Iva Thapa

কামড়কান্ডে বিভাগীয় তদন্ত শুরু

রাজ্য

 কামড়কাণ্ডে অভিযুক্ত পুলিশকর্মী ইভা থাপাকে তলব করল লালবাজার। আগামী সোমবার তাঁকে লালবাজারে কলকাতা পুলিশের সদর দপ্তরে ডেকে পাঠানো হয়েছে। ঠিক কী ঘটেছিল, আদৌ পুলিশ কামড়েছিল, না কি অভিযোগকারিণী কামড় দিয়েছেন, তা নিয়ে বিভাগীয় তদন্ত শুরু করল কলকাতা পুলিশ। তদন্তের ভার দেওয়া হলো কলকাতা পুলিশের ডেপুটি কমিশনার দক্ষিণ (২) বুদ্ধদেব মুখোপাধ্যায়কে। ইভা থাপাকে তাঁর সঙ্গেই দেখা করতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। কেন চাকরিপ্রার্থীর হাতে কামড়ে দিলেন পুলিশকর্মী ইভা থাপা, না কি চাকরিপ্রার্থী তা করতে ইন্ধন জুগিয়েছিলেন বা তিনি পুলিশকর্মীকে মারধর করেছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখতে ডেপুটি কমিশনার দক্ষিণ (২) পুলিশকর্মীর পাশাপাশি আন্দোলনকারী মহিলার বক্তব্যও খতিয়ে দেখবেন বলে পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে। ক্যামাক স্ট্রিটের ঘটনাস্থলের সিসিটিভি ফুটেজও খতিয়ে দেখা হবে।  
প্রসঙ্গত, ২০১৪ সালের টেট উত্তীর্ণ অরুণিমা পাল টেটে দুর্নীতির প্রতিবাদে অন্যদের সঙ্গে কলকাতার রাস্তায় আন্দোলনে নেমে পুলিশের কামড় খেয়েছেন বলে অভিযোগ এনেছেন। ঘটনা গত বুধবারের। দক্ষিণ কলকাতার ক্যামাক স্ট্রিটে স্বচ্ছ নিয়োগের দাবিতে টেট উত্তীর্ণরা বিক্ষোভে দেখাতে যান। বিক্ষোভ হঠাতে গেলে চাকরিপ্রার্থীদের সঙ্গে পুলিশের হাতাহাতি শুরু হয়। টেনেহিঁচড়ে বিক্ষোভকারীদের পুলিশের প্রিজন ভ্যানে তোলার চেষ্টা করা হয়। প্রিজন ভ্যানের চাকার সামনে শুয়ে পড়েন বেশ কয়েক জন বিক্ষোভকারী। অশান্তির মধ্যে সেই সময়ে বিক্ষোভকারী অরুণিমা পালের দিকে ছুটে যান ইভা থাপা। চাকরিপ্রার্থীর হাতে কামড় বসিয়ে দেন ওই মহিলা পুলিশকর্মী, যদিও পুলিশের তরফে পালটা অরুণিমার বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগ তোলা হয়েছে। আক্রান্ত অরুণিমা সহ ৩০ জনকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তাঁদের বিরুদ্ধে একাধিক জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা রুজু করা হয়। কিন্তু আদালত পুলিশের এই দাবি খারিজ করে দেয়। বৃহস্পতিবার অরুণিমা পাল সহ ৩০ জন টেট উত্তীর্ণ প্রার্থীকেই জামিন দিয়ে আদালত তার পর্যবেক্ষণে বলে, স্বাধীন (কল্যাণকর) রাষ্ট্রে বিক্ষোভ দেখানো বা আন্দোলন করার অধিকার রয়েছে। আন্দোলনের অধিকার সংবিধান স্বীকৃত মৌলিক অধিকার। 


