BRITAIN ELECTION

ব্রিটেনের ভোটে প্রভাব ফেলছে অভিবাসন, প্যালেস্তাইন, ইউক্রেনও

আন্তর্জাতিক

দীপাঞ্জনা দাশগুপ্ত দে


রাত পোহালেই নির্বাচনের লাইনে দাঁড়াবে ব্রিটেন। জনমত সমীক্ষার ভিত্তিতে বলতে গেলে, বর্তমান শাসকদল রক্ষণশীল বা কনজারভেটিভ পার্টির ঋষি সুনকের থেকে যোজন খানেক এগিয়ে রয়েছেন লেবার পার্টির নেতা কায়ের স্টাইমার। তিনি পূর্বসূরি জেরেমি করবিনের তুলনায় ঢের কম বামমুখী। তবে এই মূহূর্তে ব্রিটেনের একটি জ্বলন্ত ইস্যুতে মানবিক ভূমিকা রাখার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। 
গত কয়েক বছর ধরে বিপুল পরিমাণে অভিবাসী ব্রিটেনে প্রবেশ করেছেন। গত বছর বৈধ ভাবে প্রবেশ করা মানুষের সংখ্যা ছিল ৭ লক্ষের কাছে। এই বছর সেই সংখ্যা কমে সাড়ে ৬ লক্ষ হলেও ২০১৯ সালের তুলনায় তা প্রায় তিনগুণ।
অভিবাসন এবারের নির্বাচনে অন্যতম প্রধান বিষয়। তেমনই আরেকটি বিষয় হয়ে উঠেছে প্যালেস্তাইনে ইজরায়েলের আগ্রাসন। যুদ্ধবিরতির পক্ষে সুনক প্রশাসন হাত গুটিয়ে কেন উঠেছে তা নিয়ে প্রশ্ন। হয়েছে মিছিল। আবার ইউক্রেনে যুদ্ধ থামানোর পরিবর্তে অস্ত্র জোগানোর নীতিতেও ক্ষোভ রয়েছে বড় অংশের। রাশিয়া-ইউক্রেন সংঘাতের পর বেড়েছে জ্বালানির দামি। এমনকি আমদানি করা গমের দাম বেড়ে যাওয়ায় রুটির দামও বেড়েছে। 
সুনক কড়া অভিবাসন নীতির প্রতিশ্রুতি দিচ্ছেন উগ্র দক্ষিণপন্থী শক্তিগুলির মতো। যেমন কড়া নীতি হয়েছে ইতালিতে। ফ্রান্সেও উগ্র দক্ষিণপন্থীরা অভিবাসী শ্রমিকদের সঙ্গে শ্রমজীবীর অন্য অংশের বিরোধ তৈরি করেই ভোট লড়ছে। ব্রিটেনে স্টাইমারের নেতৃত্বে থাকা লেবার পার্টির মূল অংশ সেই নীতির সরব প্রতিবাদ করছে একথা বলা যাবে না। তবে সুনক প্রশাসনের উগ্র নীতিতেও সায় দেয়নি।  
বিপুল পরিমাণ শরণার্থী এবং অভিবাসীর ঢল দেখিয়ে বিশ্বের যে কোনও প্রান্তে উগ্র দক্ষিণপন্থী এবং রক্ষণশীলরা জনমত প্রভাবিত করে। এখানেও করেছে। দাবি করা হয়েছে, শরণার্থীদের জন্য জনবিন্যাস প্রভাবিত হচ্ছে, স্থানীয়দের কাজের সুযোগ কমছে। ক্ষমতাসীন রক্ষণশীলরা ইতিমধ্যেই শরণার্থীদের সংখ্যা কমানোর নীতি নিয়েছে। সেই নীতির একটিকে অমানবিক বললেও কম বলা হয়। 
সুনক প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, 'বেআইনি' ভাবে ব্রিটেনে প্রবেশ করা মানুষকে আফ্রিকার রোয়ান্ডায় পাঠানো হবে। সুনক সরকারের দাবি, ২০২০ সাল থেকে ২ লক্ষের কাছে মানুষ ফ্রান্স থেকে ডিঙি নৌকা চড়ে ব্রিটেনে বেআইনি ভাবে প্রবেশ করেছে, তাদের আফ্রিকায় পাঠানো হবে। 
লেবার পার্টি প্রাক্তন প্রধান জেরেমি করবিনের দৃষ্টিভঙ্গি থেকে সরে এসে শরণার্থী এবং অভিবাসীর সংখ্যা কমানোর প্রতিশ্রিতি দিলেও, রোয়ান্ডায় মানুষ পাঠানোর তীব্র বিরোধিতা করেছে। একইসঙ্গে লেবারের ইস্তেহারে ঠাঁই পেয়েছে জ্বালানির দাম নিয়ন্ত্রণ, লন্ডনের মতো শহরে অত্যধিক হারে বেড়ে চলা বাড়ি ভাড়ার হার নিয়ন্ত্রণের মত বিষয়গুলি। 
