মানবেশ চৌধুরি
আর জি কর হাসপাতালের নারী ডাক্তারকে নৃশংসভাবে ধর্ষণ ও হত্যা করার পর, সেই মৃতদেহ লোপাট করার রাজ্যিক ষড়যন্ত্র রুখে দেবার জন্য যুব নেতা-নেত্রীদের ভয়হীন লড়াই, এই ইস্যুতে বিরাট জনজাগরণ,যেখানেই নারী লাঞ্ছনা— যেখানেই ধর্ষণ, সেখানেই বামপন্থী যুব ও নারী সংগঠনের নেতা-কর্মীদের ছুটে যাওয়, যাদবপুরে ছাত্রের ওপর দিয়ে শিক্ষা মন্ত্রীর গাড়ি চালিয়ে দেওয়ার বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন,গত ২৮ মার্চ উত্তরকন্যা অভিযানে বিনা প্ররোচনায় লাঠি, কাঁদানে গ্যাস আর জলকামান চালিয়ে দেবার কুৎসিত আচরণকে, শারীরিকভাবে বিধ্বস্ত হওয়া সত্ত্বেও, সাহসের সঙ্গে প্রতিরোধ করা, রামনবমীর দিন বিজেপি ও তৃণমূলের পরিপূরক সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে মানুষের মধ্যে সম্প্রীতির পরিবেশ বজায় রাখার জন্য প্রগতির পথিকদের কর্মসূচি রূপায়ণ এবং সাম্প্রতিক সময়ে, শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই। তার পৃষ্ঠভূমিতে যা আছে, তা নিয়ে সামান্য আলোচনা করতে হয়। ইতিমধ্যে আট হাজার স্কুল উঠে গিয়েছে,যে স্কুলগুলি মাস্টার না থাকায় ফাঁকা হয়ে গেছে, তার জায়গা ও স্কুলঘর লিজ দেবার ব্যবস্থা হয়েছে পেটোয়া পুঁজিপতিদের। সেখানে প্রাইভেট স্কুল বা বড় বড় দালান কোঠা গজিয়ে উঠবে।
টাকা ঘুষ দিয়ে যারা চাকরি পেয়েছে– তারা বেশিরভাগ ওই দলটাই করত। কেউ জমি বসত বিক্রি করে, ঋণ মহাজন করেও টাকা দিয়েছে। কিন্তু ব্যাবাক ২৬ হাজারের চাকরি ছেদ। দায়ী কে? চাল-কাঁকর আলাদা করতে, আমার চোখে কম দেখা মা-মাসিও পারেন, আর আস্ত একটা সরকার পারল না! গাঁজাখুড়ি গল্প দিচ্ছ! লোভ লোভ আর লোভ— টাকা টাকা আর টাকা। কোটি কোটি কোটি কোটি টাকা খেয়েছে সরকারি দলের লোকগুলো।
তা ঢাকবার জন্য চিরাচরিত কায়দায় মুখ্যমন্ত্রী অনর্গল দুর্গন্ধময় ও অশ্লীল কথার ফোয়ারা ছোটাচ্ছেন, তা ফুৎকারে উড়িয়ে দিয়ে, প্রকৃত শিক্ষকদের রাজ্যব্যাপী অদৃশ্যপূর্ব লড়াই এবং যারা গোছা গোছা টাকা দিয়েছিল চাকরি পাবার জন্য, তাদের কারও কারও মোহমুক্তি ও ঘুষখোদের প্রহার তথা কলার ধরে টানাটানি চলছে।
অন্যায় ঢাকতে আবার অন্যায়। পিঠ ঠেকে যাওয়া লড়াকু শিক্ষকদের লাঠির সঙ্গে জুটছে লাথি। শিক্ষয়ত্রীদের জুটছে শারীরিক লাঞ্ছনা। কিন্তু সাহস বড় সংক্রামক। তাই লড়াই আরও তীব্রতর হয়ে উঠছে। বাম–ছাত্র যুবরাও সংহতি জানিয়ে লড়াইয়ে তাঁদের সঙ্গে আছেন।
