দেশের কৃষক সমাজের বৃহত্তম অংশের প্রতিনিধি দুই শতাধিক কৃষক সংগঠনের যৌথ মঞ্চ সংযুক্ত মোর্চা মনে করে তৃতীয় মোদী সরকারের প্রথম বাজেট সর্বার্থে কৃষকের স্বার্থবিরোধী। কর্পোরেট স্বার্থকে সর্বোচ্চ অগ্রাধিকার দিতে গিয়ে সরকার কৃষি ও কৃষকের স্বার্থকে বিসর্জন দিয়েছে। দেশের অর্ধেকের বেশি মানুষের জীবন-জীবিকা যেহেতু কৃষিকে কেন্দ্র করে তাই এই বাজেট পুরোপুরি জনবিরোধী। বাজেটে জনস্বার্থের কোনও কিছুই প্রতিফলিত হয়নি। বাজেট তৈরির আগে অর্থ মন্ত্রী বণিকসভাগুলির মাধ্যমে দেশের কর্পোরেটপতিদের সঙ্গে সলা-পরামর্শ করেছেন। তাদের দেওয়া প্রস্তাব বা সুপারিশগুলি যথাসম্ভব জায়গা পেয়ে গেছে বাজেটে। বণিকসভা সিআইআই’র এক কর্তা জানিয়েছেন কর্মসংস্থান সংক্রান্ত বাজেটে অন্তর্ভুক্ত বিষয়গুলি তারাই সরকারকে প্রস্তাবাকারে দিয়েছিলেন।
দেশের কর্পোরেট প্রতিনিধিদের সঙ্গে বাজেটে আগে আলোচনা করলেও এবং সরকারপন্থী অর্থনীতিবিদদের মতামত গ্রহণ করলেও অর্থ মন্ত্রী শ্রমিক প্রতিনিধি এবং কৃষক প্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা করেননি। শ্রমিক ও কৃষকরা মোদী সরকারের কাছে হিসাবের বাইরে অবহেলার পাত্র। শ্রমিক-কৃষকদের এই সরকার এতটাই অজ্ঞ ও নির্বোধ মনে করে যে তাদের সঙ্গে কথা বলে তাদের মতামত জানাকে অপ্রয়োজনীয় সময় নষ্ট করা মনে করেছে। স্বাভাবিকভাবেই বাজেটে মোদী ঘনিষ্ঠ অর্থনীতিবিদ ও কর্পোরেট কর্তাদের পরামর্শগুলি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা করে নিলেও প্রত্যাশিতভাবে শ্রমিক ও কৃষকদের কথা অনুক্ত ও অনুপস্থিত থেকে গেছে। এই অবস্থার নিরিখেই দেশের কৃষক সমাজ মনে করছেন এই বাজেট সম্পূর্ণত কৃষি ও কৃষকের স্বার্থবিরোধী। কৃষকের স্বার্থের বিনিময়ে কৃষিতে কর্পোরেট পুঁজির নিয়ন্ত্রণ বৃদ্ধি। কৃষিবাণিজ্যে কর্পোরেট আধিপত্য, কৃষি জমিতে কৃষকের কর্তৃত্ব ছাঁটাই ইত্যাদিই বেশি বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
এই বাজেটের সামনে কৃষকদের প্রধান দাবিই ছিল ন্যূনতম সহায়ক মূল্য অর্থাৎ এমএসপি’র আইনি গ্যারান্টি। সংসদে আইন করে সরকার নির্ধারিত মূল্যে কৃষকের উৎপাদিত সমস্ত ফসল বিক্রি নিশ্চিত করতে হবে। তেমনি সরকারের মরজি মাফিক এমএসপি নির্ধারণ করা যাবে না। করতে হবে স্বামীনাথন কমিশনের সুপারিশকে মান্যতা দিয়ে সি-২+৫০ শতাংশ ফরমুলায়। যে ফরমুলায় চাষের প্রকৃত ব্যয়, জমির মূল্য, ঋণের সুদ, কৃষকের শ্রম সবটাই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। সমস্ত খরচের উপর ৫০ শতাংশ অতিরিক্ত যুক্ত করে এমএসপি নির্ধারিত হবে এবং সেই দামে ফসল বিক্রির আইনি গ্যারান্টি দিতে হবে। বাজেটে কৃষকের এই প্রধান দাবিটিই প্রত্যাখ্যাত হয়েছে। উলটে সারে ভরতুকি কমিয়ে চাষের খরচ আরও বাড়িয়ে দেবার ব্যবস্থা হয়েছে। অতএব কৃষিতে আয় বৃদ্ধি স্বপ্ন এই বাজেটে মুছে দেওয়া হয়েছে। কৃষক যদি ন্যায্য দাম পায়, চাষ করে যদি লাভবান হয় তাহলে কৃষিপণ্যের ব্যবসা করে কর্পোরেট অতিরিক্ত মুনাফা পাবে না। তাই কৃষকদের বঞ্চিত করে কর্পোরেট মুনাফা নিশ্চিত করার বন্দোবস্ত করার ব্যবস্থা করেছে মোদী সরকার। তাই এই বাজেটে বিরুদ্ধে সারাদেশে গ্রামে গ্রামে প্রতিবাদ-বিক্ষোভের সঙ্গে বাজেট পোড়ানোর ডাক দিয়েছে সংযুক্ত কিষান মোর্চা।
Editorial
সর্বার্থে কৃষক বিরোধী
×
Comments :0