Editorial

বিকশিত ভারতে অব্যাহত লুট

সম্পাদকীয় বিভাগ

সরকার এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ৫০ টাকা বাড়িয়েছে। কেন্দ্রীয় পেট্রোলিয়াম মন্ত্রী হরদীপ পুরীর বক্তব্য, তেল বিপণন সংস্থাগুলির ৪৩,০০০ কোটি টাকার ক্ষতি হচ্ছিল, তাই নাকি এই মূল্যবৃদ্ধি। এছাড়াও পেট্রোলের উপর আবগারি শুল্ক লিটার প্রতি বাড়িয়ে ১৩ টাকা এবং ডিজেলের উপর লিটার প্রতি বাড়িয়ে ১০ টাকা বৃদ্ধি করা হয়েছে, তবে এর কোনও প্রভাব তেলের দামে পড়বে না বলেই তাঁর দাবি। পেট্রোলিয়াম মন্ত্রীর যুক্তি, আন্তর্জাতিক বাজারে গত কয়েক বছরে গ্যাসের দাম ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়া সত্ত্বেও তেল বিপণন সংস্থাগুলি (ওএমসি) এলপিজি সিলিন্ডার লোকসানে বিক্রি করেছে, তাই তাদের ক্ষতিপূরণের লক্ষ্যেই নাকি বৃদ্ধি করা হয়েছে। উল্লেখ্য, ভারত এলপিজি ব্যবহারের ৬০% এরও বেশি আমদানি করে। অর্থাৎ দেশে এলপিজি’র দাম মূলত আন্তর্জাতিক বাজারের দামের সাথে যুক্ত। মন্ত্রীর কথায়, গড় সৌদি চুক্তি মূল্য (এলপিজি মূল্যের আন্তর্জাতিক মানদণ্ড) ৬৩% বৃদ্ধি পেয়েছে গত ২০২৩ জুলাইয়ের তুলনায় ফেব্রুয়ারি ২০২৫ সালে। প্রতি মেট্রিক টন $৩৮৫ থেকে দাম বেড়ে হয়েছে $৬২৯।  মন্ত্রী মশাইয়ের কি স্মরণে আছে, জানুয়ারি ২০১৪ সালে বিজেপি ক্ষমতায় আসার আগে ভরতুকিযুক্ত গার্হস্থ্য এলপিজি সিলিন্ডারের দাম ছিল ৪১৪ টাকা? সেই সময়ে অর্থাৎ মার্চ ২০১৪ প্রোপেনের (গ্যাস) দাম ছিল টন প্রতি $৮৫৫ এবং বিউটেনের দাম ছিল টন প্রতি $৯৭০। সেই সময়ের তুলনায় আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের গড় দাম কমেছে টন প্রতি $২৩৩.৫, কিন্তু দেশের বাজারে মোদীজি’র বিকাশের গুণে গ্যাসের দাম বেড়েছে ৪৬৫ টাকা।  উল্লেখ্য, ‘টন’ হল ৯০৭.১৮ কিলোগ্রাম এবং ‘মেট্রিক টন’ ১,০০০ কিলোগ্রাম, মাত্র ৯৩ গ্রামের তফাৎ। মন্ত্রী মশাই যুক্তি দেখিয়েছেন, ৪৩ হাজার কোটি টাকা তেল কোম্পানিগুলোর ক্ষতি হচ্ছে, তাই এই শুল্ক বৃদ্ধি। অথচ ২০২৪ সালের এপ্রিল-ডিসেম্বর, এই ৯ মাসে ইন্ডিয়ান অয়েল কোম্পানির নিট মুনাফা ছিল ৫,৬৯৭ কোটি টাকা। আর একটি রাষ্ট্রায়ত্ত সংস্থা হিন্দুস্তান পেট্রোলিয়াম কর্পোরেশন লিমিটেড ২০২৪-২৫ অর্থিক বছরের তৃতীয় ত্রৈমাসিকে (অক্টোবর-ডিসেম্বর) ২,৫৪৩.৬৫ কোটি টাকা নিট মুনাফা করেছে, যা আগের বছরের একই সময়ের মুনাফার তুলনায় ৭১২.৮৪ কোটি টাকা বেশি। তাহলে ৪৩.০০০ কোটি লোকসানের গল্পটা কি আদৌ বিশ্বাসযোগ্য? 
একইভাবে আন্তর্জাতিক বাজারে ২০১৩ সালে অপরিশোধিত তেলের দাম ছিল ব্যারল প্রতি $১০৮, যা ২০১৪ সালে ছিল $৯৮.৯৭। সেই সময়ে দেশে পেট্রোলের দাম ছিল লিটার প্রতি ৭১.১৩ টাকা এবং ডিজেল ৫৪.৫৯ টাকা। ৮ এপ্রিল, ২০২৫ কলকাতায় পেট্রোলের দাম লিটার প্রতি ১০৫.০১ টাকা এবং ডিজেলের দাম ৯১.৮২ টাকা। অথচ এই মুহুর্তে অপরিশোধিত তেলের আন্তর্জাতিক মূল্য ‘ব্রেন্ট’ অনুযায়ী $৭৪.৩৩। এর অর্থ, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের মূল্য কমলো $২৪.৬৪, কিন্তু দেশের বাজারে পেট্রোলের দাম বাড়ল ৩৩.৮৮টাকা এবং ডিজেলের ৩৭.২৩ টাকা। নতুন শুল্ক বৃদ্ধির ফলে এখন লিটার প্রতি পেট্রোলের পণ্যমূল্য ৫৩.০৯ টাকা, আর বাকি ৫১.৯২ টাকা নানা ধরনের শুল্ক, সেস যা কেন্দ্রীয় সরকার আর রাজ্য সরকারগুলো চাপিয়েছে। একইভাবে ডিজেলের পণ্যমূল্য ৫৪.০৩ টাকা আর বাকি ৩৭.৭৯ টাকা আরোপিত নানা ধরনের শুল্ক, সেস। ২০১৪ সালে বিজেপি যখন ক্ষমতায় আসে সেই সময়ে পেট্রোলের উপর শুল্ক ছিল প্রতি লিটারে ৯.৪৮ টাকা এবং ডিজেলের উপর ৩.৫৬ টাকা, এখন সেটাই বেড়ে দাঁড়ালো ৫১.৯২ টাকা এবং ৩৭.৭৯ টাকা। সরকারি তথ্য অনুযায়ী ২০২৪-২৫ আর্থিক বছরে এই বাবদ কেন্দ্রীয় সরকারের আয় ২,৯১,৪৮২.২ কোটি টাকা আর সবকটি রাজ্য সম্মিলিতভাবে আয় করেছে ২,৩৫,৩৩২.৫ কোটি টাকা। শুধুমাত্র এই ক্ষেত্র থেকে মানুষের পকেট কেটে আদায় করা হচ্ছে ৫,২৬,৮১৪.৩ কোটি টাকা। কত বোকা বানাবেন মোদীজি দেশের মানুষকে? আর কত লুট হবে মোদীজি’র বিকশিত ভারতে

Comments :0

Login to leave a comment