উল্লিখিত আবহে আগামী ২০ এপ্রিলের ব্রিগেড ময়দানে শ্রমজীবী ও দরিদ্র মানুষের চারটি সংগঠনের ডাকে বিশাল সমাবেশ হবে, বলা ভালো হবে চারটি সংঠনের ডাকে প্রতিবাদী মানুষের ব্রিগেড সমাবেশ। আমরা যেটুকু বুঝতে পারছি, সেদিন কলকাতা সত্যিই লড়াইয়ের আহ্বানে মুখরিত কল্লোলিত এক নতুন কলকাতায় উন্নীত হবে।
দুই
সমাবেশের মূল দাবি নিয়ে গণশক্তির পাতায় প্রতিদিন আলোচনা হচ্ছে। তবুও এই আলোচনাটাতেও সামান্য করে লেখা যাক।
শ্রমকোড মানে শ্রমিকরা ন্যায্য মজুরি পাবে না। কম মজুরি কিন্তু কাজ করতে হবে অনেক বেশি। বিভিন্ন জায়গায় ঠিকা মজুর নিয়োগ করেছে মালিক। আরও করবে। ধর্মঘট করতে পারবে না। যখন তখন ছাঁটাই হবে। পেনশন প্রথা বাতিল হবে। এসবকে এককথায় বলে পুঁজিপতিদের স্বার্থ দেখা। মোদী সরকার পুঁজিপতি বান্ধব সরকার। এটা বার বার প্রমাণিত। শুধু এদেশের নয় বাইরের ধনকুবেরদের স্বার্থও দেখে এরা।
এই আলোচনা যখন করছি, তখন আমাদের এলাকার এক গ্রামীণ মানুষ জিজ্ঞেস করলেন – পুঁজিপতি কী বাহে? সাম্রাজ্যবাদ না এ’টা যি কহিনেন – ঐটায় বা কাক কহে! আমি বোঝানোর চেষ্টা করলাম। কিন্তু নিজেই সন্তুষ্ট হতে পারলাম না। বুঝলাম গ্রামীণ মানুষের সঙ্গে আমাদের অনেক নিবিড় মেলামেশা দরকার। আর এমনভাবে কথা বললেও চলবে না– যা মাথার ওপর দিয়ে ভেসে চলে যায়।
মানুষের কত বিপদ! যাদের নুন আনতে পান্তা ফুরায় তাদের আরও বিপদ। তেল-ডাল-লবন-সাবান-সোডা-কাপড়-চোপড়-পায়ের চপ্পল, বিড়ি-ম্যাচ, বিদ্যুৎ, রান্নার গ্যাস সব কিছুর দাম যে হারে বেড়েছে, তা কহতব্য নয়। ডিজেল–প্ট্রোলের, দাম বাড়ায় জিনিস পত্রের দাম বাড়িয়ে দেবার আরও সুযোগ পেয়েছে ধনী লোকেরা। দারিদ্রের কারণে গরিবের রোগও বেশি। তবে তা সাধারণ রোগ। পরিশ্রম করে ক্ষুধার অন্ন জোটাতে হয়। অন্য জটিল ব্যারাম সচরাচর হয় না। কিন্তু যে অসুখ-বিসুখ হয়, তার চিকিৎসাতেই তো পকেট ফাঁকা হয়ে যায় এক দণ্ডেই। ওষুধের দাম ঐ স্বদেশি-বিদেশি ধনকুবেরদের স্বার্থে বেড়েই চলেছে আর বেড়েই চলেছে।
সে জন্য গরিব মানুষ যা রোগ হয়, তাকেও অবহেলা করে রেখে দেয়। আমাদের পাড়ার সুরেনের গলার ভিতরে বাঁদিকে ব্যথা। সুপার স্পেশালিটি হাসপাতাল নামেই। নামে গগন ফাটে, হাঁড়ি পাইলা কুত্তায় চাটে। অন্য ডাক্তার দেখিয়ে ওষুধ কিনে খেয়ে কোনও উপকার হলো না। এক প্রাইভেট ক্লিনিকে মাসে-একদিন-আসা অন্য বড় ডাক্তারকে দেখালো। তিনি গলায় টর্চ ফোকাস করে আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করে, পুরানো প্রেসক্রিপশন দেখে বললেন– আগের ডাক্তার তো ঠিক ওষুধই লিখেছেন। বুঝেছি তুমি বাবা ভেজাল ওষুধ খেয়েছো! এনাকে দেখানোর পর আবার যে ওষুধ কিনবে, তা যে খাঁটি হবে, তার গ্যারান্টি কী! প্রাকৃত বাংলায় নিজেকেই নিজে একটা গাল দিয়ে ওষুধ না কিনে বাড়ি ফিরলো। ফল, রোগটা কিছুদিন পরে জটিল হলো এবং তার কিছুদিন পরে সুরেন মারা গেলো।
