আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার পতনকাণ্ডে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত দাবি করল সিপিআই(এম)।
রবিবার পার্টির সাধারণ সম্পাদক সীতারাম ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘কোটি কোটি দেশবাসীর সম্পদ সুরক্ষিত রাখার প্রশ্ন এখানে জড়িত। রিজার্ভ ব্যাঙ্ক এবং সেবি’কে তদন্ত করতে হবে। সেই সঙ্গে উচ্চ পর্যায়ের কমিটি গড়ে তদন্তের করতে হবে কেন্দ্রকে। তদন্তে নজরদারি করতে হবে সুপ্রিম কোর্টকে।’’
এদিন কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠকের মাঝে কলকাতায় মুজফ্ফর আহমদ ভবনে সাংবাদিক সম্মেলনে ইয়েচুরির সঙ্গে ছিলেন সিপিআই(এম) পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিমও। কেন্দ্রীয় কমিটি বৈঠক শেষ হবে সোমবার। ওই দিন সমাবেশও রয়েছে।
এই কমিটি কী করবে? ইয়েচুরির ব্যাখ্যা, ‘‘দেশের কোন কোন আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কত অর্থ এমন বিপজ্জনক বিনিয়োগে রাখা হয়েছে খুঁজে বের করতে হবে। দায় রয়েছে দেশের অর্থ মন্ত্রক, বিদেশ মন্ত্রক, বাণিজ্য মন্ত্রকেরও। তাদের প্রতিনিধিদের রাখতে হবে কমিটিতে।’’
সিপিআই(এম)’র দাবি, সেই সঙ্গে এই কমিটিকে জানাতে হবে সরকার কী পদক্ষেপ নেবে যাতে দেশের মানুষের অর্থ, তাঁদের সঞ্চয় সুরক্ষিত থাকে। ইয়েচুরি বলেন, ‘‘সময় বেঁধে তদন্ত করতে হবে। সংসদের বাজেট অধিবেশন শেষ হওয়ার আগেই পেশ করতে হবে রিপোর্ট।’’
৩১ জানুয়ারি শুরু হচ্ছে সংসদের বাজেট অধিবেশন। ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘গত কয়েক বছরে দেশের ব্যাঙ্কের টাকা জালিয়াতি করে বিদেশ পালানো ব্যবসায়ীর সারি দেখা গিয়েছে। সেই তালিকায় আরেকটি নাম যেন যুক্ত না হয় দেখতে হবে কেন্দ্রকে।
আদানি গোষ্ঠীর বিভিন্ন সংস্থায় বিনিয়োগ করেছে রাষ্ট্রায়ত্ত বিমা সংস্থা এলআইসি। বিভিন্ন প্রকল্পে বিনিয়োগের জন্য ঋণ দিয়েছে স্টেট ব্যাঙ্কের মতো রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্ক। মানুষের সঞ্চয়ে আদানির সম্পদ বেড়েছে। দেশের ব্যাঙ্ক ব্যবস্থার নিয়ন্ত্রক রিজার্ভ ব্যাঙ্ক। ‘সেবি’ দেশের শেয়ার বাজারের নিয়ামক। দেশবাসীর মধ্যে শঙ্কা সত্ত্বেও দুই প্রতিষ্ঠানের কোনোটিই তদন্তে নামার ইচ্ছা জানায়নি।
ইয়েচুরি জানিয়েছেন যে এই পর্বে সিপিআই(এম)’র সবচেয়ে বড় উদ্বেগ মানুষের সঞ্চয় রক্ষা করা। তিনি বলেছেন, ‘‘শেয়ারের দাম পড়ে যাওয়ায় কেবল আদানির সম্পদের মূল্য কমছে না। দেশবাসীর সঞ্চয় বিপন্ন হয়ে পড়ছে। এলআইসি বা স্টেট ব্যাঙ্কে মানুষের জীবনভর উপার্জনের থেকে সঞ্চয় রয়েছে। সঞ্চয় বরবাদ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। ফলে সরকারকে ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই।’’
বিশেষ করে নরেন্দ্র মোদীর প্রধানমন্ত্রিত্বের মেয়াদে সম্পদ লাফিয়ে বেড়েছে আদানি গোষ্ঠীর। রাষ্ট্রায়ত্ত বন্দর থেকে বিমানবন্দর তুলে দেওয়া হয়েছে এই গোষ্ঠীর হাতে। হিন্ডেনবার্গ রিসার্চের যে রিপোর্ট আদানির গরমিলের হিসেব দিয়েছে তাতে বলা হয়েছে যে কারচুপি করে শেয়ারের দর বাড়িয়েছে আদানি গোষ্ঠী। বিদেশী আর্থিক সংস্থা এবং মার্কিন বন্ডে সম্পদ লেনদেন করেছে এই গোষ্ঠী। সেই লেনদেন স্বচ্ছ নয়।
ইয়েচুরি বলেন, ‘‘কেন্দ্রের এই বিজেপি সরকারের নীতিই হলো ধান্দার ধনতন্ত্রকে সুরক্ষিত করা। আদানি গোষ্ঠীই একমাত্র নয়। কিন্তু সরকারি সহায়তায় এই গোষ্ঠীর উত্থান চোখে পড়ার মতো। পরিকাঠামো ক্ষেত্রে সব প্রায় এদের হাতে। প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আদানির সম্পর্কও দেশবাসী জানেন। আদানির নিজস্ব জেটে নরেন্দ্র মোদীর ভ্রমণের ছবি সংবাদমাধ্যমেও প্রকাশিত। এই সংযোগে আসলে দেশের মানুষের সম্পদের লুট হচ্ছে। এটাই সবচেয়ে বেশি চিন্তার।’’
কর্পোরেট-হিন্দুত্ব জোট প্রসঙ্গে কর্পোরেট বন্ডে গোপন লেনদেনের তথ্য সামনে আনার দাবি ফের জানান ইয়েচুরি। রাজনৈতিক দলের নির্বাচনী তহবিলে দেওয়ার এই ব্যবস্থায় ৮০ শতাংশ টাকা পাচ্ছে বিজেপি। এ রাজ্যে তৃণমূলের তহবিলেও বিপুল আয় কর্পোরেট বন্ড থেকে।
ইয়েচুরি বলেছেন, ‘‘নিজেদের সম্পদ লুট ঠেকানোর দাবি তোলার অধিকার দেশবাসীর রয়েছে। দেশের আরও নিঃস্বায়ন ঠেকানোর অধিকার রয়েছে। দেশবাসী একজোটে সেই দাবি তুলবেন।’’
Comments :0