এদিকে, কামারহাটি সাগর দত্ত হাসপাতালের পরীক্ষায় চাকরিপ্রার্থী অরুণিমা পালের হাতে মানুষের কামড় বা ‘হিউম্যান বাইট’-এর আঘাত প্রমাণিত হয়েছে। ওই হাসপাতালের চিকিৎসক তাঁকে এই মর্মে লিখিত শংসাপত্র দিয়েছেন। ‘মানুষের কামড়ের ফলেই ওই কর্মপ্রার্থীর হাতে আঘাত লেগেছে’ বলে মন্তব্য করেছেন চিকিৎসক। কলকাতা পুলিশের তরফেও অভিযুক্ত ইভা থাপাকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। কেন আক্রান্তকে গ্রেপ্তার এবং আক্রমণকারীকে হাসপাতালে ভর্তি করা হলো, তা নিয়ে একাধিক প্রশ্ন তোলেন বিরোধীরা।
পুলিশের তরফে দাবি করা হয়েছিল, বিক্ষোভকারী অরুণিমা পালই না কি আগে কামড়ে দিয়েছিলেন পুলিশকে। সেই ফুটেজও না কি রয়েছে। তবে আদালতে পুলিশের এই দাবি গ্রাহ্য হয়নি। কলকাতার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সৌমক মুখোপাধ্যায় তাঁর পর্যবেক্ষণে বলেন, ছাত্রছাত্রীরা দীর্ঘ দিন ধরে রাস্তায় রয়েছেন বিচারের জন্য। টেট এবং অন্যান্য বিভাগে শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে বড় ধরনের দুর্নীতির অভিযোগ উঠেছে। এই অবস্থায় চাকরিপ্রার্থীরা বিচারের দাবিতে ক্যামাক স্ট্রিট সংলগ্ন এলাকায় বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। এই আন্দোলনের অধিকার তাঁদের রয়েছে। এই যুক্তিতেই বিচারক ধৃত ৩০ জনের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ৩০০ টাকা জরিমানা ধার্য করে তাঁদের পরপর সাত দিন ঘটনার তদন্তকারী আধিকারিক বা আইও’র কাছে হাজিরার নির্দেশ দিয়েছেন। প্রার্থীরা ইতিমধ্যেই দু’দিন হাজিরা দিয়েছেন। 
বিচারক তাঁর পর্যবেক্ষণে আরও বলেছেন, একটা বড় সংখ্যায় আইনজীবী এই ৩০ জনের জামিনের জন্য আদালতে হাজির হয়েছেন। পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে হিংসাত্মক বিক্ষোভের অভিযোগ এনেছে। কিন্তু প্রাথমিকভাবে দেখা গিয়েছে, বিক্ষোভকারীরাদের কারও হাতে একটি লাঠি পর্যন্ত ছিল না। অন্যদিকে, যে পুলিশকর্মীরা আহত হয়েছেন বলে উল্লেখ করা হয়েছে, তাঁদের আঘাত নিতান্ত বাহ্যিক বলে তাঁর মনে হয়েছে। পুলিশ ধৃতদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় অভি‍‌যোগ এনে আগামী ২২ নভেম্বর পর্যন্ত পুলিশ হেফাজতে রাখার আবেদন জানিয়েছে। পুলিশ যে ৩০ জন চাকরিপ্রার্থীর বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য ধারায় মামলা দায়ের করেছে, তাঁদের সম্পর্কে আদালত ভেবেছে যে, তাঁদের আর আটকে রাখা ঠিক হবে কি না। তাঁর মনে হয়েছে, আন্দোলনে অংশগ্রহণ করার সাংবিধানিক অধিকার তাঁদের রয়েছে। তবে আন্দোলনকারীরা নিজের হাতে কখনই আইন তুলে নিতে পারেন না। বিচারব্যবস্থার নজরে আছে, টেট চাকরিপ্রার্থীরা তাঁদের চাকরির দাবিতে মাসের পর মাস রাস্তায় অপেক্ষা করছেন ন্যায় বিচারের আশায়। এই অবস্থায় বিক্ষোভ করার অধিকারের কথা আইনজীবীরা বলেছেন। আইনজীবীরা সঠিকভাবেই উল্লেখ করেছেন, এই বিক্ষোভে কারও হাতে একটি লাঠিও ছিল না। তাই এই আন্দোলনকে সাংবিধানিক মৌলিক অধিকার হিসাবেই বিবেচনার মধ্যে রাখতে হবে। তাই আদালত এঁদের জামিন মঞ্জর করছে। ধৃতদের পক্ষে আদালতে উপস্থিত হয়েছিলেন মহম্মদ ইয়াসিন রহমান, বিজয় শঙ্কর দুবে সহ এআইএলইউ’র সদস্য আইনজীবীরা।

Comments :0

Login to leave a comment