ফসলের আবাদ করে চাষিরা ঠকছে তো ঠকছেই।
সংযুক্ত কিষান মোর্চার ডাকে দিল্লির আশেপাশে চারটি জায়গায় কৃষকরা সমবেত হলেন। নয়া কৃষি আইন বাতিলের লড়াই চলল ১৩ মাস। কালা আইন প্রত্যাহার করতে বাধ্য হলো মোদী সরকার। কথা ছিল, ফসল ফলানোর খরচের দেড়গুণ করবে ফসলের দাম। অন্যায় মামলা যাদের ওপর রুজু হয়েছে, সেসব তুলে নেওয়া হবে, যাঁরা মারা গিয়েছেন শীত-গ্রীষ্ম-বর্ষার অত্যাচার সহ্য না করতে পেরে, তাদের পরিবারকে দেওয়া হবে অর্থ। কিন্তু সব বেমালুম চেপে গেল মোদী সরকার। ঐ হাঙর পুঁজিপতি আর বড় বড় ব্যবসায়ীদের স্বার্থে। লড়াই হচ্ছে তার বিরুদ্ধে সারা দেশ জুড়ে। কিন্তু দাবি এখনও মানা হয়নি। আরও বড় আন্দোলন না করলে ওদের কানে জল ঢুকবে না। তাই ব্রিগেড মিছিলের দাবি ফসলের ন্যায্য দাম চাই।
তৃণমূল সরকার তো একই নীতি নিয়ে চলে। ওদের আমলে বদ চালকল মালিক, আড়তদার, ফড়িয়া, সমবায় সমিতি গুলির জোট হয়েছে। তাই চাষি ঠকেই যাচ্ছে আর ঠকেই যাচ্ছে। সারের দাম বেড়েই যাচ্ছে, কীটনাশকের দাম বেড়েই চলেছে। সার নিয়ে চাষের চরম মুহূর্তে কালোবাজারি ঘটছে।
প্রতিবছর ফসলের দামে মার খেয়ে খেয়ে কৃষকের মৃত্যু এই বাংলায় এখন নিত্যদিনের বিষয়। চাষের উৎসাহ তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে। শোষকদের কাছ থেকে টাকাকড়ি কামিয়ে সরকারি দলের সর্বস্তরের লোকজনের রসবস আরও বেড়েছে।
এরাজ্যে ভাতা প্রাপকরা ভাতা পায় না, আবাসনের টাকা মেরে খাওয়াটা তৃণমূলীদের দস্তুর হয়ে গিয়েছে। সমবায় থেকে সব সংস্থার ভোট লুট, আইনে বৈধ কোনও সমিতির মাছ লুটের গুন্ডাগিরি অবাধে চলছে।
তাই আরও বড় লড়াই দেবার শপথই নেওয়া হবে ব্রিগেডের সমাবেশ থেকে।
চাষের অন্যতম উপাদান খেতমজুর বা মাঠ খাটুয়া। কৃষিতে নানা রকম যন্ত্রপাতি এসে গিয়েছে। অনেকেই মজুরির কাজ থেকে হটে গিয়েছে। কৃষি জমিতো আর দোতলা–তিনতলা হয় না। তাই বাড়তি মজুররা চলে যাচ্ছে গোয়া, মুম্বাই, দিল্লি, হরিয়ানা, কেরালা, কর্নাটক– এসব রাজ্যে। গ্রাম কে গ্রাম ফাঁকা। কেউ বউ বাচ্চা নিয়ে গিয়েছে। কেউ ছোট বাচ্চা আর নয়া বিয়ে করা বউকে রেখেই। সেদিন এরকম এক বিদেশ-খাটুয়ার বাচ্চাটার হঠাৎ জ্বর আর জ্বরের সঙ্গে তড়কা শুরু হলো। দিশাহারা বউটার কী কান্নাকাটি আর দৌড়াদৌড়ি! পাশে দীনেশের বাড়িতে তার নাতির অন্নপ্রাশনের আয়োজন মাথায় ওঠার জোগাড়। অনেক কষ্টে বাচ্চাটা সুস্থ হলো— এই যা রক্ষা।
