রাজ্যে শাসক দলের দুর্নীতি ক্রমশ মানুষের চোখের সামনে স্পষ্ট হচ্ছে। একটি জনমত সমীক্ষায় ৬১ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন, তৃণমূল দুর্নীতিগ্রস্ত। তৃণমূল ‘সৎ’ দল, বলেছেন মাত্র ৭ শতাংশ। সততার প্রশ্নে রাজ্যের সব রাজনৈতিক দলগুলি থেকে অনেক এগিয়ে সিপিআই(এম)। ৭৯ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন সিপিআই(এম)-ই সবচেয়ে সৎ দল। বিজেপি’র ক্ষেত্রে এই সংখ্যা ১৪ শতাংশ।
‘জনমন’ নামের একটি সংস্থা বেশ কিছু বিষয় নিয়ে দু’দফায় এই সমীক্ষা করেছে। প্রথম দফায় ২০২২-র জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর রাজ্যের ৮জেলায় সমীক্ষা করা হয়। দ্বিতীয় দফায় আরও ১০ জেলায় সমীক্ষা করা হয়েছে ২০২২-এর নভেম্বর থেকে জানুয়ারির ২৪ তারিখ পর্যন্ত।
সমীক্ষায় দেখা যাচ্ছে, পঞ্চায়েতে দুর্নীতি হচ্ছে। ৫৪ শতাংশ উত্তরদাতা বলেছেন দুর্নীতি হচ্ছে। প্রচুর পরিমাণে দুর্নীতি হচ্ছে বলে মত প্রকাশ করেছেন ৩৬ শতাংশ। ২৪ শতাংশ মানুষ বলেছেন, স্বজনপোষণ হচ্ছে। পঞ্চায়েতের কাজে সমস্যা রয়েছে বলে মত দিয়েছেন ৭৮ শতাংশ মানুষই। তাঁদের মধ্যে ৪২ শতাংশ দায়ী করেছেন পঞ্চায়েত প্রধানকে। পঞ্চায়েতের কিছু কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন আরও ২৬ শতাংশ। রাজ্য সরকারকে দায়ী করেছেন ১০ শতাংশ। বিশ্লেষকদের ধারণা, গ্রামের মানুষ সরাসরি দুর্নীতি ও স্বজনপোষণ, অকর্মন্যতা দেখতে পান পঞ্চায়েতের নির্বাচিত সদস্যদের কাজেই। কাজেই, তাঁদেরই দায়ী করছেন তাঁরা।
গ্রামের মানুষের বড় ক্ষোভ ১০০ দিনের কাজ নিয়ে। ৬৪ শতাংশ উত্তরদাতাই ক্ষুব্ধ। ৩১ শতাংশ জানিয়েছেন কাজ পাওয়া যায় না। ১৯ শতাংশ বলেছেন, টাকা পাওয়া যায় না। পেলেও অনিয়মিত কাজ পাওয়া যায়, বলেছেন ১৪ শতাংশ।
গ্রামে যে কাজ মেলে না, সেই প্রবণতাও স্পষ্ট। কাজের সন্ধান কোথায়, এর উত্তরে ৬১ শতাংশই জানিয়েছেন গ্রামের বাইরে গিয়ে কাজ খুঁজতে হয়। এর মধ্যে ৩৩ শতাংশ বলেছেন, অন্য রাজ্যে পরিযায়ী হিসাবে কাজ পেতে হয়। গ্রামের বাইরে কিন্তু রাজ্যের মধ্যেই অন্য কোথাও যেতে হচ্ছে ২৮ শতাংশকে। সরকারি সাহায্যই একমাত্র গতি, এমন উত্তরদাতাও ৭ শতাংশ।
ফসলের দাম নিয়ে ৬৯ শতাংশ ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। ২৮ শতাংশ বলেছেন, ফসলের ন্যায্য দাম পাওয়া যাচ্ছে না এবং এর জন্য রাজ্য সরকার দায়ী। ২০ শতাংশ বলেছেন, দাম পাওয়া যাচ্ছে না, এর জন্য ফড়েরা দায়ী। আরও ২১ শতাংশ বলেছেন তাঁরা দাম পাচ্ছেন না কিন্তু ঠিক কী কারণে পাচ্ছেন না তা অজানা।
প্রশ্ন ছিল শাসক দলের দুর্নীতির প্রভাব কি নির্বাচনে পড়বে? সমীক্ষক সংস্থা জানাচ্ছে, ৬৮ শতাংশ বলছেন হ্যাঁ, পড়বে। ৩৪ শতাংশ বলেছেন, যথেষ্ট প্রভাব পড়বে, তৃণমূল হেরেও যেতে পারে। আরও ৩৪ শতাংশ বলেছেন, দুর্নীতির খানিকটা প্রভাব পড়বে, তৃণমূলের ভোট কমবে। বিশ্লেষকরা বলছেন, গত কয়েক বছরে বড় বড় দুর্নীতি সত্ত্বেও নির্বাচনে তার প্রত্যক্ষ প্রভাব তেমন দেখা যায়নি। ফলে ধরে নেওয়া হচ্ছিল দুর্নীতি নির্বাচনে ইস্যু হয় না। এই পরিস্থিতির পরিবর্তন ঘটছে।
রাজনৈতিক বিন্যাসের প্রশ্নেও লক্ষণীয় পরিবর্তন এসেছে। প্রশ্ন ছিল, কোন বিরোধী দল তৃণমূলকে লড়াই দিতে পারে? উত্তরে ৬৪ শতাংশ বলেছেন সিপিআই(এম)। সেখানে বিজেপি’র নাম করেছেন ৩১ শতাংশ। অর্থাৎ তৃণমূলের প্রধান প্রতিপক্ষ হিসাবে সিপিআই(এম)-কে চিহ্নিত করছেন অনেক বেশি মানুষ। বিজেপি’র তুলনায় দু’গুণ। তারই প্রতিফলন পড়েছে সমর্থনের হারে (পরিভাষায় অ্যাপ্রুভাল রেট)। সিপিআই(এম)’র ক্ষেত্রে এই হার জানুয়ারির তৃতীয় সপ্তাহে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩৫ শতাংশ। রাজ্যে সাম্প্রতিক নির্বাচনগুলির ফলের বিচারে এই বৃদ্ধি খুবই লক্ষণীয়। অন্যদিকে, বিজেপি’র ক্ষেত্রে এই হার ১৭ শতাংশ।
Comments :0