জেলা জুড়ে চলছে সদস্য সংগ্রহের কাজ। এসএফআই হুগলি জেলা কমিটির ডাক দিয়েছে পৌছাতে হবে জেলা প্রতিটি স্কুলের গেটে। লড়াই টা কঠিন তা বলে পিছিয়ে আসার কোন জায়গা নেই। সংগঠনের জেলা সভাপতি ও রাজ্যে সম্পাদক মন্ডলীর সদস্য বাদশা দাস জানায়, ‘সকাল সকাল লড়াইয়ের জেদটা আরও একধাপ এগিয়ে গেল। আজকে আমাদের সদস্য সংগ্রহ অভিযান গোঘাটের সেওড়া অঞ্চল। যেতে যেতে কমরেডদের কাছ থেকে শুনলাম গোটা অঞ্চলে ৭০ এর বেশি শহীদ। অস্বীকার করার জায়গা নেই এই কথা শুনে শিহরিত হয়ে উঠি। পৌঁছালাম সেওড়া পার্টি অফিস, সঙ্গে সাথী ছিলেন নবনীতা চক্রবর্ত্তী, রাহুল সহ গোঘাটের কমরেডরা। শুরু হলো সদস্য সংগ্রহ অভিযান, সেওড়া গ্রামের বাড়ি বাড়ি।
মানুষের কথার মধ্যে দিয়ে তৃণমূলের বিরুদ্ধে ব্যাপক ক্ষোভ উঠে এলো। কেউ বলছেন বাড়িতে শিক্ষিত ছেলে চাকরি না পাওয়ার যন্ত্রণায় বসে আছেন, কেউ বলছেন টাকার অভাবে মেয়েকে পড়াতে পারছি না, আবার কেউ বলছেন আবাস যোজনায় তৃণমূলের নেতা ৫ টা বাড়ি পেলেও, যাদের সত্যি পাওয়ার কথা তারা কেউ পায়নি’। বাদশা দাস আরো বলেন, সদস্য সংগ্রহ করতে করতে পৌঁছে গেলাম দেবড়া হাই স্কুলের প্রয়াত ইংরেজি শিক্ষক লক্ষণ মাইতির বাড়িতে। লক্ষণ মাইতি দারিদ্রতার সাথে লড়াই করতে করতে বামফ্রন্টের সময় নিজের যোগ্যতায় চাকরি পেয়েছিলেন। ২০১২ সালে আকস্মিকভাবে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে লক্ষণ দা মারা যান। তারপর থেকে তৃণমূলের সময় একাধিকবার লক্ষণ দার ভাই স্ত্রী তৃণমূলের মন্ত্রী ব্যাচারাম মান্না, ভাইপো অভিষেক ব্যানার্জিসহ একাধিক তৃণমূল নেতা মন্ত্রীর বাড়িতে গেলেও কেউ তার স্ত্রীর প্রাপ্য চাকরির ব্যবস্থা করে দেয়নি। তাদের অপরাধ তারা বাম সমর্থক।
ছেলেকে হারিয়ে সবদিক থেকে নিঃস্ব হয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লেন লক্ষণদার মা ও ভাই। মায়ের চোখের জল মুছিয়ে বলে এলাম সবাই জান থাকতে শেষ অবধি লড়াই চালাবো আমরা। ওনারা বললেন আমরা বামপন্থী ছিলাম, আছি, থাকবো। মেরুদন্ড বিক্রি করবো না। সেওড়া গ্রাম থেকে সদস্য সংগ্রহ অভিযান করে পৌঁছে গেলাম সেওড়া ইউনিয়ন হাইস্কুলে। ওখানে গিয়ে আর এক নতুন অভিজ্ঞতা হল। যে গোঘাটে ক্যাম্পাসের গেটে সদস্য সংগ্রহ তো দূরের কথা গত ১৩ বছরে স্বাধীনতা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের ঝান্ডা পর্যন্ত লাগাতে দেওয়া হয়নি, সেই গোঘাটের সেওড়া ইউনিয়ন হাইস্কুলে ঝান্ডা কাঁধে স্বতঃস্ফূর্তভাবে সদস্য সংগ্রহ হল। স্কুলের ছাত্ররা কাঁধে তুলে নিল ২৭৮ জন শহীদের রক্তে রাঙানো লাল তারায় সাদা স্বাধীনতা গণতন্ত্র সমাজতন্ত্রের ঝান্ডা।