তবুও যে খেতমজুর আছে, তারা কী ঠিকমতো দর্মা পায়! তারা কী ঘর বাড়ি পানীয় জল, আলো পায়। মেয়ে মজুররা ধান রোয়ার সময় কিছু কাজ পায়, ধান কাটার সময় কম্বাইন হারভেস্টার নেমে যায়। তাদের কাজ থাকে না। তাদের দিকে কী সরকার তাকায়! এসব কারণে গ্রামীণ সর্বহারা খেতমজুরদের সংগঠনও ডাক দিয়েছেন, ব্রিগেড জমায়েত সফল করো।
বস্তিবাসীদের জীবনে নেমে এসেছে এই তৃণমূল সরকারের আমলে অভিশাপ। বছরের পর বছর সরকারি পতিত জমিতে বাস করছেন হাজার হাজার মানুষ। অনেক বস্তিতে জল নেই, আলো নেই। রাজ্য সরকারের কী দায়িত্ব নয় এসব করার! কিন্তু তা করেনি। বসবাসকারী বস্তিবাসীরা লিজ পাবার জন্য হন্যে হয়ে চেষ্টা করছেন। তাদের কান্না এই বধির সরকারের কানে পৌঁছাচ্ছে না। পৌঁছাবে কী করে! সাঁট হয়ে গিয়েছে প্রোমোটিং ব্যবসায়ী বড়লোকদের সঙ্গে। তাদের ঐ জমি লিজ দিয়ে, বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ নোটিস পাঠানো শুরু হয়েছে। সেরকম চা বাগিচার বস্তিবাসীদের উচ্ছেদ করে ফ্ল্যাট করার জন্য প্রোমোটারদের লিজ দেওয়া হচ্ছে।
এতো গেল বস্তিবাসীদের যন্ত্রণার কথা। আর জঙ্গলের জমি হাসিল করে পুরুষাণউক্রমে বসত করে আছেন যে আদিবাসী মানুষ বীরভূমের দেওচা-পাঁচামীর তিনটি গ্রাম পঞ্চায়েতে, এসব গ্রামের মাটির নিচে যে কয়লা আছে, তা পাবার জন্য খোলামুখ কয়লা খনি তৈরির জন্য ঐ বাসিন্দা মানুষদের উচ্ছেদ করার কত অপচেষ্টা চলছে তৃণমূল সরকারের। কার স্বার্থে জানেন! ঐ মোদী বান্ধব, পৃথিবীর মধ্যে অন্যতম ধনী আদানিদের স্বার্থে। কিন্তু বাসিন্দা মানুষ লড়াই দিচ্ছেন। লড়াইয়ের মতো লড়াই। সঙ্গে আছেন অন্যান্য শ্রমজীবী ও গণতান্ত্রিক মানুষ।
উল্লিখিত কাণ্ডগুলি যেমন করছে রাজ্য সরকার, তেমনই রেলের জমি এরাজ্যেও লিজ দিচ্ছে দিল্লির সরকার ঐ আদানি – আম্বানিদেরকেই।
তিন
এসব বিষয় নিয়ে যখন আন্দোলন করবেন মানুষ, তখন সুদূরবিস্তারি পরিকল্পনা অনুযায়ী শুরু হয়ে যায় হিন্দু-মুসলমানের কূটকচালি। যেমন,প্রতিবছর রামনবমীর সময় দেখি। এবারও দেখলাম অস্ত্র নিয়ে মিছিল করতে বিজেপি–তৃণমূলকে একই সঙ্গে।
