CPI(M) EDUCATION SURVEY

শিক্ষা সমীক্ষা সিপিআই(এম)’র,
স্কুলছুট ৪০ শতাংশ ছাড়িয়ে

রাজ্য

নদীয়ার স্কুলে ছাত্ররা আসছে না। চলে যাচ্ছে কোথায়? খোঁজ নিয়ে দেখা গেল কীর্তনের দলের সঙ্গে জুড়ে গিয়েছে। টুকরো কাজ, পরিবারে কিছু পয়সা দেওয়ার জন্য। 

ধীরে ধীরে ড্রপ আউটের দিকে কী চলে যাচ্ছে এই ছাত্ররা?

উত্তর ২৪ পরগনার অশোকনগরের আরেকটি স্কুল। ড্রপ আউটের তালিকায় ৭ ছাত্রী। কোথায় তাঁরা। ফের খোঁজ। এবার জানা গেল ৭ ছাত্রীরই বিয়ে হয়েছে, নাবালিকা হয়েও। 

তা’হলে ‘কন্যাশ্রী’ প্রকল্প কেন ব্যর্থ হচ্ছে?

এমন খোঁজ নিতে রাজ্যের শিক্ষা ব্যবস্থা নিয়ে সমীক্ষা চালালো সিপিআই(এম)। পূর্বতন বামফ্রন্ট সরকারের সময়ে বেড়ে গিয়েছিল স্কুল। বাড়ছিল প্রতি বছর মাধ্যমিকের পরীক্ষার্থী। 

ঠিক উলটো ছবি এখন। প্রায় ৭ হাজার প্রাথমিক স্কুল এখন বন্ধ। আরও ৮ হাজারের কিছু বেশি স্কুল বন্ধের তালিকায়। 

শনিবার সাংবাদিক সম্মেলন করে এই বিশদ ছবি প্রকাশ করলেন সিপিআই(এম) কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী। তিনি বলেছেন, ‘‘সমীক্ষা করুক সরকার। সমীক্ষা করুন ‘প্রতীচী’ বা অন্য গবেষণা প্রতিষ্ঠানও। মাধ্যমিকে ৪ লক্ষ ছাত্রছাত্রী কমে গেল রাজ্যে। রাজনৈতিক বিরোধিতার বিষয় নয়। উদ্বেগ এই কারণে যে একটা প্রজন্মকে শেষ করে দেওয়া হচ্ছে।’’

 

সিপিআই(এম) সমীক্ষা চালিয়েছে রাজ্যের বিভিন্ন জেলায়। যে প্রাথমিক স্কুলগুলিকে বন্ধ করা হচ্ছে, জেলাভিত্তিক সংখ্যায়, তার মধ্যে সবচেয়ে আগে রয়েছে বাঁকুড়া, পুরুলিয়া, দার্জিলিঙ, পশ্চিম মেদিনীপুর, দুই চব্বিশ পরগনা। চক্রবর্তী বলেছেন, ‘‘জঙ্গলমহল, পাহাড় এবং সুন্দরবন- আর্থিক বিচারে সবচেয়ে প্রান্তিক এলাকাতেই বন্ধ হচ্ছে স্কুল। সরকারি যুক্তি হলো ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা এই সব স্কুলে ৩০’র কম। প্রশ্ন হলো ছাত্রছাত্রী কমছে কেন? বামফ্রন্টের সময়ে এই এলাকাগুলিতেই তো বাড়ছিল ছাত্রছাত্রীর সংখ্যা। দ্বিতীয় প্রশ্ন হলো, রাজ্য বা রাষ্ট্র কী জনকল্যাণের দায়িত্ব থেকে, গণতান্ত্রিক দায়িত্ব থেকে হাত গুটিয়ে নিতে পারে?’’

সিপিআই(এম)’র পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য চক্রবর্তীর ক্ষোভ, ‘‘প্রমোটারের হাতে তুলে দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে স্কুলের জমি। আইন পালটে লিজের বদলে ফ্রি হোল্ড করার ব্যবস্থা এই জন্যই।’’ 

সিপিআই(এম) ডিজিটাল একের পর এক স্লাইডে তুলে ধরেছে তথ্য। এ রাজ্যেই সাড়ে তিন লক্ষ শূন্যপদ, শিক্ষক এবং শিক্ষাকর্মীর। তার মধ্যে প্রাথমিকেই দেড় লক্ষ।  সমীক্ষা জানাচ্ছে, ৭০ শতাংশ ছাত্রছাত্রীদের স্কুলে না আসার কারণ অর্থনৈতিক। ৩০ শতাংশের জন্য দায়ী ‘অনীহা’। কেন অনীহা?

সমীক্ষা বলছে, একাধিক কারণ রয়েছে স্কুলে গিয়ে দেখছে শিক্ষক নেই। শিক্ষকরা পড়াতে পারছেন না। পড়ানোর বাইরে একগুচ্ছ কাজের দায়িত্ব চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে শিক্ষকদের ওপর। তার ওপর কাজের অভাবের সামাজিক প্রভাব রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে মানসিকতা এমন যে ‘কাজ তো পাবো না, তা’হলে পড়াশোনা করে হবে কী।’ অভিভাবকরা স্কুল কমিটিতে নেই, বসে তৃণমূল নেতারা। গণতন্ত্র না থাকায় স্কুল পরিচালনায় যুক্ত থাকছেন না অভিভাবকরা।

চক্রবর্তী বলছেন, ‘‘স্কুলে ভর্তি হওয়ার পর মাধ্যমিকে পর্যন্ত না পৌঁছানো ছাত্রছাত্রী বা স্কুলছুট প্রায় ৪২ শতাংশ। বড় বিপদের মুখে আমরা।’’ 

এসএফআই রাজ্য সম্পাদক সৃজন ভট্টাচার্যকে প্রশ্ন করা হলে তাঁর প্রতিক্রিয়া, ‘‘বেহাল অবস্থা অনুমান করেই আমরা কোভিডের সময় বিকল্প পাঠশালা চালু করেছিলা। শিক্ষায় বিকল্প রূপরেখাও হাজির করতে চেষ্টা করেছি। কিন্তু রাজ্য চোখ বুঁজেই রয়েছে। রাজ্যের অগ্রাধিকারে শিক্ষা নেই। সে জন্যই আমরা ১০ মার্চ বিধানসভা অভিযানের ডাক দিয়েছি।’’

Comments :0

Login to leave a comment