গত ৬ জানুয়ারি' ২৩ থেকে হুগলী জেলার বিভিন্ন প্রান্তে বিশেষ সদস্যপদ সংগ্রহ অভিযান চলছে। এই সদস্য সংগ্রহ মূলত ক্যাম্পাস এর সামনেই হচ্ছে। এই সদস্য সংগ্রহ অভিযানে গোটা জেলার প্রায় সব আঞ্চলিক কমিটি বিশেষ উদ্যোগ গ্রহণ করেছে।
বিশেষ উল্লেখযোগ্য, গ্রামাঞ্চলে স্কুলের গেটে এই অভিযান ব্যাপক প্রভাব ফেলেছে। সন্ত্রাস কবলিত এলাকাগুলোতে স্কুলের গেটে এই সদস্য সংগ্রহ অভিযান হয় (গোঘাট, তারকেশ্বর, হরিপাল, খানাকুল)। সন্ত্রাস কবলিত এলাকায় নেতৃত্ব রাত্রিবাস করে এই কাজে সহায়তা করেছে।
ওদের জেদ বাড়ছে প্রতিদিন,বিশেষ করে স্কুলের ছাত্র-ছাত্রীরা যখন জেল থেকে যাওয়া নেতৃত্ব দের বলছে ওদের অসুবিধার কথা। বুকে জেদ নিয়ে স্কুলের গেটে দাড়িয়ে ওরা প্রতিদিন বুঝে নিচ্ছে স্বাধীনতা, গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র এর অধিকার।
ওদের কথাই ছিল ভালো রাখার লড়াইতে দেখা হবে পথে। প্রতিনিয়ত চেষ্টা করে চলেছে হুগলী জেলা। চেষ্টাটা করেছে সর্বতোভাবে। করেছে সব্বাই, স্কুলের গেটে বার্তা ছড়িয়ে দেওয়ার প্রত্যয় তৈরি হচ্ছে প্রতি মুহুর্তে। স্কুল আন্দোলনের ব্লু-প্রিন্ট তৈরি করবার প্রয়াস তো তৈরি হতেই হবে। অনেক এলাকায় স্কুলের গেট ভাবনাই শুধু ছিল পৌছনো যায় নি। কিন্তু এই মেম্বারশিপ অভিযানে সন্ত্রাস কবলিত বিভিন্ন এলাকায় পৌছনো গেছে।
এখনো পৌছতে হবে অনেক স্কুল ও কলেজের গেটে। সেই সদস্যপদ অভিযানের সাথে চলছে ফি-বদ্ধির বিরুদ্ধে জোরদার আন্দোলন। মাঠটাকে বড় করার চেষ্টা জারি রয়েছে সবার পক্ষ থেকে।
কতগুলো অবাধ্য যৌবন এবং একরোখা মগজ সদস্য সংগ্রহের এই কাজ করে চলেছে এবং অনুশীলনও করে চলেছে আগামীতে কি কি কাজ, কিভাবে হবে।
এছাড়াও ড্রপ আউটে হারিয়ে যাওয়া ছাত্র-ছাত্রীদের স্কুলে ফেরানোর প্রয়াস ও চলছে প্রতি নিয়ত। এখনো পর্যন্ত প্রায় ১৫০ টি স্কুলের সামনে পৌছনো গেছে। আগামীতে আশা করা যায় এই সংখ্যা ২০০ অতিক্রম করে যাবে। সময়ের চাকা ঘুরছে, অন্ধকার পথ পেরিয়ে ভোরের পথে এগিয়ে চলেছে আগামী নতুন প্রজন্ম।
Comments :0