Partha chatterjee 14 days custody

পার্থের নির্দেশেই টাকার বিনিময়ে শূন্য পদ থেকেও বেশি নিয়োগ

কলকাতা

সিবিআই’র তরফে এর আগে দায়ের করা চার্জশিটে পার্থ চ্যাটার্জিকেই গোটা কাণ্ডে মূল চক্রী হিসাবেই দেখানো হয়েছিল। নিয়োগ পদ্ধতিতে দুর্নীতি রয়েছে, টাকার বিনিময়ে অযোগ্যদের চাকরি দেওয়া হয়েছে— তা সবটাই মন্ত্রী হিসাবে পার্থ চ্যাটার্জি শুধু জানতেন নয়, সেই প্রক্রিয়ায় সরাসরি যুক্তও ছিলেন। কমিশন- নিয়োগ নজরদারি কমিটি- শিক্ষা দপ্তর- প্রভাবশালী মহল যুক্ত ছিল দুর্নীতিতে।
চার্জশিটের সেই অভিযোগের সুর ধরেই সোমবার আলিপুর আদালতে পার্থ চ্যাটার্জির জামিনের আবেদনের বিরোধিতা করে সিবিআই জানায়, গ্রুপ সি’তে নিয়োগের ক্ষেত্রে শূন্য পদের থেকেও বেশিজনকে নিয়োগ করা হয়েছিল। তা কেবলমাত্র টাকার বিনিময়েই। পার্থ চ্যাটার্জির মন্ত্রী থাকাকালীন এই দুর্নীতি হয়েছে। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআই’র আইনজীবী এদিন এজলাসে বলেন, শূন্য পদের সংখ্যা জানানো হতো না। তালিকার বাইরে একাধিক নিয়োগ হয়েছে। শূন্য পদের সংখ্যা গোপন রেখেই টাকার লেনেদেনের ভিত্তিতেই তালিকার বাইরে থাকা সম্পূর্ণ অযোগ্য ব্যক্তিদের নিয়োগপত্র দেওয়া হয়েছিল। অপরাধ, দুর্নীতির চেহারা অনেকদূর পর্যন্ত বিস্তৃত, তদন্তে কতদিন সময় লাগবে জানাতে পারছি না। তবে পার্থ চ্যাটার্জির মতো প্রভাবশালী জামিন পেয়ে বাইরে বেরিয়ে গেলে তদন্তের ক্ষতি হবে। এরা যা করেছে তা সমাজের বিরুদ্ধে, একট প্রজন্মের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্রের শামিল।
নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে সিবিআই’র মামলায় ধৃত পার্থ চ্যাটার্জি, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলি, এসএসসি’র প্রাক্তন চেয়ারম্যান সুবীরেশ ভট্টাচার্য, নিয়োগ নজরদারি কমিটির প্রাক্তন উপদেষ্ট শান্তিপ্রসাদ সিনহা, এসএসসি’র তৎকালীন সচিব অশোক সাহাকে ১৪দিন জেল হেপাজত শেষে আলিপুর আদালতে তোলা হয়। পার্থ চ্যাটার্জির তরফে তাঁর আইনজীবীরা সেই অসুস্থতার কথা বলেই জামিনের আবেদনে জানান। তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত কী অনন্তকাল জামিন পাওয়া যাবে না, সেই প্রশ্নও তোলা হয়। যদিও দুপক্ষের দীর্ঘ সওয়াল জবাব শেষে বিচারক ফের তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪দিন জেল হেপাজতেরই নির্দেশ দেন। 
এদিন কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার তদন্তকারী আধিকারিক সওয়াল চলাকালীন এজলাসে বিচারকের কাছে কেস ডায়েরি ও কল রেকর্ড জমা দিয়ে দাবি করেন, অভিযুক্তদের মধ্যে নিয়মিত কথা হতো। কার্যত এক চক্র হিসাবেই কাজ করেছেন তাঁরা। ৩৮৫ জন যে অবৈধভাবে নিয়োগ করা হয়েছে তাঁদের সমস্ত নথি ইতিমধ্যে খতিয়ে দেখা হয়েছে। টাকা দিয়েই তারা নিয়োগপত্র পেয়েছে। আদালতে সিবিআই জানায়, যাঁদের নম্বর বাড়ানো হয়েছে, এমন চারজনকে জিজ্ঞাসাবাদও