে বলেছেন ‘রেফার’ নিয়ে। হাসপাতালগুলিকে কড়া হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন। কিন্তু রেফার-রোগ বিন্দুমাত্র কমেনি। আবারও রেফার রোগের শিকার জাঙ্গিপাড়া থানার বোমনগরের এগারো বছরের নাবালক রুদ্র কর্মকার। 
পরিবার সূত্রে জানা গেছে, আটদিন আগে ১৪ নভেম্বর বাড়িতে দোলনায় খেলার সময় পড়ে গিয়ে শিরদাঁড়ায় চোট পায় রুদ্র। প্রথমে তাকে জাঙ্গিপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখান থেকে নিয়ে যাওয়া হয় সিঙ্গুর হাসপাতালে। তার পর সেখান থেকে শ্রীরামপুর ওয়ালস ভর্তি করা হয়। কিন্তু কোনো নিউরো সার্জেন না থাকায় কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে রেফার করা হয় রুদ্রকে। সেখান থেকে ফের রেফার হয়ে এসএসকেএম হাসপাতালে। সেখানে  চিকিৎসার আশায় ছেলেকে নিয়ে রাত কাটিয়ে দেন রুদ্রর মা ছবি কর্মকার।
দ্রুত অপারেশন না করলে পঙ্গু হয়ে যেতে পারে ছেলে এই আশঙ্কায় এসএসকেএম-এ ভর্তি করানোর অনেক চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু হাসাপাতাল থেকে জানিয়ে দেওয়া হয়  কোনো বেড নেই। ছবি কর্মকারের অভিযোগ, এখানেই বেডের জন্য টাকা দেওয়ার কথা বলে কিছু লোক। টাকা দিলেই নাকি ভর্তি করা যাবে রাজ্যের সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল এসএসকেএম-এ। দিন মজুর পরিবার টাকা কোথায় পাবেন। তাই বাধ্য হয়েই ফিরতে হয় ছেলেকে নিয়ে। কোথায় চিকিৎসা করাবেন ছেলের এক প্রকার দিশেহারা হয়ে পড়েন মা ছবি কর্মকার।
এক পরিজন জানিয়েছেন, কিশোরকে নিয়ে তাঁরা চলে আসেন তারকেশ্বরের চাঁপাডাঙ্গার একটি নার্সিংহোমে। সেখানেই চার জন চিকিসকের দল গঠন করে দ্রুত অপরেশন করা হয়। এরপর সুস্থ হয় কিশোর। মানবিকতার খাতিরে এক প্রকার বিনামূল্যে চিকিৎসা করেছে এই নার্সিং হোম।

সাত মাস আগে কলকাতার তিনটি প্রথম সারির সরকারি হাসপাতাল থেকে ‘রেফার’ হওয়ার পর চতুর্থ হাসপাতালে মৃত্যু হয় দুর্ঘটনায় আহত মেঘনাদ চন্দ্র নামে এক যুবকের। 
গত বুধবার, ভাইফোঁটার দিন মাথা যন্ত্রণা নিয়ে হরিপাল হাসপাতালে ভর্তি হন বিকাশ দুলে নামে এক যুবক। সেখান থেকে চুঁচুড়া হাসপাতালে রেফার করা হয় তাঁকে। দুদিন পর ওই যুবককে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজে পাঠানো হয়। সেখানে মাথায় স্ক্যান করে তাঁকে ফের রেফার করা হয় বাঙ্গুর ইনস্টিটিউট অফ নিউরোলজিতে। কিন্তু সেখানে চিকিৎসকরা তাঁকে ভর্তি নেননি। রাস্তাতেই সারারাত শুয়ে থাকে বিকাশ ও ও তাঁর পরিবার। পরের দিন সকালে মৃত্যু হয় বিকাশের। এক প্রকার বিনা চিকিৎসা ও রেফার রোগেই তাঁর মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি পরিবারের।
মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ সত্তেও রেফার-রোগ বিন্দুমাত্র কমেনি বরং চলছে রাজ্যজুড়েই। এবার কাঠগড়ায় পিজি হাসপাতালের স্বাস্থ্য পরিকাঠামো। পাঁচ সরকারি হাসপাতাল ঘুরে মিলল না চিকিৎসা। আবার রেফার রোগের শিকার জাঙ্গিপাড়া থানার বোমনগরের এগারো বছরের নাবালক। সময় মতো চিকিৎসা না পেলে সারা জীবনের মত পঙ্গু হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা। 
রাজ্যের অগ্রণী হাসপাতাল এসএসকেএম। তৃণমূলের নেতা বা মন্ত্রীদের জন্য এখানেই বরাদ্দ থাকে বেড। কিন্তু সাধারণ মানুষকে চিকিৎসা পেতে হয়রান হতে হয় বেডের অভাবে। এবার তেমনটাই ঘটল জাঙ্গিপাড়া থানার বোমনগরের এগারো বছরের রুদ্র কর্মকারের ক্ষেত্রেও।


কিছু দিন আগেই এক প্রকার বিনা চিকিৎসায় মৃত্যু হয়েছিল হরিপালের এক যুবকের। আবার একবার বেআব্রু হয়ে পড়লো এ রাজ্যের চিকিৎসা ব্যবস্থা। প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে সরকারি হাসপাতাল গুলিতে কি সঠিক পরিকাঠামোর অভাব নাকি দালালদের টাকা দিলে তবেই মিলবে চিকিৎসা?

Comments :0

Login to leave a comment