আদানি গোষ্ঠীর জালিয়াতি কারচুপিতে রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থার ভরাডুবি নিয়ে তদন্তের দাবিতে সোমবারও উত্তাল ছিল সংসদ। এনিয়ে আলোচনার দাবি জানান বিরোধীরা। কোনও দাবি মানেনি সরকার পক্ষ। এতে তুমুল হট্টগোলে অচল হয়ে যায় সভা। ফলে কয়েক দফা সভা মুলতুবির পর সারাদিনের জন্য মুলতুবি হয়ে যায় সংসদের দুই কক্ষ। এদিকে আদানিকাণ্ডে সংসদে বিরোধিতার সমন্বয় বজায় রাখতে বিরোধী দলের বৈঠক হয়। কংগ্রেস নেতা মল্লিকার্জুন খাড়গের অফিসে এই বৈঠক হয়। বৈঠকে তৃণমূল কংগ্রেস বাদে সমস্ত বিরোধী দল অংশ নেয়।
এদিন বিরোধীরা সংসদে সোচ্চার হওয়ার সঙ্গে সংসদে গান্ধী মূর্তির নিচেও বিক্ষোভ অবস্থানে শামিল হন। সেই বিক্ষোভে কর্মসূচিতে কার্যত ছবি তোলার সময় তৃণমূলের কয়েকজন সাংসদকে দেখা যায়।
এদিকে মার্কিন সংস্থা হিন্ডেনবার্ড মোদী ঘনিষ্ঠ কর্পোরেট আদানির জালিয়াতি কারচুপিতে শেয়ারের দর বাড়িয়ে কোটি কোটি টাকা লোপাটের খবর ফাঁস করে দেওয়ায় বিশ্ব জুড়ে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। আদানির শেয়ার দরে এতে বিপুল ধস নেমেছে। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত আর্থিক সংস্থা মোদীর নির্দেশে আদানির শেয়ার কিনে বিপুল লোকসানে ডুবেছে। এ নিয়ে তদন্তে সুপ্রিম কোর্টের নজরদারিতে যৌথ সংসদীয় কমিটি গঠনের দাবি জানিয়েছেন বিরোধীরা। তা মানেনি সরকারপক্ষ। এবিষয়ে মোদীর বিবৃতির দাবিতে বিরোধীরা সোচ্চার হলেও তাতে কোনও সাড়া মেলেনি। নীরব থেকে গিয়েছেন মোদী। সংসদে বাজেট অধিবেশন কার্যত অচল হয়ে পড়েছে আদানি গোষ্ঠীর শেয়ার কারচুপি নিয়ে। অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি ভাষণ পেশের পর তা নিয়ে আলোচনাকে করতে চেয়ে আদানিকাণ্ডকে চাপা দিতে চাইছে সরকারপক্ষ।
এদিন রাষ্ট্রপতি ভাষণ নিয়ে আলোচনার মধ্যেই সীমিত রাখার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে সরকারপক্ষ থেকে। তবে তাতে বিরোধী দলের সমর্থন মেলেনি। তবে তৃণমূল এবং বিজেপি এই প্রস্তাবের পক্ষে রয়েছে বলে খবর।
এদিন বিরোধী দলের বৈঠকে বিজেপি’র প্রস্তাব খারিজ করে সব আলোচনা মুলতবি করে একমাত্র আদানি নিয়ে সংসদে আলোচনার দাবিতে সোচ্চার ছিলেন বিরোধীরা। গত কয়েক দিন একই দাবিতেই সোচ্চার তাঁরা। এদিন তৃণমূলের বিরোধী বৈঠক বয়কট করা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বিরোধী মহলে। মোদী-মমতা উভয় আদানির ‘কাছের লোক’ বলে খবর ছড়িয়েছে। তাই আদানি ইস্যুতে তৃণমূল বিরোধী দল থেকে দূরত্ব বাড়ানোর কৌশল নিচ্ছে বলে খবর। এদিন বিরোধী দলের বৈঠকে কংগ্রেস ছাড়াও ছিলেন সিপিআই(এম), সিপিআই, ডিএমকে, এনসিপি, বিআরএস, জেডিইউ, এসপি, জেএমএম, আরএলডি, আরএসপি, আপ, আইইউএমএল, আরজেডি, শিবসেনার প্রতিনিধিরা।
এদিন সকালে লোকসভায় শুরুতে আদানি ইস্যু নিয়ে মোদীর বিবৃতির দাবিতে সোচ্চার হয়ে ওয়েলে নেমে আসেন বিরোধীরা। কক্ষজুড়ে চলে প্রবল বিক্ষোভ। স্লোগান ওঠে ‘শেম শেম আদানি’। বলতে শোনা যায় আদানির বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির নানা তথ্য। জীবন বিমা নিগম এবং স্টেট ব্যাঙ্ককে মোদীর নির্দেশে আদানির শেয়ার কিনে বিপুল লোকসানে পড়েছে বলে অনেকে উল্লেখ করেন। এনিয়ে মোদীকে সংসদে বিবৃতি দিতে হবে বলে সোচ্চার হন বিরোধীরা। তাঁদের প্রশ্ন, কেন মোদী সরকার এই কেলেঙ্কারি গোপন করছে? বিজেপি সদস্যদের রাষ্ট্রপতির ভাষণের ওপর আলোচনার দাবিতে পালটা স্লোগান দিতে দেখা যায়। তাঁরা আদানি নিয়ে পৃথক কোনও আলোচনা রাজি নন বলে জানিয়ে দেন। বিরোধীরা সরব হওয়ায় ক্রমশ সভা উত্তাল হয়ে ওঠে।
কংগ্রেস নেতা রাহুল গান্ধী বলেন, মোদীজি আসলে প্রাণপণ চেষ্টা করছেন কীভাবে আদানির আলোচনা এড়ানো যায়। গোপন করা হচ্ছে আদানির অপরাধকে। তিনি বলেন, দেশের মানুষ জানতে চায় এই আদানির পিছনে সরকারের কে আছেন? যার জন্য তার এই উত্থান। আদানির মাত্র কয়েক বছরে এত বিপুল সম্পদ হলো কীভাবে? মানুষকে জানান মোদী।
এদিন রাজ্যসভায় সব আলোচনা বন্ধ রেখে আদানি ইস্যুতে আলোচনার আবেদন জানিয়ে নোটিস দেন সিপিআই(এম) সাংসদ এলামারাম করিম। তবে রাজ্যসভার চেয়ারম্যান জগদীপ ধনখড় তা খারিজ করে দেন। আদানি নিয়ে সংসদে কোনও আলোচনার তিনি অনুমতি দেননি। আদানি নিয়ে আলোচনার অনুমতি না দেওয়ার প্রতিবাদে সরব হয়ে উঠলে বিরোধীদের সংযত থাকার হুঁশিয়ারি দেন ধনখড়। বারে বারে আদানি আলোচনার দাবিতে সরব হওয়ায় সভা অচল হয়ে পড়ে। পরে সারা দিনের জন্য সভা মুলতুবি করে দেন চেয়ারম্যান ধনখড়।
এদিকে সংসদের বাইরেও ছিল আদানি নিয়ে বিক্ষোভ। সংসদে স্টেট ব্যাঙ্কের শাখার অফিসের সামনে কংগ্রেসের সাংসদদের অবস্থান বিক্ষোভ হয়। মুম্বাইতে এলআইসি দপ্তরে কংগ্রেসের বিক্ষোভ সভা হয়। পার্লামেন্ট স্ট্রিটে কংগ্রেস বিক্ষোভ দেখায়।
Comments :0