করেছে সিবিআই। বিচারক তখন প্রশ্ন করেন, তারাও তো দুর্নীতির প্রক্রিয়ার অংশ, তাদের কেন গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না? সিবিআই জানায়, আরও জেরা প্রয়োজন। সমস্ত তালিকা খতিয়ে দেখেই শূন্য পদের থেকে বেশি সংখ্যক, প্যানেল বহিভূর্তভাবে যারা নিয়োগ হয়েছে তাদের জেরা করা হবে। সিবিআই’র আইনজীবী জানান, তদন্ত গুরুত্বপূর্ণ পর্যায়ে চলছে। প্রতিদিন এদের দুর্নীতির নতুন নতুন তথ্য সামনে আসছে। আরও ছয়মাস লাগতে পারে তদন্তে। কয়েক হাজার পরিবার শেষ হয়ে গেছে এই দুর্নীতির জন্য। আমরা গুরুত্ব দিয়েই তদন্ত চালাচ্ছি।
গত ৩০ সেপ্টেম্বর সিবিআই এসএসসি নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে চার্জশিট পেশ করে। তাতে অভিযুক্তের তালিকায় ১৬ জনের নাম রয়েছে। তালিকার ছয় নম্বরে রয়েছে পার্থ চ্যাটার্জির নাম। প্রথম পাঁচজনের বিরুদ্ধে সিবিআই আগেই এফআইআর রুজু করেছিল। অবরসপ্রাপ্ত বিচারপতি রঞ্জিত কুমার বাগের নেতৃত্বাধীন অনুসন্ধান কমিটিও আদালতের জমা দেওয়া রিপোর্টে সেই পাঁচজনের নাম উল্লেখ করেছিল। তাঁরা হলেন নিয়োগ কমিটির প্রাক্তন উপদেষ্টা শান্তিপ্রসাদ সিনহা, মধ্যশিক্ষা পর্ষদের প্রাক্তন সভাপতি কল্যাণময় গাঙ্গুলি, এসএসসি চেয়ারম্যান সৌমিত্র সরকার, সচিব অশোককুমার সাহা এবং কম্পিউটার প্রোগ্রামিং অফিসার সমরজিৎ আচার্য। শিক্ষা মন্ত্রী হিসাবে পার্থ চ্যাটার্জির নির্দেশে তৈরি হওয়া নিয়োগ কমিটিই আদপে দুর্নীতির আঁতুড়ঘর হয়ে উঠেছিল বলেও বলা হয়েছে চার্জশিটে। দুর্নীতি ঠেকাতে তৈরি কমিটিই ছিল দুর্নীতির নিয়ন্ত্রক। এই কমিটির প্রধান উপদেষ্টা করা হয়েছিল শান্তিপ্রসাদ সিন্‌হাকে। এরপর গত ২৫ অক্টোবর আলিপুর আদালতেই সিবিআই নবম-দশম শ্রেণির সহকারী শিক্ষক নিয়োগ দুর্নীতির মামলায় চার্জশিট দায়ের করে। তাতে ১২জনের নাম রয়েছে। যদিও নবম-দশমে নিয়োগ দুর্নীতির চার্জশিটে পার্থ চ্যাটার্জির নাম নেই। তবে এটা এই মামলায় প্রথম চার্জশিট, এরপরেও অতিরিক্ত চার্জশিট জমা দেওয়া হবে বলেও জানা গেছে সিবিআই সূত্রে।
এদিকে এরই মধ্যে নিয়োগ দুর্নীতিকাণ্ডে মানি লন্ডারিংয়ের তদন্তে সল্টলেক সিজিও কমপ্লেক্সের ইডি দপ্তরে এদিন দীর্ঘ জেরা করা হয় পার্থ চ্যাটার্জির একান্ত সহায়ক সরকারি আধিকারিক সুকান্ত আচার্যকে। এদিন সকালেই সিজিও কমপ্লেক্সে আসেন সুকান্ত আচার্য। শিক্ষক-শিক্ষাকর্মী নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় তাঁকে তলব করা হয়। এদিন বেশ কিছু নথি নিয়ে সিজিও কমপ্লেক্সে পৌঁছান তিনি। ইডি সূত্রে জানা গেছে টাকার বিনিময়ে নিয়োগ দুর্নীতিতে এই ব্যক্তির সঙ্গে অভিযুক্তদের আর্থিক লেনদেনের তথ্য পাওয়া গেছে। মন্ত্রীর একান্ত সহায়ক হিসাবে দুর্নীতির প্রক্রিয়া, প্যানেল বহির্ভূত অযোগ্যদের তালিকা পাঠানো, টাকার লেনদেনেও তাঁর ভূমিকা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

 

 

Comments :0

Login to leave a comment