লুট চলবে না যদি ঝুট না বলে। আর ঝুট চলবে না যদি না মানুষকে ভাগ করা যায়। এই হচ্ছে ভাগাভাগির মন্ত্র। লুট-ঝুট রাজনীতিকে হারাতে হবে নিজেদের জন্য। তার জন্য খেটে খাওয়া সব মানুষকে একজোট করার কাজ করছে সিপিআই(এম) এবং বামপন্থীরা।
বৃহস্পতিবার কোচবিহারে বিশাল সমাবেশে লড়াইকে এই ভাষাতেই ব্যাখ্যা করেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। শহরের দু’প্রান্ত থেকে মিছিল এসে ভরিয়ে দিয়েছে রাসমেলা ময়দানের মাঠ।
সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য মহম্মদ সেলিম বলেছেন, ‘‘তৃণমূলকে সহয়তার খুঁজতে ছুটতে হচ্ছে আরএসএস’র কাছে, বিজেপি’র কাছে। বৈঠক করতে হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রীর সঙ্গে। কেন? সোনা, বালি, কয়লা, গরু পাচারের থেকে বাঁচতে। আদালতে গিয়েছেন স্বস্তি পাননি। এখন বলছেন রক্ষাকবচ। কিন্তু মানুষ এসব আর মেনে নেবেন না।’’
তিনি বলেছেন, ‘‘ইসলামপুরে লড়াই ছিল শিক্ষক নিয়োগ নিয়ে। সেই লড়াইকে স্কুল বনাম মাদ্রাসা, বাংলা বনাম উর্দুর লড়াইয়ে পরিণত করল বিজেপি। নিহত হয়েছিল দুই ছাত্র তাপস ও রাজেশ। তাদের পরিবারকে নিয়ে প্রচার করল। লোকসভা ভোট চলে গেল। চুপ রাজ্যের সিআইডি, কেন্দ্রের বিজেপি। মাঝখান থেকে হিন্দু-মুসলিম বিভাজন হয়ে গেল।’’
সিপিআই(এম)’র ভূমিকা ব্যাখ্যা করে তিনি বলেন, ‘‘বাংলাভাষীদের ওরা বলছে বাংলাদেশি, এখন বলছে রোহিঙ্গা। এ রাজ্যের মানুষ অন্য রাজ্যে গেলে তাঁদের আক্রমণের মুখে ফেলার চেষ্টা হচ্ছে। ওরা দেশের সর্বত্র বুলডোজার নামাতে চাইছে। বুলডোজার রুখতে সামনে বাধা হয়েছিলেন সিপিআই(এম) পলিট ব্যুরো সদস্য বৃন্দা কারাত। বাধা হয়েছে সিপিআই(এম)। বুলডোজার রাজনীতি রুখতে হবে সকলে মিলে। হিন্দু-মুসলিম, সাঁওতাল-রাজবংশী, উত্তর-দক্ষিণ সবাই একজোটে। মেহনতীকে নিয়ে একজোটে সেই লড়াই-ই করছে সিপিআই(এম)।’’
তার ফল কী হলো? নাড্ডার বক্তব্যকে খারিজ করে বাস্তব তুলে দেখান সেলিম। তিনি বলেন, ‘‘বিজেপি ভোটে জিতে সরকার করল। চুরি-দুর্নীতি আরও বেড়ে গেল। আর মমতা ব্যানার্জি বিজেপি’র সঙ্গে লড়াইয়ের কথা বলছেন। অথচ মেঘালয়, ত্রিপুরা সর্বত্র বিজেপি বিরোধী ভোট ভাঙার কাজ চালাচ্ছেন।’’
এদিনই আলিপুরদুয়ারে সভা করেছেন মমতা ব্যানার্জি। সরকারি প্রকল্পের হকের টাকা দেওয়ার কথা বলে বিভিন্ন এলাকা থেকে গরিব মানুষকে মুখ্যমন্ত্রীর অনুষ্ঠানে আসতে বাধ্য করা হয়। মমতা বলেছেন, অসুবিধা কেবল দেখছেন। এতগুলি মানুষ যে টাকা পেল সেটা দেখছেন না।
