প্রতীম দে
রাজস্থান দেশের মানচিত্রে সম্পন্ন রাজ্য নয়। সে রাজ্যেও ৪ শতাংশ বেড়েছে মাহার্ঘভাতা, ডিএ। রাজস্থানে সরকারি কর্মচারী, শিক্ষকদের মহার্ঘভাতা ৪২ শতাংশ। আর পশ্চিমবঙ্গে মহার্ঘ ভাতার হার ৬ শতাংশ!
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ডিএ’র দাবিতে আন্দোলনরত সরকারি কর্মচারী, শিক্ষকদের বলছেন ‘চোর ডাকাত’। বুধবার নিজের ধরনা মঞ্চে এমনই মারাত্মক মন্তব্য রাজ্যের প্রশাসনিক প্রধানের। পাশেই ধরনায় রাজ্য সরকারি কর্মচারীরা। বৃহস্পতিবারই বিপুল জমায়েতে জবাব দিয়েছেন কর্মচারীরা।
শহীদ মিনারের সামনে ধর্মতলায় বৃহস্পতিবার কর্মচারী, শিক্ষকদের সমাবেশ সরবে জানিয়ে দিয়েছে মহার্ঘভাতা অধিকার। অধিকারের দাবিতে চলবে লড়াই। এদিন সমাবেশে যোগ দিয়েছেন সিপিআই(এম) রাজ্য সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, পার্টির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী, সিপিআই(এম) সাংসদ এবং আইনজীবী বিকাশ ভট্টাচার্য।
সমাবেশে বক্তব্য রেখেছেন সেলিম। আন্দোলনে আন্তরিক সংহতি জানিয়েছেন। এই আন্দোলন কেবল ডিএ’র দাবিতে চলছে না। প্রায় সাড়ে ৬ লক্ষ রাজ্য সরকারি শূন্যপদে স্বচ্ছ নিয়োগেরও দাবি তুলছে।
১০ মার্চ ধর্মঘট করেছেন একজোটে কর্মচারী, শিক্ষকরা। বৃহস্পতিবারও সুবোধ মল্লিক স্কোয়ার থেকে রানী রাসমণি রোড মিছিল করেছেন প্রাথমিক এবং মাধ্যমিক শিক্ষকরা। তুলেছেন শিক্ষা প্রশাসনে স্বচ্ছ গণতান্ত্রিক কাঠামো ফিরিয়ে আনার দাবিও।
সেলিম মঙ্গলবারই বলেছিলেন যে কর্মচারীদের ভয় দেখাতে শহীদ মিনারে সমাবেশ ডেকেছে তৃণমূল। মুখ্যমন্ত্রী নিজেই বুঝিয়েছেন সেই আশঙ্কা কতটা সত্য। অথচ মুখ্যমন্ত্রীর ধরনা আদতে ছিল একশো দিনের কাজে কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের বঞ্চনার প্রতিবাদে। একই দাবিতে বুধবারই মিছিল করেছে বামফ্রন্ট এবং কংগ্রেস। সেই সঙ্গে প্রশ্ন তুলেছে তৃণমূল কংগ্রেসের লাগামছাড়া দুর্নীতিতে রেগা, আবাস যোজনার সুযোগ কেন গরিব মানুষের হাত থেকে কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। বামফ্রন্টের চেয়ারম্যান বিমান বসুর ক্ষোভ, চুরি করছে তৃণমূল। বিজেপি সরকার চোরদের ধরছে না। শাস্তি দিচ্ছে গ্রামের গরিব মানুষকে।
ধরনায় নিজের দলের চুরি সম্পর্কে কোনও ব্যাখ্যা হাজির করেননি মুখ্যমন্ত্রী। কেবল একতরফা দেগে দিয়েছেন সরকারি কর্মচারীদের। ডিএ আটকাতে এর আগে আদালতে কোটি কোটি টাকা খরচ করেছে রাজ্য। এখন সুপ্রিম কোর্টে মোটা খরচে চালাচ্ছে মামলা। অন্য কোনও রাজ্য নিজের কর্মচারীদের ডিএ আটকাতে আদালতের বাইরে ভেতরে লাগাতার যুদ্ধে নেমেছে, এমন ঘটনা সচরাচর দেখা যায় না।
বামপন্থীরা বলেছেন, কেবল ডিএ আটকে রাখা হচ্ছে তা নয়। এ রাজ্যের গরিব গ্রামবাসী রেগায় কাজ করেও মজুরি পাননি। আটকে রাখা হয়েছে আবাস যোজনার টাকাও, গরিবকে না দিয়ে তৃণমূলের তালিকায় থাকা লোকেরা পেয়েছে। আর সরকারি চাকরি, শিক্ষক থেকে পৌরসভায় নিয়োগে, যোগ্য প্রার্থীদের ছুঁড়ে ফেলা হয়েছে। লক্ষ টাকার গুনিতকে ঘুষ নিয়ে চাকরি দেওয়া হয়েছে অযোগ্যদের। মহাজালিয়াতি ধরা পড়েছে আদালতে, রাজ্যবাসীর কাছে। তাই তৃণমূলের একমাত্র কাজ কুৎসা রটানো।
বৃহস্পতিবারের সমাবেশ সেই কুৎসার যোগ্য জবাব দিচ্ছে। দুপুরের রোদে উত্তাপ গায়ে মেখে পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষক, কর্মচারীদের লড়াইয়ে সংহতি জানাচ্ছে জনতা। সমাবেশ তা প্রমাণ করছে।
ছবি: মনোজ আচার্য
Comments :0