industry recess

মোদীর আত্মনির্ভর ভারত মুখ থুবড়ে পড়েছে

জাতীয়

industry recess


মোদীর আত্মনির্ভর ভারত  কার্যত মুখ থুবড়ে পড়েছে। মহামারীর সময়ে দেশের উৎপাদন শিল্পের উৎপাদনে বৃদ্ধি ঘটিয়ে তাকে আত্মনির্ভর করে তোলার স্লোগান তুলে সমারোহ  করে এই প্রকল্প ঘোষণা করে মোদী সরকার। সেই আত্মনির্ভর ভারত ঘোষণার পর প্রায় আড়াই বছর কেটে গেছে। উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির লক্ষণ কোথায় কি?
এদিক মোদীর কোনও টোটকা কাজ করছে না। বৃদ্ধির হার প্রতি বছর কমছে। ভারী শিল্প মন্ত্রী অর্জুনরাম মেঘওয়াল সংসদে প্রশ্নের লিখিত জবাবে উৎপাদন শিল্পে এই  বৃদ্ধির  হার কমে যাওয়ার কথা স্বীকার করেছেন। তিনি লিখিত জবাবে জানিয়েছেন, ২০১৭-১৮ সালে দেশের উৎপাদন শিল্পে বৃদ্ধির হার ছিল ৪.৬শতাংশ। 

 

২০১৮-১৯ সালে তা কমে হলো ৩.৯ শতাংশ। ২০১৯-২০ সালে কোনও বৃদ্ধি ছিল না। তাতে অধোগতি হার ছিল (—)১.৪ শতাংশ। ২০২০-২১ মহামারীতে কলকারখানা সব বন্ধ থাকায় তা কমে (—)১৪.৪ শতাংশে নেমে আসে। ২০২১-২২ সালে কলকারখানা খুলে সব স্বাভাবিক হলেও উৎপাদন শিল্পের বৃদ্ধি হার ছিল কম। তা ছিল মাত্র ০.৯ শতাংশ। মহামারীর পর দুই বছর কেটে গেছে। তবু হাল ফেরেনি উৎপাদন শিল্পের। তার উৎপাদন বৃদ্ধির হার ২০২২-২৩ সালে বেড়ে হয়েছে মাত্র ৩.৫ শতাংশ। যা আজও মহামারীর আগের বৃদ্ধি হারে পৌঁছাতে পারেনি। উৎপাদন শিল্পে উৎপাদন বৃদ্ধির গতি এতে মাঠে মারা গেছে। থুবড়ে পড়েছে  মোদীর সাধের আত্মনির্ভর ভারত। 


দেশে বেকারি বৃদ্ধির অন্যতম কারণ হলো দেশের উৎপাদন শিল্প বিকাশের হার  থমকে যাওয়া। দেশের  কর্মসংস্থানের বড় অংশ হয়ে থাকে উৎপাদন শিল্পে। সেই উৎপাদন শিল্পের বৃদ্ধির হার প্রতি বছর কমেছে। উৎপাদন কমতে থাকায় শিল্পে ছাঁটাই বাড়ছে প্রতিবছর। এই উৎপাদন শিল্পের উৎপাদনে বৃদ্ধি ঘটাতে ২০২০ সালে মোদী ঘোষণা করলেন  আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প। এতে উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে ভরতুকি প্রদানের  প্রকল্প নেওয়া হলো। দেশের ১৩টি শিল্প সেক্টরে  উৎপাদন বৃদ্ধির সঙ্গে এই ভরতুকির ব্যবস্থা করা হয়। এই শিল্পের মধ্যে রয়েছে মধ্যে রয়েছে মেডিক্যাল সরঞ্জাম, মোবাইল ফোন উৎপাদন, ইলেকট্রনিক্স সরঞ্জাম প্রভৃতি। ১৩ সেক্টরের উৎপাদন নজরদারির জন্য সরকারের সচিব স্তরের কমিটি গঠন করা হয়। পণ্য বিক্রি বাড়াতে সরকারি সংস্থাকে তাদের নির্দিষ্ট পরিমাণে পণ্য কেনা বাধ্যতামূলক করা হয়। ২০২১ সালে বস্ত্রশিল্পে বিনিয়োগ  টানতে টেক্সটাইল ইনভেস্টমেন্ট পার্ক তৈরি হয়। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দেশে উৎপাদন শিল্পে বেসরকারি  বিনিয়োগ বাড়েনি। ফলে উৎপাদনে সেই হারে বৃদ্ধি দেখা যায়নি।

