পৌরসভার কাজের খামতি ফাঁকা জমি দেখিয়ে ঢাকতে চাইছেন মেয়র। ডেঙ্গুর বাড়বাড়ন্তের বিষয়গুলো দেখতে কলকাতা কর্পোরেশনের তরফে ড্রোন উড়িয়ে দেখা হয়েছে। তাতে নাকি মহানগরের যত্রতত্র ডাই করা আবর্জনার স্তূপ, নিকাশি না হওয়া জমা পচা দুর্গন্ধময় নালা থেকে শুরু করে মশার আঁতুরঘরের হদিশ মেলেনি। মিলেছে মহানগরের কোথায় কতটা ফাঁকা জমি পড়ে আছে! সিন্ডিকেট প্রোমোটিং বাহিনীর কাছে কলকাতার খালি জমির নকসা তুলে দিতেই ফাঁকা জমির বিষয়টি বেশি করে সামনে আনা হচ্ছে না তো- এবার এই প্রশ্ন সামনে আসছে সাধারণ মানুষের।
মেয়রের কথায়, এই সব ফাঁকা জমিতে জঙ্গল, ময়লা আবর্জনাই ডেঙ্গু ছড়াচ্ছে। পৌরসভার কাজের খামতি, সংক্রমণ মোকাবিলায় পরিকল্পনার অভাবকে আড়াল করে মানুষের অসচেতনতা ও ফাঁকা জমিকে নিয়ে মেয়রের বক্তব্যে অভিসন্ধির আঁচ পাচ্ছেন বিরোধী রাজনৈতিক দলের পৌর প্রতিনিধিরা। মহানগরের ডেঙ্গু পরিস্থিতি উদ্বেগজনক নয়, বলছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। সেই তিনিই আবার দলবল নিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতার প্রচারে বের হচ্ছেন বাধ্য হয়ে। যদিও সচেতনতার প্রচার দিয়ে দলীয় প্রচারের দামামাই বেশি বাজানো হচ্ছে, প্রকৃত তথ্যয় আড়াল করে- অভিযোগ বিরোধীদের।
ওদিকে ডেঙ্গু নিয়ে শোরগোল করলে ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষের কড়া ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি রয়েছে। কিন্তু এতসবের পরেও ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে মহানগরের বাসিন্দাদের ক্ষোভকে আটকানো যাচ্ছে না, বরং বাড়ছে।
বামপন্থী কাউন্সিলর মধুছন্দা দেব এই প্রসঙ্গে বলেছেন, আসলে পৌরসভা নিজেদের ব্যর্থতা আড়াল করতে এবং ডেঙ্গু সংক্রমণের বাড়বাড়ন্ত থেকে নজর ঘোরাতেই এধরনের কথা সামনে আনছেন।
তাছাড়াও প্রশ্ন, ফাঁকা জমিতে জঙ্গল আবর্জনা সাফাই করার বিষয়ে কেন দশবছরের বেশি পৌরবোর্ডের দায়িত্বে থাকা তৃণমূল সতর্ক করেননি বাসিন্দাদের? ডেঙ্গু ম্যালেরিয়া নিয়ে পৌরপরিষেবার সঠিক কাজ না করে, টিভি চ্যানেল থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় বিপুল সরকারি খরচে বিজ্ঞাপনের ফিরিস্তি তুলে ধরেই ক্ষান্ত থাকছে পৌরসভা। শুধু এই করে ডেঙ্গু ম্যালেরিয়ার প্রকোপ আটকানো সম্ভব নয় বলেই অভিমত অনেকের। এবিষয়ে বামপন্থী কাউন্সিলর নমিতা রায় ও মধুছন্দা দেবের বক্তব্য, এনিয়ে বছরভর উদ্যোগ নেওয়া দরকার। কলকাতা শহরের একটা বড় অংশই বস্তি এলাকা, বস্তিবাসীদের মধ্যে ধারাবাহিক সচেতনতা গড়ে তোলা, বস্তির নালা নর্দমাগুলো পরিস্কার রাখা, মশার লার্ভা মারার তেল কতটা কার্যকরী তা খেয়াল রাখা এবং সংক্রমণ মোকাবিলায় যেগুলো করণীয় তাতে যথেষ্ট খামতি রয়েছে।
এদিকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি চেপে যাওয়ার আপ্রাণ চেষ্টা করলেও বিরোধী দলের কাউন্সিলরদের চাপে পড়ে ডেঙ্গু নিয়ে সর্বদলীয় বৈঠক করতে রাজি হয়েছেন মেয়র ফিরহাদ হাকিম। ডেঙ্গু পরিস্থিতির বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করে কলকাতা পৌরসভার বোরো অফিসগুলোর সামনে ধারাবাহিক বিক্ষোভ দেখাচ্ছেন বামপন্থী গণসংগঠনের কর্মী সমর্থক। জনস্বাস্থ্য আন্দোলনের কর্মীরা সচেতনতার প্রচার চালানোর পাশাপাশি ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। শুক্রবারও জনস্বাস্থ্য ,বস্তি উন্নয়ন সমিতি ,কলকাতা নাগরিক সম্মেলন সহ বিভিন্ন গণসংগঠনের কর্মীরা বোরো ১০-এর সামনে বিক্ষোভ প্রদর্শন করেন। দ্রুত পরিস্থিতি বদলের আবেদন জানিয়ে ডেপুটেশনও দেওয়া হয় এদিন।
Comments :0