অভিবাসী-শরণার্থী ইস্যুর পাশাপাশি এই নির্বাচনে মুখ্য হয়ে উঠেছে জ্বালানীর দাম। ব্রিটেন মূলত রাশিয়া থেকে জ্বালানি আমদানি করত। ইউক্রেন যুদ্ধ শুরুর পরে তা বন্ধ। পশ্চিমী দুনিয়ার সব দেশই রাশিয়া থেকে জ্বালানি কেনা বন্ধ করেছে কিংবা কমিয়েছে। কিন্তু জার্মানি, স্পেন, ফ্রান্সের মত দেশগুলির তুলনায় ব্রিটেনের খনিজ জ্বালানি নির্ভরতা অনেকটাই বেশি। ব্রিটেনের বাড়িগুলি এমনভাবে তৈরি যে সেগুলি তাপ ধরে রাখতে পারে না। তাই রাশিয়া থেকে সস্তার জ্বালানি আসা বন্ধ হতে সব থেকে বেশি সমস্যায় পড়েছেন ব্রিটেনের শ্রমজীবী নিম্ন আয়ের মানুষ। দ্বিগুণ তিনগুণ দামে জ্বালানি কিনতে গিয়ে তাঁদের ক্রয় ক্ষমতা তলানিতে এসে ঠেকেছে। জ্বালানির দাম বাড়ার ফলে নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের পাশাপাশি বাড়ির ভাড়াও বেড়েছে। 'পুতিনের আগ্রাসন' ঠেকাতে গিয়ে দেশের মানুষকে কঠিন পরিস্থিতিতে ঠেলে দিয়েছেন সুনক। স্বাভাবিক ভাবেই এই রোষ আছড়ে পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে আগামীকাল।
অভিবাসন ঠেকাতে সুনক ঠিক করেছেন বিশেষ কাজে বাইরে থেকে শ্রমিক বা কর্মী নিতে হলে তাঁদের বছরে সাড়ে ৩৮ হাজার পাউন্ড অন্তত মজুরি দিতে হবে। বহু সংস্থারই সে ক্ষমতা নেই। অনেক সংস্থায় কর্মরতদেরই এত বেতন নেই। ফলে প্রচুর স্টার্ট আপ বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ব্রিটিনে বয়স্কদের পরিচর্যা পরিষেবায় বহু ভারতীয়, নাইজেরিয়রা প্রধান দায়িত্ব নেন। তারজন্য বিশেষ ভিসা আর দেওয়া হবে না। ফলে এই পরিষেবা ক্ষেত্রে সমস্যা দেখা দিয়েছে। বিভিন্ন বয়স্ক পরিচর্যা পরিষেবা কেন্দ্র বন্ধ হতে শুরু করেছে। সুনকের চালু করা নিয়মে এই পরিষেবাদাতারা ভিসা পেলেও তাঁদের পরিবার আসতে পারবে না। 
বিদেশি ছাত্রছাত্রীদের ক্ষেত্রেও পরিবারকে সঙ্গে আনার সুযোগ বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এই নীতি লিঙ্গ অসাম্য রয়েছে। স্নাতকোত্তরে প্রচুর কম আবেদন জমা পড়েছে। বিবাহিত বা সন্তান রয়েছে এমন মহিলাদের বেশি সমস্যা হচ্ছে। অনেকে অস্ট্রেলিয়া, কানাডা চলে যাচ্ছেন। বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হওয়ার মুখে। পরিস্থিতির প্রভাব বোঝা যাবে সেপ্টেম্বরে, নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরুর মুখে।  
সব মিলিয়েই অর্থনীতির অবস্থা ভালো নয়। অভিবাসন নীতিতে অনেক সংস্থাই শঙ্কিত। জনমতে তার প্রভাব পড়বে কতটা বোঝা যাবে চব্বিশ ঘন্টা কাটলে।

Comments :0

Login to leave a comment