এদিনই নদীয়ার বেথুয়াডহরিতে জনসভা করেছেন বিজেপি’র জাতীয় সভাপতি জেপি সভাপতি। তিনি আবার তৃণমূলের চুরি নিয়ে প্রশ্ন তুলে সাজা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। দোষীদের সাজা না দিয়ে গরিব মানুষের একশো দিনের মজুরি কেন্দ্র বন্ধ করল কেন, সে বিষয় আগাগোড়া এড়িয়েছেন নাড্ডা।
কোচবিহারে সমাবেশের মঞ্চ থেকে তৃণমূল এবং বিজেপি’র রাজনীতিকে কড়া আক্রমণ করেছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। তৃণমূলের দুর্নীতি, স্বৈরাচার, পঞ্চায়েতকে তছনছ করে দেওয়ার প্রতিবাদে সোচ্চার হয়েছেন সিপিআই(এম) নেতৃবৃন্দ। একই সুরে সরব হয়েছে বিজেপি’র লুট, বিভাজনের রাজনীতির বিরুদ্ধেও। জনসভায় এদিন বক্তব্য রেখেছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলী সদস্য জীবেশ সরকার, কেন্দ্রীয় কমিটি সদস্য দেবলীনা হেমব্রম, কোচবিহার জেলা সম্পাদক অনন্ত রায়ও। তৃণমূলের লুটের পাশাপাশি বিজেপি’র বিভাজনের রাজনীতিকে হারানোর জন্য লড়াইকে জোরদার করার কথা বলেছেন তাঁরা।
হেমব্রম বলেছেন, ‘‘আমাদের দাবি ২০০ দিন কাজ। অথচ কাজের মজুরি দিচ্ছে না। কেন্দ্রের বিজেপি বলছে টাকা পাঠিয়েছি। রাজ্যের তৃণমূল বলছে টাকা পাইনি। আমরা জানতে চাই যাঁরা কাজ করলেন তাঁরা মজুরির টাকা পাবেন কবে। আজকে উত্তরবঙ্গকে ভাগ করে আলাদা রাজ্যের কথা তোলা হচ্ছে। রাজ্য ভাগ হলে গরিব খেটে খাওয়া মানুষ কোন বাড়তি সুবিধা পাবেন? আসল সমস্যা মানুষের রোজগার, কাজের। রুজি-রুটির সমস্যা মেটাতে পারছে না বলে ভাগাভাগির রাজনীতি করছে। আদিবাসীর যা চাহিদা আরেকজন গরিব মানুষেরও তো একই চাহিদা। ওরা চাইছে ভাগাভাগি হোক, তা’হলে যুবকরা কাজ খুঁজবে না, কৃষকরা ফসলের দাম খুঁজবে না।’’
জীবেশ সরকার বলেছেন, ‘‘এরা রবীন্দ্রনাথ আর নজরুলকে আলাদা করতে চাইছে। আর গরিব মানুষকে একজোট করে লড়াই করে সিপিআই(এম)। সরকারি প্রকল্পে অবাধ দুর্নীতি, আবাসের টাকা বড় দালানের মালিককে দেওয়া, পঞ্চায়েত ব্যবস্থাকে ভেঙে ফেলার রাজনীতির কড়া সমালোচনা করেছেন তিনি।’’
অনন্ত রায় তাঁর ভাষণে জানিয়েছেন সমাবেশে মানুষ যাতে আসতে না পারে তার জন্য সক্রিয় ভূমিকা নিয়েছে তৃণমূলের প্রশাসন। বাস ভাড়া করতে দেওয়া হয়নি। বাধা পেরিয়ে এসেছেন মানুষ।
Comments :0