এখন আবার ওয়াকফ আইন নিয়ে একই কায়দা হচ্ছে। ওয়াকফ আইন তো শত শত বছরের পুরানো। ব্রিটিশ রাজত্ব গিয়েছে। কংগ্রেসী রাজত্ব গিয়েছে। এতোদিন পরে খোল-নলচে বদলে কেন গায়ের জোরে বিজেপি সরকারকে বিল পাশ করিয়ে রাষ্ট্রপতির কাছে আইন তৈরির জন্য পাঠাতে হবে! এই আইন সংশোধন বিষয়ে আমরা বেশিরভাগ সাথীরা বিশেষ কিছু জানি না। বিপ্লব ভুঁইমালি— হাইস্কুলের শিক্ষক, সে গণশক্তির গত ৮ এপ্রিলের সেখ সাইদুল হকের লেখা শোনাতে শুরু করলো –“ওয়াকফ কথাটি আরবি শব্দ। অর্থ হলো ধর্মীয় বা দাতব্য বা সেবামূলক উদ্দেশ্যে কোনও কিছু বিধিবদ্ধ করা বা গচ্ছিত রাখা। তার থেকে ওয়াকফ সম্পত্তির ধারণা এসেছে। যার লক্ষ হলো আল্লাহর নামে উৎসর্গ করে কোনও সম্পত্তি মুসলিম জনসাধারণের উন্নয়ন কল্পে এবং ধর্মীয় ও দাতব্য উদ্দেশ্যে নিঃশর্তে গচ্ছিত রাখা।’ আলোচনায় উঠল তামিলনাড়ুর মুখ্যমন্ত্রী, শয়তানি ওয়াকফ বিল আটকাতে কোর্টে যেতে পারলে, এ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী কেন যেতে পারেন না? কেনই বা বিল পেশের দিন তিন জন সাংসদ অনুপস্থিত থাকেন ? কেনই বা একজন ভুল সিটে বসে ভোট দিয়ে নিজের ভোট বাতিল করান?
তারিণী মামা বললেন,বিজেপি ক্যানে ওয়াকফ নি খোঁচাখুঁচি করিবা হবি! ও, গোলমাল পাকাবার তনে নয়!
তারপর সুন্দরভাবে বলতে থাকলেন – বাহে হামার গরিব হিন্দু মানে এই ভূঁইমালি, তুরি, রাজবংশী, পলিয়া, দেশি, জালিয়া, কোল কামার, ওঁরাও এরায়। হামার দ্যাবতা – মাশানকালী, শ্মশানকালী, শীতলা, চামুণ্ডা, মনসা, শিব, বিষহরি, বুড়িমা কালী, সত্যপীর বা সতপীর— এই মতন। এগলা নিয়া তো কুনো গোলমাল হয় নাই হিন্দু মুসলমানে। এইতো আইজ বৃহস্পতিবার আজমাহারে শশ্মানকালীর মেলাৎ যাছে হিন্দু-মুসলমান সবাই। যার যেমন ক্ষমতা, সেই মতন জিলাপি-টিলাপি কিনিবি। মোরে ত ধরম বেটি বোষ্টমকুড়ির মালেকা। আবার ঐ পাড়ারে খাতেরের ধরম ব্যাটা হামার পাড়ার দিনো, দিনো ভূঁইমালি। কত আসা-যাওয়া, খোঁজ খবর নেওয়া, আপদে বিপদে দাঁড়ানো চলেইছে।
দীর্ঘ নিঃশ্বাস ফেলে তারিনী মামা বলে – কুঠ থাকি বা এই বিজোপি আর কুঠ থাকি বা তিমূল পার্টি আলি!
আমরা যারা সকালে ধোপাদিঘির মন্টুর চায়ের দোকানে বসেছিলাম, সবারই মনটা ভারাক্রান্ত হয়ে গেল। কেউ কথা বলতে পারছিলাম না কিছুক্ষণ। নিস্তব্ধতা দেখে ভবেশ চিৎকার করে বলল– নানা বর্ণের গাভী রে ভাই একই বর্ণের দুধ/ জগৎ ভ্রমিয়া দেখলাম একই মায়ের পুত। এই লাইন দুটো শুনে সবার খুব ভালো লাগলো। একজন বলল, ব্রিগেডে আদিবাসীদের নাচ গান আর বাউল ফকিরদের গান শোনা যাবি না ? হামার মিটিংয়ে কিন্তুক ওরা ভালোই গাহিলি আর নাচলি। এরা তো গরিব। আর ব্রিগেড তো ডাকিচে গরিবের সংগঠনগুলায়।
সাব্যস্ত হলো, যত কষ্টই হোক ব্রিগেডের জমায়েতে আমাদের যেতেই হবে। লাখ লাখ নিজের মানুষের মধ্যে গেলে মনটাও ভালো হবে, আর লড়াইয়ের অস্ত্রগুলোকে আরও শান দেওয়াও হবে।
Comments :0