CPI(M) MD SALIM

আঘাত নিয়ে সভায় রিনা বিবি,
মাটি না ছাড়ার আহ্বান মেদিনীপুরে

রাজ্য জেলা

CPIM MD SALIM সোমবার মেদিনীপুর শহরে সাংগঠনিক সভায় মহম্মদ সেলিম।

চিন্ময় কর

তৃণমূল ও বিজেপির খেলা ভাঙার লড়াই এবারের পঞ্চায়েত নির্বাচনে। সেই রাজনৈতিক লড়াই সংগ্রামে আমরা সবাই এক একজন সৈনিক। সেই লড়াইতে বামপন্থীরা গণতান্ত্রিক, ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে একত্রিত করেই লড়বে। এই লড়াই জনগনের পঞ্চায়েত গড়ে তোলার। রবিবারে মেদিনীপুর শহরে সিপিআই(এম)’র সাংগঠনিক সভায় এই আহ্বান জানিয়েছেন মহম্মদ সেলিম।

সেলিম বলেন, দুর্নীতিগ্রস্ত দুই শাসক দল তৃণমূল ও বিজেপিকে হঠিয়েই জনগণের অধিকার ফেরাবে বামপন্থীরা। তৃণমূলকে হটালে বাংলা থেকে বিজেপি-ও নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। বুথে বুথে, মহল্লায় মহল্লায় মানুষকে শামিল করতে হবে। 
সোমবার মেদিনীপুর শহরে স্পোর্টস কমপ্লেক্স ইনডোর হলে পঞ্চায়েত নির্বাচনের প্রস্তুতিতে সিপিআই(এম)’র বুথ কনভেনর, ৫৪টি এরিয়া কমিটির সদস্য এবং জেলা কমিটির সদস্যরা কর্মশালায় অংশ নেন। বক্তব্য রাখেন পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য রবীন দেব, সভাপতিত্ব করেন জেলা সম্পাদক সুশান্ত ঘোষ।

রবীন দেব সাংগঠনিক নানা দিক তুলে ধরে বুথের লড়াইকে শক্তিশালী করতে ব্যাপক মানুষের জোট গড়ে তোলার আহ্বান জানান। সারা শরীরে আঘাত নিয়েও এদিন সভায় যোগ দেন পিংলার রিনা বিবি। সিপিআই(এম)’র সমাবেশ বানচাল করতে শনিবার হামলা হয় তাঁর ওপর, সঙ্গী মহিলা আন্দোলনের কর্মীদের ওপর।

পঞ্চায়েতে দৃষ্টিভঙ্গির ফারাক ব্যাখ্যা করেন সেলিম। তিনি বলেন, আমরা বামপন্থীরা ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের নীতিতে চলি। আর দক্ষিণপন্থীরা ক্ষমতার কেন্দ্রীভবন করে। ১৯৭৭ সালে বামফ্রন্ট সরকারে এসে ক্ষমতার বিকেন্দ্রীকরণের লক্ষ্যে পঞ্চায়েত ব্যবস্থা গড়ে তোলে। খেতমজুর, কৃষক, গরিব প্রান্তিক মানুষের হাতে ক্ষমতা তুলে দেওয়া হয়। বামপন্থীরাই গ্রামসভা তৈরি করে যেখানে গ্রামের মানুষই তালিকা তৈরি করে আর্থ সমাজিক মাপকাঠিতে। ঠিক হয় সরকারি পরকল্পের সুবিধা সবার আগে কারা পাবে। 

সেলিম বলেন, সেই পঞ্চায়েত হয়েছে দুই শাসক দলের লুঠ দুর্নীতির আখড়া। পঞ্চায়েত তছনছ করে এখন দুয়ারে সরকার নামে সার্কাস চলছে। আরেকদিকে কেন্দ্রীয় সরকার সেই নোটবন্দী থেকে শুরু করে আঁধার লিঙ্ক, রেশন কার্ড, ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে লিঙ্কের নামে লাইনে দাঁড় করায় মানুষকে। আর মমতার সরকার লাইনে দাঁড় করায় দুয়ারে সরকারের নামে।

সেলিম বলেন, স্বাধীনতার আগে বামপন্থীদের তেভাগা আন্দোলন, জমির আন্দোলন, মজুরি বৃদ্ধির আন্দোলন সহ জমিদারদের বিরুদ্ধে জোরদার লড়াই। লাঙল যার জমি তার,গরীব মানুষকে অধিকার দেওয়ার লড়াই। পঞ্চায়েত ব্যাবস্থার মাধ্যমে পাট্টাদার ভাগচাষীকে তার জমির অধিকার দেওয়া হলো। 

সেলিম বলেন, আমাদের দেশে যুগ যুগ ধরে ধর্মের নামে, স্বাস্থ্যের নামে, মনুসংহিতার নামে, জাতপাতের নামে, ক্ষমতার দম্ভে, অর্থনৈতিক ও সামাজিক বৈষম্যের কারণে শিক্ষাকে কুক্ষিগত করে রাখার নীতি নিয়ে চলা হয়। আমরাই অবৈতনিক শিক্ষা ব্যবস্থা চালু করে ছিলাম। জনশিক্ষা ও মৌলিক শিক্ষার কর্মসূচি বাস্তবায়িত করার কর্মসূচি নিয়েছিলাম। 

সুশান্ত ঘোষ বলেন, তৃণমূলের পায়ের তলার মাটি সরে গেছে। এখন গ্রামের মানুষও তৃণমূল কে চোর বলে প্রকাশ্যে। ওরা ভয় পেয়ে পিংলায় সমাবেশ বানচাল করতে হামলা করে। রমজান মাসে সংখ্যালঘু মহিলাদের উপরও হামলা করে। তাতেও সমাবেশ সফল হয়েছে রবিবার। আক্রান্ত এরিয়া কমিটির সদস্য রীনা বিবি সারা শরীর জুড়ে কালচে আঘাতের দাগ সহ মাথায় সেলাই, হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা অবস্থায়  আগামী নির্বাচনে রসদ নিতে সভায় হাজির হয়েছেন উল্লেখ করে সংগ্রামী অভিনন্দন জানান। রক্তাক্ত হয়েও এবারে আর মাটি না ছাড়ার মনোভাব রয়েছে। সারা জেলায় সেই মনোভাবেই লড়াই চলবে। 

Comments :0

Login to leave a comment