 


এদিকে শিল্প বিশেষজ্ঞদের মত, দেশে উৎপাদন শিল্পে অগ্রগতি কয়েক বছর ধরে থমকে গেছে। যা অভাবিত ঘটনা বলে মনে  করা হচ্ছে। বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন, গত এক  দশক ধরে দেখা যাচ্ছে উৎপাদন শিল্পের যে পরিমাণ উৎপাদনের ক্ষমতা আছে তার সবটা ব্যবহার হচ্ছে না। বর্তমানে দেখা যাচ্ছে, উৎপাদন ক্ষমতার মাত্র ৩০-৪০ শতাংশ ব্যবহার হচ্ছে। ৬০-৭০ শতাংশ  উৎপাদন ক্ষমতা  ব্যবহার করা হচ্ছে না। একমাত্র বিনিয়োগ বাড়লেই উৎপাদন ক্ষমতার ৯০ শতাংশ ব্যবহার করা হয়। তবে বিনিয়োগ না বাড়ায় কোনও সময় উৎপাদন ক্ষমতার পুর্ণ ব্যবহার হয় না। বিশেষজ্ঞরা বলছেন,টানা ৯ বছর কেন্দ্রে ক্ষমতায় আছে মোদী সরকার। কিন্তু বেসরকারি বিনিয়োগ টানতে মোদী সরকার পুরোপুরি ব্যর্থ তা উৎপাদন শিল্পে বিনিয়োগের বেহাল অবস্থাতে টের পাওয়া যায়।
দেশে নতুন শিল্প (গ্রিনফিল্ড) এবং চালু শিল্পের (ব্রাউন ফিল্ড) প্রসারে লক্ষণীয়ভাবে বিনিয়োগ কমে গেছে। বর্তমানে দেশের মোট অভ্যন্তরীণ উৎপাদনের (জিডিপি) ১৪ শতাংশ  উৎপাদন শিল্পে  উৎপাদিত হয়। মোদী সরকার  ক্ষমতায় এসেই উৎপাদন শিল্পের প্রসার বাড়াতে ‘মেক ইন ই্ন্ডিয়া’ প্রকল্প ঘোষণা করে। লক্ষ্য ছিল, এক বছরের মধ্যে উৎপাদন শিল্পে উৎপাদিত পণ্য জিডিপি’র ১৪ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২৫ শতাংশ করা হবে। গত নয় বছরের মধ্যে তিন বার  মেক ইন ইন্ডিয়া প্রকল্পের উৎপাদন বাড়াতে নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়। শেষে মহামারীর সময় আনা হলো আত্মনির্ভর ভারত প্রকল্প। কিন্তু আজও দেশের উৎপাদন শিল্পের উৎপাদিত পণ্য জিডিপির ১৪ শতাংশের উপরে যেতে পারেনি। তা একই জায়গায় থেমে রয়েছে।


প্রসঙ্গত গোটা মোদী জমানায় উৎপাদন শিল্পের এই বন্্যাকই অবস্থা হতাশ করেছে  কেন্দ্রের আর্থিক নীতি নির্ধারকদের। সম্প্রতি এক চ্যানেলে সাক্ষাৎকারে কেন্দ্রের রাজস্ব সচিব বলেছেন, সরকার বেসরকারি বিনিয়োগ নিয়ে নিশ্চিত হয়ে তবেই কর ছাড়ের পরিকল্পনা নিতে চায়। তিনি স্বীকার করেন কয়েক বছরের অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে  বেসরকারি সংস্থাকে  বিনিয়োগ বাড়াতে নানা কর ছাড় দিলেও দেখা গেছে বিনিয়োগ তাতে বাড়েনি। এবারে বিনোয়োগ নিশ্চিত করে তবেই কর ছাড়ের পরিকল্পনা নেওয়ার কথা ভাবা হয়েছে। তবে বিরোধীদের মত,দেশে শিল্পের প্রসার ও উৎপাদন বৃদ্ধি নয়, শিল্পপতিদের  মুনাফার  তোফা তুলে দিতে নানা কর ছাড় দেওয়া হচ্ছে। এতে শিল্পপতিদের কোষাগারে মুনাফার পাহাড় জমলেও তাতে শিল্পে বিনিয়োগ বাড়ছে না।

Comments :0

Login to leave a comment